ছবি: সংগৃহীত।
কুরুবংশীয়দের প্রথম অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য্যের জন্মবৃত্তান্ত অত্যন্ত চমকপ্রদ। গৌতম ঋষির পুত্র তিনি। শরবনে জন্ম, তাই তার নাম শরদ্বান। তাঁর বেদাধ্যয়নের থেকেও অস্ত্রবিদ্যায় আগ্রহ বেশি। ধনুর্বিদ্যায় এবং তপস্যায় তাঁর এতটাই মনঃসংযোগ যে দেবরাজ ইন্দ্র পর্যন্ত তাঁর এ বিষয়ে অগ্রগতিতে সন্ত্রস্ত বোধ করলেন, রাজ্য হারাবার ভয় তাঁর। দেবরাজ যথারীতি চিরাচরিত ছলনার আশ্রয় নিলেন। শরদ্বানঋষিকে কামনায় আসক্ত করে তুলে তপোভ্রষ্ট করবার জন্য জানপদী নামে অপ্সরাকে পাঠিয়ে দিলেন। ফাঁদে পা দিলেন ঋষি শরদ্বান। একবস্ত্রধারিণী সুন্দরী নারীকে উৎফুল্লনয়নে দেখলেন তিনি। বিভ্রান্ত ঋষির হাত থেকে খসে পড়ল ধনুর্বাণ। রইল পড়ে ধনুর্বাণ, কৃষ্ণাজিন ঋষি আশ্রম ছেড়ে উধাও হলেন অপ্সরাটির কাছে। ঋষি হলেও তিনি তো মানুষ। ঋষির শুক্র শরনামক তৃণগুচ্ছে পড়ে দ্বিধাবিভক্ত হল। জন্ম হল একটি পুত্র এবং একটি কন্যার।
হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু শরদ্বান ঋষির আশ্রমের কাছে মৃগয়ায় এসে ঋষি শরদ্বানের পরিত্যক্ত ধনুর্বাণ, কৃষ্ণাজিন এবং সেই সদ্যজাত পুত্রকন্যা দুটিকে দেখে দয়াপরবশ হয়ে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন। তাদের প্রতি যাবতীয় কর্তব্য পালন করে বড় করে তুললেন। ভাবলেন কৃপায় বর্ধিত পুত্র-কন্যা দুটির নাম হোক যথাক্রমে কৃপ এবং কৃপী। শরদ্বান তপোবলে এসব বৃত্তান্ত জানতে পারলেন এবং রাজপ্রাসাদে এসে রাজা শান্তনুকে ছেলেমেয়ে দুটির বংশ পরিচয় জানালেন। জন্মদাতা পিতা পুত্রটির শিক্ষার দায়িত্ব নিলেন। চতুর্বিধ ধনুর্বিদ্যায় এবং নানা গোপন অস্ত্রজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে কৃপ হয়ে উঠলেন অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য্য। তাঁর ছাত্র হলেন ধৃতরাষ্ট্রপুত্র ও পাণ্ডুপুত্রসহ যাদব কুমার এবং অন্যান্য দেশের রাজপুত্ররা। পিতামহ ভীষ্ম এ ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হলেন না, তাঁর যে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা। মনে হল, তাঁর পৌত্ররা হবেন বীরশ্রেষ্ঠ। যোগ্য অস্ত্রগুরুর শিক্ষায় কুমারদের ধনুর্বেদ এবং অন্যান্য শস্ত্রবিদ্যায় সর্বোত্তম হয়ে উঠতে হবে। তক্কে তক্কে রইলেন ভীষ্ম। একজন আচার্যের সন্ধান পেয়েও গেলেন। ঋষি ভরদ্বাজের পুত্র দ্রোণাচার্যের হাতে শিষ্যরূপে পৌত্রদের সমর্পণ করলেন ভীষ্ম। সম্মানীয় অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের বংশপরিচয়, হস্তিনাপুরে তাঁর উপস্থিতির কারণ, অস্ত্রশিক্ষার বৃত্তান্ত সবকিছু — জনমেজয় বৈশম্পায়নের কাছে বিশদে জানতে চাইলেন। বৈশম্পায়ন জানালেন, একদা দ্রোণাচার্য্যের পিতা ভরদ্বাজ হোমের পূর্বে গঙ্গায় অবগাহনে শুদ্ধ হতে চলেছিলেন। সেখানে রূপবতী এবং যৌবনবতী ঘৃতাচী নামে এক অপ্সরাকে বস্ত্র পরিবর্তনরতা অবস্থায় দেখতে পেলেন।
হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু শরদ্বান ঋষির আশ্রমের কাছে মৃগয়ায় এসে ঋষি শরদ্বানের পরিত্যক্ত ধনুর্বাণ, কৃষ্ণাজিন এবং সেই সদ্যজাত পুত্রকন্যা দুটিকে দেখে দয়াপরবশ হয়ে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন। তাদের প্রতি যাবতীয় কর্তব্য পালন করে বড় করে তুললেন। ভাবলেন কৃপায় বর্ধিত পুত্র-কন্যা দুটির নাম হোক যথাক্রমে কৃপ এবং কৃপী। শরদ্বান তপোবলে এসব বৃত্তান্ত জানতে পারলেন এবং রাজপ্রাসাদে এসে রাজা শান্তনুকে ছেলেমেয়ে দুটির বংশ পরিচয় জানালেন। জন্মদাতা পিতা পুত্রটির শিক্ষার দায়িত্ব নিলেন। চতুর্বিধ ধনুর্বিদ্যায় এবং নানা গোপন অস্ত্রজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে কৃপ হয়ে উঠলেন অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য্য। তাঁর ছাত্র হলেন ধৃতরাষ্ট্রপুত্র ও পাণ্ডুপুত্রসহ যাদব কুমার এবং অন্যান্য দেশের রাজপুত্ররা। পিতামহ ভীষ্ম এ ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হলেন না, তাঁর যে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা। মনে হল, তাঁর পৌত্ররা হবেন বীরশ্রেষ্ঠ। যোগ্য অস্ত্রগুরুর শিক্ষায় কুমারদের ধনুর্বেদ এবং অন্যান্য শস্ত্রবিদ্যায় সর্বোত্তম হয়ে উঠতে হবে। তক্কে তক্কে রইলেন ভীষ্ম। একজন আচার্যের সন্ধান পেয়েও গেলেন। ঋষি ভরদ্বাজের পুত্র দ্রোণাচার্যের হাতে শিষ্যরূপে পৌত্রদের সমর্পণ করলেন ভীষ্ম। সম্মানীয় অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের বংশপরিচয়, হস্তিনাপুরে তাঁর উপস্থিতির কারণ, অস্ত্রশিক্ষার বৃত্তান্ত সবকিছু — জনমেজয় বৈশম্পায়নের কাছে বিশদে জানতে চাইলেন। বৈশম্পায়ন জানালেন, একদা দ্রোণাচার্য্যের পিতা ভরদ্বাজ হোমের পূর্বে গঙ্গায় অবগাহনে শুদ্ধ হতে চলেছিলেন। সেখানে রূপবতী এবং যৌবনবতী ঘৃতাচী নামে এক অপ্সরাকে বস্ত্র পরিবর্তনরতা অবস্থায় দেখতে পেলেন।
গঙ্গার বায়ুর দাপটে বস্ত্র অপসারিত হল অপ্সরার। অপ্সরার নগ্নদেহ দেখে ঋষি ভরদ্বাজ কামনার প্লাবনে ভেসে গেলেন। উত্তেজনায় বীর্যপাত হল ঋষির। সেই শুক্র, হাতের দ্রোণপাত্রে অর্থাৎ কলসে বা ঘটে বা ধরে রাখলেন। সেই শুক্র থেকেই জন্ম নিলেন দ্রোণ। গঙ্গার তীরে অপ্সরা ঘৃতাচীর স্নানান্তে বস্ত্রপরিবর্তন এবং ঋষি ভরদ্বাজের উপস্থিতি নেহাতই কাকতালীয় ঘটনা। না, এখানে কোন দেবতাদের চক্রান্ত নেই। অপ্সরাকে ভোগও করেননি ঋষি ভরদ্বাজ। কিন্তু ঋষিরও পদস্খলন হয়। তাঁরা কামনা মুক্ত নন। ভরদ্বাজের কামোদ্রেক সেটাই আবারও প্রমাণ করল। এটি অবশ্য নিছকই অনুমান, হয়তো ঘটে কোনভাবে ডিম্বানু শুক্র নিষিক্ত হয়েছিল। জন্ম নিলেন দ্রোণাচার্য। কালক্রমে বেদ এবং বেদাঙ্গে পারদর্শী হয়ে উঠলেন তিনি। অস্ত্রশাস্ত্রবিদ ভরদ্বাজ অগ্নিপুত্র অগ্নিবেশ্যকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র শিক্ষা দিয়েছিলেন। গুরুপুত্র দ্রোণকে সেটি শিখিয়ে দিলেন অগ্নিবেশ্য।
ঋষি ভরদ্বাজের বন্ধু ছিলেন পৃষতরাজা।পৃষতরাজার দ্রুপদ নামে ছেলেটি দ্রোণের সহাধ্যায়ী। কালক্রমে পিতার মৃত্যুর পর উত্তর পাঞ্চালদেশের রাজা হলেন দ্রুপদ।এদিকে ঋষি ভরদ্বাজেরও স্বর্গপ্রাপ্তি হল। পিতা ভরদ্বাজের অনুরোধে দ্রোণাচার্য্য শরদ্বানকন্যা, কৃপাচার্য্যের ভগিনী কৃপীর পাণিগ্রহণ করলেন। কৃপী তার ধর্মকার্যের যোগ্যা সহধর্মিণী।কালক্রমে কৃপী একটি পুত্রের জন্ম দিলেন। পুত্রটি জন্মমাত্রই অশ্বের ডাক, হ্রেষাধ্বনি করে ওঠায় তার অশ্বনাদের সামর্থ্যে নামকরণ হল অশ্বত্থামা। ইতিমধ্যে দ্রোণ খবর পেলেন ধনুর্বদজ্ঞ শত্রুহন্তা পরশুরাম তার সমস্ত ধন ব্রাহ্মণদের দান করতে ইচ্ছুক। ধনুর্বেদ ও অলৌকিক শস্ত্রজ্ঞান অধিগত করবার ইচ্ছায় দ্রোণও চললেন পরশুরামের কাছে। পরশুরাম প্রার্থীর মনোবাসনা জানতে চাইলেন।দ্রোণ জানালেন আমি বিপুল ধন চাই।
অহং ধনমনন্তং হি প্রার্থয়ে বিপুলব্রত
পরশুরাম তার প্রার্থনা পূরণে অপারগ। ইতিমধ্যে তিনি সসাগরা পৃথিবী দান করেছেন ঋষি কাশ্যপকে। আর পার্থিব ধন সবকিছু দিয়ে দিয়েছেন ব্রাহ্মণদের।বললেন, অবশিষ্ট আছে শুধু তাঁর শরীর, অস্ত্রশস্ত্রসমূহ। হে দ্রোণ, বলুন আপনাকে কী দিতে পারি?
অস্ত্রাণি বা শরীরং বা ব্রহ্মন্। শস্ত্রাণি বা পুনঃ। বৃণীষ্ব কিং প্রযচ্ছামি তুভ্যং দ্রোণ!বদস্ব তৎ।।
প্রার্থী দ্রোণ বললেন, তাঁর চাই প্রয়োগ ও সংবরণের কৌশলসহ সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র। ‘তথা’তাই হোক। দ্রোণের সমস্ত প্রার্থনা পূরণ করলেন পরশুরাম। লক্ষ্যভেদের মন্ত্র বা সংকেত এবং প্রয়োগের জ্ঞান-সহ অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণ করে দ্রোণ হাজির হলেন বাল্যবন্ধু দ্রুপদ রাজার কাছে। বললেন,বন্ধুকে মনে আছে তো?
সখায়ং বিদ্ধি মামিতি।
ঋষি ভরদ্বাজের বন্ধু ছিলেন পৃষতরাজা।পৃষতরাজার দ্রুপদ নামে ছেলেটি দ্রোণের সহাধ্যায়ী। কালক্রমে পিতার মৃত্যুর পর উত্তর পাঞ্চালদেশের রাজা হলেন দ্রুপদ।এদিকে ঋষি ভরদ্বাজেরও স্বর্গপ্রাপ্তি হল। পিতা ভরদ্বাজের অনুরোধে দ্রোণাচার্য্য শরদ্বানকন্যা, কৃপাচার্য্যের ভগিনী কৃপীর পাণিগ্রহণ করলেন। কৃপী তার ধর্মকার্যের যোগ্যা সহধর্মিণী।কালক্রমে কৃপী একটি পুত্রের জন্ম দিলেন। পুত্রটি জন্মমাত্রই অশ্বের ডাক, হ্রেষাধ্বনি করে ওঠায় তার অশ্বনাদের সামর্থ্যে নামকরণ হল অশ্বত্থামা। ইতিমধ্যে দ্রোণ খবর পেলেন ধনুর্বদজ্ঞ শত্রুহন্তা পরশুরাম তার সমস্ত ধন ব্রাহ্মণদের দান করতে ইচ্ছুক। ধনুর্বেদ ও অলৌকিক শস্ত্রজ্ঞান অধিগত করবার ইচ্ছায় দ্রোণও চললেন পরশুরামের কাছে। পরশুরাম প্রার্থীর মনোবাসনা জানতে চাইলেন।দ্রোণ জানালেন আমি বিপুল ধন চাই।
অহং ধনমনন্তং হি প্রার্থয়ে বিপুলব্রত
পরশুরাম তার প্রার্থনা পূরণে অপারগ। ইতিমধ্যে তিনি সসাগরা পৃথিবী দান করেছেন ঋষি কাশ্যপকে। আর পার্থিব ধন সবকিছু দিয়ে দিয়েছেন ব্রাহ্মণদের।বললেন, অবশিষ্ট আছে শুধু তাঁর শরীর, অস্ত্রশস্ত্রসমূহ। হে দ্রোণ, বলুন আপনাকে কী দিতে পারি?
অস্ত্রাণি বা শরীরং বা ব্রহ্মন্। শস্ত্রাণি বা পুনঃ। বৃণীষ্ব কিং প্রযচ্ছামি তুভ্যং দ্রোণ!বদস্ব তৎ।।
প্রার্থী দ্রোণ বললেন, তাঁর চাই প্রয়োগ ও সংবরণের কৌশলসহ সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র। ‘তথা’তাই হোক। দ্রোণের সমস্ত প্রার্থনা পূরণ করলেন পরশুরাম। লক্ষ্যভেদের মন্ত্র বা সংকেত এবং প্রয়োগের জ্ঞান-সহ অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণ করে দ্রোণ হাজির হলেন বাল্যবন্ধু দ্রুপদ রাজার কাছে। বললেন,বন্ধুকে মনে আছে তো?
সখায়ং বিদ্ধি মামিতি।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০: প্রশিক্ষক গুরু বিশ্বামিত্র, নারীহত্যা না মানবধর্ম?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫: অল্প ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ভবিষ্যতে বড় লাভের কথা চিন্তা করা দরকার
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪৬: ব্যর্থ প্রেমের বহ্নিশিখা
স্বাদে-আহ্লাদে: ম্যাগি ভালোবাসেন? এই রেসিপি ট্রাই করে দেখেছেন?
চরম অবজ্ঞার উন্নাসিকতায় ধনগর্বে ভ্রূকুঞ্চিত করে আরক্তিমনয়নে দ্রুপদ বললেন, ধনসম্পদে সমৃদ্ধ রাজার সঙ্গে শ্রীহীন ধনহীন তোমার মতো লোকের বন্ধুত্ব হতে পারে না। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে যুক্তি পরায়ণ হলেন গর্বোদ্ধত রাজা। বললেন, মানুষের মতো কালক্রমে বন্ধুত্বও জরাগ্রস্ত হয় অর্থাৎ জীর্ণ হয়ে পড়ে। পূর্বে সমান প্রয়োজনে অর্থাৎ অধ্যয়নহেতু আমাদের মিত্রতা ছিল মাত্র।
সৌহৃদান্যপি জীর্য্যন্তে কালেন পরিজীর্য্যতঃ।সৌহৃদন্তু ত্বয়া হ্যাসীৎ পূর্ব্বং সামর্থ্যবন্ধনম্।।
পৃথিবীতে কোন মনেই মিত্রতা অজর অর্থাৎ জরাহীন নয়।
ন সখ্যমজরং লোকে হৃদি তিষ্ঠতি কস্যচিৎ।
কালে সময় এবং ক্রোধ বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়।। *কালো বৈনং বিহরতি ক্রোধো বৈনং হরত্যুত* বন্ধুত্বেরও শ্রেণীবিভাগ চিহ্নিত করলেন রাজা।
যয়োরেব সমং বিত্তং যয়োরেব সমং বলম্।তয়োঃ সখ্যং বিবাদশ্চ ন তু পুষ্টবিপুষ্টয়োঃ।।
সমবিত্তের এবং সমশক্তিমান দুজনের বন্ধুত্ব হয,বিবাদও হয়,কিন্তু প্রবল দুর্বলের নয়।
নারাজা পার্থিবস্যাপি সখিপূর্ব্বং কিমিষ্যতে
রাজার সঙ্গে অরাজার বন্ধুত্ব হয় না। পূর্বের মিত্রতার সূত্রে কি চাইছেন আপনি? মনে ধূমায়িত ক্রোধ নিয়ে কোনও উত্তর না দিয়ে দ্রোণ কৌরবদের রাজধানী হস্তিনাপুরে রওনা দিলেন তৎক্ষণাৎ। সেখানে পৌঁছে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কৃপাচার্য্যের গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন। পুত্র অশ্বথামা তাঁদের কাছে অস্ত্রশিক্ষাসমাপনান্তে কুন্তীপুত্রদের শিক্ষা দিতে শুরু করলেন। অশ্বত্থামাকেও কেউ চিনতেন না। একদা কুমাররা বিটা বা গুটি নিয়ে খেলতে খেলতে গুটিটি একটি কূপের মধ্যে গড়িয়ে পড়ল। কুমাররা সকলে মিলে চেষ্টা করেও গুটিটি তুলতে পারল না। সেখানে শ্যামবর্ণ, পলিতকেশ শীর্ণ চেহারার হোমরত এক ব্রাহ্মণকে দেখে তাকে পরিবেষ্টন করে দাঁড়াল তারা। ব্রাহ্মণ তাদেরকে ধিক্কার দিয়ে বললেন, ভরতবংশীয় তোমাদের ধিক্কার দিই, সেই সঙ্গে তোমাদের ক্ষাত্রতেজ এবং অস্ত্রশিক্ষাকেও ধিক্কার। সামান্য গুটি বা বলটিকে তুলতে পারছ না?
অহো বো ধিগ্ বলং ক্ষাত্রং ধিগেতাং বঃ কৃতাস্ত্রতাম্।
ভরতস্যান্বয়ে জাতা যে বীটাং নাধিগচ্ছত।।
সৌহৃদান্যপি জীর্য্যন্তে কালেন পরিজীর্য্যতঃ।সৌহৃদন্তু ত্বয়া হ্যাসীৎ পূর্ব্বং সামর্থ্যবন্ধনম্।।
পৃথিবীতে কোন মনেই মিত্রতা অজর অর্থাৎ জরাহীন নয়।
ন সখ্যমজরং লোকে হৃদি তিষ্ঠতি কস্যচিৎ।
কালে সময় এবং ক্রোধ বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়।। *কালো বৈনং বিহরতি ক্রোধো বৈনং হরত্যুত* বন্ধুত্বেরও শ্রেণীবিভাগ চিহ্নিত করলেন রাজা।
যয়োরেব সমং বিত্তং যয়োরেব সমং বলম্।তয়োঃ সখ্যং বিবাদশ্চ ন তু পুষ্টবিপুষ্টয়োঃ।।
সমবিত্তের এবং সমশক্তিমান দুজনের বন্ধুত্ব হয,বিবাদও হয়,কিন্তু প্রবল দুর্বলের নয়।
নারাজা পার্থিবস্যাপি সখিপূর্ব্বং কিমিষ্যতে
রাজার সঙ্গে অরাজার বন্ধুত্ব হয় না। পূর্বের মিত্রতার সূত্রে কি চাইছেন আপনি? মনে ধূমায়িত ক্রোধ নিয়ে কোনও উত্তর না দিয়ে দ্রোণ কৌরবদের রাজধানী হস্তিনাপুরে রওনা দিলেন তৎক্ষণাৎ। সেখানে পৌঁছে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কৃপাচার্য্যের গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন। পুত্র অশ্বথামা তাঁদের কাছে অস্ত্রশিক্ষাসমাপনান্তে কুন্তীপুত্রদের শিক্ষা দিতে শুরু করলেন। অশ্বত্থামাকেও কেউ চিনতেন না। একদা কুমাররা বিটা বা গুটি নিয়ে খেলতে খেলতে গুটিটি একটি কূপের মধ্যে গড়িয়ে পড়ল। কুমাররা সকলে মিলে চেষ্টা করেও গুটিটি তুলতে পারল না। সেখানে শ্যামবর্ণ, পলিতকেশ শীর্ণ চেহারার হোমরত এক ব্রাহ্মণকে দেখে তাকে পরিবেষ্টন করে দাঁড়াল তারা। ব্রাহ্মণ তাদেরকে ধিক্কার দিয়ে বললেন, ভরতবংশীয় তোমাদের ধিক্কার দিই, সেই সঙ্গে তোমাদের ক্ষাত্রতেজ এবং অস্ত্রশিক্ষাকেও ধিক্কার। সামান্য গুটি বা বলটিকে তুলতে পারছ না?
অহো বো ধিগ্ বলং ক্ষাত্রং ধিগেতাং বঃ কৃতাস্ত্রতাম্।
ভরতস্যান্বয়ে জাতা যে বীটাং নাধিগচ্ছত।।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৪: ভয়ংকর গর্ভ
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-২: কপালে জমেছে ঘাম, শুকিয়ে গিয়েছে জিভ, পেছন থেকে ভেসে আসছে গা ছমছমে শব্দ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের ঘুড়ি ওড়ানো
আমি ঈষীকা অর্থাৎ নলখাগড়া দিয়ে আংটীসহ গুটি অর্থাৎ বলটিকে তুলে দিয়ে আমার দক্ষতা প্রমাণ করবো। আংটীটি কূপে ফেলে দিলেন। তারপর একটি ঈষীকা দিয়ে গুটিটিকে বিদ্ধ করে ক্রমান্বয়ে পরপর ঈষীকা সংযুক্ত করে একটি ঈষীকার রজ্জু বা দড়ি তৈরি করে গুটিটিকে তুলে আনলেন। বিস্ময়ে হতবাক বালকেরা এই দৃশ্য দেখে চমৎকৃত হল। তাদের অনুরোধে শরনিক্ষেপে আংটিটিকেও তুলে আনলেন। শ্রদ্ধাবনত বালকেরা তাঁকে বলল—
অভিবন্দামহে ব্রহ্মন্! নৈতদন্যেষু বিদ্যতে। কোঽসি কস্যাসি জানীমো বয়ং কিং করবামহে।।
এই অনন্য শক্তিমত্তাকে আনত অভিবাদন জানিয়ে বালকেরা প্রবল আগ্রহে জানতে চাইল, আপনি কে? আপনি কার অধীন? আমরা আপনার জন্য কি করতে পারি? দ্রোণ শুধু বললেন, আমার গুণ ও আকৃতি সম্বন্ধে তোমাদের পিতামহ, ভীষ্মকে অবহিত কর। ভীষ্মকে সব কথা জানালেন কুমাররা। দ্রোণকে মহাধনুর্ধর বলে চিনতে পারলেন ভীষ্ম, রতনে রতন চেনে যেমন। মহান ভীষ্ম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন দ্রোণবিষয়ে—যথার্থ গুরু ইনি। তাঁকে যথাযথ সম্মান ও যত্ন সহকারে আনয়ন করে হস্তিনাপুরে আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। মনের ক্ষোভ, দুঃখ অপ্রাপ্তি, দারিদ্র্যজ্বালা, নৈরাশ্য সবকিছু যেন উগরে দিলেন দ্রোণ। মিত্র পাঞ্চালরাজ ধ্রুপদের অপমান তার বক্তব্যে প্রাধান্য পেল। তাঁর নিজের বিবাহ বৃত্তান্ত, পুত্রলাভের তথ্যও বাদ গেল না। কীরকম ছিল দ্রোণের দারিদ্র্য? প্রসঙ্গক্রমে জানালেন ধনীর পুত্রদের মতো দুধ পান করবার বায়না করায় তিনি পুত্রের আশা পূরণ করবার জন্য দান গ্রহণের প্রত্যাশা নিয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন কিন্তু সর্বত্র বিফল মনোরথ হয়ে ফিরেছেন। শেষে দ্রোণপুত্রকে পিটুলিগোলা জলই দুধ বলে লোভ দেখাল প্রতিবেশী বালকেরা। সেই পিটুলিগোলা জলপান করে আনন্দে নৃত্যরত অশ্বত্থামাকে ঘিরে ধরে নানান উপহাস করতে লাগল সেই ধনী বালকেরা। বলল—যিনি অর্থ উপার্জনে অক্ষম সেই দরিদ্র দ্রোণকে দিক।
দ্রোণং ধিগস্ত্বধনিনং যো ধনং নাধিগচ্ছতি
অভিবন্দামহে ব্রহ্মন্! নৈতদন্যেষু বিদ্যতে। কোঽসি কস্যাসি জানীমো বয়ং কিং করবামহে।।
এই অনন্য শক্তিমত্তাকে আনত অভিবাদন জানিয়ে বালকেরা প্রবল আগ্রহে জানতে চাইল, আপনি কে? আপনি কার অধীন? আমরা আপনার জন্য কি করতে পারি? দ্রোণ শুধু বললেন, আমার গুণ ও আকৃতি সম্বন্ধে তোমাদের পিতামহ, ভীষ্মকে অবহিত কর। ভীষ্মকে সব কথা জানালেন কুমাররা। দ্রোণকে মহাধনুর্ধর বলে চিনতে পারলেন ভীষ্ম, রতনে রতন চেনে যেমন। মহান ভীষ্ম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন দ্রোণবিষয়ে—যথার্থ গুরু ইনি। তাঁকে যথাযথ সম্মান ও যত্ন সহকারে আনয়ন করে হস্তিনাপুরে আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। মনের ক্ষোভ, দুঃখ অপ্রাপ্তি, দারিদ্র্যজ্বালা, নৈরাশ্য সবকিছু যেন উগরে দিলেন দ্রোণ। মিত্র পাঞ্চালরাজ ধ্রুপদের অপমান তার বক্তব্যে প্রাধান্য পেল। তাঁর নিজের বিবাহ বৃত্তান্ত, পুত্রলাভের তথ্যও বাদ গেল না। কীরকম ছিল দ্রোণের দারিদ্র্য? প্রসঙ্গক্রমে জানালেন ধনীর পুত্রদের মতো দুধ পান করবার বায়না করায় তিনি পুত্রের আশা পূরণ করবার জন্য দান গ্রহণের প্রত্যাশা নিয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন কিন্তু সর্বত্র বিফল মনোরথ হয়ে ফিরেছেন। শেষে দ্রোণপুত্রকে পিটুলিগোলা জলই দুধ বলে লোভ দেখাল প্রতিবেশী বালকেরা। সেই পিটুলিগোলা জলপান করে আনন্দে নৃত্যরত অশ্বত্থামাকে ঘিরে ধরে নানান উপহাস করতে লাগল সেই ধনী বালকেরা। বলল—যিনি অর্থ উপার্জনে অক্ষম সেই দরিদ্র দ্রোণকে দিক।
দ্রোণং ধিগস্ত্বধনিনং যো ধনং নাধিগচ্ছতি
আরও পড়ুন:
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১১: ফুটবলের ব্ল্যাক প্যান্থার: লেভ ইয়াসিন
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৫: প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবপ্রজন্ম-মীনমিত্রের পরামর্শে গ্রামগঞ্জেও মাছচাষ বিকল্প আয়ের দিশা দেখাতে পারে
দ্রোণ ভীষ্মকে তার মর্মবেদনা জানালেন, ব্রাহ্মণ হয়েও ক্ষত্রিয়ের শস্ত্রবিদ্যা অধিগত করায় প্রতিবেশী ব্রাহ্মণেরা তাকে ত্যাগ করেছিলেন তাই তিনি ঠিক করেছিলেন ধনের আশায় পাপজনক পরোপকার আর নয়। মনস্থির করে পত্নীপুত্রসহ দ্রুপদের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও অবমাননা, প্রত্যাখ্যান, বিশ্বাসভঙ্গের নৈরাশ্য। দ্রুপদ রাজার প্রতিটি অসম্মানের উক্তি মনে গেঁথে রেখেছিলেন দ্রোণ।অত্যন্ত পীড়াদায়ক বন্ধুত্ববিচ্ছেদের আদ্যোপান্ত কাহিনি জানালেন তিনি ভীষ্মকে। দৃঢ় প্রত্যয়ে, তিনি এটাও জানালেন, দ্রুপদের অবমাননার উত্তরে আমি ক্রুদ্ধ অপমানিত হয়ে এমন একটা প্রতিজ্ঞা করলাম যে প্রতিজ্ঞা অচিরেই সফল হবেই। গুণবান শিষ্যকামনায় এখানে আমার আগমন।আপনার অভিলাষপূরণও আমার আগমনের উদ্দেশ্য।
তাং প্রতিজ্ঞাং প্রতিজ্ঞায় যাং কর্ত্তাঽস্ম্যচিরাদেব।
অভ্যাগচ্ছন্ কুরূন্ ভীষ্ম! শিষ্যৈরর্থী গুণান্বিতঃ। ততোঽহং ভবতঃ কামং সংবর্দ্ধয়িতুমাগতঃ।।
হে ভীষ্ম, বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
ব্রূহি কিং করবাণি তে
ভীষ্ম অন্তর দিয়ে অনুভব করলেন প্রার্থী ব্রাহ্মণের দারিদ্র্যদুঃখ, হীনমন্যতা, অপমানজনিত প্রতিশোধস্পৃহা। সাদরে গ্রহণ করলেন দ্রোণকে। কুরুকুলের কুমারদের অস্ত্রশিক্ষায় আচার্য্যরূপে বরণ করে নিলেন তাঁকে। একজন আচার্য্যর যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে বললেন কৌরবদের যা কিছু সম্পদ এই সাম্রাজ্য, সেখানে রাজত্বের অধিকার আপনার, আপনিই রাজা। কৌরবগণ আপনার অধীনস্থমাত্র।
কুরূণামস্তি যদ্বিত্তং রাজ্যঞ্চেদং সরাষ্ট্রকম্।ত্বমেব পরমো রাজা সর্ব্বে চ কুরবস্তব।।
তিনি পরম শ্রদ্ধায় আভূমি নত হয়ে বিনয় প্রকাশ করলেন। বললেন, আমাদের পরম সৌভাগ্য যে আপনাকে আমি পেয়েছি। আমাদের প্রতি আপনার এ এক মহান অনুগ্রহ।
দিষ্ট্যা প্রাপ্তো২সি বিপ্রর্ষে! মহান্ মে২নুগ্রহঃ কৃতঃ।।
কুরুপান্ডবদের অস্ত্রগুরু হলেন দ্রোণচার্য। পায়ের তলায় মাটি পেলেন প্রখ্যাত অস্ত্রাচার্য্য।তাঁকে প্রভূত ধন দান করলেনতো বটেই, এছাড়াও ধনধান্যে পরিপূর্ণ সুপরিচ্ছন্ন একটি বাসগৃহ দ্রোণকে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রদান করলেন ক্ষমতাসীন ভীষ্ম। সন্তুষ্ট চিত্তে কুরুপাণ্ডবদের শিষ্যরূপে গ্রহণ করে প্রথমেই শিক্ষা সমাপনান্তে গুরুদক্ষিণাদানপ্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন দ্রোণাচার্য, হে নিষ্পাপ কুমারগণ, সত্য করে বল। অস্ত্রবিদ্যায় শিক্ষিত হওয়ার পরে আমার মনের অভিলষিত বস্তুটি দান করবে কিনা। কুমারদের মধ্যে একমাত্র সম্মত হলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। দ্রোণাচার্য্য স্নেহাপ্লুত হয়ে অশ্বত্থামাকে বললেন, পার্থকে তোমার সখা বলে জানবে। একে তোমায় দিলাম। তুমি গ্রহণ কর।অশ্বত্থামাকে বন্ধু হিসেবে নয়, গুরুপুত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে, চরণ স্পর্শ করলেন অর্জুন। পিতা এবং পুত্র সম্মানীয়স্থানে অধিষ্ঠিত হলেন হস্তিনাপুরে।
তাং প্রতিজ্ঞাং প্রতিজ্ঞায় যাং কর্ত্তাঽস্ম্যচিরাদেব।
অভ্যাগচ্ছন্ কুরূন্ ভীষ্ম! শিষ্যৈরর্থী গুণান্বিতঃ। ততোঽহং ভবতঃ কামং সংবর্দ্ধয়িতুমাগতঃ।।
হে ভীষ্ম, বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
ব্রূহি কিং করবাণি তে
ভীষ্ম অন্তর দিয়ে অনুভব করলেন প্রার্থী ব্রাহ্মণের দারিদ্র্যদুঃখ, হীনমন্যতা, অপমানজনিত প্রতিশোধস্পৃহা। সাদরে গ্রহণ করলেন দ্রোণকে। কুরুকুলের কুমারদের অস্ত্রশিক্ষায় আচার্য্যরূপে বরণ করে নিলেন তাঁকে। একজন আচার্য্যর যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে বললেন কৌরবদের যা কিছু সম্পদ এই সাম্রাজ্য, সেখানে রাজত্বের অধিকার আপনার, আপনিই রাজা। কৌরবগণ আপনার অধীনস্থমাত্র।
কুরূণামস্তি যদ্বিত্তং রাজ্যঞ্চেদং সরাষ্ট্রকম্।ত্বমেব পরমো রাজা সর্ব্বে চ কুরবস্তব।।
তিনি পরম শ্রদ্ধায় আভূমি নত হয়ে বিনয় প্রকাশ করলেন। বললেন, আমাদের পরম সৌভাগ্য যে আপনাকে আমি পেয়েছি। আমাদের প্রতি আপনার এ এক মহান অনুগ্রহ।
দিষ্ট্যা প্রাপ্তো২সি বিপ্রর্ষে! মহান্ মে২নুগ্রহঃ কৃতঃ।।
কুরুপান্ডবদের অস্ত্রগুরু হলেন দ্রোণচার্য। পায়ের তলায় মাটি পেলেন প্রখ্যাত অস্ত্রাচার্য্য।তাঁকে প্রভূত ধন দান করলেনতো বটেই, এছাড়াও ধনধান্যে পরিপূর্ণ সুপরিচ্ছন্ন একটি বাসগৃহ দ্রোণকে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রদান করলেন ক্ষমতাসীন ভীষ্ম। সন্তুষ্ট চিত্তে কুরুপাণ্ডবদের শিষ্যরূপে গ্রহণ করে প্রথমেই শিক্ষা সমাপনান্তে গুরুদক্ষিণাদানপ্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন দ্রোণাচার্য, হে নিষ্পাপ কুমারগণ, সত্য করে বল। অস্ত্রবিদ্যায় শিক্ষিত হওয়ার পরে আমার মনের অভিলষিত বস্তুটি দান করবে কিনা। কুমারদের মধ্যে একমাত্র সম্মত হলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। দ্রোণাচার্য্য স্নেহাপ্লুত হয়ে অশ্বত্থামাকে বললেন, পার্থকে তোমার সখা বলে জানবে। একে তোমায় দিলাম। তুমি গ্রহণ কর।অশ্বত্থামাকে বন্ধু হিসেবে নয়, গুরুপুত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে, চরণ স্পর্শ করলেন অর্জুন। পিতা এবং পুত্র সম্মানীয়স্থানে অধিষ্ঠিত হলেন হস্তিনাপুরে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৯: পাকা আম খাবেন, নাকি কাঁচা আম?
হেলদি ডায়েট: সুপারফুড চিয়া সিডের এই সব জরুরি পুষ্টিগুণের কথা জানতেন?
দশভুজা: এগারো রকমের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাঁর ঝুলিতে, একাত্তরেও তিনি গেয়ে চলেছেন জীবনের জয়গান
কুরুগৃহের অস্ত্রাচার্য্য মহান ঋষি, ভরদ্বাজপুত্র দ্রোণাচার্য্য শৈশবে ঋষি ভরদ্বাজের স্নেহচ্ছায়ায় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাব বোধ করেননি। পিতার অভিভাবকত্বে তাঁর যথাযথ শিক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। শিক্ষাগ্রহণে কোনও অপূর্ণতা ছিল না। কৃপাচার্য্যের ভগিনী, ধর্মচারিণী কৃপীকে বিবাহ করে এবং সন্তান লাভ করে তাঁর মনে কোন অতৃপ্তিবোধ দেখা যায়নি। পরশুরামের দানধর্মের প্রার্থী হয়ে তিনি তাঁর কাছে কী চাইলেন? বিপুল ধন।শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁর কাঙ্খিত দানাবশিষ্ট ধনুর্বেদ এবং অলৌকিক অস্ত্রজ্ঞান লাভ করেছিলেন তিনি।
এতসব লাভ করেও তার অপ্রাপ্তিবোধ। হৃদয়াবেগের টানে উপস্থিত হলেন দ্রুপদরাজার কাছে বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে, মনে প্রচ্ছন্ন ছিল চাওয়া পাওয়ার হিসেব। প্রাক্তনসখা পাঞ্চাল রাজ দ্রুপদের কাছে সুন্দর সম্ভাষণের উত্তরে রূঢ়, কঠোর, প্রত্যাখ্যান অভিপ্সীত ছিলনা। সেটি মারাত্মক এবং চরম প্রভাব সৃষ্টি করল মনে। বাক্যবাণে বিদ্ধ হলেন তিনি। ভাগ্যের রকমফেরে চরম দারিদ্র্যের জ্বালাও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। জীবনের এতকিছু অভিঘাত প্রাপ্য ছিল কী একজন অভিজ্ঞ আচার্য্যের? তবে ভাগ্যবিধাতার অভিপ্সীত যে কি তা দেবতাদেরও দুর্জ্ঞেয়, মানুষদের কথা আর কি বলব। দেবা অপি ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ শেষ পর্যন্ত কুরুকুলের অস্ত্রগুরুর মর্যাদা পাওয়ার পর কুরুমুখ্য ভীষ্মকে বলেছেন তিনি, প্রাজ্ঞজনের মনোনীত কৃপাচার্য্য আছেন, আমাকে সেই স্থানে গ্রহণ করলে তাঁর অসন্তোষ হতে পারে। যাই,আমি বরং কিছু ধন গ্রহণ করে আশ্রমে ফিরে যাই।
কৃপস্তিষ্ঠতি চাচার্য্যঃ শস্ত্রজ্ঞঃ প্রাজ্ঞসম্মতঃ।ময়ি তিষ্ঠতি চেদ্বিপ্রো বৈমনস্যং গমিষ্যতি।।
এতসব লাভ করেও তার অপ্রাপ্তিবোধ। হৃদয়াবেগের টানে উপস্থিত হলেন দ্রুপদরাজার কাছে বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে, মনে প্রচ্ছন্ন ছিল চাওয়া পাওয়ার হিসেব। প্রাক্তনসখা পাঞ্চাল রাজ দ্রুপদের কাছে সুন্দর সম্ভাষণের উত্তরে রূঢ়, কঠোর, প্রত্যাখ্যান অভিপ্সীত ছিলনা। সেটি মারাত্মক এবং চরম প্রভাব সৃষ্টি করল মনে। বাক্যবাণে বিদ্ধ হলেন তিনি। ভাগ্যের রকমফেরে চরম দারিদ্র্যের জ্বালাও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। জীবনের এতকিছু অভিঘাত প্রাপ্য ছিল কী একজন অভিজ্ঞ আচার্য্যের? তবে ভাগ্যবিধাতার অভিপ্সীত যে কি তা দেবতাদেরও দুর্জ্ঞেয়, মানুষদের কথা আর কি বলব। দেবা অপি ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ শেষ পর্যন্ত কুরুকুলের অস্ত্রগুরুর মর্যাদা পাওয়ার পর কুরুমুখ্য ভীষ্মকে বলেছেন তিনি, প্রাজ্ঞজনের মনোনীত কৃপাচার্য্য আছেন, আমাকে সেই স্থানে গ্রহণ করলে তাঁর অসন্তোষ হতে পারে। যাই,আমি বরং কিছু ধন গ্রহণ করে আশ্রমে ফিরে যাই।
কৃপস্তিষ্ঠতি চাচার্য্যঃ শস্ত্রজ্ঞঃ প্রাজ্ঞসম্মতঃ।ময়ি তিষ্ঠতি চেদ্বিপ্রো বৈমনস্যং গমিষ্যতি।।
ছবি: সংগৃহীত।
একজন আদর্শ শ্রেষ্ঠ অস্ত্রবিদ্যাবিদের চাওয়ার গণ্ডী কত সীমিত! শুধু অর্থপ্রাপ্তির চিন্তা? নিজের বিদ্যাবত্তার প্রতি কোনো বিশ্বস্ততা নয? এক প্রবল হীনমন্যতাবোধ, দারিদ্র্যদুঃখময় অতীত হয়তো তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সারা জীবন। ব্রাহ্মণ হয়ে ক্ষত্রিয়সুলভ অস্ত্রবিদ্যা গ্রহণ করেছেন বলে এক ঘরে হয়েছেন ব্রাহ্মণসমাজে।দ্রুপদ রাজ্য থেকে ফিরে একবুক অভিমান নিয়ে উদারমনা ক্ষত্রিয় বীর ভীষ্মের কাছে প্রত্যাশার ঝুলি নিয়ে প্রার্থী হতে যাননি। তার ম্যাজিকাল স্কিল অর্থাৎ অস্ত্রের যাদুতে বিমোহিত করেছেন বালক কুরুকুমারদের। নিজের নৈপুণ্য প্রমাণ করেছেন। জন্ম তাঁর দ্রোণে অর্থাৎ কলসীতে। ব্যাকরণে দ্রোণ একটি পরিমাপের একক। তার জন্মই যেন তার ভাবী জীবন কে সীমিত পরিমাপে নিয়ন্ত্রিত করেছে। নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়ে শিষ্যকে সমৃদ্ধ করতে পারেননি তিনি। পদে পদে কৃতজ্ঞতার ঋণ বোঝা হয়েছে তাঁর,প্রিয় শিষ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন, তাঁর পৌত্রসম শিষ্যপুত্রের প্রতি নৃশংস হয়েছেন। এসবকিছু সত্ত্বেও মহাভারতীয় মহান অস্ত্রবিদ্যাবিদদের তালিকায় অন্যতম শিরোনাম দ্রোণাচার্য। শ্রেষ্ঠ ভারতীয় প্রশিক্ষক গুরুর সম্মানীয় পুরস্কার দ্রোণাচার্যের নামাঙ্কিত। ভীষ্মের মতানুযায়ী—
নাল্পধীর্নামহাভাগস্তথা নানস্ত্রকোবিদঃ। নাদেবসত্ত্বো বিনয়েৎ কুরূনস্ত্রে মহাবলান্।।
যিনি অল্পবুদ্ধি,উদারমনা নন,অস্ত্রবিদ্যায় অধিক বিদ্যাবত্তা নেই যাঁর, যিনি শক্তিতে দেবতুল্য নন তিনি কুরুকুলের নবীন প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে পারেননা। তাঁর আশানুরূপ শিক্ষকতার মানদণ্ড হল ঔদার্যে মুক্তমনা এক আদর্শ শিক্ষক।শর্তটি পূরণ করতে পেরেছেন কী সম্মানীয় দ্রোণাচার্য্য?
ছাত্রদের প্রথম পাঠদানের শুরুতেই গুরুদক্ষিণার দাবি? কি সেই গুরুদক্ষিণা? প্রতিশোধের দহনে প্রজ্জ্বলিত কোন প্রতিহিংসা নয় তো?—চলবে
নাল্পধীর্নামহাভাগস্তথা নানস্ত্রকোবিদঃ। নাদেবসত্ত্বো বিনয়েৎ কুরূনস্ত্রে মহাবলান্।।
যিনি অল্পবুদ্ধি,উদারমনা নন,অস্ত্রবিদ্যায় অধিক বিদ্যাবত্তা নেই যাঁর, যিনি শক্তিতে দেবতুল্য নন তিনি কুরুকুলের নবীন প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে পারেননা। তাঁর আশানুরূপ শিক্ষকতার মানদণ্ড হল ঔদার্যে মুক্তমনা এক আদর্শ শিক্ষক।শর্তটি পূরণ করতে পেরেছেন কী সম্মানীয় দ্রোণাচার্য্য?
ছাত্রদের প্রথম পাঠদানের শুরুতেই গুরুদক্ষিণার দাবি? কি সেই গুরুদক্ষিণা? প্রতিশোধের দহনে প্রজ্জ্বলিত কোন প্রতিহিংসা নয় তো?—চলবে
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।