শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

রক্তচাপের তিনটি ধরন— নর্মাল, হাই এবং লো। নর্মাল হলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকি দু’ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া দরকার। আমরা অনেক সময়ই ভাবি শুধুই হাই প্রেসার হলে বুঝি লাইফস্টাইল বদলাতে হয়, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয় বা খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়। কিন্তু তা নয়। ব্লাড প্রেসার লো থাকলেও সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে লাইফস্টাইল বদলালে অনেকটাই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সঠিক সময়ে পরিমাণে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। নিয়মত শরীরচর্চা করতে হবে, আর মনকে পাশাপাশি মনকে শান্ত রাখার অভ্যাস করতে হবে।
 

হাইপার টেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কীভাবে?

প্রথমে স্ট্রেস কমানোর উপায় বিষয়ে বলি। একেবারে ছোট বয়স থেকে নিয়ম মাফিক যদি ধ্যান ও প্রাণায়ম এই দুটি যোগাসন অভ্যাস করা যায় তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে আর স্ট্রস বা টেনশন কমে। এই দুটি আসন অভ্যাস করলে মনঃসংযোগের ক্ষমতা বাড়ে।
 

ধ্যান

এই আসনটি পাঁচ বছর বয়স থেকে রোজ অভ্যাস করতে হবে। প্রথম দিকে মিনিট দশেক অভ্যাস করাই যথেষ্ট, পরে কিন্তু সময় বাড়িয়ে আধ ঘণ্টায় নিয়ে যেতে হবে।
● পদ্ধতি: পদ্মাসনে বা অন্য যে কোনও সুখাসনে বসুন। তারপর পিঠ টানটান করে মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। হাত দুটো চিৎ করে (তালুর দিকটা ওপরে করে) হাঁটুর ওপর রাখুন। এরপর মধ্যমা এবং অনামিকা এই দুটি আঙুল তালুর সঙ্গে লাগিয়ে বাকি আঙুল খোলা রাখুন। চোখ বন্ধ করে মন চিন্তামক্তি করে ফেলুন। এই অবস্থায় ‘ওম’ উচ্চারণ করতে করতে মনে মনে দশ গুনুন। ক্রমশ তা বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনবেন।

আরও পড়ুন:

পাখি সব করে রব, পর্ব-১: সবুজ সুন্দরী মুনিয়া

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…

 

শীতলী প্রাণায়াম

হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য এই আসনটি অনবদ্য। যে কোনও বয়সেই এই আসন অভ্যাস করা যায়। এতে ক্লান্তি, স্নায়ু ঘটিত দুর্বলতা, অহেতুক চঞ্চলতা সবই কমে।
● পদ্ধতি: শীতলী প্রাণায়ামে গলা দিয়ে শ্বাস নিতে হয়। আর শ্বাস নেওয়ার সময় গলা দিয়ে ‘স্বা’ বা ‘আ’ শব্দ করতে হবে। সোজা হয়ে বসে চোখ দুটো বন্ধ করে ‘স্বা’ শব্দ করতে করতে শ্বাস নিতে হবে। এইভাবে শ্বাস নিতে নিতে এক থেকে ছয় পর্যন্ত গুনতে হবে। যতক্ষণ সময় লাগে গুনতে ততক্ষণই একটানা এই শব্দটা করে যেতে হবে। এই শব্দ করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন কোনও ঘড়ঘড় শব্দ না হয় অথবা শ্বাস থেমে না যায়। সোজা হয়ে বসে এই আসন অভ্যাস করা উচিত ঠিকই আবার একই সঙ্গে মনে রাখবেন আসনটি অভ্যাস করার সময় যেন শরীর অতিরিক্ত শক্ত হয়ে না যায়। প্রথমে ছ’বার পরে বাড়িয়ে দশ বার এবং তা থেকে আরও বাড়িয়ে কুড়িবার পর্যন্ত এই আসনটি অভ্যাস করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং রক্তচাপ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১০: আমাদের কোনও শাখা নেই

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫২: আঁধার ঘনালো বুঝি সীতার ভুবনে…

 

নিয়ন্ত্রণে রাখুন লাইফস্টাইল ও খাওয়াদাওয়া

এছাড়াও প্রেসার বাড়া বা কমার অন্য আর একটি কারণ লাইফস্টাইল ইমব্যালান্স। জীবনে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করাও ঠিক নয়। লাইফস্টাইলে ব্যালান্স আনা ছাড়াও কয়েকটি ব্যায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
 

যষ্ঠীআসন

এই আসনে শরীরের স্ট্রেচিং সঠিক হয়। সারা শরীরে রক্ত চলাচল ভালো করা, শরীর সচল রাখা সবই এই আসনের মাধ্যমে সম্ভব। শরীরে রক্ত চলাচল ভালো থাকলে ব্লাড প্রেসারের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। ফলে এই আসনটি রোজ অন্তত দশ মিনিট অভ্যাস করা উচিত।
● পদ্ধতি: চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। মাথার দু’পাশে হাত দুটো রেখে দিন। এক হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে অন্য হাতের বুড়ো আঙুলটা ধরুন। এবার কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ ওপর দিকে এবং নীচের অংশ নীচের দিকে যতটা সম্ভব টানটান করে রাখুন। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে এই অবস্থায় কুড়ি সেকেন্ড শুয়ে থাকুন। তারপর খানিকক্ষণ শবাসনে বিশ্রাম নিন। এইভাবে প্রথমে তিনবার অভ্যাস করুন। তারপর ক্রমশ তা বাড়িয়ে দশবার পর্যন্ত অভ্যাস করুন।

আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৪: রাজ পরিবারের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ও ব্রাহ্মবাদ

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ, মুখের রুচি চলে গিয়েছে? আয়ুর্বেদ উপায়ে অরুচি দূর করবেন কী ভাবে?

 

বজ্রাসন

স্নায়ু স্থির রাখতে এই আসনটি অনবদ্য। শুধু তাই নয় খাওয়াদাওয়ায় অরুচি হলেও এই আসনটি অনবদ্য। ফলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বজ্রাসন অভ্যাস করুন নিয়মিত।
● পদ্ধতি: হাঁটু ভেঙে পায়ের পাত মুড়ে গোড়ালি দুটো ফাঁক করে তার ওপর বসুন। হাঁটু দুটো যেন পাশাপাশি জোড়া হয়ে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। শিরদাঁড়া একেবারে সোজা রেখে বসুন। হাত দুটো দুই হাঁটুর ওপরে রাখুন। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে তিরিশ সেকেন্ড থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে দু’মিনিট পর্যন্ত এই আসনে বসে থাকুন। এইভাবে প্রথমে তিনবার এবং পরে তা আরও বাড়িয়ে দশবার পর্যন্ত অভ্যাস করুন।
 

উৎকটাসন

এই আসনটি শরীরের সচলতা বাড়িয়ে তোলার পক্ষে উপযুক্ত। এর ফলে শরীরে রক্তচলাচল ভালো থাকে এবং ব্লাড প্রেসারের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
● পদ্ধতি: পা-দুটো জোড়া করে মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটো কাঁধের থেকে সমান্তরাল করে এগিয়ে দিন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে চেয়ারে বসার ভঙ্গিতে হাঁটু ভাঁজ করুন। খেয়াল রাখবেন মেরুদণ্ড যেন বেঁকে না যায়। এইভাবে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন ও ছাড়ুন। প্রথম প্রথম এইভাবে দশ পর্যন্ত গুনে উঠে দাঁড়ানোর পরে তা বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গুনুন। এই পদ্ধতি অন্তত তিনবার অভ্যাস করুন।


Skip to content