আমাদের ছোটবেলায় অনেকেই বর্ষার সময় বা ভারী বৃষ্টি হলে জলে ভেসে আসা অনেক ছোট মাছ যেমন খলসে, পুঁটি, কই, দাঁড়কিনে, ল্যাটা ধরে এনে হরলিক্সের জারে রাখতাম। মাছগুলোকে দেখে সময় কাটত বেশ ভালোই। কখনও আবার মুড়ি ছড়িয়ে দিতাম জারে। হয়তো সেই রকম আনন্দ পেতে অনেকেই আজ ঘরে অ্যাকোরিয়াম এনে তাতে রঙিন মাছ রাখছেন।
অন্য ছোট প্রাণিপালনের থেকে রঙিন মাছ পালন কিছুটা স্বতন্ত্র। জলে ওদের বিচরণ দেখে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়। অথচ তেমন কোনও অসুবিধে নেই—কামড়, আঁচরের চিন্তা নেই, পরিচর্যা প্রায় কিছুই নয় তুলনামূলকভাবে। দু’ চারদিন বাড়ির বাইরে থাকলে অ্যাকোরিয়ামে একটু লেটুস পাতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা কোন সমস্যা নেই। দেশি ছোট মাছ যেমন তিঁতপুটি, ফলুই, দাঁড়কিনে, খলসে, কাঁকিলা, পাঁকাল এমনকি মুক্তগাছা ইত্যাদি পালন করতেও কোন খরচই প্রায় হয় না।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৭০: খলশে মাছ চাষে আয়ের সঙ্গে কমবে মশার উপদ্রবও, আবার অবলুপ্তিও আটকানো সম্ভব
পাখি সব করে রব, পর্ব-৩: আচমকা বলরাম চেঁচিয়ে বলল, ‘বাপি, বাপি—ওই যে বাপি’
অ্যাকোরিয়াম তৈরির সামগ্রী, মাছের খাবার এবং কিছু দরকারী প্রতিষেধক যেমন, আয়োডিন, পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট, মিথিলিন ব্লু, অ্যাক্রিফ্লেফিন ইত্যাদি এবং এ ছাড়াও জলজ ঝাঁঝি, হাতজাল, এয়ার ফিল্টার (বায়ু সঞ্চালক যন্ত্র) এখন সর্বত্রই সহজলভ্য । অ্যাকোরিয়ামের উচ্চতা হাফ মিটারের বেশি না হওয়াই ভালো। অবাঞ্ছিত ধূলাবালি, পোকামাকড় যাতে না ঢুকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আলো হাওয়া থাকবে, অথচ রোদ পড়বে না এরপর এরকম একটি জায়গায় অ্যাকোরিয়ামে তিন চতুর্থাংশ জল পূর্ণ করে তাতে তিনদিন ধরে অক্সিজেন চালনা করে তবেই মাছ রাখা শ্রেয়।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১২: সুন্দরবনের আর এক ব্যাঘ্রদেবতা বড় খাঁ গাজী
এক মুহূর্তও ফোন, ল্যাপটপ ছাড়া থাকতে পারেন না! জানেন কি, নিজের অজান্তেই ত্বকের ক্ষতি করছেন?
কতগুলি মাছ রাখা যেতে পারে?
অ্যাকোরিয়ামের দৈর্ঘ্য X প্রস্থ্য/২০ যদি ধরে নিয়ে দৈর্ঘ্য ৯০ সেমি, প্রস্থ ৩০সেমি তবে ৯০ X ৩০/২০=১৩৫। এ বার মাছের দৈর্ঘ্য ৪ সেমি হলে তাহলে ১৩৫/৪=৩৪টি মাছ রাখা যেতে পারে সর্বোচ্চ। খাবার হিসাবে লেটুস পাতা, কর্নফ্লেক্স, ডাফনিয়া পাউডার যেকোনও একটি দেওয়া যেতে পারে। আর যদি টিউবিফেক্স বা দানা খাবার পাওয়া যায় তাহলে তো খুব ভালো।
নানা বৈচিত্রের ছোট মাছ এখনও বেশ পাওয়া যায়। তাদের অবাঞ্ছিত বলে অনেক সময় পুকুরে মহুয়া খোল দিয়ে আমরা নষ্ট না করে এদের পালন করতে পারেন। একে কেন্দ্র করে গ্রামীণ ছেলেমেয়েরা আয়ের পথ খুঁজে পাবেন। সেই সঙ্গে দেশীয় ছোট মাছগুলি সংরক্ষণও সম্ভব হবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।