ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
আমরা যতই ফ্যাশন সচেতন হই না কেন, সাজসজ্জা নিয়ে এখনও অধিকাংশ মানুষ অনেক ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে চলেন। তাঁরা মনে করেন, ব্র্যান্ডেড পোশাক ও অ্যাকসেসরিজ বেছে নিলেই সহজে নজরকাড়া যায়। অনেকে তো শাড়ি, ড্রেস মেটিরিয়াল, ব্যাগ, জুতো, কসমেটিক, জুয়েলারি পছন্দ করার সময় শুধু ওই জিনিসটি কতটা ভালো দেখতে সেটাকেই প্রাধান্য দেন। কিন্তু সেগুলি পরে তাঁকে কতটা সুন্দর লাগবে সেটা ভাবেন না। অনেকের ধারণা, গায়ের রং কালো হলে ডিপ কালারের পোশাক পরা যায় না। ফ্যাশন নিয়ে এরকম হাজারো ভ্রান্ত ধারণা আছে, যেগুলোর জন্য নামী-দামি ব্র্যান্ডের কালেকশন কিনেও পুরো সাজসজ্জা মাটি হয়ে যেতে পারে। এরকম কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও তার সমাধান রইল এই প্রতিবেদনে।
ঢিলেঢালা পোশাক ভারী চেহারাদের জন্য
● মোটারা যত বেশি ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন তত বেশি মোটা দেখাবে। তাই একটু ফিটিংস পোশাক পরলে ভালো। আর সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটু মোটা কটন মেটিরিয়াল নেওয়া উচিত। কারণ, পাতলা কাপড়ের ফিটিংস পোশাক পরলে দেহের ভেতরের অংশ তো দেখা যাবে, সঙ্গে দেহের বিভিন্ন অংশ ঠেলে বেরিয়ে আসে। যা ভীষণ অস্বস্তিকর, তাতে বিভিন্নভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
নতুন হেয়ার স্টাইল
● শুধু ভালো পোশাক পরলেই হবে না, হেয়ার স্টাইলেও গুরুত্ব দিতে হবে। বড় মুখ, ফোলা বা ডাবল চিন হলে সাজে যত দামি আইটেম রাখুন না কেন দেখতে ভালো লাগবে না। এমন হেয়ার স্টাইল করুন যাতে গালের কিছুটা অংশ ঢাকা পড়ে। দেখতে ভালো লাগবে। তবে ছোট মুখে অবশ্য এসব সমস্যা নেই।
চওড়া পাড় শাড়ি পরলে আরও লম্বা দেখায়
● লম্বারা চওড়া পাড় শাড়ি পরলে লম্বা লাগে এটা সত্যি। কিন্তু যাঁরা বেঁটে তাঁদের আরও বেঁটে লাগে এটাও সত্যি। কারণ, শাড়ি বা অন্যান্য ড্রেসে কোনও ডিজাইন যদি বেশি অংশজুড়ে আড়াআড়িভাবে ভাগ হয় এবং সেটি যদি বেঁটেরা পরেন তাহলে তাঁদের আরও বেঁটে দেখাবে। চওড়া পাড় শাড়ির ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তাই চওড়া পাড় শাড়ি লম্বাদের সৌন্দর্যে জোয়ার আনলেও, বেঁটেদের সৌন্দর্যে ভাটা নিয়ে আসে।
গায়ের রং কালো হলে গাড় রং নয়
● এটা একদমই ভ্রান্ত ধারণা। বরং গায়ের রং কালো বা শ্যামলা হলে ডিপ কালারের পোশাকে বেশি ভালো দেখতে লাগে। বিশেষত যদি লাল বা লালজাতীয় যে কোনও রং যেমন টমেটো, পিচ প্রভৃতি রং হয় তাহলে তো আরও উজ্জ্বল দেখাবে। আলাদা একটা কন্ট্রাস্ট এনে দেয়।
লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবিতে আরও লম্বা দেখায়
● উচ্চতা বেশি হলে লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবিতে অবশ্যই লম্বা দেখাবে। কিন্তু কম উচ্চতার একজন সুদর্শন পুরুষ যদি লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি পরেন তাঁকে বেঁটেই দেখাবে। মূল কথা হল, কাকে কতটা লম্বা দেখাবে তা নির্ভর করে পাঞ্জাবি পরার পর তাঁর পা কতটা দেখা যাচ্ছে। ফলে যার পা যত বেশি দেখা যাবে, তাকে তত বেশি লম্বা দেখাবে।
জিনস পরলেই ওয়েস্টার্ন লুক আসবে
● জিনস পরলেই ওয়েস্টার্ন লুক আসবে। আর ওয়েস্টার্ন লুক মানেই স্টাইলিশ। এটা ভ্রান্ত ধারণা। যে কেউই জিনস পরতে পারেন ঠিকই, কিন্তু সেটি মানানসই হতে হবে। ক্যাটরিনা কাইফ, দীপিকা পাড়ুকোনের মতো ফিগার হলে জিনসের সঙ্গে ছোট টপ অনায়াসে পরা যায়। কিন্তু যাঁদের হিপস খুব ভারী বা খুব কম তাঁদের কিন্তু জিনসের সঙ্গে ম্যাচ করে এমন কালারের টপ পরতে হবে যাতে হিপস কভার করে। ছেলেদের এই সমস্যা নেই।
ব্লাউজে চাই নতুন ডিজাইন
● ব্লাউজে এমন ডিজাইন করতে হবে যাতে শরীরের নেগেটিভ স্পট হাইলাইট না হয়। বরং শরীর বুঝে এমনভাবে ডিজাইন করুন যাতে স্ট্রং স্পট হাইলাইট হয়। এতে ফ্যাশনের পাশাপাশি ব্যক্তিত্বও ফুটে ওঠে। আবার যাঁদের হাত মোটা তাঁদেরও একটু ভাবতে হবে। হাত মোটা হলে বা কনুইস্থল বেশি স্থূল হলে থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজে বেশি সুন্দর লাগবে। কিন্তু অধিকাংশরাই ব্লাউজ তৈরির সময় শুধু কোমর, বুক এবং হিপস নিয়েই চিন্তাভাবনা করেন। এতে ফ্যাশন মার খায়।
সবকিছু ভালো পরলেই ব্যাস
● এই ধারণাও ভ্রান্ত। সাজে সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখতেই হবে। যেমন মেকআপ করলে চোখ ও ঠোঁট দুটোকে হাইলাইট করা যাবে না। বরং ঠোঁটে টুকটুকে লাল লিপস্টিক পরলে, চোখে স্ট্রং আই শ্যাডো, গ্লিটার, ব্লু কালারের মাসকারা ব্যবহার করুন। আবার চোখে হালকা মিউট কালার ও কাজল পরলে ঠোঁটে লাল, পার্পল প্রভৃতি লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। এতে হাইলাইট হবে। এই ভারসাম্য শুধু কসমেটিকসের ক্ষেত্রে নয়—পোশাক, জুতো, হেয়ার স্টাইল, ব্যাগ সবেতেই রাখতে হবে। ধরুন পোশাক যদি দারুণ হয় তাহলে ব্যাগ, চটি কমজোরি হলেও চলবে। পোশাক মাঝারি মানের হলে সুন্দর ব্যাগ নিন। হেয়ারস্টাইলও চেঞ্জ করতে পারেন। সাজের এই ভারসাম্য মহিলা পুরুষ উভয়ের দরকার।
জুয়েলারিই আসল
● বেশি গয়না পরলে সৌন্দর্য বাড়বে এই ধারণা অমূলক। এখনকার ট্রেন্ড হল, সুন্দর সাজের সঙ্গে অল্প গয়না পরা। তবে সাজে পোশাক, জুয়েলারি, জুতো, ব্যাগ, কসমেটিক এবং হেয়ারস্টাইল কেমন হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে যেখানে যাচ্ছেন তার পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর।
ওয়েস্টার্নের সঙ্গে স্যান্ডেলই ঠিকঠাক
● ওয়েস্টার্নের সঙ্গে স্যান্ডেল একেবারেই বেমানান। একইভাবে শাড়ির সঙ্গে পামশ্যু চলে না। আপনি যে ধরনের ড্রেস পরছেন তার সঙ্গে মানানসই জুতো পরতে হবে। শাড়ির সঙ্গে ভালো যায় আঙুল খোলা জুতো—যেমন চটি, স্যান্ডেল প্রভৃতি। আবার ওয়েস্টার্নের সঙ্গে ভালো যায় হিল, প্ল্যাটফর্ম, ফ্ল্যাট কিংবা পামশ্যু জাতীয় জুতো।