ছবি: বিশ্বজিৎ সাহা।
নদীর স্রোতের মতো সময়ও নিত্য বহমান। যুগের পর যুগ, সভ্যতার পর সভ্যতা অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে তবু প্রকৃতি তার গূঢ় অস্তিত্বে দণ্ডায়মান। হিমালয়ের পাদদেশে বিভিন্ন খরস্রোতা নদীগুলিতে এক বিশেষ ধরনের মাছ দেখা যায়৷ নাম গোল্ডেন মহাশির। হিমাচলপ্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীর এই মাছটিকে তাদের রাজ্য-মাছ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।
‘Mahseer’-শব্দটিকে অনুবাদ করলে হয় মাহি অর্থাৎ মাছ এবং শের অর্থাৎ প্রধান। তাই এই মাছটি মাছেদের মধ্যে প্রধান হিসাবেও বিবেচিত হয়। আর এই মাছটির মধ্যে রয়েছে রাজকীয় একটি ভাব। রাজকীয় হলেও এই মাছ বিপন্ন মাছেদের তালিকায় রয়েছে। এই মাছ রুই-কাতলা গোত্রের মাছ। একে পোনা বা সাইপ্রিনিড বলা হয়। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল টর পুটিটোরা।
আমাদের রাজ্যের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কাবেরী প্রভৃতি নদীতে এই মাছ থাকে খুব সুন্দর ভাবে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে পাহাড়ি নদীগুলি যেমন তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীতে এই মাছ দেখা যায়। তবে তোর্সায় এই মাছটির একটি অন্য ভ্যারাইটি দেখা যায় একে ‘মহাশোল’ বলেও ডাকা হয়।
মহাশির মাছের বৈশিষ্ট্য
● এই মাছের পৃষ্ঠদেশ হয় সোনালি বর্ণের।
● পাখনাগুলি হয় লালচে হলুদ বর্ণের।
● দীর্ঘ বার্বেল (মুখের সামনে সংবেদনশীল চুলের মতো অঙ্গ)৷
● সারা দেহ বৃহৎ আঁশ দিয়ে ঢাকা থাকে।
● এদের ঠোঁট দেখলে বোঝা যায় যে এরা তলদেশের খাবারও খেতে পারে।
● এরা কম তাপমাত্রাতেও যেমন থাকতে পারে তেমনই বেশি তাপমাত্রায় থাকতে এদের অসুবিধা হয় না। ১০-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এরা সুন্দরভাবে থাকতে পারে।
বিনোদনের মাছ
আমাদের দেশের তথা বিদেশের বহু মানুষ ছিপ ফেলা বা হুইল দিয়ে মাছ ধরাকে বিনোদন হিসাবে দেখেন। উত্তরবঙ্গের খারু বা ওই জাতীয় ফল দিয়ে বা সেই গাছের শিকড় দিয়ে সেখানকার মানুষরা চার তৈরি করেন। আর সেই চারের মোহে পড়ে মাছেরা সেখানে আসে তখন তাদের ধরা হয় আবার ছেড়েও দেওয়া হয়।
মহাশির মাছের খাদ্য
● শ্যাওলা জাতীয় খাবার অর্থাৎ উদ্ভিদকণা, প্রাণীকণা এদের প্রিয় খাবার। এছাড়াও বিভিন্ন পোকামাকড় খেতেও এরা পছন্দ করে।
● পাখিরা যে বিভিন্ন ফল খায় সেই ফলগুলি খাওয়ার সময় নদীর জলে পড়ে। সেই পড়া ফলগুলিও এদের প্রিয় খাবার।
‘Mahseer’-শব্দটিকে অনুবাদ করলে হয় মাহি অর্থাৎ মাছ এবং শের অর্থাৎ প্রধান। তাই এই মাছটি মাছেদের মধ্যে প্রধান হিসাবেও বিবেচিত হয়। আর এই মাছটির মধ্যে রয়েছে রাজকীয় একটি ভাব। রাজকীয় হলেও এই মাছ বিপন্ন মাছেদের তালিকায় রয়েছে। এই মাছ রুই-কাতলা গোত্রের মাছ। একে পোনা বা সাইপ্রিনিড বলা হয়। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল টর পুটিটোরা।
আমাদের রাজ্যের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কাবেরী প্রভৃতি নদীতে এই মাছ থাকে খুব সুন্দর ভাবে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে পাহাড়ি নদীগুলি যেমন তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীতে এই মাছ দেখা যায়। তবে তোর্সায় এই মাছটির একটি অন্য ভ্যারাইটি দেখা যায় একে ‘মহাশোল’ বলেও ডাকা হয়।
আমাদের দেশের তথা বিদেশের বহু মানুষ ছিপ ফেলা বা হুইল দিয়ে মাছ ধরাকে বিনোদন হিসাবে দেখেন। উত্তরবঙ্গের খারু বা ওই জাতীয় ফল দিয়ে বা সেই গাছের শিকড় দিয়ে সেখানকার মানুষরা চার তৈরি করেন। আর সেই চারের মোহে পড়ে মাছেরা সেখানে আসে তখন তাদের ধরা হয় আবার ছেড়েও দেওয়া হয়।
মহাশির মাছের আঁশ দিয়ে সাজানো হয়েছে শিল্পকর্মটি।
এই মাছের আঁশ দিয়ে কিছু ঘরোয়া কুটিরশিল্প তৈরি করা হয়। আমাদের রাজ্যের হুগলি জেলায় ধনিয়াখালি ব্লকের অধীনে একটি মহিলা দ্বারা পরিচালিত গোষ্ঠী আছে যারা এর আঁশ দিয়ে অনেক শৌখিন জিনিস প্রস্তুত করে থাকে। এই গোষ্ঠীর প্রস্তুতকারক শৌখিন বস্তুগুলি মানুষের মনোরঞ্জনের উপাদান হয়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠীকে যদি পর্যাপ্ত আঁশ দেওয়া যায় তাহলে তারা এই শিল্পকে উচ্চমানের আসনে অধিষ্ঠিত করবে বলে মনে হয়।
উত্তরাখণ্ডে ভীমতালের কাছে অবস্থিত ডাইরেক্টরেট অফ কোল্ডওয়াটার ফিশারিজ রিসার্চ (ডিসিএফএস) ইনস্টিটিউট বদ্ধ জলাভূমিতে এই মাছের চাষ করেছেন এবং অনেকটা সফলতাও পেয়েছেন।
এই মাছ খুব কম পাওয়া যায়। ফলত এর চাহিদা রয়েছে যথেষ্ট। তাই এই মাছটি যাতে বিপন্ন হয়ে না যায় আগামী দিনে যাতে দেখতে পাওয়া যায় এই মাছকে তার জন্য ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্বও বটে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।