ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
কুরুরাজগৃহে প্রখ্যাত অস্ত্রবিদ্যাবিদ দ্রোণাচার্যকে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন কুরুপাণ্ডবদের বয়োজ্যেষ্ঠ অভিভাবক মাননীয় পিতামহ ভীষ্ম। মহান গুরুর তত্ত্বাবধানে ও যথাযথ সুশিক্ষায় অস্ত্রবিদ্যার পাঠ শুরু হল। গুরুপুত্র অশ্বত্থামার সঙ্গে সখ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ হলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। এই বন্ধুত্বের নিয়ামক আচার্য্য দ্রোণ। তিনি বললেন, “সখায়ং বিদ্ধি তে পার্থং ময়া দত্তঃ প্রগৃহ্যতাম্।* একে তোমার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর, একে তোমায় দিলাম। ইতিমধ্যে অস্ত্রবিদ্যাশিক্ষার শুরুতে আচার্য দ্রোণর বাঞ্ছিত গুরুদক্ষিণাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে, অর্জুন গুরুর মন জয় করে নিয়েছেন। কারণ অন্য রাজকুমাররা এই বিষয়ে নীরব ছিলেন।শিষ্যের এই প্রশ্নাতীত গুরুভক্তির প্রকাশে আপ্লুত হয়েছেন আচার্য।
আচার্য দ্রোণ রাজপুত্রদের অলৌকিক দৈবাস্ত্র এবং লৌকিক মানবাস্ত্র ব্যবহারের শিক্ষাদান শুরু করলেন। শুধু ধৃতরাষ্ট্রপুত্র এবং পাণ্ডুপুত্ররাই নয়, বৃষ্ণিবংশীয়, অন্ধকবংশীয় এবং দেশ, দেশান্তরের রাজপুত্ররা দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করতে সমবেত হলেন। সূতপুত্র কর্ণ, পাণ্ডবমাতা কুন্তীর কুমারী অবস্থার পুত্র, তিনিও অস্ত্রশিক্ষার্থে উপস্থিত হলেন। দুর্যোধনের প্রশ্রয়ে তিনি অর্জুনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করবার স্পর্ধা রাখতেন। পাণ্ডবরা তাঁর অবজ্ঞার পাত্র। কর্ণও দ্রোণাচার্যের ধনুর্বেদের ছাত্র। এই শিক্ষানবিশদের মধ্যে শিক্ষা, বাহুবল, উদ্যম, অস্ত্রবিদ্যানৈপুণ্যে সেরা অর্জুন।
শিক্ষাভুজবলোদ্ যোগৈস্তেষু সর্ব্বেষু পাণ্ডবঃ। অস্ত্রবিদ্যানুরাগাচ্চ বিশিষ্টোঽভবদর্জ্জুনঃ।। গুরু দ্রোণাচার্য্যের বিবেচনায়, অস্ত্রপ্রয়োগের দ্রুততায় ও কৌশলে অর্জুনই শিষ্যদের মধ্যে সেরা।
অর্জুনকে অসাধারণ ছাত্র মনে করলেও, চোখের মণি, পুত্র অশ্বত্থামার প্রতি অপরিসীম স্নেহদৌর্বল্য আচার্য দ্রোণর। তাই অস্ত্রশিক্ষা বিষয়ক জ্ঞানদানেও তিনি উদার হতে পারলেন না। সেখানে তাঁর পক্ষপাতিত্ববোধ কাজ করল।
জল আনবার জন্যে শিষ্যদের যে পাত্র দিতেন অশ্বত্থামার পাত্রটি কিন্তু আলাদা। সেই জলপাত্রটি, সহজেই দ্রুত পূর্ণ করা যায়, এমন। শিক্ষার্থী শিষ্যদের মধ্যে জল নিয়ে সর্বাগ্রে হাজির হতেন অশ্বত্থামা। অন্যদের প্রত্যাবর্তনের আগেই আচার্য দ্রোণ পুত্রকে অস্ত্রচালনার বিশেষ কৌশলগুলি শিখিয়ে দিতেন। বঞ্চিত হতেন অপরাপর শিষ্যবৃন্দ, এমন কি প্রিয়শিষ্য অর্জুনও। গুরুর মতিগতি বুঝে নিতে সময় লাগলনা মেধাবী, আগ্রহী অর্জুনের। তৎ কর্ম জিষ্ণুরৌজিহৎ অর্জুনের গুরুমারা বিদ্যা-বারুণাস্ত্রে দ্রুত জলপাত্র পূর্ণ করে অশ্বত্থামার সঙ্গ নিলেন তিনি। অস্ত্রবিদ্যায় ঐকান্তিক আগ্রহে অশ্বত্থামার সঙ্গে একযোগে বিদ্যাশিক্ষাগ্রহণে তাঁর সমকক্ষ হয়ে উঠলেন অর্জুন। ক্রমে ক্রমে গুরু দ্রোণাচার্যের স্নেহভাজন হয়ে উঠতে দেরি হল না তাঁর।
আচার্য দ্রোণ রাজপুত্রদের অলৌকিক দৈবাস্ত্র এবং লৌকিক মানবাস্ত্র ব্যবহারের শিক্ষাদান শুরু করলেন। শুধু ধৃতরাষ্ট্রপুত্র এবং পাণ্ডুপুত্ররাই নয়, বৃষ্ণিবংশীয়, অন্ধকবংশীয় এবং দেশ, দেশান্তরের রাজপুত্ররা দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করতে সমবেত হলেন। সূতপুত্র কর্ণ, পাণ্ডবমাতা কুন্তীর কুমারী অবস্থার পুত্র, তিনিও অস্ত্রশিক্ষার্থে উপস্থিত হলেন। দুর্যোধনের প্রশ্রয়ে তিনি অর্জুনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করবার স্পর্ধা রাখতেন। পাণ্ডবরা তাঁর অবজ্ঞার পাত্র। কর্ণও দ্রোণাচার্যের ধনুর্বেদের ছাত্র। এই শিক্ষানবিশদের মধ্যে শিক্ষা, বাহুবল, উদ্যম, অস্ত্রবিদ্যানৈপুণ্যে সেরা অর্জুন।
শিক্ষাভুজবলোদ্ যোগৈস্তেষু সর্ব্বেষু পাণ্ডবঃ। অস্ত্রবিদ্যানুরাগাচ্চ বিশিষ্টোঽভবদর্জ্জুনঃ।। গুরু দ্রোণাচার্য্যের বিবেচনায়, অস্ত্রপ্রয়োগের দ্রুততায় ও কৌশলে অর্জুনই শিষ্যদের মধ্যে সেরা।
অর্জুনকে অসাধারণ ছাত্র মনে করলেও, চোখের মণি, পুত্র অশ্বত্থামার প্রতি অপরিসীম স্নেহদৌর্বল্য আচার্য দ্রোণর। তাই অস্ত্রশিক্ষা বিষয়ক জ্ঞানদানেও তিনি উদার হতে পারলেন না। সেখানে তাঁর পক্ষপাতিত্ববোধ কাজ করল।
জল আনবার জন্যে শিষ্যদের যে পাত্র দিতেন অশ্বত্থামার পাত্রটি কিন্তু আলাদা। সেই জলপাত্রটি, সহজেই দ্রুত পূর্ণ করা যায়, এমন। শিক্ষার্থী শিষ্যদের মধ্যে জল নিয়ে সর্বাগ্রে হাজির হতেন অশ্বত্থামা। অন্যদের প্রত্যাবর্তনের আগেই আচার্য দ্রোণ পুত্রকে অস্ত্রচালনার বিশেষ কৌশলগুলি শিখিয়ে দিতেন। বঞ্চিত হতেন অপরাপর শিষ্যবৃন্দ, এমন কি প্রিয়শিষ্য অর্জুনও। গুরুর মতিগতি বুঝে নিতে সময় লাগলনা মেধাবী, আগ্রহী অর্জুনের। তৎ কর্ম জিষ্ণুরৌজিহৎ অর্জুনের গুরুমারা বিদ্যা-বারুণাস্ত্রে দ্রুত জলপাত্র পূর্ণ করে অশ্বত্থামার সঙ্গ নিলেন তিনি। অস্ত্রবিদ্যায় ঐকান্তিক আগ্রহে অশ্বত্থামার সঙ্গে একযোগে বিদ্যাশিক্ষাগ্রহণে তাঁর সমকক্ষ হয়ে উঠলেন অর্জুন। ক্রমে ক্রমে গুরু দ্রোণাচার্যের স্নেহভাজন হয়ে উঠতে দেরি হল না তাঁর।
কেমন ছিল অস্ত্রশিক্ষায় অর্জুনের অধ্যবসায়? দ্রোণাচার্যের অস্ত্রশিক্ষায় শেষপাঠ ছিল শব্দভেদের কৌশল শিক্ষাদান। তিনি সেটি হাতে রেখেছিলেন কারণ হয়তো অস্ত্রবিদ্যা বিষয়ে সবকিছু নিঁখুতভাবে জেনে নিয়ে কোনও শিষ্যই যেন তাঁর সমকক্ষ না হয়ে ওঠেন—এই মানসিকতা। এমন কি অর্জুনের এ বিষয়ে উত্তম প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও, তাঁকেও এই বিষয়টি শেখাতে আচার্য দ্রোণের অনীহা। শিষ্যদের প্রতি তাঁর এই বঞ্চনা সুপরিকল্পিত ছিল। রাতের অন্ধকারে অর্জুনকে ভোজ্য পরিবেশনে নিষেধ আরোপ করলেন। অন্ধকারেঽর্জ্জুনায়ান্নং ন দেয়ং তে কদাচন। ন চাখ্যেয়মিদঞ্চাপি মদ্বাক্যং বিজয়ে ত্বয়া।। গোপনে এ নির্দেশও ছিল বিষয়টি যেন অর্জুন জানতে না পারে। একদা রাতের অন্ধকারে ভোজনরত অবস্থায় বাতাসে দীপ নিবে গেলেও অভ্যাসবশত ওই আঁধারেও অর্জুনের হাত মুখ ছাড়া অন্য কোথাও লক্ষ্যচ্যুত হল না।
এই অভ্যাসের কথা মনে রেখে অর্জুন রাতের অন্ধকারেও শরনিক্ষেপ অনুশীলন করতে লাগলেন। তদভ্যাসকৃতং মত্বা রাত্রাবপি স পাণ্ডবঃ। যোগ্যাং চক্রে মহাবাহুর্ধনুষা পাণ্ডুনন্দনঃ।। তাঁর বাণাভ্যাসের জ্যায়ের নির্ঘোষ শুনে গুরু দ্রোণ মুগ্ধ হয়ে অর্জুনকে স্নেহালিঙ্গনে অভিনন্দিত করে সত্যের নামে শপথ করে বললেন, প্রযতিষ্যে তথা কর্ত্তুং যথা নান্যো ধনুর্দ্ধরঃ। ত্বৎসমো ভবিতা লোকে সত্যমেতদ্ব্রবীমি তে।। আমি তোমাকে এমন অস্ত্রশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব যাতে পৃথিবীতে কোন ধনুর্ধরই তোমার সমকক্ষ না হয়। দ্রোণাচার্য অর্জুনকে হস্তী, অশ্ব, রথ এবং ভূতলে অবস্থানরত অবস্থায় যুদ্ধে অস্ত্রপ্রয়োগের শিক্ষা দিলেন। অন্যান্য কুমারদের গদা, অসি, তোমর, কুন্ত এবং শক্তিযুদ্ধ এবং সঙ্কুলযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন।
দ্রোণাচার্যের অস্ত্রশিক্ষার খ্যাতি দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল। দলে দলে রাজা ও রাজপুত্ররা তাঁর শিক্ষাসত্রে যোগ দিতে সমাগত হলেন।
একদা নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য, দ্রোণাচার্যের শিষ্যত্বগ্রহণের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলেন। গুরু দ্রোণাচার্য তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলেন। ন স তং প্রতিজগ্রাহ নৈষাদিরিতি চিন্তয়ন্। শিষ্যং ধনুষি ধর্ম্মজ্ঞস্তেষামেবান্ববেক্ষয়া।। একে নিম্নবর্ণের ব্যাধপুত্র তার ওপর অভিজাত রাজপুত্রদের সঙ্গে একযোগে এই নিষাদপুত্রের অস্ত্রশিক্ষা সমীচিন নয় — এমন বিবেচনা করে একলব্যের শিষ্যত্বের অনুরোধ গ্রহণ করলেন না কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য্য। কোনও পীড়াপীড়ি নয়, কোনও অনুনয় উপরোধ নয়, প্রশ্ন না করে আচার্যের প্রত্যাখ্যান মেনে নিয়ে, তাঁকে প্রণাম জানিয়ে নীরবে নতমস্তকে বিনম্র একলব্য ফিরে গেলেন অরণ্যে। সেখানে দ্রোণাচার্যের মৃত্তিকামূর্তি নির্মাণ করে নিয়মিত প্রত্যহ ধনুর্বিদ্যা অভ্যাস করতে লাগলেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসে গুরুর প্রতি অবিচল ভক্তিতে, পরম শ্রদ্ধায়, বিশ্বাসে, একাগ্রচিত্তে অস্ত্রগ্রহণ, লক্ষ্যে মনোনিবেশ, শরসন্ধানে দ্রুততায় কুশল হয়ে উঠলেন তিনি। এ ভাবে জনান্তিকে, নিভৃতে, চলল একলব্যের নিরন্তর অনুশীলন।
এই অভ্যাসের কথা মনে রেখে অর্জুন রাতের অন্ধকারেও শরনিক্ষেপ অনুশীলন করতে লাগলেন। তদভ্যাসকৃতং মত্বা রাত্রাবপি স পাণ্ডবঃ। যোগ্যাং চক্রে মহাবাহুর্ধনুষা পাণ্ডুনন্দনঃ।। তাঁর বাণাভ্যাসের জ্যায়ের নির্ঘোষ শুনে গুরু দ্রোণ মুগ্ধ হয়ে অর্জুনকে স্নেহালিঙ্গনে অভিনন্দিত করে সত্যের নামে শপথ করে বললেন, প্রযতিষ্যে তথা কর্ত্তুং যথা নান্যো ধনুর্দ্ধরঃ। ত্বৎসমো ভবিতা লোকে সত্যমেতদ্ব্রবীমি তে।। আমি তোমাকে এমন অস্ত্রশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব যাতে পৃথিবীতে কোন ধনুর্ধরই তোমার সমকক্ষ না হয়। দ্রোণাচার্য অর্জুনকে হস্তী, অশ্ব, রথ এবং ভূতলে অবস্থানরত অবস্থায় যুদ্ধে অস্ত্রপ্রয়োগের শিক্ষা দিলেন। অন্যান্য কুমারদের গদা, অসি, তোমর, কুন্ত এবং শক্তিযুদ্ধ এবং সঙ্কুলযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন।
দ্রোণাচার্যের অস্ত্রশিক্ষার খ্যাতি দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল। দলে দলে রাজা ও রাজপুত্ররা তাঁর শিক্ষাসত্রে যোগ দিতে সমাগত হলেন।
একদা নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য, দ্রোণাচার্যের শিষ্যত্বগ্রহণের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলেন। গুরু দ্রোণাচার্য তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলেন। ন স তং প্রতিজগ্রাহ নৈষাদিরিতি চিন্তয়ন্। শিষ্যং ধনুষি ধর্ম্মজ্ঞস্তেষামেবান্ববেক্ষয়া।। একে নিম্নবর্ণের ব্যাধপুত্র তার ওপর অভিজাত রাজপুত্রদের সঙ্গে একযোগে এই নিষাদপুত্রের অস্ত্রশিক্ষা সমীচিন নয় — এমন বিবেচনা করে একলব্যের শিষ্যত্বের অনুরোধ গ্রহণ করলেন না কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য্য। কোনও পীড়াপীড়ি নয়, কোনও অনুনয় উপরোধ নয়, প্রশ্ন না করে আচার্যের প্রত্যাখ্যান মেনে নিয়ে, তাঁকে প্রণাম জানিয়ে নীরবে নতমস্তকে বিনম্র একলব্য ফিরে গেলেন অরণ্যে। সেখানে দ্রোণাচার্যের মৃত্তিকামূর্তি নির্মাণ করে নিয়মিত প্রত্যহ ধনুর্বিদ্যা অভ্যাস করতে লাগলেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসে গুরুর প্রতি অবিচল ভক্তিতে, পরম শ্রদ্ধায়, বিশ্বাসে, একাগ্রচিত্তে অস্ত্রগ্রহণ, লক্ষ্যে মনোনিবেশ, শরসন্ধানে দ্রুততায় কুশল হয়ে উঠলেন তিনি। এ ভাবে জনান্তিকে, নিভৃতে, চলল একলব্যের নিরন্তর অনুশীলন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১৮: দেবাসুরের সমুদ্রমন্থন, শুভাশুভের দ্বন্দ্ব — জয় কার? একটি অনন্ত জিজ্ঞাসা
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
একদিন কুরুপাণ্ডবকুমাররা মৃগয়ায় গেলেন। মৃগয়ার উপকরণ হিসেবে সঙ্গে একটি শিক্ষিত কুকুরও তাঁরা সঙ্গে নিলেন। সেই কুকুরটি বিচরণরত অবস্থায় কৃষ্ণবর্ণ, ধূলিধূসর দেহ কৃষ্ণাজিনধারী নিষাদপুত্রকে লক্ষ্য করে ডেকে উঠল। স কৃষ্ণং মলদিগ্ধাঙ্গং কৃষ্ণাজিনজটাধরম্। নৈষাদিং শ্বা সমালক্ষ্য ভষংস্তস্থৌ তদন্তিকে।। একলব্য বিদ্যুতগতিতে ক্ষিপ্রপ্রয়োগদক্ষতায় সাতটি তীর কুকুরটির মুখে নিক্ষেপ করলেন। সেই শরপূর্ণমুখ নিয়ে কুকুরটি হাজির হল পাণ্ডবদের সম্মুখে। বিস্মিত পাণ্ডবরা এই দ্রুত শব্দানুসরণে লক্ষ্যভেদের চাতুর্য্যে লজ্জিত হয়ে অজ্ঞাত ধনুর্ধরটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। লাঘবং শব্দবেধিত্বং দৃষ্ট্বা তৎ পরমং তদা। প্রেক্ষ্য তং ব্রীড়িতাশ্চাসন্ প্রশশংসুশ্চ সর্ব্বশঃ।। বোধ হয় হীনমন্যতাবোধ এই লজ্জার কারণ। পাণ্ডবগণ বনবাসী অসাধারণ তীরন্দাজটির অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে উঠলেন। অবশেষে তাঁরা খুঁজে পেলেন নিরন্তর বাণাভ্যাসরত একলব্যকে। প্রশ্নের উত্তরে একলব্য জানালেন, নিষাদাধিপতর্বীরাঃ!হিরণ্যধনুষঃ সুতম্। দ্রোণশিষ্যঞ্চ মাং বিত্ত ধনুর্ব্বেদকৃতশ্রমম্।। আপনাদের অবগতির জন্যে জানাই, নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র, আচার্য দ্রোণের শিষ্য আমি, ধনুর্বেদ আয়ত্ত করবার কারণে, পরিশ্রম করছি।
পাণ্ডবরা হস্তিনাপুরে প্রত্যাবর্ত্তনের পর এই অদ্ভুত বৃত্তান্ত গুরু দ্রোণকে জানালেন। অর্জুন একান্তে গুরুকে অভিযোগের সুরে বললেন। ভবতোক্তো ন মে শিষ্যস্ত্বদ্বিশিষ্টো ভবিষ্যতি।। অথ কস্মান্মদ্বিশিষ্টো লোকাদপি চ বীর্য্যবান্। অন্যোঽপি ভবতঃ শিষ্যো নিষাদাধিপতেঃ সুতঃ।। আপনি বলেছিলেন আপনার কোন শিষ্যই আমার থেকে বিশিষ্ট হবে না। অথচ আপনার অপর শিষ্য, এই নিষাদপুত্র, আমার থেকেও শৌর্যশালী এবং অন্যান্য বীর থেকেও শ্রেষ্ঠ হলেন কীভাবে? চিন্তা করে মুহূর্তে কর্ত্তব্য স্থির করে ফেললেন মাননীয় আচার্য দ্রোণ। সেই ধূলিমলিন দেহ,জটা ও কৌপীনধারী, বাণনিক্ষেপে অনুশীলনরত একলব্যের সম্মুখে উপস্থিত হলেন তিনি। একলব্য, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে, আভূমি প্রণাম নিবেদন করলেন আচার্যদেবকে। যথাবিধি গুরুপূজা সমাপনান্তে কৃতাঞ্জলি হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। শ্রদ্ধেয় আচার্য বললেন, যদি শিষ্যোঽসি মে বীর! বেতনং দীয়তাং মম।। হে বীর, তুমি যদি আমার শিষ্যই হও, তবে গুরুদক্ষিণা দাও আমায়। আনন্দে আত্মহারা হলেন একলব্য। কিং প্রযচ্ছামি ভগবন্! আজ্ঞাপয়তু মাং গুরুঃ।। ন হি কিঞ্চিদদেয়ং মে গুরবে ব্রহ্মবিত্তম।। কী দেব প্রভু? শুধুমাত্র আদেশ করুন আমায়। হে বেদজ্ঞ গুরু আমার, আপনাকে অদেয় যে আমার এমন কিছুই নেই। কঠোর, নির্মম, গুরুর দাবি — তোমার ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি। ওটাই আমায় দাও। ত্বয়াঙ্গুষ্ঠো দক্ষিণো দীয়তামিতি। একলব্য দ্রোণের এই নিদারুণ বচন শুনে কিন্তু গুরুর প্রতি প্রতিশ্রুতিরক্ষায় সত্যবদ্ধই রইলেন। সহাস্যে, অকাতরহৃদয়ে, নির্দ্বিধায়, দক্ষিণ অঙ্গুষ্ঠ ছেদন করে শ্রদ্ধেয় আচার্যকে দান করলেন। তথৈব হৃষ্টবদনস্তথৈবাদীনমানসঃ। ছিত্ত্বাঽবিচার্য্য তং প্রাদাদ্ দ্রোণায়াঙ্গুষ্ঠমাত্মনঃ।। কী হল এর ফল? অর্জুনের উদ্বেগ দূর হল, তিনি তুষ্ট হলেন।
পাণ্ডবরা হস্তিনাপুরে প্রত্যাবর্ত্তনের পর এই অদ্ভুত বৃত্তান্ত গুরু দ্রোণকে জানালেন। অর্জুন একান্তে গুরুকে অভিযোগের সুরে বললেন। ভবতোক্তো ন মে শিষ্যস্ত্বদ্বিশিষ্টো ভবিষ্যতি।। অথ কস্মান্মদ্বিশিষ্টো লোকাদপি চ বীর্য্যবান্। অন্যোঽপি ভবতঃ শিষ্যো নিষাদাধিপতেঃ সুতঃ।। আপনি বলেছিলেন আপনার কোন শিষ্যই আমার থেকে বিশিষ্ট হবে না। অথচ আপনার অপর শিষ্য, এই নিষাদপুত্র, আমার থেকেও শৌর্যশালী এবং অন্যান্য বীর থেকেও শ্রেষ্ঠ হলেন কীভাবে? চিন্তা করে মুহূর্তে কর্ত্তব্য স্থির করে ফেললেন মাননীয় আচার্য দ্রোণ। সেই ধূলিমলিন দেহ,জটা ও কৌপীনধারী, বাণনিক্ষেপে অনুশীলনরত একলব্যের সম্মুখে উপস্থিত হলেন তিনি। একলব্য, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে, আভূমি প্রণাম নিবেদন করলেন আচার্যদেবকে। যথাবিধি গুরুপূজা সমাপনান্তে কৃতাঞ্জলি হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। শ্রদ্ধেয় আচার্য বললেন, যদি শিষ্যোঽসি মে বীর! বেতনং দীয়তাং মম।। হে বীর, তুমি যদি আমার শিষ্যই হও, তবে গুরুদক্ষিণা দাও আমায়। আনন্দে আত্মহারা হলেন একলব্য। কিং প্রযচ্ছামি ভগবন্! আজ্ঞাপয়তু মাং গুরুঃ।। ন হি কিঞ্চিদদেয়ং মে গুরবে ব্রহ্মবিত্তম।। কী দেব প্রভু? শুধুমাত্র আদেশ করুন আমায়। হে বেদজ্ঞ গুরু আমার, আপনাকে অদেয় যে আমার এমন কিছুই নেই। কঠোর, নির্মম, গুরুর দাবি — তোমার ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি। ওটাই আমায় দাও। ত্বয়াঙ্গুষ্ঠো দক্ষিণো দীয়তামিতি। একলব্য দ্রোণের এই নিদারুণ বচন শুনে কিন্তু গুরুর প্রতি প্রতিশ্রুতিরক্ষায় সত্যবদ্ধই রইলেন। সহাস্যে, অকাতরহৃদয়ে, নির্দ্বিধায়, দক্ষিণ অঙ্গুষ্ঠ ছেদন করে শ্রদ্ধেয় আচার্যকে দান করলেন। তথৈব হৃষ্টবদনস্তথৈবাদীনমানসঃ। ছিত্ত্বাঽবিচার্য্য তং প্রাদাদ্ দ্রোণায়াঙ্গুষ্ঠমাত্মনঃ।। কী হল এর ফল? অর্জুনের উদ্বেগ দূর হল, তিনি তুষ্ট হলেন।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫: আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস
আচার্য দ্রোণ অর্জুনকে কথা দিয়েছিলেন, কেউ অর্জুনকে পরাজিত করতে পারবেন না—এই সত্যরক্ষা নিশ্চিত হল। ততোঽর্জুনঃ প্রীতমনা বভূব বিগতজ্বরঃ। দ্রোণস্য তস্য বাগাসীন্নান্যোঽভিভবিতাঽর্জ্জুনম্।। আর একলব্য? তর্জনী এবং অবশিষ্ট আঙ্গুল দিয়ে জ্যা আকর্ষণ করলেন, সেই তীর কিন্তু আগের মতো ক্ষিপ্রগতি হল না। শুধুমাত্র গুরুর অনুরোধ তথা দাবিরক্ষায় চিরদিনের জন্যে একলব্য তাঁর ধনুর্বেদে নৈপুণ্য হারালেন। দ্রোণশিষ্য হওয়ার গৌরববোধে একজন প্রতিষ্ঠিত ধনুর্ধরের সম্ভাবনাময়, উজ্জ্বল, মর্যাদাপূর্ণ, ভাবি জীবন বিসর্জন দিলেন তিনি। গুরুদক্ষিণার মর্মান্তিক মূল্য দিতে হল একজন প্রতিশ্রুতিমান তীরন্দাজকে।
অর্জুন ও একলব্য, এক প্রখ্যাত গুরুর দুই শিষ্য। সামাজিক মর্যাদায় একজন বিখ্যাত ভরতবংশীয়দের একজন আর অপরজন একলব্য, একজন নিষাদরাজসুত। বর্ণবৈষম্যের প্রশ্ন হয়তো ছিল সে যুগের যুগধর্ম, যে কারণে, গুরু দ্রোণাচার্য একলব্যের শিষ্যত্বগ্রহণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
রাজকুমারের সঙ্গে একযোগে নিষাদ কুমারকে অস্ত্রশিক্ষাদান হয়তো সঠিক সিদ্ধান্ত নয় — এ বিষয়ে তিনি স্থির নিশ্চিত ছিলেন বলেই একলব্যের শিষ্যত্ব এককথায় অস্বীকার করেছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ হয়েও ক্ষত্রিয়বৃত্তি গ্রহণ করায় ব্রাহ্মণপরিমণ্ডলে ব্রাত্য হয়েছিলেন। তিনি হৃত মানসম্মান লাভ করে, চরম দারিদ্র্যদশা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন কুরুকুলের অর্থানুকূল্যে। তাই হস্তিনাপুরের রাজপরিবারের আভিজাত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা তিনি প্রতিমুহূর্তে অনুভব করেছেন। কুরুকুলের অস্ত্রগুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের পরেই তখন দ্রোণাচার্যের দেশজোড়া খ্যাতি। একজন নিম্নবর্গের তরুণের প্রতিভাকে তিনি গুরুত্ব দেননি। অর্জুনপ্রীতিতে আচ্ছন্ন ছিলেন আচার্য দ্রোণ।
শ্রদ্ধা, ভক্তি মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তার ব্যতিক্রমী বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত হলেন একলব্য। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই গুরুর বাঞ্ছিত গুরুদক্ষিণাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন অর্জুন। আর একলব্য? তিনি তাঁর দক্ষিণাঙ্গুষ্ঠ ছেদন করে, জীবনের লক্ষ্যপূরণের পরিবর্তে, গুরুর প্রার্থিত দক্ষিণাদানে অদ্বিতীয় ধনুর্ধর হওয়ার স্বপ্নটি বিসর্জন দিলেন। শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানম্ শ্রদ্ধাবানই জ্ঞানলাভে সক্ষম হন — এই আপ্তবাক্যটি প্রমাণ করেছেন একলব্য। তিনি আচার্য দ্রোণের কাছে কোন অস্ত্রবিদ্যাই গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে তাঁর কৃতিত্ব স্বার্জিত।
অর্জুন ও একলব্য, এক প্রখ্যাত গুরুর দুই শিষ্য। সামাজিক মর্যাদায় একজন বিখ্যাত ভরতবংশীয়দের একজন আর অপরজন একলব্য, একজন নিষাদরাজসুত। বর্ণবৈষম্যের প্রশ্ন হয়তো ছিল সে যুগের যুগধর্ম, যে কারণে, গুরু দ্রোণাচার্য একলব্যের শিষ্যত্বগ্রহণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
রাজকুমারের সঙ্গে একযোগে নিষাদ কুমারকে অস্ত্রশিক্ষাদান হয়তো সঠিক সিদ্ধান্ত নয় — এ বিষয়ে তিনি স্থির নিশ্চিত ছিলেন বলেই একলব্যের শিষ্যত্ব এককথায় অস্বীকার করেছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ হয়েও ক্ষত্রিয়বৃত্তি গ্রহণ করায় ব্রাহ্মণপরিমণ্ডলে ব্রাত্য হয়েছিলেন। তিনি হৃত মানসম্মান লাভ করে, চরম দারিদ্র্যদশা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন কুরুকুলের অর্থানুকূল্যে। তাই হস্তিনাপুরের রাজপরিবারের আভিজাত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা তিনি প্রতিমুহূর্তে অনুভব করেছেন। কুরুকুলের অস্ত্রগুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের পরেই তখন দ্রোণাচার্যের দেশজোড়া খ্যাতি। একজন নিম্নবর্গের তরুণের প্রতিভাকে তিনি গুরুত্ব দেননি। অর্জুনপ্রীতিতে আচ্ছন্ন ছিলেন আচার্য দ্রোণ।
শ্রদ্ধা, ভক্তি মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তার ব্যতিক্রমী বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত হলেন একলব্য। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই গুরুর বাঞ্ছিত গুরুদক্ষিণাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন অর্জুন। আর একলব্য? তিনি তাঁর দক্ষিণাঙ্গুষ্ঠ ছেদন করে, জীবনের লক্ষ্যপূরণের পরিবর্তে, গুরুর প্রার্থিত দক্ষিণাদানে অদ্বিতীয় ধনুর্ধর হওয়ার স্বপ্নটি বিসর্জন দিলেন। শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানম্ শ্রদ্ধাবানই জ্ঞানলাভে সক্ষম হন — এই আপ্তবাক্যটি প্রমাণ করেছেন একলব্য। তিনি আচার্য দ্রোণের কাছে কোন অস্ত্রবিদ্যাই গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে তাঁর কৃতিত্ব স্বার্জিত।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৬: হিচককের সাইকো—ম্যারিয়নের স্নান ও নর্মা-র মৃতদেহ
দশভুজা: দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন
একলব্য মনে মনে দ্রোণাচার্যকে গুরু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অথচ তাঁর কাছে গুরুদক্ষিণা প্রার্থনা করেছেন গুরু দ্রোণ, তাঁর প্রিয়শিষ্য অর্জুনের স্বার্থরক্ষার তাগিদে। গুরু দ্রোণ পরম নিষ্ঠায় অর্জুনকে শিখিয়েছিলেন দিব্য ও লৌকিক অস্ত্রের প্রয়োগ ও সংবরণ বিদ্যা, যদিও এ বিষয়ে তাঁর অনুদার মনোভাব প্রকট হয়েছিল,তিনি চাননি প্রিয় পুত্রের সমকক্ষ হয়ে উঠুন অর্জুন। তাঁর দ্বিচারিতা ধরে ফেললেন অর্জুন, তখন কী তিনি লজ্জাবোধে অধোবদন হয়েছিলেন? এ বিষয়ে মহাভারতকার নীরব। প্রতিভাবান বীর অর্জুন। মেধা অর্জুনের ছিল, গুরু দ্রোণ তাকে শাণিত করে তুলেছেন। আচার্যের আচরণবিধিতে হয়তো তঞ্চকতাও ছিল তাই তিনি প্রথমে তাঁর অধীত বিদ্যার সবটুকু শিষ্যকে নিঃশেষে উজার করে দিতে পারেননি।
একজন আদর্শ শিক্ষকের আচরণবিধি, জীবনাদর্শ শিষ্যের পরম শিক্ষণীয় বিষয়।বিদ্যাদানে নিজের সবটুকু জ্ঞানদানেই তাঁর গুরুত্বের গরিমা। একলব্য গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে শিক্ষানবিশ হলে হয়তো অর্জুনকেও ছাপিয়ে যেতেন। প্রিয় অর্জুনের হীনমন্যতাবোধ দূর করতে প্রয়াসী হয়েছেন গুরু দ্রোণ। একলব্যের গুরুভক্তিজনিত হৃদয়দৌর্বল্যের সুযোগ নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত একলব্যের প্রগাঢ় শ্রদ্ধার পরিচয় পেয়েও কী আদৌ তাঁকে শিষ্যের মানটুকু দিয়েছিলেন আচার্য্য দ্রোণ? এ প্রশ্ন হয়তো অমূলক নয়।
গুরু, শিষ্যের অজ্ঞানতার আঁধার দূর করেন জ্ঞানের আলোকিত দীপ্তিতে। জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি শিক্ষাগুরুর দায়বদ্ধতা অসীম, তা থেকে বিচ্যুত হলে একটি মেরুদণ্ডহীন প্রজন্ম সৃষ্টির রূপকার হন আচার্যদেব। আচার্য দ্রোণের সফল ছাত্রদের অন্যতম অর্জুন। যে কোনও মূল্যেই তিনি সাফল্য অর্জন করতে জানেন। অর্জুনকে পাশে নিয়েই দ্রোণাচার্য একলব্যের কাছে নিষ্ঠুর গুরুদক্ষিণার প্রস্তাবটি রাখেন তখন অর্জুনের মতো একজন পরিণত যোদ্ধা, এর মর্মান্তিক পরিণতি জেনেও নিশ্চুপ থাকেন। হয়তো এও আর এক গুরুভক্তির নিদর্শন অথবা খ্যাতির বিড়ম্বনা, কিংবা শুধুমাত্র সাফল্যের সিঁড়িটি অক্ষত রাখবার তাগিদ? সেই ট্র্যাডিশন এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অভিজাত, ক্ষমতাবানদের সাফল্যের প্রতিষ্ঠা সুরক্ষিত রাখতে কত ক্ষমতাহীন কিন্তু দীপ্ত প্রতিভা, মেধা বিলীন হয়ে যায় কালগর্ভে, কে তার হিসেব রাখে? তবুও দ্রোণাচার্যের খ্যাতিলাভে তুরুপের তাস সেই অর্জুন। তিনি জ্ঞাতিযুদ্ধে পরম শ্রদ্ধেয় গুরু দ্রোণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। গুরুর পাথরের মতো মনে একলব্যের গুরুভক্তি যেমন রেখাপাত করেনি ঠিক তেমনই শিষ্যপুত্র অভিমন্যুর নিধনে সোৎসাহে অংশ নিয়েছেন, শিষ্য অর্জুনের হাহাকারে অবিচলিত থেকেছেন।
রাজনীতিতে, যুদ্ধে, অস্তিত্বরক্ষার জীবনসংগ্রামে হৃদয়দৌর্বল্যের কোন স্থান নেই যে। কুরুকুলের মাননীয় আচার্যেরদের মতোই আধুনিক যুগেও এই লজ্জাজনক পরম্পরা অব্যাহতগতিতে চলে আসছে। চিরদিনই অনেক উজ্জ্বল প্রতিভাধরদের অবদমিত রেখে, নুনের দাম পরিশোধ করবার তাগিদে অনেকেই অন্যায়ভাবে নিয়োগকর্তার স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন আজও।—চলবে।
একজন আদর্শ শিক্ষকের আচরণবিধি, জীবনাদর্শ শিষ্যের পরম শিক্ষণীয় বিষয়।বিদ্যাদানে নিজের সবটুকু জ্ঞানদানেই তাঁর গুরুত্বের গরিমা। একলব্য গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে শিক্ষানবিশ হলে হয়তো অর্জুনকেও ছাপিয়ে যেতেন। প্রিয় অর্জুনের হীনমন্যতাবোধ দূর করতে প্রয়াসী হয়েছেন গুরু দ্রোণ। একলব্যের গুরুভক্তিজনিত হৃদয়দৌর্বল্যের সুযোগ নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত একলব্যের প্রগাঢ় শ্রদ্ধার পরিচয় পেয়েও কী আদৌ তাঁকে শিষ্যের মানটুকু দিয়েছিলেন আচার্য্য দ্রোণ? এ প্রশ্ন হয়তো অমূলক নয়।
গুরু, শিষ্যের অজ্ঞানতার আঁধার দূর করেন জ্ঞানের আলোকিত দীপ্তিতে। জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি শিক্ষাগুরুর দায়বদ্ধতা অসীম, তা থেকে বিচ্যুত হলে একটি মেরুদণ্ডহীন প্রজন্ম সৃষ্টির রূপকার হন আচার্যদেব। আচার্য দ্রোণের সফল ছাত্রদের অন্যতম অর্জুন। যে কোনও মূল্যেই তিনি সাফল্য অর্জন করতে জানেন। অর্জুনকে পাশে নিয়েই দ্রোণাচার্য একলব্যের কাছে নিষ্ঠুর গুরুদক্ষিণার প্রস্তাবটি রাখেন তখন অর্জুনের মতো একজন পরিণত যোদ্ধা, এর মর্মান্তিক পরিণতি জেনেও নিশ্চুপ থাকেন। হয়তো এও আর এক গুরুভক্তির নিদর্শন অথবা খ্যাতির বিড়ম্বনা, কিংবা শুধুমাত্র সাফল্যের সিঁড়িটি অক্ষত রাখবার তাগিদ? সেই ট্র্যাডিশন এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অভিজাত, ক্ষমতাবানদের সাফল্যের প্রতিষ্ঠা সুরক্ষিত রাখতে কত ক্ষমতাহীন কিন্তু দীপ্ত প্রতিভা, মেধা বিলীন হয়ে যায় কালগর্ভে, কে তার হিসেব রাখে? তবুও দ্রোণাচার্যের খ্যাতিলাভে তুরুপের তাস সেই অর্জুন। তিনি জ্ঞাতিযুদ্ধে পরম শ্রদ্ধেয় গুরু দ্রোণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। গুরুর পাথরের মতো মনে একলব্যের গুরুভক্তি যেমন রেখাপাত করেনি ঠিক তেমনই শিষ্যপুত্র অভিমন্যুর নিধনে সোৎসাহে অংশ নিয়েছেন, শিষ্য অর্জুনের হাহাকারে অবিচলিত থেকেছেন।
রাজনীতিতে, যুদ্ধে, অস্তিত্বরক্ষার জীবনসংগ্রামে হৃদয়দৌর্বল্যের কোন স্থান নেই যে। কুরুকুলের মাননীয় আচার্যেরদের মতোই আধুনিক যুগেও এই লজ্জাজনক পরম্পরা অব্যাহতগতিতে চলে আসছে। চিরদিনই অনেক উজ্জ্বল প্রতিভাধরদের অবদমিত রেখে, নুনের দাম পরিশোধ করবার তাগিদে অনেকেই অন্যায়ভাবে নিয়োগকর্তার স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন আজও।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।