সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

রূপচর্চা সঠিকভাবে করতে হলে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্ন নেওয়াও অত্যন্ত জরুরি। আর তার জন্য অতি অবশ্যই ভাঙতে হবে আপনার কিছু ভুল ধারণা। অনেকেই মনে করেন ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে যায়। আবার অনেকে মনে করেন নিয়মিত তেল মাখলে চুল ভালো থাকে। মাথায় ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি হয়। এই ধারণাও অনেকের থাকে। কিন্তু এই ধারণাগুলি যে একেবারেই ভুল, তা বুঝতে পারেন না অধিকাংশ মানুষ। এইরকম আরও কী কী ভুল ধারণার জন্য আপনি চুলের সঠিক যত্ন নিতে পারছেন না? জেনে নিন।

ঘন ঘন শ্যাম্পু করার জন্য চুল পড়ে যায়
ঘন ঘন শ্যাম্পু করার কারণে যে চুল পড়ে যায়, এই ধারণা একেবারেই ভুল। বরং নিয়মিত শ্যাম্পু করলে চুলের গোড়া পরিষ্কার থাকে। তাই চুল সতেজ রাখতে হলে শ্যাম্পু করা অত্যন্ত জরুরি। চুল পড়ার পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। যেমন রক্তাল্পতা, দুশ্চিন্তা, খুব বেশিদিনের জ্বর ইত্যাদি। ফলে চুল পড়ার সঙ্গে শ্যাম্পুর কোনও যোগ নেই।

নিয়মিত মাথায় তেল মাখলে চুল ভালো থাকে
মাথায় নিয়মিত তেল মাখলে চুল ভালো থাকে। এটিও একটি ভুল ধারণা। চুল ভালো থাকে পুষ্টিকর খাবার খেলে। পুষ্টিকর খাবার যদি শরীরের বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে হতে চুলের গোড়ায় পৌঁছয় তবেই চুল ভালো থাকে ও চুল স্বাস্থ্যকর হয়। তাই এর জন্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তেল কেবলমাত্র চুলকে মসৃণ ও ঝকঝকে চকচকে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত তেল দিয়ে স্নান করার সঙ্গে চুল ভালো থাকার কোনও সম্পর্ক নেই।

মাথা ম্যাসাজে বাড়ে চুলের পুষ্টি
মাথা ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি বাড়ে। এইরকম কোনও ধারণা মনে থাকলে তা শীঘ্রই মুছে ফেলুন। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মেই মাথায় রক্তপ্রবাহ অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় বেশি। ম্যাসাজ করা হয় রক্তপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু যেখানে রক্তপ্রবাহ আগে থেকেই বেশি ম্যাসাজের অর্থহীন।

ঘন ঘন ন্যাড়া হলে চুলের ঘনত্ব বাড়ে
চুলের সংখ্যা জন্ম থেকেই নির্ধারিত। ন্যাড়া হলেও এই সংখ্যাটি কখনও কমে যায় না, আবার বেড়েও যায় না। ছোটদের প্রায়শই ন্যাড়া করে দেবার প্রবণতা মানুষের মধ্যে থাকে। তবে এর জন্য যে চুলের ঘনত্ব বাড়ে তা কিন্তু নয়।

যত চুল কাটা হবে তত চুল বাড়বে
প্রতিদিন চুলের বৃদ্ধির হার ০.৫ মিমি। চুল কেটে এই হার বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের মাথায় চুলের সংখ্যা নির্ধারিত (প্রায় এক লক্ষ)। চুল কেটে এই সংখ্যাটা কখনওই বাড়ানো যায় না।

শীতকালে মাথায় খুশকির পরিমাণ বাড়ে
মাথার ওপরের ত্বকের মৃতকোষই হল খুশকি। এগুলি মাথায় সবসময়ই জমতে থাকে। স্নান করলে এই মৃতকোষগুলি ঝরে পড়ে। শীতকালে আমাদের অনেক সময়ই নিয়মিত শ্যাম্পু করা হয় না। ফলে খুশকি মাথা থেকে ঝরে পড়ার সুযোগ কম পায়। মাথাতেই জমে থাকে। তাই মনে হয়, খুশকি যেন শীতকালেই বেশি হয়।

চুলে মেহেন্দি ও কলপ করা মানেই ক্ষতিকর
দুটিই চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস মেহেন্দি বা কলপে প্যারাফিনিলিন ডাই অম্যাইন নামে রাসায়নিক থাকে। তাই অনেকেই মনে করেন এসব করলে চুলের ক্ষতি অনিবার্য। চুলের জন্য মেহেন্দি ও কলপ কতটা স্বাস্থ্যকর বা ক্ষতিকর সেই অলোচনায় না গিয়ে বলা যায় যে, এগুলি ব্যবহার করলে কারও কারও অ্যালার্জি বা মাথায় প্রদাহ হয়। কিন্তু এগুলি ব্যবহার করে কারও যদি এইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয় তাহলে কোনও ক্ষতি নেই। নিশ্চিন্তে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মেহেন্দি বা কলপ করতেই পারেন।

সাবানই পারে চুল পরিষ্কার রাখতে
এটা একবারেই ভুল ধারণা। সবান দিয়ে চুল পরিষ্কার করা যায় এটা যেমন ঠিক, তেমনই সাবান দিয়ে মাথার চুল পরিষ্কার করার পর চুলের ওপর একটি কেমিক্যালের স্তর থেকে যায় এটিও সত্যি। ফলে চুল ম্যাড়ম্যাড়ে ও বিবর্ণ দেখতে লাগে। অন্যদিকে এই সমস্যা দূর করতে শ্যাম্পুতে দেওয়া থাকে সিকোয়েসটেরিং এজেন্ট। এই সিকোয়েসটেরিং এজেন্ট ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালশিয়াম আয়নের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। ফলে এই দুইয়ের সাহায্যে চুলের ওপর পাতলা নুনের একটি আস্তরণ ফেলে দেয় এবং সাবানেরই ক্ষতিকারক রাসায়নিককে আটকায়। তাই মাথায় নিয়মিত সাবান নয়, ব্যবহার করতে হবে শ্যাম্পু।

Skip to content