অলঙ্করণ: লেখক।
তাহলে কী দাঁড়াল?
ক্যাবলামি ভাল না খারাপ না মোটের ওপর ভালো অথবা মোটেও ভালো নয়?
ক্যাবলারা জীবনে ভালো কিছু করতে পারে?
পার্বতী মনে মনে শিবকে চেয়েছিলেন। নারদ ঘটকালি করে গেলেও লজ্জাবনতা পার্বতী কিছুতেই আর কাজের কাজটি করে উঠতে পারেন না। সকলেই উদগ্রীব সেই মহামিলনের শুভক্ষণের জন্য। কামদেব মদন তাঁর লোকলস্কর নিয়ে চলে এসেছেন। বসন্ত, কোকিল, ফুলের দল সকলেই নেমে পড়ল কাজে। আচমকাই প্রকৃতির বুকে নেমে এল অকাল বসন্তের আনন্দলহরী। চকিতে ধ্যান ভাঙল মহাদেবের। প্রজ্বলিত হল তাঁর তৃতীয় নয়ন, ক্রোধাগ্নি। মনে মনে বুঝলেন তিনি সব। চোখ খুলল তাঁর। সামনে ত্রস্তা পার্বতী শরবিদ্ধ হরিণীর মতো কাঁপছেন… মহাদেবের ক্রোধানলে কামদেব ধ্বস্ত হয়ে হলেন অতনু। সে প্রেম বুঝি ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। মর্ত্য কাম থেকে অমর্ত্য প্রেমে উত্তীর্ণ হবে পার্বতীর প্রণয়। কামনা এসে ঠেকবে তপস্যার কূলে।
জীবনের ক্যাবলামিগুলো চিনেবাদামের খোসার মতো, ছাড়তে চেয়েও জড়িয়ে থাকে; ঝাল নুন আর লবেঞ্জুসের সৌরভ মেখে তারা দখিন বাতাসে ভর করে উড়ে যায় তেপান্তরের দিকে, উড়তে থাকে…
এই যে উড়ে যাবার এতো আগ্রহ আর বাসনা, সেটুকু পার হলে ক্যাবলাদের হাতে কী থাকে?
“নূতন ছাত্রটি বোধ হয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে, শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলুস্থল পড়িয়া যাইবে, এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হাঁ হাঁ করিয়া উঠিবে। যখন সেরূপ কিছুরই লক্ষণ দেখা গেল না, তখন বেচারা, যেন আপন মনে কি কথা বলিতেছে, এরূপভাবে, যাত্রার মত সুর করিয়া একটা কবিতা আওড়াইতে লাগিল—
“ওহে বিহঙ্গম তুমি কিসের আশায়
বসিয়াছ উচ্চ ডালে সুন্দর বাসায়?
নীল নভোমণ্ডলেতে উড়িয়া উড়িয়া
কত সুখ পাও, আহা ঘুরিয়া ঘুরিয়া!
যদ্যপি থাকিত মম পুচ্ছ এবং ডানা
উড়ে যেতাম তব সনে নাহি শুনে মানা—”
কবিতা শেষ হইতে না হইতেই ভবেশ অদ্ভুত সুর করিয়া এবং মুখভঙ্গি করিয়া বলিল—
“আহা যদি থাকত তোমার ল্যাজ এবং ডানা
উড়ে গেলেই আপদ যেত- করত না কেউ মানা!”
শুনিয়া সকলে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল”।
উড়ে যাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষাকে ভবেশ একেবারে উড়িয়ে দিলেও অপু এতো তাচ্ছিল্যভরে নিতে পারেনি, উড়িয়ে দেওয়ার মাতন এসে তাকে কাঙাল করেছিল বুঝি!
“ডিমটা হাতে করিয়া, তাহাব মনটা যেন ফু দেওয়া রবারের বেলুনের মত হাল্কা হইয়া ফুলিয়া উঠিল। সঙ্গে সঙ্গে যেন একটু সন্দেহের ছায়া তাহার মনে আসিয়া পৌঁছিল, এটুকু এতক্ষণ ছিল না। ডিম হাতে পাওয়ার পর হইতে যেন কোথা হইতে ওটুকু দেখা দিল, খুব অস্পষ্ট! সন্ধ্যার আগে আপনমনে নেড়াদের জামগাচের কাটা গুডির উপর বসিয়া সে ভাবিতে লাগিল, সত্যি সত্যি উড়া যাইবে তো! সে উড়িয়া কোথায় যাইবে? মামার বাড়ির দেশে? বাবা যেখানে আছেন সেখানে? নদীর ওপারে? শালিক পাখী ময়না পাখীর মত ও-ই আকাশের গায়ে তারাটা যেখানে উঠিয়াছে?”
ক্যাবলামি ভাল না খারাপ না মোটের ওপর ভালো অথবা মোটেও ভালো নয়?
ক্যাবলারা জীবনে ভালো কিছু করতে পারে?
পার্বতী মনে মনে শিবকে চেয়েছিলেন। নারদ ঘটকালি করে গেলেও লজ্জাবনতা পার্বতী কিছুতেই আর কাজের কাজটি করে উঠতে পারেন না। সকলেই উদগ্রীব সেই মহামিলনের শুভক্ষণের জন্য। কামদেব মদন তাঁর লোকলস্কর নিয়ে চলে এসেছেন। বসন্ত, কোকিল, ফুলের দল সকলেই নেমে পড়ল কাজে। আচমকাই প্রকৃতির বুকে নেমে এল অকাল বসন্তের আনন্দলহরী। চকিতে ধ্যান ভাঙল মহাদেবের। প্রজ্বলিত হল তাঁর তৃতীয় নয়ন, ক্রোধাগ্নি। মনে মনে বুঝলেন তিনি সব। চোখ খুলল তাঁর। সামনে ত্রস্তা পার্বতী শরবিদ্ধ হরিণীর মতো কাঁপছেন… মহাদেবের ক্রোধানলে কামদেব ধ্বস্ত হয়ে হলেন অতনু। সে প্রেম বুঝি ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। মর্ত্য কাম থেকে অমর্ত্য প্রেমে উত্তীর্ণ হবে পার্বতীর প্রণয়। কামনা এসে ঠেকবে তপস্যার কূলে।
জীবনের ক্যাবলামিগুলো চিনেবাদামের খোসার মতো, ছাড়তে চেয়েও জড়িয়ে থাকে; ঝাল নুন আর লবেঞ্জুসের সৌরভ মেখে তারা দখিন বাতাসে ভর করে উড়ে যায় তেপান্তরের দিকে, উড়তে থাকে…
এই যে উড়ে যাবার এতো আগ্রহ আর বাসনা, সেটুকু পার হলে ক্যাবলাদের হাতে কী থাকে?
“নূতন ছাত্রটি বোধ হয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে, শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলুস্থল পড়িয়া যাইবে, এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হাঁ হাঁ করিয়া উঠিবে। যখন সেরূপ কিছুরই লক্ষণ দেখা গেল না, তখন বেচারা, যেন আপন মনে কি কথা বলিতেছে, এরূপভাবে, যাত্রার মত সুর করিয়া একটা কবিতা আওড়াইতে লাগিল—
“ওহে বিহঙ্গম তুমি কিসের আশায়
বসিয়াছ উচ্চ ডালে সুন্দর বাসায়?
নীল নভোমণ্ডলেতে উড়িয়া উড়িয়া
কত সুখ পাও, আহা ঘুরিয়া ঘুরিয়া!
যদ্যপি থাকিত মম পুচ্ছ এবং ডানা
উড়ে যেতাম তব সনে নাহি শুনে মানা—”
কবিতা শেষ হইতে না হইতেই ভবেশ অদ্ভুত সুর করিয়া এবং মুখভঙ্গি করিয়া বলিল—
“আহা যদি থাকত তোমার ল্যাজ এবং ডানা
উড়ে গেলেই আপদ যেত- করত না কেউ মানা!”
শুনিয়া সকলে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল”।
উড়ে যাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষাকে ভবেশ একেবারে উড়িয়ে দিলেও অপু এতো তাচ্ছিল্যভরে নিতে পারেনি, উড়িয়ে দেওয়ার মাতন এসে তাকে কাঙাল করেছিল বুঝি!
“ডিমটা হাতে করিয়া, তাহাব মনটা যেন ফু দেওয়া রবারের বেলুনের মত হাল্কা হইয়া ফুলিয়া উঠিল। সঙ্গে সঙ্গে যেন একটু সন্দেহের ছায়া তাহার মনে আসিয়া পৌঁছিল, এটুকু এতক্ষণ ছিল না। ডিম হাতে পাওয়ার পর হইতে যেন কোথা হইতে ওটুকু দেখা দিল, খুব অস্পষ্ট! সন্ধ্যার আগে আপনমনে নেড়াদের জামগাচের কাটা গুডির উপর বসিয়া সে ভাবিতে লাগিল, সত্যি সত্যি উড়া যাইবে তো! সে উড়িয়া কোথায় যাইবে? মামার বাড়ির দেশে? বাবা যেখানে আছেন সেখানে? নদীর ওপারে? শালিক পাখী ময়না পাখীর মত ও-ই আকাশের গায়ে তারাটা যেখানে উঠিয়াছে?”
ক্যাবলারা এইভাবে লুচির মতো ফোলে, ভেজা হাউইয়ের মতো খানিক উঠেই গোঁত খায়, ছন্দ মিললেই তাদের মহাকাব্য, অঙ্ক মিললেই বুঝি মহাকাশ হাতের মুঠোয় নেমে আসে।
“সেই দিনই, কি তাহার পরদিন। সন্ধ্যার একটু আগে দুৰ্গা সলিতার জন্য ছেঁড়া নেকড়া খুজিতেছিল। তাকে হাঁড়ি-কলসীর পাশে গোঁজা সলিতা পাকাইবার ছেঁড়া-খোঁড়া কাপড়ের টুকরার তাল হাতড়াইতে হাতড়াইতে কি যেন ঠক করিয়া তাহার পিছন হইতে গড়াইয়া মেজের উপর পড়িয়া গেল। ঘরের ভিতর অন্ধকার, ভাল দেখা যায় না, দুর্গা মেজে হইতে উঠাইয়া লইয়া বাহিরে আসিয়া বলিল-ওমা কিসের দুটো বড় বড় ডিম এখানে! এঃ, প’ড়ে একেবারে গুঁড়ো হয়ে গিয়েচে-দেখেচো কি পাখী ডিম পেড়েচে ঘরের মধ্যে মা!”
অঙ্ক মেলে, কিন্তু মহাকাশ নামে কই? ছন্দ যদিও মেলেও বা, তবু অপার কাব্যাকাশে প্রজাপতি কবির রঙিন স্বপ্ন পাখা মেলে না, ধরণীর বুকে এসে ঠেকে চাঁদের তরণী, ফুটো লুচির মতো ক্রমে মিলিয়ে যেতে থাকে।
“তাহার পর কি ঘটিল, সে কথা না তোলাই ভালো। অপু সেদিন রাত্রে খাইল না… কান্না… হৈ হৈ কাণ্ড । তাহার মা ঘাটে গল্প করে-ছেলেটার যে কি কাণ্ড, ওমা এমন কথা তো কখনো শুনিনি-শুনেচো সেজ ঠাকুরঝি, শকুনির ডিম নিয়ে নাকি মানুষে উড়তে পারে-ওই ওদের বাড়ীর রাখাল ছোঁড়াটা বদমায়েসের ধাড়ি। তাকে বুঝি বলেচে, সে কোত্থেকে দুটা কাগের না কিসের ডিম এনে বলেছে-এই নেও শকুনের ডিম। তাই নাকি আবার চার পয়সা দিয়ে কিনেচে তার কাছে। ছেলেটা যে কি বোকা সে আর তোমার কাছে কি বলবো সেজ ঠাকুরঝি–কি করি যে এ ছেলে নিয়ে আমি!”
ওই ব্যর্থতা ক্যাবলামি? ওই শূন্যগর্ভ আকাশচারী মনের আসা-যাওয়া ক্যাবলামি? ওই পাখা ঝটপটানোয় সুষুপ্ত ভাবী উড়ানের হাতছানি ক্যাবলামি?
সত্যি! ট্রামে বাসে রাস্তায় কান পাতলে এমনটাই শোনা যায় বটে! “কি করি যে এ ছেলে নিয়ে আমি!” যতো না হতাশা আছে এতে, তার চেয়েও কিছু বেশি গর্ব আছে কি? নরুর মা এমন গরবিনী ছিলেন কীনা কবি বলেন নি, তবে…
“কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে? বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না”
তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে মনের ডানায় ভর করে। মনে মনে মেঘ, তারা সঅঅঅব ছাড়িয়ে দিনরাত কম্পমান গোল-গোল পাতাকেই সে ভেবে নেয় ডানা, যখন হাওয়া নেমে যায় পাতা কাঁপা থেমে যায় “ফেরে তার মনটি/ যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার/ ভালো লাগে আরবার/ পৃথিবীর কোণটি।”
তবু, এখনই… “এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।”
শোনা যায়, দিবসে যে ধন হারায়, আঁধার রাতে মেলে তার পরশ, অবহেলায় ছুড়ে দিলেও তা-ই আবার এসে হাতে ঠেকে, আর, না চাইতেও মেলে অধরা মাধুরী। শোনা যায়, “যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না”…
হনুমান সংসারী হতে চেয়েছিলেন। অবশেষে কিচ্চট-রাজকুমারী স্বয়ম্বরা চিলিম্পার পাণিপ্রার্থী হলেন তিনি। এই বানরী নিতান্তই বিদুষী, আধুনিকা ও দুর্বিনীতা। প্রেমিক পাণিপ্রার্থীদের অপদস্থ করাই তার বিনোদন। হনুমানের সঙ্গে প্রাথমিক সৌজন্যালাপের পর শুরু হল ইন্টারভিউ…
“চিলিম্পা কহিলেন—“হে মহাবীর, তোমার বচন শুনিয়া আমার পরম প্রীতি জন্মিয়াছে। কিন্তু স্ত্রীজাতি কেবল বীরত্ব চাহে না। তোমার কান্তগুণ কি কি আছে? তুমি নৃত্যগীত জান? কাব্য রচিতে পার?”
“সেই দিনই, কি তাহার পরদিন। সন্ধ্যার একটু আগে দুৰ্গা সলিতার জন্য ছেঁড়া নেকড়া খুজিতেছিল। তাকে হাঁড়ি-কলসীর পাশে গোঁজা সলিতা পাকাইবার ছেঁড়া-খোঁড়া কাপড়ের টুকরার তাল হাতড়াইতে হাতড়াইতে কি যেন ঠক করিয়া তাহার পিছন হইতে গড়াইয়া মেজের উপর পড়িয়া গেল। ঘরের ভিতর অন্ধকার, ভাল দেখা যায় না, দুর্গা মেজে হইতে উঠাইয়া লইয়া বাহিরে আসিয়া বলিল-ওমা কিসের দুটো বড় বড় ডিম এখানে! এঃ, প’ড়ে একেবারে গুঁড়ো হয়ে গিয়েচে-দেখেচো কি পাখী ডিম পেড়েচে ঘরের মধ্যে মা!”
অঙ্ক মেলে, কিন্তু মহাকাশ নামে কই? ছন্দ যদিও মেলেও বা, তবু অপার কাব্যাকাশে প্রজাপতি কবির রঙিন স্বপ্ন পাখা মেলে না, ধরণীর বুকে এসে ঠেকে চাঁদের তরণী, ফুটো লুচির মতো ক্রমে মিলিয়ে যেতে থাকে।
“তাহার পর কি ঘটিল, সে কথা না তোলাই ভালো। অপু সেদিন রাত্রে খাইল না… কান্না… হৈ হৈ কাণ্ড । তাহার মা ঘাটে গল্প করে-ছেলেটার যে কি কাণ্ড, ওমা এমন কথা তো কখনো শুনিনি-শুনেচো সেজ ঠাকুরঝি, শকুনির ডিম নিয়ে নাকি মানুষে উড়তে পারে-ওই ওদের বাড়ীর রাখাল ছোঁড়াটা বদমায়েসের ধাড়ি। তাকে বুঝি বলেচে, সে কোত্থেকে দুটা কাগের না কিসের ডিম এনে বলেছে-এই নেও শকুনের ডিম। তাই নাকি আবার চার পয়সা দিয়ে কিনেচে তার কাছে। ছেলেটা যে কি বোকা সে আর তোমার কাছে কি বলবো সেজ ঠাকুরঝি–কি করি যে এ ছেলে নিয়ে আমি!”
ওই ব্যর্থতা ক্যাবলামি? ওই শূন্যগর্ভ আকাশচারী মনের আসা-যাওয়া ক্যাবলামি? ওই পাখা ঝটপটানোয় সুষুপ্ত ভাবী উড়ানের হাতছানি ক্যাবলামি?
সত্যি! ট্রামে বাসে রাস্তায় কান পাতলে এমনটাই শোনা যায় বটে! “কি করি যে এ ছেলে নিয়ে আমি!” যতো না হতাশা আছে এতে, তার চেয়েও কিছু বেশি গর্ব আছে কি? নরুর মা এমন গরবিনী ছিলেন কীনা কবি বলেন নি, তবে…
“কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে? বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না”
তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে মনের ডানায় ভর করে। মনে মনে মেঘ, তারা সঅঅঅব ছাড়িয়ে দিনরাত কম্পমান গোল-গোল পাতাকেই সে ভেবে নেয় ডানা, যখন হাওয়া নেমে যায় পাতা কাঁপা থেমে যায় “ফেরে তার মনটি/ যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার/ ভালো লাগে আরবার/ পৃথিবীর কোণটি।”
তবু, এখনই… “এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।”
শোনা যায়, দিবসে যে ধন হারায়, আঁধার রাতে মেলে তার পরশ, অবহেলায় ছুড়ে দিলেও তা-ই আবার এসে হাতে ঠেকে, আর, না চাইতেও মেলে অধরা মাধুরী। শোনা যায়, “যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না”…
হনুমান সংসারী হতে চেয়েছিলেন। অবশেষে কিচ্চট-রাজকুমারী স্বয়ম্বরা চিলিম্পার পাণিপ্রার্থী হলেন তিনি। এই বানরী নিতান্তই বিদুষী, আধুনিকা ও দুর্বিনীতা। প্রেমিক পাণিপ্রার্থীদের অপদস্থ করাই তার বিনোদন। হনুমানের সঙ্গে প্রাথমিক সৌজন্যালাপের পর শুরু হল ইন্টারভিউ…
“চিলিম্পা কহিলেন—“হে মহাবীর, তোমার বচন শুনিয়া আমার পরম প্রীতি জন্মিয়াছে। কিন্তু স্ত্রীজাতি কেবল বীরত্ব চাহে না। তোমার কান্তগুণ কি কি আছে? তুমি নৃত্যগীত জান? কাব্য রচিতে পার?”
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১২: বিষম কালা ধুইলে ছাড়ে না
রিভিউ: নতুন থ্রিলার সিরিজ ‘সাড়ে ষোলো’—সিজন-১ ষোলো কলা পূর্ণ করেছে
হনুমান কহিলেন—“অয়ি চিলিম্পে, রাবণবধের পর আমি অধীর হইয়া একবার নৃত্যগীতের উপক্রম করিয়াছিলাম, কিন্তু নল নীল প্রভৃতি বানরগণ আমাকে উপহাস করে, তাহাতে আমি নিরস্ত হই। সুমিত্রানন্দন তখন আমাকে বলেন—মারুতি, তুমি ক্ষুব্ধ হইও না। তুমি যাহা কর তাহাই নৃত্য, যাহা বল তাহাই গীত, যাহা না বল তাহাই কাব্য, ইতরজনের বুঝিবার শক্তি নাই।”
চিলিম্পা টেবিলের উল্টো দিকে বসে থাকা বিদগ্ধ বিদ্বজ্জনের মতোই এরপর পরবর্তী প্রশ্নমালা তুলে ধরলেন।
“চিলিম্পা তাঁহার করধৃত কদলীগুচ্ছ লীলাসহকারে দংশন করিতে করিতে কহিলেন—“হে পবননন্দন তুমি প্রেমতত্ত্বের কতদূর জান? তুমি কোন জাতীয় নায়ক? ধীরোদাত্ত, ধীরোদ্ধত, প্রশান্ত না ললিত? তুমি কি করিয়া আমার মনোরঞ্জন করিবে, কি করিয়া আমার মানভঞ্জন করিবে? আমি যদি গজমুক্তার হার কামনা করি তবে তুমি কোথায় পাইবে? যদি রাগ করিয়া আহার না করি তবে কি করিবে?”
হনুমান অপ্রস্তুত পরীক্ষার্থীর মতোই আকুলি-বিকুলি করতে লাগলেন। গন্ধমাদনেই তাঁর আগ্রহ, বিশল্যকরণী তাঁর নাগালের বাইরে।
“বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে? ১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি/ দেবো না কিছুতেই আর হারাতে… চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো/ এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না?”
যারা উড়তে চায়, বুঝি ভুল করে চায়? আর যারা চায় না, তারা কি ভুল করে চায় না?
“চিলিম্পা তখন হনুমানর চিবুকে তর্জনীর মৃদু মৃদু আঘাত করিয়া মধুর স্বরে কহিলেন—”ওরে বর্বর, ওরে অবোধ, ওরে বৃদ্ধবালক, তুমি প্রেমের কিছুই জান না। যাও, কিষ্কিন্ধ্যায় গিয়া সুগ্রীবকে পাঠাইয়া দাও।”
এরপর যা ঘটল তা মারাত্মক। ক্যাবলা হনুমান বাধা পেরিয়ে ছুটে চললেন আকাশপথে।
“ঝঞ্ঝাবাহিত মেঘের ন্যায় হনুমান শূন্যমার্গে ধাবিত হইতেছেন। আকাশবিহারী সিদ্ধ—গন্ধর্ব—বিদ্যাধরগণ বলিতে লাগিলেন—’হে পবনাত্মজ, এতদিনে তোমার কৌমারদশা ঘুচিল, আশীর্বাদ করি সুখী হও।’ দিগবধূগণ ছুটিয়া আসিয়া বলিল—“হে অঞ্জনানন্দন, মুহূর্তের তরে গতি সংবরণ কর, আমরা নববধূর মুখ দেখিব।’ হনুমান হুংকার করিলেন, গগনচারিগণ ভয়ে মেঘান্তরালে পলায়ন করিল, দিগবধূগণ দিগবিদিকে বিলীন হইল।
হাতি কাদায় পড়লে মশা লাথি মারে। মানে আঘাত লাগলে ক্যাবলারা এমন হয়েও উঠতে পারে। আর যারা বেজায় সেয়ানা, তারা তখন ক্যাবলা হয়ে যায়।
“চিলিম্পা কাতর কণ্ঠে কহিলেন—“হে মহাবীর, আমার কেশ ছাড়িয়া দাও, বড়ই লাগিতেছে। বরং আমাকে পৃষ্ঠে নতুবা বক্ষে ধারণ কর।”
হনুমান বলিলেন—“চোপ!”
চিলিম্পা বলিলেন—“হে প্রাণবল্লভ, আমি একান্ত তোমারই হে অরসিক, তুমি কি পরিহাস বুঝিতে পার নাই? আমি যে তোমা—বই আর কাহাকেও জানি না।”
হনুমান পুনরুপি বলিলেন—“চোপ!”
নিম্নে কিষ্কিন্ধ্যা দেখা যাইতেছে। সুগ্রীব স্বল্পতোয়া তুঙ্গভদ্রার গর্ভে অষ্টাধিক সহস্র পত্নীসহ জলকেলি করিতেছেন।
হনুমান মুষ্টি উন্মুক্ত করিলেন। অব্যর্থ লক্ষ্য। বানরী ঘুরিতে ঘুরিতে সুগ্রীবের স্কন্ধে নিপতিত হইল।”
“যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না!”
চিলিম্পা টেবিলের উল্টো দিকে বসে থাকা বিদগ্ধ বিদ্বজ্জনের মতোই এরপর পরবর্তী প্রশ্নমালা তুলে ধরলেন।
“চিলিম্পা তাঁহার করধৃত কদলীগুচ্ছ লীলাসহকারে দংশন করিতে করিতে কহিলেন—“হে পবননন্দন তুমি প্রেমতত্ত্বের কতদূর জান? তুমি কোন জাতীয় নায়ক? ধীরোদাত্ত, ধীরোদ্ধত, প্রশান্ত না ললিত? তুমি কি করিয়া আমার মনোরঞ্জন করিবে, কি করিয়া আমার মানভঞ্জন করিবে? আমি যদি গজমুক্তার হার কামনা করি তবে তুমি কোথায় পাইবে? যদি রাগ করিয়া আহার না করি তবে কি করিবে?”
হনুমান অপ্রস্তুত পরীক্ষার্থীর মতোই আকুলি-বিকুলি করতে লাগলেন। গন্ধমাদনেই তাঁর আগ্রহ, বিশল্যকরণী তাঁর নাগালের বাইরে।
“বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে? ১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি/ দেবো না কিছুতেই আর হারাতে… চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো/ এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না?”
যারা উড়তে চায়, বুঝি ভুল করে চায়? আর যারা চায় না, তারা কি ভুল করে চায় না?
“চিলিম্পা তখন হনুমানর চিবুকে তর্জনীর মৃদু মৃদু আঘাত করিয়া মধুর স্বরে কহিলেন—”ওরে বর্বর, ওরে অবোধ, ওরে বৃদ্ধবালক, তুমি প্রেমের কিছুই জান না। যাও, কিষ্কিন্ধ্যায় গিয়া সুগ্রীবকে পাঠাইয়া দাও।”
এরপর যা ঘটল তা মারাত্মক। ক্যাবলা হনুমান বাধা পেরিয়ে ছুটে চললেন আকাশপথে।
“ঝঞ্ঝাবাহিত মেঘের ন্যায় হনুমান শূন্যমার্গে ধাবিত হইতেছেন। আকাশবিহারী সিদ্ধ—গন্ধর্ব—বিদ্যাধরগণ বলিতে লাগিলেন—’হে পবনাত্মজ, এতদিনে তোমার কৌমারদশা ঘুচিল, আশীর্বাদ করি সুখী হও।’ দিগবধূগণ ছুটিয়া আসিয়া বলিল—“হে অঞ্জনানন্দন, মুহূর্তের তরে গতি সংবরণ কর, আমরা নববধূর মুখ দেখিব।’ হনুমান হুংকার করিলেন, গগনচারিগণ ভয়ে মেঘান্তরালে পলায়ন করিল, দিগবধূগণ দিগবিদিকে বিলীন হইল।
হাতি কাদায় পড়লে মশা লাথি মারে। মানে আঘাত লাগলে ক্যাবলারা এমন হয়েও উঠতে পারে। আর যারা বেজায় সেয়ানা, তারা তখন ক্যাবলা হয়ে যায়।
“চিলিম্পা কাতর কণ্ঠে কহিলেন—“হে মহাবীর, আমার কেশ ছাড়িয়া দাও, বড়ই লাগিতেছে। বরং আমাকে পৃষ্ঠে নতুবা বক্ষে ধারণ কর।”
হনুমান বলিলেন—“চোপ!”
চিলিম্পা বলিলেন—“হে প্রাণবল্লভ, আমি একান্ত তোমারই হে অরসিক, তুমি কি পরিহাস বুঝিতে পার নাই? আমি যে তোমা—বই আর কাহাকেও জানি না।”
হনুমান পুনরুপি বলিলেন—“চোপ!”
নিম্নে কিষ্কিন্ধ্যা দেখা যাইতেছে। সুগ্রীব স্বল্পতোয়া তুঙ্গভদ্রার গর্ভে অষ্টাধিক সহস্র পত্নীসহ জলকেলি করিতেছেন।
হনুমান মুষ্টি উন্মুক্ত করিলেন। অব্যর্থ লক্ষ্য। বানরী ঘুরিতে ঘুরিতে সুগ্রীবের স্কন্ধে নিপতিত হইল।”
“যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না!”
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১১: মশ্যা রে তুঁহু মম শ্যাম-সমান
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-8: চলতি কা নাম কিশোর
সে যাই হোক, টেনিদা কী চেয়েছিল দেখা যাক। যাদের চালচলন হঠাৎ করে বদলে যায়, হঠাত্ করে ওড়ার শখ হয় খানিক, বা ঘোড়ারোগে ধরে তাদের, লোকে বলে তাদের লেজ গজায়, অথবা পাখা বা ডানা। যেমনটা পিঁপড়ের গজাতে দেখা গিয়েছে। এর পিছন পিছন আসে “সর্বনাশে সমুত্পন্নে’র তত্ত্ব“, “কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আঁধারে/ যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ/ মরিবার হল তার সাধ।”
যে সাধে বুদ্ধের দাসী শ্রীমতী স্তূপপদমূলে দীপমালা জ্বালে, যে সাধে সেদিন শুভ্র পাষাণফলকে শেষ আরতির শিখাটুকু নিবে যায় চকিতে, অকস্মাৎ… তার কথা থাক বরং। বরং দেখা যাক, টেনিদার সাধ কী ছিল।
“টেনিদা মিটমিট করে হেসে বললে, হয়েছে, বোঝা গেছে তাদের দৌড়। আর আমি কী ওড়াব জানিস? আমি–এই টেনি শর্মা?–টেনিদা খাড়া নাকটাকে খাঁড়ার মতো উঁচু করে নিজের বুকে দুটো টোকা মেরে বললে, আমি যা ওড়াব–তা আকাশে বোঁ বোঁ করে উড়বে, গোঁ গোঁ করে এরোপ্লেনের মতো ডাক ছাড়বে-হুঁ হুঁ! ডি-লা-গ্র্যান্ডি—
বাকিটা ক্যাবলা আর বলতে দিলে না। ফস করে বলে বসল : ঢাউস ঘুড়ি বানিয়েছ বুঝি?
—বানিয়েছ বুঝি?
—টেনিদা রেগে ভেংচে বললে, তুই আগে থেকে বলে দিলি কেন? তোকে আমি বলতে বারণ করিনি?
ক্যাবলা আশ্চর্য হয়ে বললে, তুমি আমাকে ঢাউস ঘুড়ির কথা বললেই বা কখন, বারণই বা করলে কবে? আমি তো নিজেই ভেবে বললুম।
—কেন ভাবলি?–টেনিদা রকে একটা কিল মেরেই উঃ উঃ করে উঠল : বলি, আগ বাড়িয়ে তোকে এসব ভাবতে বলেছে কে র্যা? প্যালা ভাবেনি, হাবলা ভাবেনি–তুই কেন ভাবতে গেলি?”
এই হল আসল কথা। “কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে?” এমন ভেবে ভেবে ভাবের ঘরে চুরি আর কদিন হে? এরপর ঐ ঢাউস যখন গড়ের মাঠ, কেল্লা, হাওড়া ব্রিজ, গঙ্গা পার হয়ে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইবে তেপান্তরের দিকে তখন অপুর কল্পনা না হনুমানের স্বপ্ন কোনটা বেশি বাস্তব মনে হবে?
“অনেক ওপর থেকে টেনিদা যেন কী বললে। আমরা শুনতে পেলুম না। কেবল কাঁউ কাঁউ করে খানিকটা আওয়াজ আকাশ থেকে ভেসে এল।
কিন্তু ওদিকে ঢাউস যত গঙ্গার দিকে এগোচ্ছে তত হাওয়ার জোরও বাড়ছে। পিছনে ছুটে আমরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না। টেনিদা উড়ছে আর ডিগবাজি খাচ্ছে, ডিগবাজি খাচ্ছে আর উড়ছে।
স্ট্যান্ড রোড এসে পড়ল প্রায়। ঘুড়ি সমানে ছুটে চলেছে। এখুনি গঙ্গার ওপরে চলে যাবে। আমাদের লিডার যে সত্যিই গঙ্গা পেরিয়ে বর্ধমান হয়ে দিল্লি ছাড়িয়ে মঙ্গলগ্রহেই চলল। আমরা যে অনাথ হয়ে গেলুম।”
যে সাধে বুদ্ধের দাসী শ্রীমতী স্তূপপদমূলে দীপমালা জ্বালে, যে সাধে সেদিন শুভ্র পাষাণফলকে শেষ আরতির শিখাটুকু নিবে যায় চকিতে, অকস্মাৎ… তার কথা থাক বরং। বরং দেখা যাক, টেনিদার সাধ কী ছিল।
“টেনিদা মিটমিট করে হেসে বললে, হয়েছে, বোঝা গেছে তাদের দৌড়। আর আমি কী ওড়াব জানিস? আমি–এই টেনি শর্মা?–টেনিদা খাড়া নাকটাকে খাঁড়ার মতো উঁচু করে নিজের বুকে দুটো টোকা মেরে বললে, আমি যা ওড়াব–তা আকাশে বোঁ বোঁ করে উড়বে, গোঁ গোঁ করে এরোপ্লেনের মতো ডাক ছাড়বে-হুঁ হুঁ! ডি-লা-গ্র্যান্ডি—
বাকিটা ক্যাবলা আর বলতে দিলে না। ফস করে বলে বসল : ঢাউস ঘুড়ি বানিয়েছ বুঝি?
—বানিয়েছ বুঝি?
—টেনিদা রেগে ভেংচে বললে, তুই আগে থেকে বলে দিলি কেন? তোকে আমি বলতে বারণ করিনি?
ক্যাবলা আশ্চর্য হয়ে বললে, তুমি আমাকে ঢাউস ঘুড়ির কথা বললেই বা কখন, বারণই বা করলে কবে? আমি তো নিজেই ভেবে বললুম।
—কেন ভাবলি?–টেনিদা রকে একটা কিল মেরেই উঃ উঃ করে উঠল : বলি, আগ বাড়িয়ে তোকে এসব ভাবতে বলেছে কে র্যা? প্যালা ভাবেনি, হাবলা ভাবেনি–তুই কেন ভাবতে গেলি?”
এই হল আসল কথা। “কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে?” এমন ভেবে ভেবে ভাবের ঘরে চুরি আর কদিন হে? এরপর ঐ ঢাউস যখন গড়ের মাঠ, কেল্লা, হাওড়া ব্রিজ, গঙ্গা পার হয়ে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইবে তেপান্তরের দিকে তখন অপুর কল্পনা না হনুমানের স্বপ্ন কোনটা বেশি বাস্তব মনে হবে?
“অনেক ওপর থেকে টেনিদা যেন কী বললে। আমরা শুনতে পেলুম না। কেবল কাঁউ কাঁউ করে খানিকটা আওয়াজ আকাশ থেকে ভেসে এল।
কিন্তু ওদিকে ঢাউস যত গঙ্গার দিকে এগোচ্ছে তত হাওয়ার জোরও বাড়ছে। পিছনে ছুটে আমরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না। টেনিদা উড়ছে আর ডিগবাজি খাচ্ছে, ডিগবাজি খাচ্ছে আর উড়ছে।
স্ট্যান্ড রোড এসে পড়ল প্রায়। ঘুড়ি সমানে ছুটে চলেছে। এখুনি গঙ্গার ওপরে চলে যাবে। আমাদের লিডার যে সত্যিই গঙ্গা পেরিয়ে বর্ধমান হয়ে দিল্লি ছাড়িয়ে মঙ্গলগ্রহেই চলল। আমরা যে অনাথ হয়ে গেলুম।”
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৪: গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে ওষুধ খেলে গলে যায়?
কলকাতার পথ-হেঁশেল: উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া—প্রাণের আশ-প্যান্থেরাস
অপু কি উড়তে পেরেছিল? অথবা ঐ তালগাছটা? হনুমানের কি বিয়ে হল? চিলিম্পার কি হল? টেনিদা কি মঙ্গলে চলে গেল?
আরে ধুর!
আর টেনিদা? টেনিদা কোথায়? সেও কি ঘুড়ির সঙ্গে গঙ্গায় নামল?
“না—গঙ্গায় নামেনি। টেনিদা আটকে আছে। আটকে আছে আউটরাম ঘাটের একটা মস্ত গাছের মগডালে। আর বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে একদল কাক কাকা করে টেনিদার চারপাশে চক্কর দিচ্ছে।
ছুটতে ছুটতে আমরা গাছতলায় এসে হাজির হলুম। কেবল আমরাই নই। চারিদিক থেকে তখন প্রায় শ-দুই লোক জড়ো হয়েছে সেখানে। পোর্ট কমিশনারের খালাসি, নৌকোর মাঝি, দুটো সাহেব—তিনটে মেম।
—ওঃ মাই–হোয়াজজাট (হোয়াটস দ্যাট)?–বলেই একটা মেম ভিরমি গেল।
কিন্তু তখন আর মেমের দিকে কে তাকায়? আমি চেঁচিয়ে বললুম, টেনিদা, তা হলে মঙ্গলগ্রহে গেলে না শেষ পর্যন্ত?
টেনিদা ঢাউস ঘুড়ির মতো গোঁ-গোঁ আওয়াজ করে বললে, কাকে ঠোকরাচ্ছে!”
ত্রিশঙ্কু স্বর্গে প্রবেশাধিকার পাননি, ফিরতে পারেননি মর্ত্যেও। উদ্বাহু হলেও প্রাংশুলভ্য ফলে বঞ্চিত থাকেন। ক্যাবলারা ভুল করে চাওয়া আর অলভ্য-অপ্রাপ্যের দড়ি টানাটানির আবর্তে “দশজনে পারে যাহা তুমিও পারিবে তাহা”র চক্করে জীবনে অনেক কিছু হারায়, পায়-ও হয়তো কিছু, বিদ্বান ব্যক্তি এই শক্তিক্ষয়ের তাত্ত্বিক পরিভাষায় জানাবেন Sunk Cost Fallacy-র ধারণা।
আর একজন স্কুলপালানো বিশ্বকবি বলবেন “স্বর্গ ও মর্তের মাঝখানে একটা অনির্দ্দেশ্য অরাজক স্থান আছে, যেখানে ত্রিশঙ্কু রাজা ভাসিয়া বেড়াইতেছেন; যেখানে আকাশকুসুমের অজস্র আবাদ হইয়া থাকে। সেই বায়ুদূর্গবেষ্টিত মহাদেশের নাম “হইলে-হইতে পারিত”।”
ছোটবেলার ক্যাবলারা, বড়বেলার ছোটোরা এই কল্পরাজ্যে রাজা-উজির মারে, আকাশকুসুম চয়ন করে, সোনার হরিণের পিছনে দৌড়োয়, তাদের ছোটো ছোটো স্বপ্নগুলো ঢাউস হয়, বড়বড় ইচ্ছেগুলো তারে আটকায়, অথবা জাহাজের মতো সরে সরে দূরলোকে পাড়ি জন্মায়, যা চায় তা ভুল করে চায়, যা পায় তা চায় না।
ঋণ স্বীকার:
● শিরোনাম শিলাজিত্ মজুমদারের গান থেকে
● আশ্চর্য কবিতা: সুকুমার রায়
● পথের পাঁচালী: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
● বাংলাটা ঠিক আসে না: ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
● তালগাছ, শিশু ভোলানাথ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
● ২৪৪১১৩৯ বেলা বোস: অঞ্জন দত্তের গান
● হনুমানের স্বপ্ন: রাজশেখর বসু
● ঢাউস: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
● আট বছর আগের একদিন, মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থ: জীবনানন্দ দাশ
● পাগল হইয়া বনে বনে ফিরি, উৎসর্গ ৭: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
● প্রায়শ্চিত্ত: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আরে ধুর!
আর টেনিদা? টেনিদা কোথায়? সেও কি ঘুড়ির সঙ্গে গঙ্গায় নামল?
“না—গঙ্গায় নামেনি। টেনিদা আটকে আছে। আটকে আছে আউটরাম ঘাটের একটা মস্ত গাছের মগডালে। আর বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে একদল কাক কাকা করে টেনিদার চারপাশে চক্কর দিচ্ছে।
ছুটতে ছুটতে আমরা গাছতলায় এসে হাজির হলুম। কেবল আমরাই নই। চারিদিক থেকে তখন প্রায় শ-দুই লোক জড়ো হয়েছে সেখানে। পোর্ট কমিশনারের খালাসি, নৌকোর মাঝি, দুটো সাহেব—তিনটে মেম।
—ওঃ মাই–হোয়াজজাট (হোয়াটস দ্যাট)?–বলেই একটা মেম ভিরমি গেল।
কিন্তু তখন আর মেমের দিকে কে তাকায়? আমি চেঁচিয়ে বললুম, টেনিদা, তা হলে মঙ্গলগ্রহে গেলে না শেষ পর্যন্ত?
টেনিদা ঢাউস ঘুড়ির মতো গোঁ-গোঁ আওয়াজ করে বললে, কাকে ঠোকরাচ্ছে!”
ত্রিশঙ্কু স্বর্গে প্রবেশাধিকার পাননি, ফিরতে পারেননি মর্ত্যেও। উদ্বাহু হলেও প্রাংশুলভ্য ফলে বঞ্চিত থাকেন। ক্যাবলারা ভুল করে চাওয়া আর অলভ্য-অপ্রাপ্যের দড়ি টানাটানির আবর্তে “দশজনে পারে যাহা তুমিও পারিবে তাহা”র চক্করে জীবনে অনেক কিছু হারায়, পায়-ও হয়তো কিছু, বিদ্বান ব্যক্তি এই শক্তিক্ষয়ের তাত্ত্বিক পরিভাষায় জানাবেন Sunk Cost Fallacy-র ধারণা।
আর একজন স্কুলপালানো বিশ্বকবি বলবেন “স্বর্গ ও মর্তের মাঝখানে একটা অনির্দ্দেশ্য অরাজক স্থান আছে, যেখানে ত্রিশঙ্কু রাজা ভাসিয়া বেড়াইতেছেন; যেখানে আকাশকুসুমের অজস্র আবাদ হইয়া থাকে। সেই বায়ুদূর্গবেষ্টিত মহাদেশের নাম “হইলে-হইতে পারিত”।”
ছোটবেলার ক্যাবলারা, বড়বেলার ছোটোরা এই কল্পরাজ্যে রাজা-উজির মারে, আকাশকুসুম চয়ন করে, সোনার হরিণের পিছনে দৌড়োয়, তাদের ছোটো ছোটো স্বপ্নগুলো ঢাউস হয়, বড়বড় ইচ্ছেগুলো তারে আটকায়, অথবা জাহাজের মতো সরে সরে দূরলোকে পাড়ি জন্মায়, যা চায় তা ভুল করে চায়, যা পায় তা চায় না।
ঋণ স্বীকার:
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।