ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
ঋষি আপোদ ধৌম্য ও তাঁর তিনজন শিষ্য
মহাভারতের কাহিনি বর্ণনা প্রসঙ্গে কথকঠাকুর সৌতি উগ্রশ্রবা গুরুর প্রতি শিষ্যের আনুগত্য, নিঃশর্ত বিনয় এবং প্রশ্নাতীত সৌজন্যের উদাহরণ হিসেবে তিনজন শিষ্যের বৃত্তান্ত উপস্থাপিত করেছেন। হস্তিনাপুর এবং কুরুপাণ্ডবদের সম্পর্কিত বিষয়ের বাইরে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসের আদিপর্বে একেবারে প্রসঙ্গান্তরে এই বৃত্তান্তের উপস্থাপনা। কোথাও হয়তো প্রখ্যাত আচার্যদের বিখ্যাত শিষ্যদের ছায়া এরমধ্যে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সেটি প্রসঙ্গান্তরের বিষয়। গুরু ধৌম্যশিষ্যদের কথায় আসা যাক।
আপোদ ধৌম্য নামে এক ঋষির তিন শিষ্যের গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা, বিনতশিক্ষাগ্রহণ এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে গুরুসেবার দৃষ্টান্ত এই বৃত্তান্তগুলির বিষয়। তিনজন শিষ্যের নাম — উপমন্যু, আরুণি, বেদ। এই তিনজন শিষ্য আচার্যের প্রতি আনুগত্যবিষয়ে একে অপরকে টেক্কা দিয়েছেন।
প্রথমেই আরুণির উপাখ্যান। আচার্য ধৌম্য শিষ্য আরুণিকে আদেশ দিলেন, গচ্ছ কেদারখণ্ডং বধান ইতি যাও ক্ষেতের আলটিতে বাঁধ দাও। বাধ্য শিষ্য গুরুর আদেশপালনে তৎপর। আরুণি তৎক্ষণাৎ ক্ষেতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। বোধ হয় গুরুর শিষ্যকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল টিকাকারদের মতে কেদারে বহুজলপ্রবেশেন বীজনাশো মাভূদিতি। ক্ষেতের ভগ্ন আলপথে বহুজল প্রবেশ করে যাতে বীজ বিনষ্ট না হয়, এটাই ছিল গুরুর উদ্দেশ্য। ধৌম্যশিষ্য আরুণি গুরুর আজ্ঞাপালনে ব্যর্থ হলেন। তবে তিনি হাল ছাড়লেন না। উপায় চিন্তা করতে লাগলেন। শেষে প্রতিবিধান খুঁজে পেলেন। ভবত্বেবং করিষ্যামীতি ঠিক আছে, আমি এটাই করব। আলের ভগ্ন অংশটিতে শুয়ে পড়লেন আরুণি। জলস্রোতের প্রবেশ বন্ধ হল।যথাসময়ে আচার্যদেব ধৌম্য,শিষ্যের খবর নিলেন, ক্ব আরুণিঃ পাঞ্চাল্যো গত ইতি আরুণি কোথায় গেল? শিষ্যরা গুরুকে আরুণির প্রতি আদেশটি স্মরণ করিয়ে দিলেন। শশব্যস্ত হয়ে গুরু নিজে শিষ্যদের সঙ্গে চললেন সেই স্থানটিতে। আরুণিকে ডাক দিলেন, ভো আরুণে!পাঞ্চাল্য!ক্বাসি বৎসেতি! পাঞ্চালদেশীয় আরুণি, বাছা, তুমি কোথায়? কণ্ঠে ব্যাকুলতা ছিল নিশ্চয়ই। ভগ্ন আল থেকে আরুণি সঙ্গে সঙ্গে উঠে আচার্যের কাছে হাজির হলেন। তাঁর নিজের এই আচরণ এবং বিলম্বের কারণ জানালেন গুরুকে। আভূমি নত হয়ে তাঁর নিজের অপারগতার কথা জানালেন। আচার্যকে অভিবাদন করে তাঁকে বিনীত অনুরোধ জানালেন, ভগবন্তম্,আজ্ঞাপয়তু ভবান্, কমর্থং করবাণি ইতি। পুনরাদেশের অপেক্ষায় আছি, কী করতে হবে বলুন। অধ্যাপক আরুণিকে আশীর্বাদ করে বললেন, যস্মাদ্ভবান্ কেদারখণ্ডং বিদার্য্য উত্থিতস্তস্মাদুদ্দালক এব নাম্না ভবান্ ভবিষ্যতীতি। আল ভেদ করে তোমার উত্থান তাই তুমি উদ্দালক নামে প্রসিদ্ধ হবে। ঋষি ধৌম্যের আশীর্বাদধন্য, গুরুর আদেশপালনে কৃতকার্য আরুণি। তাই তিনি শ্রেয় লাভ করলেন। সমস্ত বেদ এবং ধর্মশাস্ত্রের প্রকাশিত জ্ঞানে আলোকিত হবেন তিনি — এটিই ছিল গুরুর আশীর্বাদ।
আপোদ ধৌম্য নামে এক ঋষির তিন শিষ্যের গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা, বিনতশিক্ষাগ্রহণ এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে গুরুসেবার দৃষ্টান্ত এই বৃত্তান্তগুলির বিষয়। তিনজন শিষ্যের নাম — উপমন্যু, আরুণি, বেদ। এই তিনজন শিষ্য আচার্যের প্রতি আনুগত্যবিষয়ে একে অপরকে টেক্কা দিয়েছেন।
প্রথমেই আরুণির উপাখ্যান। আচার্য ধৌম্য শিষ্য আরুণিকে আদেশ দিলেন, গচ্ছ কেদারখণ্ডং বধান ইতি যাও ক্ষেতের আলটিতে বাঁধ দাও। বাধ্য শিষ্য গুরুর আদেশপালনে তৎপর। আরুণি তৎক্ষণাৎ ক্ষেতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। বোধ হয় গুরুর শিষ্যকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল টিকাকারদের মতে কেদারে বহুজলপ্রবেশেন বীজনাশো মাভূদিতি। ক্ষেতের ভগ্ন আলপথে বহুজল প্রবেশ করে যাতে বীজ বিনষ্ট না হয়, এটাই ছিল গুরুর উদ্দেশ্য। ধৌম্যশিষ্য আরুণি গুরুর আজ্ঞাপালনে ব্যর্থ হলেন। তবে তিনি হাল ছাড়লেন না। উপায় চিন্তা করতে লাগলেন। শেষে প্রতিবিধান খুঁজে পেলেন। ভবত্বেবং করিষ্যামীতি ঠিক আছে, আমি এটাই করব। আলের ভগ্ন অংশটিতে শুয়ে পড়লেন আরুণি। জলস্রোতের প্রবেশ বন্ধ হল।যথাসময়ে আচার্যদেব ধৌম্য,শিষ্যের খবর নিলেন, ক্ব আরুণিঃ পাঞ্চাল্যো গত ইতি আরুণি কোথায় গেল? শিষ্যরা গুরুকে আরুণির প্রতি আদেশটি স্মরণ করিয়ে দিলেন। শশব্যস্ত হয়ে গুরু নিজে শিষ্যদের সঙ্গে চললেন সেই স্থানটিতে। আরুণিকে ডাক দিলেন, ভো আরুণে!পাঞ্চাল্য!ক্বাসি বৎসেতি! পাঞ্চালদেশীয় আরুণি, বাছা, তুমি কোথায়? কণ্ঠে ব্যাকুলতা ছিল নিশ্চয়ই। ভগ্ন আল থেকে আরুণি সঙ্গে সঙ্গে উঠে আচার্যের কাছে হাজির হলেন। তাঁর নিজের এই আচরণ এবং বিলম্বের কারণ জানালেন গুরুকে। আভূমি নত হয়ে তাঁর নিজের অপারগতার কথা জানালেন। আচার্যকে অভিবাদন করে তাঁকে বিনীত অনুরোধ জানালেন, ভগবন্তম্,আজ্ঞাপয়তু ভবান্, কমর্থং করবাণি ইতি। পুনরাদেশের অপেক্ষায় আছি, কী করতে হবে বলুন। অধ্যাপক আরুণিকে আশীর্বাদ করে বললেন, যস্মাদ্ভবান্ কেদারখণ্ডং বিদার্য্য উত্থিতস্তস্মাদুদ্দালক এব নাম্না ভবান্ ভবিষ্যতীতি। আল ভেদ করে তোমার উত্থান তাই তুমি উদ্দালক নামে প্রসিদ্ধ হবে। ঋষি ধৌম্যের আশীর্বাদধন্য, গুরুর আদেশপালনে কৃতকার্য আরুণি। তাই তিনি শ্রেয় লাভ করলেন। সমস্ত বেদ এবং ধর্মশাস্ত্রের প্রকাশিত জ্ঞানে আলোকিত হবেন তিনি — এটিই ছিল গুরুর আশীর্বাদ।
এরপরে সৌতি উগ্রশ্রবার গল্পের বিষয় উপমন্যুর অপরিসীম গুরুভক্তির দৃষ্টান্তটি। গুরু ধৌম্য তাঁর গোসম্পদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেন উপমন্যুকে। সারাদিন গোচারণের পরে সন্ধ্যায় গুরুকে প্রণাম জানিয়ে কর্মাবসান ছিল তাঁর গুরুর নির্দেশ। আচার্য ধৌম্য উপমন্যুর কাছে জানতে চাইলেন, স্থূলবপু, স্বাস্থ্যবান, উপমন্যুর জীবিকানির্বাহের উপায় কী? বৎস! উপমন্যো! কেন বৃত্তিং কল্পয়সি? পীবানসি দৃঢ়ম্ বেশ মোটাসোটা হয়েছ, দেখছি।
উপমন্যু নির্দ্বিধায় জানালেন, ভৈক্ষ্যেণ বৃত্তিং কল্পয়ামীতি ভিক্ষাবৃত্তিই আমার জীবিকা। অধ্যাপক আদেশ দিলেন ভিক্ষালব্ধ বস্তু আমাকে নিবেদন না করে গ্রহণ করা ঠিক কাজ নয়। ময্যনিবেদ্য ভৈক্ষং নোপযোক্তব্যমিতি। ধৌম্যের আদেশমতো উপমন্যু প্রত্যহ দিনান্তে ভিক্ষালব্ধ বস্তু গুরুকে নিবেদন করে, প্রণাম জানাতেন। গুরু বিবেচনা করলেন,সবটাই যদি তিনি গ্রহণ করেন, কিছুই তো থাকে না। কীভাবে দিন চলে উপমন্যুর? উপমন্যু জানালেন, ভগবতে নিবেদ্য পূর্ব্বম্, অপরঞ্চরামি, তেন বৃত্তিং কল্পয়ামীতি। প্রথমে ভিক্ষালব্ধ বস্তু আপনাকে নিবেদন করে আবারও ভিক্ষা করি, তাই দিয়েই জীবিকানার্বাহ করি।গুরুর বিবেচনায় সেটি ন্যায্য জীবিকানির্বাহের প্রণালী নয়।
নৈষা ন্যায্যা গুরুবৃত্তিঃ অন্যেষামপি ভৈক্ষ্যোপজীবিনাং বৃত্ত্যুপরোধং করোষি, ইত্যেবং বর্ত্তমানো লুব্ধোঽসি। অন্য ভিক্ষুকদের ভিক্ষায় টান পড়বে যে। এ ছাড়াও তুমি বড় লোভী হয়ে পড়ছ। বাধ্য শিষ্য কথা দিলেন, এমনটি আর হবেনা। তা সত্ত্বেও শিষ্যর স্বাস্থ্যের বাড়বৃদ্ধি একই রকমের। আচার্যের জিজ্ঞাসার উত্তরে শিষ্য অকপটে জানালেন,গরুগুলির দুধ বিক্রয় করে তাঁর দিন চলে। অধ্যাপক ধৌম্য বাধা দিয়ে বললেন, দুধ বিক্রি গুরুর অনুমতিসাপেক্ষ। উপমন্যু কথা দিলেন এমনটি আর হবেনা। সন্ধ্যাবেলায় গরুগুলিকে রেখে গুরুকে প্রণাম করে দাঁড়ালেন। গুরু লক্ষ্য করলেন, শিষ্যের সেই একই নধরকান্তি দেহটি।
গুরুর প্রশ্নে শিষ্য উপমন্যু জানালেন, বাছুরগুলি দুধ পান করবার সময়ে যে ফেনা উদ্গিরণ করে সেটাই তিনি পান করেন। ফেনং পিবামি,যমিমে বৎসা মাতৃণাং স্তনান্ পিবন্ত উদ্গিরন্তি।। অধ্যাপক গুরু বাদ সাধলেন তাতেও। বললেন, বাছুরগুলি দয়ালু তাই প্রভূত ফেনা উদ্গিরণ করে, তুমি তার সুযোগ নিয়েছ, তাদের জীবিকানির্বাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছ। তাই ওই ফেনাও তুমি পান করতে পারনা। বাধ্য উপমন্যু জানালেন তথেতি তাই হবে। নিরুপায় ক্ষুধার্ত উপমন্যু একদিন ক্ষুধার জ্বালায় লবণাক্ত, তিক্ত, কটু, রুক্ষ, হজমে জ্বালা সৃষ্টি করে এমন আকন্দপাতা চিবিয়ে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করলেন। এই পাতার রস দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেয়। অব্যর্থ ফল হল — দৃষ্টিশক্তি হারালেন তিনি।
উপমন্যু নির্দ্বিধায় জানালেন, ভৈক্ষ্যেণ বৃত্তিং কল্পয়ামীতি ভিক্ষাবৃত্তিই আমার জীবিকা। অধ্যাপক আদেশ দিলেন ভিক্ষালব্ধ বস্তু আমাকে নিবেদন না করে গ্রহণ করা ঠিক কাজ নয়। ময্যনিবেদ্য ভৈক্ষং নোপযোক্তব্যমিতি। ধৌম্যের আদেশমতো উপমন্যু প্রত্যহ দিনান্তে ভিক্ষালব্ধ বস্তু গুরুকে নিবেদন করে, প্রণাম জানাতেন। গুরু বিবেচনা করলেন,সবটাই যদি তিনি গ্রহণ করেন, কিছুই তো থাকে না। কীভাবে দিন চলে উপমন্যুর? উপমন্যু জানালেন, ভগবতে নিবেদ্য পূর্ব্বম্, অপরঞ্চরামি, তেন বৃত্তিং কল্পয়ামীতি। প্রথমে ভিক্ষালব্ধ বস্তু আপনাকে নিবেদন করে আবারও ভিক্ষা করি, তাই দিয়েই জীবিকানার্বাহ করি।গুরুর বিবেচনায় সেটি ন্যায্য জীবিকানির্বাহের প্রণালী নয়।
নৈষা ন্যায্যা গুরুবৃত্তিঃ অন্যেষামপি ভৈক্ষ্যোপজীবিনাং বৃত্ত্যুপরোধং করোষি, ইত্যেবং বর্ত্তমানো লুব্ধোঽসি। অন্য ভিক্ষুকদের ভিক্ষায় টান পড়বে যে। এ ছাড়াও তুমি বড় লোভী হয়ে পড়ছ। বাধ্য শিষ্য কথা দিলেন, এমনটি আর হবেনা। তা সত্ত্বেও শিষ্যর স্বাস্থ্যের বাড়বৃদ্ধি একই রকমের। আচার্যের জিজ্ঞাসার উত্তরে শিষ্য অকপটে জানালেন,গরুগুলির দুধ বিক্রয় করে তাঁর দিন চলে। অধ্যাপক ধৌম্য বাধা দিয়ে বললেন, দুধ বিক্রি গুরুর অনুমতিসাপেক্ষ। উপমন্যু কথা দিলেন এমনটি আর হবেনা। সন্ধ্যাবেলায় গরুগুলিকে রেখে গুরুকে প্রণাম করে দাঁড়ালেন। গুরু লক্ষ্য করলেন, শিষ্যের সেই একই নধরকান্তি দেহটি।
গুরুর প্রশ্নে শিষ্য উপমন্যু জানালেন, বাছুরগুলি দুধ পান করবার সময়ে যে ফেনা উদ্গিরণ করে সেটাই তিনি পান করেন। ফেনং পিবামি,যমিমে বৎসা মাতৃণাং স্তনান্ পিবন্ত উদ্গিরন্তি।। অধ্যাপক গুরু বাদ সাধলেন তাতেও। বললেন, বাছুরগুলি দয়ালু তাই প্রভূত ফেনা উদ্গিরণ করে, তুমি তার সুযোগ নিয়েছ, তাদের জীবিকানির্বাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছ। তাই ওই ফেনাও তুমি পান করতে পারনা। বাধ্য উপমন্যু জানালেন তথেতি তাই হবে। নিরুপায় ক্ষুধার্ত উপমন্যু একদিন ক্ষুধার জ্বালায় লবণাক্ত, তিক্ত, কটু, রুক্ষ, হজমে জ্বালা সৃষ্টি করে এমন আকন্দপাতা চিবিয়ে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করলেন। এই পাতার রস দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেয়। অব্যর্থ ফল হল — দৃষ্টিশক্তি হারালেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১৬: জাহ্নবী, ভাগীরথী, ত্রিপথগা নদী গঙ্গা, লোকজীবনে ‘মা’গঙ্গা হয়েছেন, কেন এই নামের বৈচিত্র্য?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১১: অধীনস্থ কর্মীদের উৎসাহ দিয়ে মানবসম্পদকে কী করে ব্যবহার করতে হয় সে বিদ্যা সুদক্ষ শাসকের থাকা উচিত
অন্ধ উপমন্যু একটি কুয়োয় পড়ে গেলেন। সূর্যাস্তেও ঘরে ফিরলেন না তখন অধ্যাপক ধৌম্য শিষ্যদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলেন, উপমন্যু ফেরেননি। অনুমান করলেন, আহার্য্য সংগ্রহের পথ বন্ধ, ভোজ্য নিষিদ্ধ তাই হয়তো উপমন্যু ক্রুদ্ধ হয়েছেন। গুরু শিষ্যদের নিয়ে বনে গেলেন উপমন্যুর খোঁজে। ডেকে বললেন, ভো উপমন্যো! ক্বাসি বৎস। এহি ইতি। উপমন্যু, তুমি কোথায়? বাছা, এখানে এস। উপমন্যু জানালেন কূপগহ্বরে পড়ে গিয়েছেন তিনি। কী করে? উপমন্যু বললেন, আকন্দপাতা খাওয়ার ফলে অন্ধত্বই তাঁর পতনের কারণ। গুরুর উপদেশে সুরলোকের চিকিৎসক অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে নানাভাবে স্তবে তুষ্ট করলেন অন্ধ উপমন্যু। অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুকে অন্ধত্ব নিরাময় চিকিৎসায় একটি পিঠে (পিষ্টক) খেতে দিলেন। উপমন্যু প্রত্যাখ্যান করলেন, ন ত্বহমেতমপূপমুপযোক্তুমুৎসহে গুরবে অনিবেদ্য ইতি। গুরুকে নিবেদন না করে এই পিষ্টক গ্রহণ করতে পারছি না।
অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুকে আশ্বস্ত করলেন যে উপমন্যুর গুরুও এই পরিস্থিতিতে অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে তুষ্ট করে তাঁদের প্রদত্ত পিষ্টক এভাবেই ভক্ষণ করেছিলেন। তাই উপমন্যুর সেটাই করা উচিত। উপমন্যু তাও নারাজ। অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুর গুরুভক্তিতে প্রীত, সন্তুষ্ট হয়ে দৃষ্টিশক্তি দান করলেন। উপমন্যু এই নিরাময় বৃত্তান্ত গুরুকে জানালেন। পরমপ্রীত গুরু ধৌম্য উপমন্যুকে সমগ্র বেদজ্ঞান ও শাস্ত্রজ্ঞান দান করলেন।
আপোদ ধৌম্যের তৃতীয় শিষ্য ‘বেদ’। গুরু ধৌম্য বেদকে গুরুগৃহে অবস্থান করে গুরুপরিচর্যার আদেশ দিলেন। তথেত্যুক্ত্বা গুরুকুলে দীর্ঘ্যকালং গুরুশুশ্রূষণপরোঽবসৎ। তাই হবে, বলে বেদ গুরুগৃহে গুরুর সেবায় যত্নপর হলেন। দীর্ঘকাল অতিবাহিত হল। কেমন ছিল সেই যাপন? গরুর মতো সর্বদাই ভারবহন করতেন। সেই ভারবহন, দায়িত্বকর্তব্যভার বহনতো বটেই, আরও কত না আক্ষরিক অর্থে দৈহিক ভার বহন করতেন তিনি। এটি ছিল গুরুর সব কাজে প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে, যাকে বলে, মুখ বুজে কাজ করে যাওয়া। তাঁর এই সহনশীলতা কোন পর্যায়ের? মহাভারত কার বলেছেন, শীতোষ্ণক্ষুত্তৃষ্ণাদুঃখসহ সর্বত্রাপ্রতিকূলস্তস্য মহতা কালেন গুরুঃ পরিতোষং জগাম। শীত গ্রীষ্মে, ক্ষুধাতৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে গুরুর আজ্ঞানুবর্তী হয়ে নিরন্তর আত্মপীড়ণে তাঁর ছিল এমন গুরুভক্তি। গুরু ধৌম্যের মন জয় করলেন তিনি। গুরু ধৌম্য সন্তুষ্ট হলেন।
তৎপরিতোষাচ্চ শ্রেয়ঃ সর্ব্বজ্ঞতাং চাবাপ। এষা তস্যাপি পরীক্ষা বেদস্য। ধৌম্যশিষ্য বেদ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে গুরুকৃপায় সমস্ত জ্ঞান লাভ করলেন। কল্যাণ হল তাঁর।
অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুকে আশ্বস্ত করলেন যে উপমন্যুর গুরুও এই পরিস্থিতিতে অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে তুষ্ট করে তাঁদের প্রদত্ত পিষ্টক এভাবেই ভক্ষণ করেছিলেন। তাই উপমন্যুর সেটাই করা উচিত। উপমন্যু তাও নারাজ। অশ্বিনীকুমারদ্বয় উপমন্যুর গুরুভক্তিতে প্রীত, সন্তুষ্ট হয়ে দৃষ্টিশক্তি দান করলেন। উপমন্যু এই নিরাময় বৃত্তান্ত গুরুকে জানালেন। পরমপ্রীত গুরু ধৌম্য উপমন্যুকে সমগ্র বেদজ্ঞান ও শাস্ত্রজ্ঞান দান করলেন।
আপোদ ধৌম্যের তৃতীয় শিষ্য ‘বেদ’। গুরু ধৌম্য বেদকে গুরুগৃহে অবস্থান করে গুরুপরিচর্যার আদেশ দিলেন। তথেত্যুক্ত্বা গুরুকুলে দীর্ঘ্যকালং গুরুশুশ্রূষণপরোঽবসৎ। তাই হবে, বলে বেদ গুরুগৃহে গুরুর সেবায় যত্নপর হলেন। দীর্ঘকাল অতিবাহিত হল। কেমন ছিল সেই যাপন? গরুর মতো সর্বদাই ভারবহন করতেন। সেই ভারবহন, দায়িত্বকর্তব্যভার বহনতো বটেই, আরও কত না আক্ষরিক অর্থে দৈহিক ভার বহন করতেন তিনি। এটি ছিল গুরুর সব কাজে প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে, যাকে বলে, মুখ বুজে কাজ করে যাওয়া। তাঁর এই সহনশীলতা কোন পর্যায়ের? মহাভারত কার বলেছেন, শীতোষ্ণক্ষুত্তৃষ্ণাদুঃখসহ সর্বত্রাপ্রতিকূলস্তস্য মহতা কালেন গুরুঃ পরিতোষং জগাম। শীত গ্রীষ্মে, ক্ষুধাতৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে গুরুর আজ্ঞানুবর্তী হয়ে নিরন্তর আত্মপীড়ণে তাঁর ছিল এমন গুরুভক্তি। গুরু ধৌম্যের মন জয় করলেন তিনি। গুরু ধৌম্য সন্তুষ্ট হলেন।
তৎপরিতোষাচ্চ শ্রেয়ঃ সর্ব্বজ্ঞতাং চাবাপ। এষা তস্যাপি পরীক্ষা বেদস্য। ধৌম্যশিষ্য বেদ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে গুরুকৃপায় সমস্ত জ্ঞান লাভ করলেন। কল্যাণ হল তাঁর।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩: ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শিপ
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২: চলমান সুন্দরবন
গুরু কেমন হতে পারেন? শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, “তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া”— পরমজ্ঞানকে আয়ত্ত করতে হলে, প্রণিপাত অর্থাৎ absolute surrender অর্থাৎ সম্পূর্ণ আত্মনিবেদনের মাধ্যমে বিনীতহৃদয়ে গুরুর প্রতি আস্থা রাখতে হবে। প্রশ্নের পর প্রশ্নের উত্তরে শিষ্যের সমস্ত সংশয় দূর করবেন গুরু। আর সেবার দ্বারা গুরুর সন্তুষ্টিবিধানও শিষ্যের কর্তব্য।এই দানের কোনও বিকল্প হয় না যদিও, তবু একটা লক্ষ্য পূরণ করতেই শিষ্যের এই সার্বিক প্রচেষ্টা — এটি অনস্বীকার্য।আর গুরু? এই নিঃশর্ত আনুগত্য, শ্রদ্ধার প্রকাশে শিষ্য কী আশা করবেন গুরুর কাছে? অখণ্ড, নির্মল, সংশয়াতীত জ্ঞান। শিষ্য গুরুগৃহে শৃঙ্খলারক্ষা, কর্তব্যবোধের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই তাঁর শিক্ষাজীবনের সম্পূর্ণতা। আরুণি গুরুর প্রতি কর্ত্তব্যনিষ্ঠায় ক্ষেতের ভাঙা আলে জলপ্রবেশ রুদ্ধ করতে পেরেছেন নিজের আত্মক্ষয়ী চেষ্টায়, সম্পূর্ণ শরীর দিয়ে পড়ে থাকলেন সেখানে, গুরুর হুঁশ হল শেষ পর্যন্ত। খোঁজ নিলেন তাঁর। বেঁচে গেলেন আরুণি।
গুরুর দয়া হল, উজার করে দরাজহৃদয়ে বেদজ্ঞান দান করলেন তাঁকে। না,আত্মপীড়ন ওইটুকুই, একদিনের কৃচ্ছ্রসাধন — তারপরেই মুক্তি। অবশ্য আন্তরিক শ্রদ্ধার অভাব ছিলনা শিষ্য আরুণির, নিষ্ঠাতেও তাঁর কোনও খামতি নেই। শিষ্যের বিষয় ছিল হয়তো অধ্যবসায়, সহিষ্ণুতা, দায়িত্ববোধের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। শিক্ষাজীবনে ওই তিনটি যে বড্ডো বেশি প্রয়োজন।
দ্বিতীয় শিষ্য উপমন্যুকে আরও কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হল। খাদ্যের লোভকে জয় করবার জন্যে তাঁকে নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল। অন্ধত্ব বরণ করলেন, কুয়োর গহ্বরে পড়ে গিয়ে জীবন বিপন্ন হতে চলল তাঁর। অবশেষে গুরুর তুষারশীতল হৃদয়ের বরফ গলল। তিনি অনুতপ্ত হলেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে প্রতিষেধক গ্রহণেও শিষ্য দ্বিধান্বিত হলেন। সেটি গুরুকে নিবেদন না করে কীভাবে গ্রহণ করবেন? তাঁর নিরাময়ের উপায়টিও যে গুরুর অনুজ্ঞাসাপেক্ষ।
গুরুর প্রতিটি সিদ্ধান্ত নির্মম থেকে নিষ্ঠুরতম হয়ে উঠেছে। শিষ্য উপমন্যু কিন্তু ভুল করেই চলেছেন, সংশয়াতীত আনুগত্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং তাৎক্ষণিক কিন্তু জৈবিক প্রয়োজনে অপরিহার্যপ্রায় লোভকেও জয় করতে পারেননি।শেষ পর্যন্ত দুঃখদীর্ণ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শিষ্যত্বের পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন তিনি। কোনও প্রলোভনে ভুলে নয়,কোন তাৎক্ষণিক লাভের আশায় নয়,আত্মনিপীড়ণের দুঃখের সহনশীলতায় বিদ্যাশিক্ষা সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে, সেখানে কোনও চটজলদি প্রক্রিয়া কাজ করতে পারে না।
গুরুর দয়া হল, উজার করে দরাজহৃদয়ে বেদজ্ঞান দান করলেন তাঁকে। না,আত্মপীড়ন ওইটুকুই, একদিনের কৃচ্ছ্রসাধন — তারপরেই মুক্তি। অবশ্য আন্তরিক শ্রদ্ধার অভাব ছিলনা শিষ্য আরুণির, নিষ্ঠাতেও তাঁর কোনও খামতি নেই। শিষ্যের বিষয় ছিল হয়তো অধ্যবসায়, সহিষ্ণুতা, দায়িত্ববোধের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। শিক্ষাজীবনে ওই তিনটি যে বড্ডো বেশি প্রয়োজন।
দ্বিতীয় শিষ্য উপমন্যুকে আরও কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হল। খাদ্যের লোভকে জয় করবার জন্যে তাঁকে নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল। অন্ধত্ব বরণ করলেন, কুয়োর গহ্বরে পড়ে গিয়ে জীবন বিপন্ন হতে চলল তাঁর। অবশেষে গুরুর তুষারশীতল হৃদয়ের বরফ গলল। তিনি অনুতপ্ত হলেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে প্রতিষেধক গ্রহণেও শিষ্য দ্বিধান্বিত হলেন। সেটি গুরুকে নিবেদন না করে কীভাবে গ্রহণ করবেন? তাঁর নিরাময়ের উপায়টিও যে গুরুর অনুজ্ঞাসাপেক্ষ।
গুরুর প্রতিটি সিদ্ধান্ত নির্মম থেকে নিষ্ঠুরতম হয়ে উঠেছে। শিষ্য উপমন্যু কিন্তু ভুল করেই চলেছেন, সংশয়াতীত আনুগত্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং তাৎক্ষণিক কিন্তু জৈবিক প্রয়োজনে অপরিহার্যপ্রায় লোভকেও জয় করতে পারেননি।শেষ পর্যন্ত দুঃখদীর্ণ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শিষ্যত্বের পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন তিনি। কোনও প্রলোভনে ভুলে নয়,কোন তাৎক্ষণিক লাভের আশায় নয়,আত্মনিপীড়ণের দুঃখের সহনশীলতায় বিদ্যাশিক্ষা সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে, সেখানে কোনও চটজলদি প্রক্রিয়া কাজ করতে পারে না।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৬: মাছের তেল হার্ট অ্যাটাক আটকায়?
বিচিত্রের বৈচিত্র, মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী
তৃতীয় শিষ্য বেদের কৃতকার্যতা শুধুমাত্র নীরবে গুরুআজ্ঞা পালনে।কোন কিছু প্রত্যাশায় নয়, শুধুমাত্র গুরুর কাজের গুরুদায়িত্বপালনেই তাঁর আনন্দ ছিল হয়তো। কোনও প্রতিকূলতা তাঁর এই কর্মোদ্যোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারেনি।অপ্রতিম সেবাধর্মে তাঁর গুরুগৃহে জ্ঞানলাভ সম্পূর্ণ হয়েছে। পথনির্দেশকের প্রতি নিঃশর্ত সমর্পণই কোনও সাফল্যের মূল মন্ত্র, এটি তিনি চরম সহিষ্ণুতায় প্রমাণ করেছেন।
এই তিনশিষ্যের নিষ্ঠা,তিতিক্ষা, সেবাপরায়ণাতায় কী শিক্ষা নিহিত? এই তিন কাহিনি উপস্থাপনার চমৎকারিত্ব কোথায়?
আরুণি যে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তা নিষ্ঠার সঙ্গে শরীর এবং মন দিয়ে পালন করেছেন। জীবন এক বিস্তৃত জ্ঞানক্ষেত্র, তাঁর বিস্তৃতি অপার।প্রতিকূল এবং অনুকূল পরিস্থিতিতে জীবনযুদ্ধে মানসিক এবং শারীরিক শক্তির চরমতম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এখানে। আরুণি শিক্ষাজীবনান্তে প্রবেশ করতে চলেছেন এক বিস্তীর্ণ অজানা অচেনা জ্ঞানভূমিতে তাঁর মতো অনেকে বিদ্যার্থীর এই পরীক্ষা হয়তো আবশ্যক।
দ্বিতীয় জীবনদীক্ষায় সফল পরীক্ষার্থী উপমন্যু।তিনি ব্রহ্মচর্য্য অর্থাৎ শিক্ষাজীবনান্তে গার্হস্থ্যজীবনে প্রবেশ করতে চলেছেন, সেখানে কিন্তু ছড়িয়ে থাকা নানা আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, দ্বিধাহীন চিত্তে, সঠিক পথটি খুঁজে নিতে হবে তাঁকে। সাধারণমানুষের ক্ষেত্রে চরমমূল্যে পুরুষার্থ অর্থাৎ জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছনো অসম্ভব। পথে বার বার নানা ছড়ানো প্রলোভন বিব্রত করবে, দিকভ্রান্ত হয়ে অন্ধকার গহ্বরে পতন নিশ্চিত। উপমন্যুর মতো দিকভ্রান্তি সাময়িক, সঠিক পথনির্দেশও আছে। যেমনভাবে উপমন্যু তিতিক্ষায়,গুরুর কৃতকার্যতানির্ধারণের পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন ঠিক তেমনভাবে হয়তো জীবনাভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ কোন গুরু সঠিক পথনির্দেশ দিতে সক্ষম। উপমন্যু শ্রদ্ধেয় গুরুকে পেয়েছিলেন। জীবনে এইরকম বহু শিক্ষক, পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। শুধু শিক্ষকই নন, যে কোন ব্যক্তিই এই শিক্ষণের মাধ্যম হতে পারেন। এ ছাড়াও জীবন নিজেই একজন গুরু প্রতিমুহূর্তে যিনি শিখিয়েই চলেছেন।
ধৌম্যশিষ্য বেদ — সেবাধর্মের এক অনন্য উদাহরণ।সেবা অর্থাৎ কর্তব্যপালনে নিষ্ঠাবোধ মানুষকে উত্তরণের পথ দেখায়। শিষ্য বেদের চোখ বুজে কর্তব্যপালনে প্রতিকূলতা জয়ের প্রয়াস, সেই জীবনবোধকেই উজ্জীবিত করে তোলে।
ধৌম্যশিষ্য আরুণি, উপমন্যু, বেদ এই শিষ্যত্রয়ের গুরুগৃহে অবস্থান এবং পরীক্ষায় সাফল্য যেমন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হতে পারে, তেমনিই হয়তো সাংসারিক জীবনের প্রারম্ভিক জ্ঞানলাভের দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে এদের কোনও বাধা নেই।—চলবে।
এই তিনশিষ্যের নিষ্ঠা,তিতিক্ষা, সেবাপরায়ণাতায় কী শিক্ষা নিহিত? এই তিন কাহিনি উপস্থাপনার চমৎকারিত্ব কোথায়?
আরুণি যে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তা নিষ্ঠার সঙ্গে শরীর এবং মন দিয়ে পালন করেছেন। জীবন এক বিস্তৃত জ্ঞানক্ষেত্র, তাঁর বিস্তৃতি অপার।প্রতিকূল এবং অনুকূল পরিস্থিতিতে জীবনযুদ্ধে মানসিক এবং শারীরিক শক্তির চরমতম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এখানে। আরুণি শিক্ষাজীবনান্তে প্রবেশ করতে চলেছেন এক বিস্তীর্ণ অজানা অচেনা জ্ঞানভূমিতে তাঁর মতো অনেকে বিদ্যার্থীর এই পরীক্ষা হয়তো আবশ্যক।
দ্বিতীয় জীবনদীক্ষায় সফল পরীক্ষার্থী উপমন্যু।তিনি ব্রহ্মচর্য্য অর্থাৎ শিক্ষাজীবনান্তে গার্হস্থ্যজীবনে প্রবেশ করতে চলেছেন, সেখানে কিন্তু ছড়িয়ে থাকা নানা আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, দ্বিধাহীন চিত্তে, সঠিক পথটি খুঁজে নিতে হবে তাঁকে। সাধারণমানুষের ক্ষেত্রে চরমমূল্যে পুরুষার্থ অর্থাৎ জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছনো অসম্ভব। পথে বার বার নানা ছড়ানো প্রলোভন বিব্রত করবে, দিকভ্রান্ত হয়ে অন্ধকার গহ্বরে পতন নিশ্চিত। উপমন্যুর মতো দিকভ্রান্তি সাময়িক, সঠিক পথনির্দেশও আছে। যেমনভাবে উপমন্যু তিতিক্ষায়,গুরুর কৃতকার্যতানির্ধারণের পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন ঠিক তেমনভাবে হয়তো জীবনাভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ কোন গুরু সঠিক পথনির্দেশ দিতে সক্ষম। উপমন্যু শ্রদ্ধেয় গুরুকে পেয়েছিলেন। জীবনে এইরকম বহু শিক্ষক, পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। শুধু শিক্ষকই নন, যে কোন ব্যক্তিই এই শিক্ষণের মাধ্যম হতে পারেন। এ ছাড়াও জীবন নিজেই একজন গুরু প্রতিমুহূর্তে যিনি শিখিয়েই চলেছেন।
ধৌম্যশিষ্য বেদ — সেবাধর্মের এক অনন্য উদাহরণ।সেবা অর্থাৎ কর্তব্যপালনে নিষ্ঠাবোধ মানুষকে উত্তরণের পথ দেখায়। শিষ্য বেদের চোখ বুজে কর্তব্যপালনে প্রতিকূলতা জয়ের প্রয়াস, সেই জীবনবোধকেই উজ্জীবিত করে তোলে।
ধৌম্যশিষ্য আরুণি, উপমন্যু, বেদ এই শিষ্যত্রয়ের গুরুগৃহে অবস্থান এবং পরীক্ষায় সাফল্য যেমন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হতে পারে, তেমনিই হয়তো সাংসারিক জীবনের প্রারম্ভিক জ্ঞানলাভের দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে এদের কোনও বাধা নেই।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।