বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

গঙ্গার অববাহিকায় ভাসে আমাদের জীবনস্রোত, ঢেউয়ে উত্তাল হয় আবেগ, প্লাবনে দিকভ্রান্ত হয় বিপন্ন ভারতীয় জীবন, গঙ্গা মিশে আছে অস্থিমজ্জায়, প্রাণস্পন্দনে।

মহাজীবনপথের এক জীবনানভিজ্ঞ তরুণের অনন্ত যাত্রার অভিমুখ এখন মাতৃসমা শৈলনন্দিনী গঙ্গা। শোণনদীর বালুকাময় তটভূমি ধরে এগিয়ে যেতে যেতে অদূরে কূলপ্লাবিনী সরিদ্বরা, জলে পরিপূর্ণা জাহ্নবী এখন রামচন্দ্রের দৃশ্যপটে।

রামচন্দ্র গঙ্গার পবিত্র জলে পিতৃপুরুষদের স্মৃতিতর্পণ করলেন। নদী যে বহু স্মরণচিহ্ন বুকে নিয়ে বয়ে যায় সাগরসঙ্গমে। বড় স্মৃতিজাগানিয়া নদী। গঙ্গা ত্রিপথগা কেন? রামচন্দ্রের প্রশ্নে বিস্মিত কৌতূহল।

ভগবন্ শ্রোতুমিচ্ছামি গঙ্গাং ত্রিপথগাং নদীম্। ত্রৈলোক্যং কথমাক্রম্য গতা নদনদীপতিম্।।

কীভাবে ত্রিপথগা দেবী গঙ্গা, ত্রিলোক আচ্ছন্ন করে, নদনদীপতি সাগরে মিলিত হয়েছিলেন? তাঁর কণ্ঠে অদম্য কৌতূহলের সুর।মহর্ষি শুরু করলেন গঙ্গার জন্মসূত্রে ত্রিলোক ব্যাপ্তি এবং পথপরিক্রমণ বৃত্তান্ত।
হিমালয় এবং মেরুদুহিতা মেনার দুই কন্যা। জ্যেষ্ঠা গঙ্গা এবং কনিষ্ঠা পার্বতী। দেবতারা তাঁদের কোন অভীষ্ট কার্যসিদ্ধির জন্যে পর্বতশ্রেষ্ঠ হিমালয়ের কাছে ত্রিপথগামিনী জ্যেষ্ঠা কন্যা গঙ্গাকে চাইলেন। মহাত্মা হিমালয়, ত্রিলোকের কল্যাণকামনায়, সাবলীলগতিতে প্রবাহিনী, ত্রিলোক পরিশুদ্ধ করাতে যাঁর ‘লোকপাবনী’ বিশেষণ, সেই গঙ্গাকে, দেবতাদের প্রদান করলেন।
দেবতারা—

প্রতিগৃহ্য ত্রিলোকার্থং ত্রিলোকহিতকাঙ্খিণঃ। গঙ্গামাদায় তেঽগচ্ছন্ কৃতার্থেনান্তরাত্মনা।।

উদ্দেশ্যসাধনে কৃতার্থচিত্তে গঙ্গাকে নিয়ে দেবতারা প্রস্থান করলেন। গিরিরাজ কঠোর তপস্বিনী তাঁর অপর কন্যা উমাকে অপ্রতিমরূপ বিশিষ্ট রুদ্রদেব মহাদেবকে সম্প্রদান করলেন। মহর্ষি বিশ্বামিত্রের রামচন্দ্রকে পর্বতরাজ হিমালয়ের দুই কন্যার মাহাত্ম্য বর্ণনায় আরও বিশদে বললেন, হে রাঘব,পর্বতরাজ হিমালয়ের এই দুই কন্যার একজন সর্বলোকের নমস্যা নদীশ্রেষ্ঠা গঙ্গা এবং অপরজন হলেন দেবী উমা।

এতে তে শৈলরাজস্য সুতে লোকনমস্কৃতে। গঙ্গা চ সরিতাং শ্রেষ্ঠা উমা দেবী চ রাঘব।।

গঙ্গা যেভাবে আকাশপথে দেবলোকে প্রথমে উপনীত হলেন তা সবিশেষে ব্যাখ্যা করলেন ঋষি। রামচন্দ্রের একের পর এক জিজ্ঞাসা। জ্যেষ্ঠা শৈলরাজতনয়া গঙ্গার দিব্য মানবীসত্তা কেন?গঙ্গা ত্রিপথগা কেন? কোন মহৎ কাজের জন্য লোকপাবনী গঙ্গার এই প্রসিদ্ধি?

ত্রীন্ পথো হেতুনা কেন প্লাবয়েল্লোকপ্লাবনী। কথং গঙ্গা ত্রিপথগা বিশ্রুতা সরিদুত্তমা।।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১৩: কুরুপাণ্ডবদের দুই পিতামহের একজন — ভীষ্ম এবং তাঁর মা গঙ্গা

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৮: বাঁকুড়ার রামসাগরে বিড়াই নদীকে কেন্দ্র করে প্রায় তিনশটি মাছের হ্যাচারি পূর্ণমাত্রায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে

তিনি প্রশ্ন রাখছেন এমন একজনের কাছে যাঁর জ্ঞানভাণ্ডারে আছে ভৌগোলিক, সমাজতাত্ত্বিক, প্রতিরক্ষাবিষয়ক জ্ঞান এবং সর্বোপরি মানবচরিত্র সম্বন্ধে বিপুল জীবনাভিজ্ঞতা। সমস্তজিজ্ঞাস্যের সমাধান তাঁর প্রজ্ঞায় মজুদ। রামচন্দ্র ইতিমধ্যে দীর্ঘপথের জ্ঞানঋদ্ধ সঙ্গীকে বুঝে নিয়েছেন।

বিস্তরং বিস্তরজ্ঞোঽসি দিব্যমানুষসম্ভবম্।

কারণ দৈব ও মানবসম্বধীয় সবকিছুর বিস্তারিত জ্ঞান যে মহর্ষি বিশ্বামিত্রের অবগত। গঙ্গার আকাশপথে দেবলোকে প্রবেশের বিবরণ বর্ণনা করলেন মহর্ষি।

এতত্তে সর্ব্বমাখ্যাতং যথা ত্রিপথগামিনী।।
খং গতা প্রথমং তাত গতিং গতিমতাং বর। সুরলোকং সমারূঢ়া বিপাপা জলবাহিনী।।

এরপরেও রামচন্দ্র এবং লক্ষ্মণের অদম্য কৌতূহল। তাঁরা আরও শুনতে আগ্রহী। কৌতূহল নিরসনে জ্যেষ্ঠা হিমালয়নন্দিনীর উৎপত্তি এবং ত্রিলোকে তাঁর অপার ব্যাপ্তির কাহিনী বিস্তারিতভাবে শুরু করলেন ঋষি বিশ্বামিত্র। কী সেই ঘটনাপরম্পরা?

গিরিরাজ হিমালয় কঠোর তপস্বিনী কনিষ্ঠা কন্যা উমাকে অপ্রতিম রূপ বিশিষ্ট রুদ্রদেবকে সম্প্রদান করলেন। উমার সঙ্গে দীর্ঘ সহবাসেও কোন পুত্রের জন্ম হল না। দেবাদিদেব মহাদেবের সঞ্চিত বিচলিত তেজ পৃথিবীতে ক্ষরিত হল। পৃথিবীর অরণ্য পর্বতে সেই তেজ পরিব্যাপ্ত হল। দেবতাদের আদেশে অগ্নি বায়ুর সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে সেই রৌদ্র তেজে প্রবেশ করলেন। সেই বীর্য অগ্নিদ্বারা ব্যাপ্ত হয়ে শ্বেত পর্বতে পরিণত হল এবং সেই শ্বেত পর্বতে অগ্নি ও সূর্যের তুল্য তেজোদীপ্ত শরবন সৃষ্টি হল। উমা গর্ভধারণের ব্যর্থ হয়ে দেবগণকে অভিশাপ দিলেন আমার মতো তোমরাও পত্নীতে পুত্র উৎপাদনে ব্যর্থ হবে।

অপত্যং স্বেষু দারেষু নোৎপাদয়িতুমর্হথ।

পৃথিবীও অভিশপ্তা হলেন, হে পৃথিবী, যেহেতু আমার সন্তানলাভ তোমার অভিপ্রেত নয় তাই তুমি বহুরূপা এবং বহভোগ্যা হবে।

অবনে নৈকরূপা ত্বং বহুভার্য্যা ভবিষ্যসি। ন চ পুত্রকৃতাং প্রীতিং মৎক্রোধকলুষীকৃতা। প্রাপ্স্যসে ত্বং সুদুর্ম্মেধে মম পুত্রমনিচ্ছতী।।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২২: স্টেরয়েড বড় ভয়ঙ্কর ওষুধ?

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৪: কিশোরের শুধু কণ্ঠই নয়, তাঁর অভিনয় ক্ষমতাকেও গানের নেপথ্যে সুকৌশলে কাজে লাগাতেন পঞ্চম

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১: আমি ‘কেবলই’ স্বপন…

হিমালয়ের উত্তরপার্শ্বস্থ শৃঙ্গে কঠোর তপস্যায় নিরত হলেন উমা এবং মহেশ্বর। দেবতারা ব্রহ্মাকে জানালেন, দেব সেনাপতি লাভ করবেন বলে ইতিমধ্যে মহাদেব যে বর দিয়েছেন তার সিদ্ধ হবে কী করে? মহাদেব যে সপত্নী তপস্যারত হয়েছেন। ব্রহ্মা আশ্বস্ত করলেন, উমার অভিশাপে তোমাদের পুত্রের জন্ম হবে না। এই আকাশগঙ্গার গর্ভে অগ্নি,পুত্র উৎপাদন করবেন সেই পুত্রই হবে শত্রুদমনকারী দেবসেনাপতি‌। সেই পুত্র উমা এবং গঙ্গা দুই ভগ্নীরই প্রিয়পাত্র হবেন। দেবতারা অগ্নিকে অনুরোধে করলেন

দেবকার্য্যমিদং দেব সমাধৎস্ব হুতাশন।শৈলপুত্র্যাং মহাতেজো গঙ্গায়াং তেজ উৎসৃজ।।

হে অগ্নি, তুমি গঙ্গাগর্ভে তেজ নিক্ষেপ করো। এটি দেবকার্যের সমাধান মনে করবে। দিব্যরূপধারিণী গঙ্গার সামনে অগ্নির নিজের তেজ যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেল। তিনি পূর্ণতেজে গঙ্গাকে গ্রহণ করলেন। সমস্ত স্রোত পরিপূর্ণ হল। এই অত্যুগ্র তেজ গঙ্গা ধারণ করতে অক্ষম হলেন।অগ্নির উপদেশে হিমালয়েপার্শ্বে গঙ্গা গর্ভমোচন করলেন। গঙ্গা গর্ভের সেই তপ্ত কাঞ্চনবর্ণের তেজে সেখানকার সমস্ত ভূভাগ স্বর্ণমণ্ডিত হল। নিকটবর্তী স্থান রজতমণ্ডিত এবং সুদূরপ্রসারী তেজের আতিশয্যে দূরবর্তী স্থানগুলি তাম্র ও কৃষ্ণবর্ণ লৌহে পরিণত হল এবং এদের মলভাগ হতে উৎপন্ন হলো টিন, সীসক। পৃথিবীর ভূভাগে পড়ে তা নানা ধাতু উৎপন্ন করল। অগ্নিপ্রতিম পুত্র,গর্ভে উৎপন্ন হলে পর,দেবগনের অনুরোধে কৃত্তিকা প্রভৃতি নক্ষত্র পুত্রটিকে দুগ্ধ পানে পালন করলেন।তাই তাঁর নাম হলো কার্তিকেয়। দেবতারা বললেন,উমা মহেশ্বরের স্খলিত বীর্য থেকে উৎপন্ন বলে পুত্রটি স্কন্দ নামেও বিখ্যাত হবেন।ছয় কৃত্তিকার ছয় স্তন থেকে ক্ষরিত দুগ্ধ পান করায় পুত্রটির অপর নাম হল ষড়ানন। দেবতারা লাভ করলেন দৈত্যজয়ী দেব সেনাপতিকে। বিখ্যাত মহাকবির কল্পলোকের কুমারসম্ভব নির্মাণের প্রেরণা হয়ে রইল কুমার কার্তিকেয়ের ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনাবহুল উপাখ্যন। গঙ্গার অনুগ্রহে এটি সম্ভব হয়েছিল। এখানেই বোধ হয় আর্ষকবির গঙ্গাদেবীতে আরোপিত মাহাত্ম্য সংযোজন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৫: গায়ের জামা হাওয়ায় উড়বে বলে দেহের সঙ্গে ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখতেন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৭: স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা ‘সাগরিকা’

ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম এই নিয়ে এই পঞ্চভৌতিক দেহ। অরণ্য, পর্বত, জল, নদী— এই সবকিছুই ঋষিকবি বাল্মীকির চেতনাকে আলোড়িত করেছে। তাঁর সত্তায় এই পঞ্চভূত পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু শূন্যতার আকাশগঙ্গা সবকিছু মিশে রয়েছে যেমন তেমনি গঙ্গার মূলস্রোত বিন্যাসে তাঁদের কথাও স্মরণে এনেছেন। কি অপূর্ব সম্পর্কের বিনির্মাণ। মেরুপর্বতের কন্যা মেনা, হিমালয়ের স্ত্রী। মেরুপর্বত আর হিমালয় দুই পর্বতকে সম্পর্কে গেঁথেছেন আত্মীয়তার সূত্রে। তাঁদের দুই কন্যা উমা ও গঙ্গা। পর্বত যে নদীর অন্যতম উৎস,আঁতুড় ঘর, এ যে প্রত্যক্ষ সত্য। উৎস সৃষ্টিতেও যে কত বিচিত্র কাহিনির উপস্থাপনা। দুই শক্তির, অগ্নির ও বায়ুর মিলনে মহাদেবের স্খলিত তেজ দ্রবীভূত হয়ে শ্বেত পর্বত ও শরবন সৃষ্টি করে।

প্রাকৃতিকশক্তিতে দেবত্বআরোপের পরম্পরা যে ঋষি কবি বাল্মিকীর উত্তরাধিকার। পৃথিবীর, অন্তরীক্ষের, প্রাকৃতিক শক্তি বৈদিক মনীষায় দেবতার রূপ লাভ করেছিল। ঋষিকবি বাল্মীকির দেবকল্পনার প্রাণ বোধহয় নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও শক্তি। আবহমান কাল ধরে বৈদিক ঋষিদের নিসর্গকল্পনায় দ্যুলোক, ভুলোক,অন্তরীক্ষলোক, মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। বৈদিক ঋষিদের কল্পনার, দেবতাদের চিন্ময়রূপ, আদি মহাকাব্যে আর্ষকবির কাব্যভাবনায় মানবিক রূপ পেয়েছে। তাই তাঁদের, আদিকবি, বোধ হয় লৌকিকজীবনের সম্পর্কসূত্রে বেঁধেছেন। শিবশক্তিতে রৌদ্রতেজে মিলিত হয়েছেন অগ্নি ও বায়ু, সৃষ্টি করেছেন তুষারাবৃত পর্বত, অরণ্য। দেবতাদের বংশ পরম্পরার অবলুপ্তি ঘোষণা করেছেন ক্রুদ্ধ উমা। এতদিনের বীরভোগ্যা বসুন্ধরা হলেন বহুভোগ্যা, বিচিত্র বর্ণময়ী, সাধারণী। বিশিষ্টা থেকে সাধারণী হওয়ায় শাপে বর হল। সাধারণের আবাস যে এই লৌকিক পৃথিবী, বীর যে হাতেগোনা মাত্র।

আকাশগঙ্গায় মঙ্গলময় শিববীর্য পরিত্যাগ করেছেন অগ্নি।তেজের সংস্পর্শে বাষ্পকণা দ্রবীভূত হয়ে জলধারার প্রবাহ সৃষ্টি করে, এ যে চিরন্তন সত্য।আকাশ অন্তরীক্ষ, বাষ্পকণায় আচ্ছন্ন। কিন্তু বিশাল তেজশক্তি একত্রে পুঞ্জীভূত হয়ে মিলিত হলে যে তা ধারণ করা দুষ্কর। তাই গঙ্গার করুণ প্রার্থনা ছিল—

অশক্তা ধারণে দেব তেজস্তব সমুদ্ধতম্

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

তাই গর্ভমোচনে অগ্নির পরামর্শে হিমালয়পার্শ্বেই গর্ভ মুক্ত করলেন গঙ্গা? যে গর্ভে আছে মঙ্গলময় শিবশক্তি।তার প্রথম স্পর্শে স্বর্ণাভা, কোথাও কোথাও রজত ছটা যতদূর চোখ যায় কোথাও তাম্র বর্ণের ধাতব আলিম্পন টিনের রেখা লৌহবর্ণ ধাতব অস্তিত্ব, সঞ্চিত ধাতুর সংগ্রহ হল পৃথিবী। পতিত তেজ অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হল নানাবিধ ধাতু। সোনার বরণ হল অরণ্যভূমি সেই থেকে হুতাশনতুল্য সুবর্ণের অপর নাম হল জাতরূপা। গঙ্গাস্রোতে আছে পিতা হিমবান্ অর্থাৎ হিমালয়পর্বতের দানাবশেষ।হিমালয় যে
ধাতূনামাকরঃ সমস্ত ধাতুর আকর অর্থাৎ খনি। গঙ্গার স্রোতে মিলল সেই সব পিতৃদত্ত সম্পদ। গঙ্গা যেন সেই পিতার স্নেহধন্যা কন্যাটি যে তাঁর সমস্ত সম্পদ উজার করে নিয়ে চলে যায় অন্য সংসারে তাঁর পরিপূর্ণতার ফসল ফলাতে।গঙ্গা বিচিত্র ধাতব সম্পদে রাঙাতে চললেন পৃথিবীতে।

অনন্ত প্রবাহিনী গঙ্গার, আকাশগঙ্গা বাষ্পময় শূন্যতা থেকে পবিত্র সুরলোকে উত্তরণ, যা লৌকিক কল্পনায় মানুষের অধিষ্ঠান থেকে বহুদূরে দূষণমুক্ত, অপাপবিদ্ধ কোন পর্বত শিখর, নিষ্পাপ দেবভূমি। এরপর তাঁর গর্ভমোচনে শিবশক্তির উন্মোচন, বহমানধারার অব্যাহত গতি। গৈরিক অতীত প্রবাহের গৈরিকধারায় দৃশ্যমান, ধাতুসংস্রবে কত শত বিমিশ্রণে সভ্যতার নব নব জয়যাত্রার সূচনা, মোহনায় বড় মহান লক্ষ্যে আত্মদান। গঙ্গা- ভারতীয় সভ্যতায় ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা অভ্যাস, গঙ্গা-জীবনের অঙ্গ, গঙ্গা— ভারতচেতনার প্রেরণা।—চলবে
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।

Skip to content