ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
রাজা দশরথের চারপুত্রের বিবাহ সুসম্পন্ন হল। এ বার বরবধূগণ-সহ অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে। ঋষি বিশ্বামিত্রের কর্তব্য সম্পন্ন হয়েছে। শ্রীরামচন্দ্রের রাজকর্তব্য এবং জীবনপাঠে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বার তাঁর ফিরে যাবার পালা। তিনি হিমালয়ের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করলেন।
রাজা জনক আনন্দিতচিত্তে কন্যাধন সাজিয়ে দিলেন। বরবধূদের নিয়ে অযোধ্যাভিমুখে যাত্রা করলেন রাজা দশরথ। সেই বিশাল অভিযাত্রায় পুরোভাগে রইলেন ঋষিগণ। সঙ্গে চললেন সৈন্যদল, সহচর এবং রাঘববৃন্দ।
পথে হঠাৎ ঘোর শব্দ, পাখিরা যেন দিকভ্রান্ত, তারা যেন ব্যাকুল, চতুর্দিকে অস্থিরতা। উদ্বিগ্ন রাজা কুলগুরু বসিষ্ঠকে প্রশ্ন করলেন, শঙ্কাজনক এই পরিস্থিতির কারণে কী? অসৌম্যা পক্ষিণো বোরা মৃগাশ্চাপি প্রদক্ষিণাঃ। কিমিদং হৃদয়োৎকম্পি মনো মম বিষীদতি।। ঋষি মধুরবচনে আশ্বস্ত করে বললেন, পাখিদের এই ভয়ার্ত কলকাকলি উদ্বেগসূচক হলেও হরিণেরা প্রদক্ষিণরত অবস্থায় যেন বিপদে অভয়দান করছে। উপস্থিতং ভয়ং ঘোরং দিব্যং পক্ষিমুখাচ্চ্যুতম্।। মৃগাঃ প্রশময়ন্ত্যেতে সন্তাপস্ত্যজ্যতাময়ম্। অর্থাৎ আসন্ন বিপদের সমাধান নিশ্চয়ই হবে। এমন আলাপচারিতার মাঝেই প্রবল ঝড় এবং ভূকম্পন শুরু হল।বায়ুবেগে মহীরুহরা ভেঙ্গে পড়তে লাগল। সূর্যালোক ঢাকা পড়ল ঘোর আঁধারে।সেই অন্ধকার এমনই, যে দিকভ্রান্তি হতে লাগল।
রাজা জনক আনন্দিতচিত্তে কন্যাধন সাজিয়ে দিলেন। বরবধূদের নিয়ে অযোধ্যাভিমুখে যাত্রা করলেন রাজা দশরথ। সেই বিশাল অভিযাত্রায় পুরোভাগে রইলেন ঋষিগণ। সঙ্গে চললেন সৈন্যদল, সহচর এবং রাঘববৃন্দ।
পথে হঠাৎ ঘোর শব্দ, পাখিরা যেন দিকভ্রান্ত, তারা যেন ব্যাকুল, চতুর্দিকে অস্থিরতা। উদ্বিগ্ন রাজা কুলগুরু বসিষ্ঠকে প্রশ্ন করলেন, শঙ্কাজনক এই পরিস্থিতির কারণে কী? অসৌম্যা পক্ষিণো বোরা মৃগাশ্চাপি প্রদক্ষিণাঃ। কিমিদং হৃদয়োৎকম্পি মনো মম বিষীদতি।। ঋষি মধুরবচনে আশ্বস্ত করে বললেন, পাখিদের এই ভয়ার্ত কলকাকলি উদ্বেগসূচক হলেও হরিণেরা প্রদক্ষিণরত অবস্থায় যেন বিপদে অভয়দান করছে। উপস্থিতং ভয়ং ঘোরং দিব্যং পক্ষিমুখাচ্চ্যুতম্।। মৃগাঃ প্রশময়ন্ত্যেতে সন্তাপস্ত্যজ্যতাময়ম্। অর্থাৎ আসন্ন বিপদের সমাধান নিশ্চয়ই হবে। এমন আলাপচারিতার মাঝেই প্রবল ঝড় এবং ভূকম্পন শুরু হল।বায়ুবেগে মহীরুহরা ভেঙ্গে পড়তে লাগল। সূর্যালোক ঢাকা পড়ল ঘোর আঁধারে।সেই অন্ধকার এমনই, যে দিকভ্রান্তি হতে লাগল।
ঋষি বসিষ্ঠ, অন্যান্য ঋষিগণ, সপুত্র রাজা দশরথ ছাড়া সকল সৈন্যদল যেন ভস্মাবৃত হয়ে সংজ্ঞা হারালেন। এই অবস্থায় রাজা দশরথের সম্মুখে দৃশ্যমান হলেন, জটাজুটধারী, অতি ভয়ঙ্করাকৃতি, ভৃগুনন্দন ঋষি জমদগ্নির পুত্র পরশুরাম। কৈলাশের মতো দুর্দ্ধর্ষ, প্রলয়কালীন অগ্নির মতো দুঃসহ, তেজোদীপ্ত, সর্বসাধারণের পক্ষে যাঁকে নিরীক্ষণ করা দুষ্কর, কাঁধে তাঁর কুঠার, হাতে বিদ্যুতপ্রভাসম ধনু ও ভয়ানক শর, ত্রিপুরবিনাশকারী রুদ্রদেব মহাদেবের মতো তাঁর আবির্ভাব। প্রজ্বলিত অগ্নির মতো তাঁর প্রদীপ্ত রূপ দেখে বসিষ্ঠ প্রমুখ নিত্য জপ ও হোমকারী মুনিগণ জল্পনা করতে লাগলেন, উনি কি পিতৃহত্যার প্রতিহিংসাজনিত ক্রোধে আবারও ক্ষত্রিয়নিধনে প্রবৃত্ত হবেন? কচ্চিৎ পিতৃবধামর্ষী ক্ষত্রং নোৎসাদয়িষ্যতি।। উনি যে পূর্বেই ক্ষত্রিয়দের নির্মূল করে ক্রোধবহ্নি নির্বাপিত করেছেন তবে আবারও কী তাঁর সেরূপ অভিপ্রায় হবে কী?
হয়তো নয়। পূর্ব্বং ক্ষত্ত্রবধং কৃত্বা গতমন্যুর্গতজ্বরঃ। ক্ষত্রোস্যোৎসাদনং ভূয়ো ন খল্বস্য চিকীর্ষিতম্।। ঋষিরা সমীহভরে সেই ভয়ঙ্করদর্শন ভৃগুবংশীয় পরশুরামকে অর্ঘ্য দান করলেন। শৌর্য্যশালী রাম অর্থাৎ পরশুরাম দাশরথি শ্রীরামচন্দ্রকে বললেন, তিনি রামচন্দ্রের শৌর্য এবং অকল্পনীয় এবং দুঃসাধ্য, বিস্ময়কর হরধনুভঙ্গের সমস্ত বৃত্তান্ত শুনেছেন। সেই অদ্ভুত হরধনুভগ্নের কাহিনি শুনে তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পিতৃদত্ত একটি মহাধনুক। বললেন, তুমি এই ভীষণাকার মহাধনুটিতে শরসংযোগ কর দেখি। তোমার শক্তিমত্তার পরীক্ষা এ বার। ধনুকটিকে জ্যাসংযোগ করলেই আমি তোমার সঙ্গে বীরোচিত দ্বন্দ্বযুদ্ধে প্রবৃত্ত হব আমি। পূরয়স্ব শরেণৈব স্ববলং দর্শয়স্ব চ।। তদহং তে বলং দৃষ্ট্বা ধনুষোঽপ্যস্য পূরণে।দ্বন্দ্বযুদ্ধং প্রদাস্যামি বীর্য্যশ্লাঘ্যমহং তব। স্নেহপ্রবণ পিতা দশরথ আকুল হয়ে ভেঙ্গে পড়লেন। বিষণ্ণ পিতা দীনহীনের মতো করজোড়ে অনুরোধ করলেন সেই পরমজ্ঞানী ভার্গব পরশুরামকে, ক্ষত্ররোষাৎ প্রশান্তস্ত্বং ব্রাহ্মণশ্চ মহাতপাঃ। বালানাং মম পুত্রাণামভয়ং দাতুমর্হসি।। ক্ষত্রিয়দের প্রতি আপনার ক্রোধ প্রশমিত হয়েছে। নিতান্ত বালক আমার পুত্রদের অভয়দান করুন। রাজা দশরথ পরশুরামের স্মরণে আনলেন জামদগ্ন্য পরশুরাম ইন্দ্রের অনুরোধে ইতিমধ্যে অস্ত্রত্যাগ করেছেন। মহর্ষি কশ্যপকে অর্জিত পৃথিবী দান করেছেন। অধুনা মহেন্দ্রপর্বত ভার্গব পরশুরামের নিবাস। রামচন্দ্রের পিতা দশরথ ধরেই নিয়েছেন তাঁর পুত্রের বিনাশের জন্যেই পরশুরামের আবির্ভাব নিশ্চয়ই। রামচন্দ্রের বিনাশে যে প্রাণধারণ দুষ্কর হয়ে পড়বে। মম সর্ব্ববিনাশায় সম্প্রাপ্তস্ত্বং মহামুনে। ন চৈকস্মিন্ হতে রামে সর্ব্বে জীবামহে বয়ম্।। সব হারানোর বেদনায় তাঁর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।
হয়তো নয়। পূর্ব্বং ক্ষত্ত্রবধং কৃত্বা গতমন্যুর্গতজ্বরঃ। ক্ষত্রোস্যোৎসাদনং ভূয়ো ন খল্বস্য চিকীর্ষিতম্।। ঋষিরা সমীহভরে সেই ভয়ঙ্করদর্শন ভৃগুবংশীয় পরশুরামকে অর্ঘ্য দান করলেন। শৌর্য্যশালী রাম অর্থাৎ পরশুরাম দাশরথি শ্রীরামচন্দ্রকে বললেন, তিনি রামচন্দ্রের শৌর্য এবং অকল্পনীয় এবং দুঃসাধ্য, বিস্ময়কর হরধনুভঙ্গের সমস্ত বৃত্তান্ত শুনেছেন। সেই অদ্ভুত হরধনুভগ্নের কাহিনি শুনে তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পিতৃদত্ত একটি মহাধনুক। বললেন, তুমি এই ভীষণাকার মহাধনুটিতে শরসংযোগ কর দেখি। তোমার শক্তিমত্তার পরীক্ষা এ বার। ধনুকটিকে জ্যাসংযোগ করলেই আমি তোমার সঙ্গে বীরোচিত দ্বন্দ্বযুদ্ধে প্রবৃত্ত হব আমি। পূরয়স্ব শরেণৈব স্ববলং দর্শয়স্ব চ।। তদহং তে বলং দৃষ্ট্বা ধনুষোঽপ্যস্য পূরণে।দ্বন্দ্বযুদ্ধং প্রদাস্যামি বীর্য্যশ্লাঘ্যমহং তব। স্নেহপ্রবণ পিতা দশরথ আকুল হয়ে ভেঙ্গে পড়লেন। বিষণ্ণ পিতা দীনহীনের মতো করজোড়ে অনুরোধ করলেন সেই পরমজ্ঞানী ভার্গব পরশুরামকে, ক্ষত্ররোষাৎ প্রশান্তস্ত্বং ব্রাহ্মণশ্চ মহাতপাঃ। বালানাং মম পুত্রাণামভয়ং দাতুমর্হসি।। ক্ষত্রিয়দের প্রতি আপনার ক্রোধ প্রশমিত হয়েছে। নিতান্ত বালক আমার পুত্রদের অভয়দান করুন। রাজা দশরথ পরশুরামের স্মরণে আনলেন জামদগ্ন্য পরশুরাম ইন্দ্রের অনুরোধে ইতিমধ্যে অস্ত্রত্যাগ করেছেন। মহর্ষি কশ্যপকে অর্জিত পৃথিবী দান করেছেন। অধুনা মহেন্দ্রপর্বত ভার্গব পরশুরামের নিবাস। রামচন্দ্রের পিতা দশরথ ধরেই নিয়েছেন তাঁর পুত্রের বিনাশের জন্যেই পরশুরামের আবির্ভাব নিশ্চয়ই। রামচন্দ্রের বিনাশে যে প্রাণধারণ দুষ্কর হয়ে পড়বে। মম সর্ব্ববিনাশায় সম্প্রাপ্তস্ত্বং মহামুনে। ন চৈকস্মিন্ হতে রামে সর্ব্বে জীবামহে বয়ম্।। সব হারানোর বেদনায় তাঁর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-২৩: দ্রোণাচার্যের সেরা ছাত্র এবং গুরুর প্রীতি আশীর্বাদ—ব্রহ্মশির অস্ত্র ও তার মাহাত্ম্য
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭: গৃহিণী সারদার প্রথম দক্ষিণেশ্বর আগমন
শৌর্যশালী পরশুরাম রাজা দশরথকে উপেক্ষা করলেন। রামচন্দ্রকে লক্ষ্য করে তাঁর মহাধনুটির মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে লাগলেন। সুরলোকের স্থপতি বিশ্বকর্মা সযত্নে, সুদৃঢ়, শত্রুনিধনে সামর্থ্যযুক্ত, সর্বলোকপূজিত, দিব্য, দুটি ধনুক নির্মাণ করেছিলেন। যে ধনুকটি জনকরাজগৃহে সুরক্ষিত ছিল সেটি দেবতারা মহাদেবকে ত্রিপুরবিনাশের নিমিত্ত দিয়েছিলেন। সেই ধনুকটি মহাদেব, জনকরাজার পূর্বসূরির কাছে ন্যাসরূপে গচ্ছিত রেখেছিলেন। যেটি পুরুষানুক্রমে রাজা জনকের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছিল। সেই ধনুটিই তাঁর বীর্য্যশুল্কা কন্যা সীতার কন্যাপণ হিসেবে নির্দিষ্ট হয়েছিল। সেই ধনুকটি ভগ্ন করে সীতাকে পত্নীরূপে লাভ করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র।
বিশ্বকর্মানির্মিত অপর ধনুটি জামদগ্ন্য ধনু নামে পরিচিত। এই ধনুকটির লোকপ্রসিদ্ধ নাম হল বৈষ্ণব ধনু। একদা শিব ও বিষ্ণু পরস্পর বলাবলনির্ধারণে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। ক্রমে যুদ্ধ রোমাঞ্চকর মহাযুদ্ধে পরিণত হল। যুধ্যমান দুই শক্তি। বিষ্ণুর হুঙ্কারে মহাদেবের শৈবধনু শিথিল হয়ে পড়ল। দেবতারা উভয়ের যুদ্ধশান্তি প্রার্থনা করলেন। বিষ্ণুর অবিসংবাদী শক্তি প্রতিষ্ঠিত হল। ক্রুদ্ধ মহাদেব বিদেহপতি দেবরাতকে তাঁর ধনুকটি সমর্পণ করলেন।
আর বিষ্ণু তাঁর ধনুকটি ভৃগুবংশীয় ঋচীকের কাছে ন্যাসরূপে গচ্ছিত রাখলেন। বংশানুক্রমে ঋচীকপুত্র জমদগ্নি সেই বৈষ্ণবধনুকটি লাভ করলেন। একদা নিরস্ত্র ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তপস্যারত জমদগ্নিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন রাজা কার্ত্তবীর্য্যার্জুন। এই অসঙ্গত নিদারুণ মৃত্যু ব্যথিতহৃদয় পরশুরাম সহ্য করতে পারলেন না। অসহনীয় দহনজ্বালায় ক্ষত্রিয়সংহারে মেতে উঠলেন।তিনি রামচন্দ্রকে জানালেন, বধমপ্রতিরূপন্তু পিতুঃ শ্রুত্বা সুদারুণম্। ক্ষত্রমুৎসাদয়ং রোষাজ্জাতঞ্জাতমনেকশঃ।। তিনি এই ক্ষত্রিয়নিধনযজ্ঞে নবজাত এবং গর্ভস্থ শিশুকেও রেহাই দেননি। রামচন্দ্রের হরধনুভঙ্গের সংবাদে তিনি সত্বর উদ্যোগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি রামচন্দ্রকে যেন আদেশের সুরে বললেন, তদিদং বৈষ্ণবং রাম পিতৃপৈতামহং মহৎ। ক্ষত্রধর্মং পুরস্কৃত্য গৃহীষ্ব ধনুরুত্তমম্।। ক্ষত্রধর্মপালনের অঙ্গ হিসেবে সেই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আমার বৈষ্ণবধনুকটি গ্রহণ কর। এরপরের প্রস্তাব হল, শর যোজনায় সমর্থ হলে পরশুরামের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অংশ নিতে হবে দাশরথি রামচন্দ্রকে।
বিশ্বকর্মানির্মিত অপর ধনুটি জামদগ্ন্য ধনু নামে পরিচিত। এই ধনুকটির লোকপ্রসিদ্ধ নাম হল বৈষ্ণব ধনু। একদা শিব ও বিষ্ণু পরস্পর বলাবলনির্ধারণে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। ক্রমে যুদ্ধ রোমাঞ্চকর মহাযুদ্ধে পরিণত হল। যুধ্যমান দুই শক্তি। বিষ্ণুর হুঙ্কারে মহাদেবের শৈবধনু শিথিল হয়ে পড়ল। দেবতারা উভয়ের যুদ্ধশান্তি প্রার্থনা করলেন। বিষ্ণুর অবিসংবাদী শক্তি প্রতিষ্ঠিত হল। ক্রুদ্ধ মহাদেব বিদেহপতি দেবরাতকে তাঁর ধনুকটি সমর্পণ করলেন।
আর বিষ্ণু তাঁর ধনুকটি ভৃগুবংশীয় ঋচীকের কাছে ন্যাসরূপে গচ্ছিত রাখলেন। বংশানুক্রমে ঋচীকপুত্র জমদগ্নি সেই বৈষ্ণবধনুকটি লাভ করলেন। একদা নিরস্ত্র ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তপস্যারত জমদগ্নিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন রাজা কার্ত্তবীর্য্যার্জুন। এই অসঙ্গত নিদারুণ মৃত্যু ব্যথিতহৃদয় পরশুরাম সহ্য করতে পারলেন না। অসহনীয় দহনজ্বালায় ক্ষত্রিয়সংহারে মেতে উঠলেন।তিনি রামচন্দ্রকে জানালেন, বধমপ্রতিরূপন্তু পিতুঃ শ্রুত্বা সুদারুণম্। ক্ষত্রমুৎসাদয়ং রোষাজ্জাতঞ্জাতমনেকশঃ।। তিনি এই ক্ষত্রিয়নিধনযজ্ঞে নবজাত এবং গর্ভস্থ শিশুকেও রেহাই দেননি। রামচন্দ্রের হরধনুভঙ্গের সংবাদে তিনি সত্বর উদ্যোগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি রামচন্দ্রকে যেন আদেশের সুরে বললেন, তদিদং বৈষ্ণবং রাম পিতৃপৈতামহং মহৎ। ক্ষত্রধর্মং পুরস্কৃত্য গৃহীষ্ব ধনুরুত্তমম্।। ক্ষত্রধর্মপালনের অঙ্গ হিসেবে সেই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আমার বৈষ্ণবধনুকটি গ্রহণ কর। এরপরের প্রস্তাব হল, শর যোজনায় সমর্থ হলে পরশুরামের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অংশ নিতে হবে দাশরথি রামচন্দ্রকে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?
কলকাতার পথ-হেঁশেল: যাদবপুর—যদুকুল ও চপস্টিকস
রামচন্দ্র জানালেন তিনি এই সব তথ্য অবগত আছেন। তিনি পরশুরামের প্রতিশোধস্পৃহায় নৃশংস আচরণ শুনেছেন এবং সহ্য করেছেন। কিন্তু মাননীয় পরশুরামের এই ক্ষাত্রধর্মপালনে রামচন্দ্রের শৌর্যের যে অবমূল্যায়ন তা তিনি সহ্য করবেন না। বীর্য্যহীনমিবাশক্তং ক্ষত্রধর্ম্মেণ ভার্গব। অবজানাসি মে তেজঃ পশ্য মেঽদ্য পরাক্রমম্।। এ বার দেখুন আমার শক্তিমত্তার প্রকাশ। শ্রীরামচন্দ্র সরোষে বৈষ্ণবধনু ও শর গ্রহণ করে অনায়াসে জ্যা আরোপ করে শর যোজনা করলেন। সক্রোধে রামচন্দ্র ভার্গব, জমদগ্নিপুত আর এক রামকে বললেন, পরশুরাম ব্রাহ্মণ এবং বিবাহসূত্রে মাননীয় বিশ্বামিত্রের ভগ্নীপতি। তাই তিনি পূজ্য বিশ্বামিত্রের সম্মানার্থে পরশুরামের প্রাণহরণে অক্ষম।
রামচন্দ্র তাঁর গতিশক্তি এবং তপস্যার ফল বিনষ্ট করতে ইচ্ছুক। এই বৈষ্ণবশরের অব্যর্থ নিশানা। ফলাফল নিশ্চিত। বীরদর্পে পরশুরামের সম্মুখে দণ্ডায়মান ধনুর্ধারী রামচন্দ্র পরশুরামের তেজ হরণ করলেন। জড়পদার্থতুল্য নির্বীর্য্য হলেন পরশুরাম। মনের গতিতে নিজের গন্তব্য মহেন্দ্রপর্বতে প্রস্থানের সিদ্ধান্ত নিলেনতিনি। পরশুরাম অনুরোধ জানালেন রামচন্দ্রকে, তামিমং মদ্গতিং বীর হন্তুং নার্হসি রাঘব। হে বীর রাঘব, আমার গতিকে রুদ্ধ করো না। তিনি রামচন্দ্রের মঙ্গল কামনা করে বললেন, ধনুতে জ্যা আরোপণের শক্তিমত্তায় তিনি স্থির নিশ্চিত যে রামচন্দ্রই অক্ষয়, মধুসূদন, বিষ্ণু। রামচন্দ্রের নিক্ষিপ্ত শরক্ষেপণে সমস্ত তপস্যার্জিত লোক হারিয়ে পরশুরাম মহেন্দ্রপর্বতে প্রস্থান করলেন। শ্রীরামচন্দ্র তাঁকে যথোচিত মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন করলেন।
রামচন্দ্র তাঁর গতিশক্তি এবং তপস্যার ফল বিনষ্ট করতে ইচ্ছুক। এই বৈষ্ণবশরের অব্যর্থ নিশানা। ফলাফল নিশ্চিত। বীরদর্পে পরশুরামের সম্মুখে দণ্ডায়মান ধনুর্ধারী রামচন্দ্র পরশুরামের তেজ হরণ করলেন। জড়পদার্থতুল্য নির্বীর্য্য হলেন পরশুরাম। মনের গতিতে নিজের গন্তব্য মহেন্দ্রপর্বতে প্রস্থানের সিদ্ধান্ত নিলেনতিনি। পরশুরাম অনুরোধ জানালেন রামচন্দ্রকে, তামিমং মদ্গতিং বীর হন্তুং নার্হসি রাঘব। হে বীর রাঘব, আমার গতিকে রুদ্ধ করো না। তিনি রামচন্দ্রের মঙ্গল কামনা করে বললেন, ধনুতে জ্যা আরোপণের শক্তিমত্তায় তিনি স্থির নিশ্চিত যে রামচন্দ্রই অক্ষয়, মধুসূদন, বিষ্ণু। রামচন্দ্রের নিক্ষিপ্ত শরক্ষেপণে সমস্ত তপস্যার্জিত লোক হারিয়ে পরশুরাম মহেন্দ্রপর্বতে প্রস্থান করলেন। শ্রীরামচন্দ্র তাঁকে যথোচিত মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন করলেন।
আরও পড়ুন:
মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-২: ভারতের স্থাপত্যশৈলীতে ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিব মন্দিরের অবদান অপরিসীম
পাখি সব করে রব, পর্ব-১: সবুজ সুন্দরী মুনিয়া
শ্রীরামচন্দ্র প্রশান্তচিত্তে সেই বৈষ্ণবধনুকটি বরুণদেবকে সমর্পণ করলেন। রাজা স্নেহালিঙ্গনে অভিনন্দিত করলেন পুত্রকে, মস্তকাঘ্রাণ করলেন তাঁর। চতুরঙ্গ সেনাসহ অচিরেই উৎসবসাজে সুসজ্জিত অযোধ্যানগরীতে পৌঁছলেন রাজা দশরথ। অযোধ্যাবাসী পৌরবৃন্দ, সাধারণ পুরবাসীরা, ব্রাহ্মণগণ তাঁদের অভ্যর্থনা জানালেন। রানি কৌশল্যা, কৈকেয়ী, সুমিত্রা ও অন্যান্য দশরথমহিষীরা মাঙ্গলিকচিহ্ন ধারণ করে সীতা, ঊর্মিলা, এবং কুশধ্বজকন্যাদ্বয় মাণ্ডবী ও শ্রুতকীর্ত্তিকে বধূরূপে বরণ করে মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন।
বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। সপ্তম অবতার শ্রীরামচন্দ্র।এক সত্তার দুই রূপ। এক সময়ে পরস্পরের মুখোমুখি, এ যেন দ্বৈত সত্তার একে অপরকে চ্যালেঞ্জ। কে শ্রেষ্ঠ, তাঁর প্রতিযোগিতায় নেমেছে দু’ জনে। অতিলৌকিক এবং লৌকিকের দ্বন্দ্ব এই পার্থিব লোকে। একজন সদ্য যৌবনে উপনীত এক তরুণ, অপরজন, বহু অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ এক উদ্দীপ্ত পৌরুষ। পার্থক্য আছে দু’ জনের। ব্রাহ্মণ পরশুরাম ক্ষত্রিয় রামচন্দ্রের শৌর্যের পরীক্ষক। শিক্ষাগুরুর গরিমা সর্বদাই ব্রাহ্মণের। মহাকাব্যে তা প্রতিফলিত হয়েছে বারে বারে। কিন্তু বিজয়ীর গৌরব লাভ করেছে ক্ষত্রিয়ই। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই।হার মেনেছেন পরশুরাম, বিজয়ী হয়েছেন রাম। আর পরাজিত হয়েছে নৃশংসতা, প্রতিশোধস্পৃহার নির্মম পরিসমাপ্তি ঘটেছে পরশুরামের নির্বীর্যকরণে। অপরিসীম অলৌকিক শক্তির অধিকারী এক ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা নিচ্ছে যেন তাঁর নিজের, এই লৌকিক পৃথিবীতে, নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া।
বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। সপ্তম অবতার শ্রীরামচন্দ্র।এক সত্তার দুই রূপ। এক সময়ে পরস্পরের মুখোমুখি, এ যেন দ্বৈত সত্তার একে অপরকে চ্যালেঞ্জ। কে শ্রেষ্ঠ, তাঁর প্রতিযোগিতায় নেমেছে দু’ জনে। অতিলৌকিক এবং লৌকিকের দ্বন্দ্ব এই পার্থিব লোকে। একজন সদ্য যৌবনে উপনীত এক তরুণ, অপরজন, বহু অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ এক উদ্দীপ্ত পৌরুষ। পার্থক্য আছে দু’ জনের। ব্রাহ্মণ পরশুরাম ক্ষত্রিয় রামচন্দ্রের শৌর্যের পরীক্ষক। শিক্ষাগুরুর গরিমা সর্বদাই ব্রাহ্মণের। মহাকাব্যে তা প্রতিফলিত হয়েছে বারে বারে। কিন্তু বিজয়ীর গৌরব লাভ করেছে ক্ষত্রিয়ই। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই।হার মেনেছেন পরশুরাম, বিজয়ী হয়েছেন রাম। আর পরাজিত হয়েছে নৃশংসতা, প্রতিশোধস্পৃহার নির্মম পরিসমাপ্তি ঘটেছে পরশুরামের নির্বীর্যকরণে। অপরিসীম অলৌকিক শক্তির অধিকারী এক ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা নিচ্ছে যেন তাঁর নিজের, এই লৌকিক পৃথিবীতে, নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া।
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
শ্রীরামচন্দ্রকে শৌর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বার বার। রাজা জনকের গৃহে, গার্হস্থ্যজীবনে প্রবেশের মুখে, পত্নীর ভারবহনের যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ামাত্রই পরশুরামের রণ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন তিনি। ধরিত্রীর ভারবহনের যোগ্য উত্তরাধিকার প্রমাণের পরেই ভাবি ভূপতি রামচন্দ্রের যেন ভূমির রক্ষণাবেক্ষণের শক্তিপরীক্ষা। সফল হয়েছেন দুটোতেই। যদিও এ সাফল্য শুধু রাক্ষসদমনে অশুভশক্তির মোকাবিলাতেই নিশ্চিত হয়েছে কিছুকাল। রাজা হয়েছেন যখন শান্তির রামরাজ্যে কোন শত্রুতার সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁকে।
হরধনু ভগ্নে রামচন্দ্রের লব্ধ আত্মপ্রসাদ, যেন আত্মম্ভরিতায় পরিণত না হয় তা যেন শিখিয়ে গেলেন পরশুরাম। বৈষ্ণবধনুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় রামচন্দ্রের আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু অনেক বড় যুদ্ধ যে এখনও বাকি রয়েছে, সে সবকিছুই যে গৃহলক্ষ্মীকে ঘিরেই আবর্তিত হতে চলেছে। গার্হস্থজীবনে প্রবেশের সূচনায় কী তারই ইঙ্গিত?—চলবে।
হরধনু ভগ্নে রামচন্দ্রের লব্ধ আত্মপ্রসাদ, যেন আত্মম্ভরিতায় পরিণত না হয় তা যেন শিখিয়ে গেলেন পরশুরাম। বৈষ্ণবধনুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় রামচন্দ্রের আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু অনেক বড় যুদ্ধ যে এখনও বাকি রয়েছে, সে সবকিছুই যে গৃহলক্ষ্মীকে ঘিরেই আবর্তিত হতে চলেছে। গার্হস্থজীবনে প্রবেশের সূচনায় কী তারই ইঙ্গিত?—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।