শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

পৃথিবীটা নাকি ছোট হয়ে যাচ্ছে রোজ। অনেকদিন আগে থেকেই এমন কথা বাতাসে উড়ছিল। তখন টিভির মাথায় শিং থাকতো, তাকে অ্যান্টেনা বলা হতো। ফোন তখনও চলভাষ হয়নি। রাষ্ট্রে সিটিজেনরাই শুধু থাকতো। নেটিজেনরা কোথায় তখন? তখন শৈশব পার হয়ে কৈশোর আসতো। তাকে স্বাগত জানানোর নানা আয়োজন থাকতো, তাকে অর্জন করতেও হতো। আজকের তরুণ নবীনের দল জেন-ওয়াই। ক্রমে ক্রমে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক বহুমাত্রিকতা ক্রমে যেন দুটি স্পষ্ট ভেদ নিচ্ছে। একদলের আছে। অন্যদলের নেই। একদল ভালো, পুণ্যবান, স্মার্ট, ‘প্রিভিলেজড’, অন্য দল ক্যাবলা, না-মানুষ, নেই-এর দলে। তাদের মন থাকলে মন্ত্র নেই, শিক্ষা থাকলে দীক্ষা নেই, ইচ্ছে থাকলে উপায় নেই, সাধ থাকলে সাধ্য নেই। তাদের ডানা নেই, লেজ নেই, বিষদাঁত নেই, বসার মতো উঠোন বা দাঁড়ানোর মতো মাটি নেই। তারা আছে, আবার নেই-ও বটে। তাদের ছোট থাকাটাই ঘোরতর সত্য, ছোট থাকাটাই তাদের সম্পদ। তাদের সকাল, দুপুর, বিকাল কি সন্ধে একটা নির্জন বেলাতেই মেশে, যেখানে ঢেউ ওঠে-পড়ে, সরে যায়, আবার ঘিরে ধরে। খেলা ফুরিয়ে পড়ে আসা সকল বেলার অনুপম বেদনাঘন সেই বাঁশির সুর নীরব রাতের আনন্দময় নিবিড় অন্ধকারে ভেসে বেড়ায় “বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল!!”

ঘরেও নাহি বারেও নাহি যারা, সেই মধ্যবর্তিগণের থাকা-না থাকা কেমন যেন হেমন্তবেলার পড়ন্ত আলোর মতো ছায়া-ছায়া ঘুম-ঘুম অনিশ্চয়। এ তত্ত্ব-ও আজকের নয়। মানুষ যেদিন ক্যাবলামি ভুলে স্মার্ট হয়েছে খুব, তার আশেপাশের ভোগ্য জীবন ও পণ্য তার মতোই স্মার্ট হয়ে উঠছে, ক্রমেই নিজে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে নানা ভার্সনে; অথবা বেশ স্মার্ট হতে গিয়ে হতে পারেনি স্মার্ট, না হতে পেরেছে ক্যাবলা-ও ভালোরকম, যে টেনিদার চড় থাপ্পড়ের বিভীষিকা ভুলেও ভিন্নস্বর হয়ে বাজবে অথবা “রাজা তোর কাপড় কোথায়” বলার মতো সরল কিংবা ঋজু হবে। বদলে সে যা হয় তাকেও দেখতে ক্যাবলার মতো লাগে বটে, তবে আমে-আমড়ায় বা জলে-জলপাইয়ে যতটা তফাত এখানেও তেমন। আকাশের সূর্যমণ্ডল আর জলে প্রতিফলিত তার ছায়া যেমন একরকম বটে, কিন্তু অভিন্ন নয়, তেমনই যারা প্রকৃত-ই সদা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, আত্মমগ্ন অথবা আতিশয্যহীন ব্যতিক্রমী তাদের চলা-বলা-ফেরার সঙ্গে স্বার্থক্লিষ্ট অথবা নির্বোধ ক্যাবলামির পরিবেশকদের মূলগত ভিন্নতা আছে বৈকি!
স্বর্গলোক। বিধাতা নিদ্রিত। চিত্রগুপ্ত বাধ্য হয়ে তাঁর ঘুম ভাঙিয়েছেন। তাতেই বিধাতা ভয়ানক চটেছেন। তিনি আরক্ত চোখে খেঁকিয়ে উঠলেন, “কাতলা মাছের মতো হাপসি কাটছ কেন? হ’লটা কি? আজ্ঞে খানিক আগে মর্ত্য থেকে এক ব্যক্তি এসেছে। লোকটা স্বর্গ-স্বর্গ করে একেবারে জ্বালিয়ে খাচ্ছে। ধরুন স্বর্গ না নরক কোথায় যে ব্যাটাকে পাঠাই…”
(চোখে আঙুল দাদা: মনোজ মিত্র)
বিধাতা জানান, সেই আগন্তুকের কর্মাকর্ম-ই তার মরণোত্তর গতি স্থির করবে। এ আবার নতুন কী কথা!
যমালয়ে জীবন্ত মানুষ-ও চলে গেলে তার নাম খাতায় থাকে। স্কুল-কলেজে, রাষ্ট্রের খাতায় নামটাই তো তোমার অস্তিত্বের পরিচয় দেয়। চিত্রগুপ্ত এসব না করে খাতা খুলেই দেখতে পারতেন তার আপডেটস।
কিন্তু, খাতায় তার নাম নেই। ভবলোকের প্রত্যেক লোকের নাম-ধাম-বংশ-নেশা-হবি— সব-ই তো লেখা থাকাই দস্তুর। এর নেই এ আবার কীদৃশ? কাজকর্ম না পোষায় ছেড়ে দাও চিত্রগুপ্ত!
তারপর বিধাতা তাঁর লীলা প্রদর্শন করেন।
“(ভেংচি কেটে) প্রভো! প্রভো!.. যেই একটু বিশ্রাম নেবো… অমনি কানের গোড়ায় প্রভো! প্রভো! (থেমে) সামান্য একটা রেকর্ড তাও রাখতে পারো না।”
রামা-শ্যমা-যদু-মধুর নাম মনে রেখে খাতায় তোলা যায়! কিন্তু শ্রীচোখে আঙুল দাদা-র নাম কি এসবের আওতায় আসে? বিধাতা আঁতকে ওঠেন। চমকের দমকে তাঁর হেঁচকি ওঠে বোধহয়। পুরাকালে এমন এমন সব হেঁচকি থেকে ছোটো-বড় সৃষ্টি হতো হামেশা। মা-বাপের দেওয়া নাম হলে চিত্রগুপ্তের ক্যাটালগে ওঠাটাই নিয়ম। এ নাম পিতৃদত্ত নয়। দেশবাসী দিয়েছে। বাপ-মা কি আর দাদা বলে ডাকতে পারে?
এ বার আমরা ‘মুন শাইন’ ভিলায় যাবো। এটা মর্ত্যলোক। দার্জিলিং।
“নকুড়।। আরে এসেছি কি সাধে। কেষ্টার স্বভাব জানো তো? লেখাপড়া শিখলি, বে—থা কর, বিষয় আশয় দেখ—রোজগার তো আর করতে হবে না। সে সব নয়। দিনকতক খেয়াল হ’ল, ছবি আঁকলে। তার পর আমসত্ত্বর কল ক’রে কিছু টাকা ওড়ালে। তার পর কলকাতায় গিয়ে কতকগুলো ছোঁড়ার সর্দার হ’য়ে একটা সমিতি করলে। তারপর বম্বে গেল, সেখান থেকে আমাকে এক আর্জেন্ট টেলিগ্রাম। কি হুকুম? না এক্ষুনি দার্জিলিং যাও, মুন—শাইন ভিলায় ওঠ, আমিও যাচ্ছি, বিবাহ করতে চাই। কি করি, বড়লোক ভাগনে, সকল আবদার শুনতে হয়। এসে দেখি—মুন—শাইন ভিলায় নরক গুলজার। বরযাত্রীর দল আগে থেকে এসে ব’সে আছে। সেই কচি—সংসদ,—কেষ্টা যার প্রেসিডেন্ট।…
কচি—সংসদের কথা পূর্বে শুনিয়াছি। এদের সেক্রেটারি পেলব রায় আমাদের পাড়ার ছেলে, তার পিতৃদত্ত নাম পেলারাম। বি.এ. পাস করিয়া ছোকরার কচি এবং মোলায়েম হইবার বাসনা হইল। সে গোঁফ কামাইল, চুল বাড়াইল এবং লেডি—টাইপিস্টের খোঁপার মতন মাথার দু—পাশ ফাঁপাইয়া দিল। তারপর মুগার পাঞ্জাবি গরদের চাদর, সবুজ নাগরা ও লাল ফাউন্টেন পেন পরিয়া মধুপুরে গিয়া আশু মুখুজ্যেকে ধরিল—ইউনিভার্সিটির খাতাপত্রে পেলারাম রায় কাটিয়া যেন পেলব রায় করা হয়। স্যার আশুতোষ এক ভলুম এনসাইক্লোপিডিয়া লইয়া তাড়া করিলেন। পেলারাম পলাইয়া আসিল এবং বি.এ ডিপ্লোমা বাক্সে বন্ধ করিয়া নিরুপাধিক পেলব রায় হইল।”
(কচি সংসদ: রাজশেখর বসু)
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৬: ‘কোনওদিন কিছুই ছিল না, কিছুই কিছুই নেই আমাদের আজ’

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৮: খেলার ছলে এসেছিনু যেথা ‘হারজিৎ’-র পর্ব রাখিনু সেথা

এই কচি-কাঁচারা আধমরাদের ঘা দিয়ে বাঁচাতে চায়, হয়তো বা। তারা সমিতি গঠন করে, নিজেদের আকুতিগুলো দেশবাসীদের জানায়। মরে গেলে, চোখে আঙুল দাদা হয়ে কী করে? আমরা জানবো, তার আগে…
“রাম। কাল রাত্তিরে আমি একটা চমৎকার স্বপ্ন দেখেছি। দেখলুম কি, রাবণ ব্যাটা একটা লম্বা তালগাছে চড়ছে। চড়তে চড়তে হঠাৎ পা পিছলে একেবারে— পপাত চ, মমার চ!
জাম্বুবান: তবে হয়তো রাবণ ব্যাটা সত্যি সত্যিই মরেছে— রাজস্বপ্ন মিথ্যা হয় না।
সকলে: হয় না, হবে না— হতে পারে না।
রাম: আমি হনুমানকে বললুম, ‘যা, ব্যাটাকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আয়। ‘হনুমান এসে বললে কি, ‘ফেলবারও দরকার হল না— সে এক্কেবারে মরে গেছে।’
সকলে: বাঃ বাঃ!— একদম মরে গেছে— ব্যস। আর চাই কি, খুব ফুর্তি কর!
[বাইরে গোলমাল]
ঐ দেখ্‌ রাবণের রথ দেখা যাচ্ছে— দেখেছিস? ঐটা রাবণ, ঐ যে লাঠি কাঁধে—
সকলে: সে কি! রাবণ ব্যাটা তবু মরেনি— ব্যাটার জান্‌ তো খুব কড়া!
জাম্বুবান: এই হনুমান ব্যাটাই তো মাটি কললে— তখন রাবণকে সমুদ্রে ফেলে দিলেই গোল চুকে যেত— না, ব্যাটা বিদ্যে জাহির করতে গিয়েছে— ‘এক্কেবারে মরে গেছে’—
বিভীষণ: চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে—”
(লক্ষ্মণের শক্তিশেল, সুকুমার রায়)
“রাবণ এক্কেবারে মরে গেছে” জেনে মর্ত্যের চোখে আঙুল দাদাদের স্ফূর্তি আকাশচুম্বী হয়। অচিরেই, সেই গজদন্তমিনার ভেঙেও পড়ে, যারা নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত ছিল, তারাই এখন হনুমানের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়। ক্যাবলামি রাবণের চিতার মতোই অনির্বাণ হয়ে জ্বলতে থাকে।
“রাম: আজ কি ঘটল না ঘটল সব ভালো করে গুছিয়ে বল।
দূত: আজ্ঞে, আমি চান টান করেই পুঁইশাক চচ্চড়ি আর কুমড়ো ছেঁচকি দিয়ে চাট্টি ভাত খেয়েই অমনি বেরিয়েছি— অবিশ্যি আজকে পাঁজিতে কুষ্মাণ্ড ভক্ষণ নিষেধ লিখেছিল, কিন্তু কি হল জানেন? আমার কুমড়োটা পচে যাচ্ছিল কিনা—
সকলে: বাজে বকিসনে— কাজের কথা বল।
দূত: হ্যাঁ—হ্যাঁ—খেয়ে উঠেই ঘণ্টা দু-তিন জিরিয়ে সেখানে গিয়ে দেখি খুব ঢাকঢোল বাজছে—ধ্যা র্যা র্যা র্যা র্যা র্যা —ধ্যা র্যা র্যা র্যা —ধ্যার্যা —
সকলে: মার—ব্যাটাকে মার—ব্যাটার কান কেটে দে!
জাম্বুবান: ব্যাটার ধ্যার্যা র্যাার্যাট—চলেছে যেন রেকারিং ডেসিমাল!
সুগ্রীব: ব্যাটা, তুই ভালো করে ধারাবাহিকরূপে আদ্যোপান্ত পর্যায়পরম্পরা সব বলবি কি না?
রাম: তারপরে কি হল শুনি—ততঃ কিম্‌?”
(লক্ষ্মণের শক্তিশেল, সুকুমার রায়)
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৮: চল্লিশ পার হলেই নিরামিষ?

পরিযায়ী মন, পর্ব-৭: ভিস্তা ডোমে তিস্তার দেশে

চোখে আঙুল দাদা রা ক্যাবলা কী না বলা ভারি শক্ত, ততটাই কঠিন যতটা গেছোদাদার ভ্রাম্যমান অবস্থানের অনুমান। পেলব রায় কিংবা রামচন্দ্রের দূত, অথবা হনুমান… কখনও মনে হয়, তারা বুঝি ভীষণ চালাক আর বাস্তববাদী, কুষ্মাণ্ড ভক্ষণ নিষেধ জেনে আর সেটা মেনেও কুমড়োটা তারা খায়, সেটা জাহির করে বলেও বটে। আবার এই যে প্রথার বিরুদ্ধে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, স্বাভাবিকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে কেউ পেলব রায় হয়ে কিংবা চোখে আঙুল দাদা হয়ে নিজের অস্তিত্বের উদ্ঘোষণায় তত্পর থাকে নিরন্তর। তারা কেউ সত্পাত্র, কেউ ন্যাড়া, কেউ পেনসিল-হাতে বেহেসাবী হিসাবপ্রবণ পণ্ডিতন্মন্য কাক, কেউ হেড আপিসের বড়বাবুর কিংবা বোম্বাগড়ের রাজা, কেউ বা দিবাস্বপ্নে রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে ওঠা এক আজগুবি সত্য, কিংবা নেহাত ক্যাবলা।

এরা বিরিঞ্চিবাবার মতোই মহান, টেনিদার মতোই প্রবল, নাসিরুদ্দিনের মতোই অজ্ঞেয়, এরা প্রতিবাদী, এরাই একান্তই আপেক্ষিক ও সর্বংসহ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়, এরা আপনি-তুমি-আমি-তুই, এরাই হয়তো দিনের শেষে ভূষণ্ডীর মাঠে, কিংবা
“বিদ্‌ঘুটে জানোয়ার কিমাকার কিম্ভূত,
সারাদিন ধ’রে তার শুনি শুধু খুঁতখুঁত
মাঠপারে ঘাটপারে কেঁদে মরে খালি সে,
ঘ্যান্‌ ঘ্যান্ আব্‌দারে ঘন ঘন নালিশে৷
এটা চাই সেটা চাই কত তার বায়না—
কি যে চায় তাও ছাই বোঝা কিছু যায় না৷
কোকিলের মত তার কণ্ঠেতে সুর চাই,
গলা শুনে আপনার, বলে, ‘উঁহুঁ, দূর ছাই !’
আকাশেতে উড়ে যেতে পাখিদের মানা নেই ৷
তাই দেখে মরে কেঁদে–তার কেন ডানা নেই ৷”
(কিম্ভূত: সুকুমার রায়)

চোখে আঙুল দাদাকে আমরা ভুলবো না, তিনি থাকবেন, কিন্তু এখন একটু নরকদর্শন।
নরকে আহত যমরাজ বিধাতার শরণাপন্ন। বিধাতা নিদ্রিত, নারদমুনি নেচে নেচে গান গাইছেন। জানা গেল,

“কথা বোলো না কেউ শব্দ কোরো না / ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না।”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১২: জয়রামবাটিতে প্রত্যাবর্তন

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৬: অ্যালেন, দেখলেন, খেলেন

এককালে লীলাছলে বিধাতা সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তাঁর সাজানো বাগানের জমিদারি তিনি আর দেখতে পারেন না, তাঁর ছানা-পোনা দেবতার দল আয়েশে ফূর্তি করে “ফ্যাট গ্যাদার” করে চলেছেন।
বিধাতার নাতি নরকেশ্বর যমরাজ আবেদন নিয়ে এসেছেন বটে, তবে বৃদ্ধ বিধাতা নিদ্রিত। প্রতিপাদ্য বিষয়-ও অতি ভয়ানক। নারকীয় ভূতপিশাচের দল গগনবিহারের সময় যমরাজের বিমান হাইজ্যাক করেছে। সেই বিমানে তাঁর প্রাণপ্রিয় বারো নম্বর পত্নী ছিলেন। যমরাজের বৌ চুরি গেছে।
যম: (নিদ্রিত ব্রহ্মার পা ধরে) ঠাকুরদা… ও ঠাকুরদা…
নারদ: সকালবেলা মোষের মত চেঁচাচ্ছ কেন? পিতামহ ব্রহ্মা ঘুমুচ্ছেন।…
যম: বাঃ বা-বা-বা বাঃ! যখনই আসব ঘুমুচ্ছে। আমরা মরছি নাকের জলে চোখের জলে… হাত-পা ভেঙে ন্যাজে গোবরে, আর দেবকুলের মাথা–নাকে তেল ঢুকিয়ে–উঃ…”
(নরক গুলজার: মনোজ মিত্র)
বিচিত্র হাই ছাড়তে ছাড়তে ব্রহ্মার ঘুম ভাঙছে দেখা যায়। বিধাতাকে গালিবর্ষণ করতে করতে সামলে নিয়ে যমরাজ তাঁর স্তব শুরু করেন। সর্বজ্ঞ বিধাতা এসব আর গায়ে মাখেন না। তিনি যমরাজকে বলেন—
“দাঁড়িয়ে পেন্নাম করছ যে, সাষ্টাঙ্গ হও।
নারদ: হও।
যম: পারছি না ঠাকুরদা… আমার হিপ-বোন ভাঙা…
নারদ: এখুনি তো দু-পা তুলে তড়পাচ্ছিলে, পেন্নামের বেলায় ভেঙে গেল?”
কিন্তু দেখা গেল, হালচালের খবর বিধাতা রাখেন না। জেগে উঠে যা শোনেন তাতেই সে কী সে কী বলে চমকে ওঠেন!!
যাঁরা নিজেদের বোধবুদ্ধির বেজায় পরিপক্বতাকে বেশ করে সকলের সামনে দেখিয়ে দেবেন বলে দিবারাত্র প্রাণপাত করছেন, স্বর্গ-মর্ত্য-নরকে যে পুণ্যবানের দল দৌড়ে বেড়াচ্ছেন অবিরত, যাঁরা নিজেদের বড় কেউকেটা ভেবে পেলব রায় কিংবা সকলের ভুল ধরিয়ে চোখে আঙুল দাদা অথবা ভুলে যাওয়ার বাতিকগ্রস্ত বিধাতা হয়ে বেজায় আবোল-তাবোল করেন, তাদের জন্য শেষ পাতে এইটি—
“দাদা গো ! দেখ্‌ছি ভেবে অনেক দূর—
এই দুনিয়ার সকল ভাল,
আসল ভাল নকল ভাল,
সস্তা ভাল দামীও ভাল,
তুমিও ভাল আমিও ভাল…”
(ভাল রে ভাল: সুকুমার রায়)

মানবেন কি?

ঋণ স্বীকার:
শিরোনাম বাংলা ব্যান্ড ভূমি-র গান থেকে।
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content