ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
মাকে প্রণাম জানিয়ে রাম স্ত্রী জানকীর উদ্দেশ্যে গমন করলেন। রামপত্নী সীতা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি রামের যৌবরাজ্যাভিষেকের আনন্দে মাঙ্গলিক দেবার্চনা প্রভৃতি সম্পন্ন করে রামের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। লজ্জিত রাম, নতমুখে, উৎসবসমারোহে মুখর, সন্তুষ্ট লোকজনে পরিপূর্ণ প্রাসাদের অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। রামকে দেখে অজানা আশঙ্কায় থরথর করে কেঁপে উঠলেন জানকী? সীতাকে ভয়ে কেঁপে উঠতে দেখে রঘুনন্দন ধার্মিক রাম আর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না তাঁর আকৃতিতে শোকের প্রকাশ, তা আর গোপন রাখা যাবেনা। তাং দৃষ্ট্বা স হি ধর্ম্মাত্মা ন শশাক মনোগতমৃ। অজস্র প্রশ্ন সীতার মনে। কেন রামের এই বিবর্ণ মুখ?
পবিত্র পুষ্যানক্ষত্রযোগে সমাগত যৌবরাজ্যাভিষেকের শুভলগ্ন। তাও রাম কেন এত বেদনার্ত? মাথার উপর নেই রাজছত্র, কোন সেবক ব্যজনরত অবস্থায় নেই, সুতমাগধজাতীয় চারণরা বন্দনাগান গাইছে না, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণরা রাজোচিত স্নানান্তে কেন রামের মস্তকে ঘি, মধু বর্ষণ করছেন না? মুখ্য জনপদবাসী প্রজাবৃন্দ এবং অমাত্যরা কেন রামের অনুগমনরত নয়?বলশালী অশ্বযুক্ত পুষ্পরথের শোভাযাত্রা কেন রামের অনুষঙ্গে নেই? তেমনই মেঘবরণ, কৃষ্ণবর্ণ পর্বততুল্য সুগঠিত হস্তীশ্রেষ্ঠরা রামের সম্মুখে কই? স্বর্ণময় ভদ্রাসন কেন ভৃত্যরা বহন করে আনছে না? অভিষেকের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রামের অপূর্ব মুখশ্রীতে আনন্দের চিহ্নমাত্র নেই? অভিষেকো যদা সজ্জঃ কিমিদানীমিদং তব।অপূর্ব্বো মুখবর্ণশ্চ ন প্রহর্ষশ্চ লক্ষ্যতে।। সীতার চোখে ধারাবর্ষণ।
পবিত্র পুষ্যানক্ষত্রযোগে সমাগত যৌবরাজ্যাভিষেকের শুভলগ্ন। তাও রাম কেন এত বেদনার্ত? মাথার উপর নেই রাজছত্র, কোন সেবক ব্যজনরত অবস্থায় নেই, সুতমাগধজাতীয় চারণরা বন্দনাগান গাইছে না, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণরা রাজোচিত স্নানান্তে কেন রামের মস্তকে ঘি, মধু বর্ষণ করছেন না? মুখ্য জনপদবাসী প্রজাবৃন্দ এবং অমাত্যরা কেন রামের অনুগমনরত নয়?বলশালী অশ্বযুক্ত পুষ্পরথের শোভাযাত্রা কেন রামের অনুষঙ্গে নেই? তেমনই মেঘবরণ, কৃষ্ণবর্ণ পর্বততুল্য সুগঠিত হস্তীশ্রেষ্ঠরা রামের সম্মুখে কই? স্বর্ণময় ভদ্রাসন কেন ভৃত্যরা বহন করে আনছে না? অভিষেকের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রামের অপূর্ব মুখশ্রীতে আনন্দের চিহ্নমাত্র নেই? অভিষেকো যদা সজ্জঃ কিমিদানীমিদং তব।অপূর্ব্বো মুখবর্ণশ্চ ন প্রহর্ষশ্চ লক্ষ্যতে।। সীতার চোখে ধারাবর্ষণ।
রাম স্ত্রীকে জানালেন, রাজা দশরথের সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁকে বনবাসে যেতে হবে। কেন এই সিদ্ধান্ত? কুলে মহতি সম্ভূতে ধর্মজ্ঞে। ধর্ম্মচারিণি। শৃণু জানকি যেনেদং ক্রমেণাদ্যাগতং মম।। হে মহান বংশজাতা, ধর্মে অভিজ্ঞা, ধর্ম্মচারিণি, জানকি, আদ্যন্ত বিস্তারিতভাবে সবকিছু আমি জানাচ্ছি, তুমি শোন। এই ঘটনার মূলে রয়েছে, পূজ্যপিতা, সত্যপ্রতিজ্ঞ, রাজা দশরথের রানি কৈকেয়ীকে প্রদত্ত বরদানের অঙ্গীকার এবং রামের অভিষেক আয়োজনের শুভক্ষণে রানি কৈকেয়ীর প্রতিশ্রুত বরপ্রার্থনা এবং শর্তরক্ষায় রাজাকে বাধ্য করা। সেই প্রতিশ্রুতিরক্ষায় চতুর্দশ বৎসরের জন্য রামের বনগমন এবং কৈকেয়ীপুত্র ভরতের রাজ্যভিষেক। নির্জনবনে গমনের সিদ্ধান্তে, অটল রাম, স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভরতের শাসনাধীন অযোধ্যায় সীতা যেন কখনও ভুলেও ভরতের কাছে স্বামী রামের গুণকীর্তন না করেন। কারণ, উন্নতির সময়ে পুরুষেরা অপরের প্রশংসা সহ্য করতে পারেন না। ঋদ্ধিযুক্তা হি পুরুষা ন সহন্তে পরস্তবম্। তস্মান্ন তে গুণাঃ কথ্যা ভরতস্যাগ্রতো মম।।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে সীতাকে ভরণপোষণের দায়িত্ব যদিও ভরতের, তবুও ভরতের সঙ্গে সঙ্গত ব্যবহারে, সহাবস্থান করতে হবে সীতাকে। তবেই তিনি এখানে অনুকূল পরিবেশে থাকতে পারবেন। ভরতকে পরম্পরাক্রমে প্রাপ্ত রাজ্যে অভিষিক্ত করেছেন স্বয়ং রাজা, দশরথ। সুতরাং রাজা হিসেবে তাকে সদয় রাখা সীতার অবশ্যকর্তব্য। পিতার আদেশে আজ বনবাসে প্রস্থান করবেন রাম। সীতা ব্যাকুল না হয়ে যথানিয়মে যেন নিত্যকর্তব্য পালন করেন। দেবতার আরাধনা এবং পিতা দশরথের বন্দনা করেন যেন সীতা। শোকার্তা মা কৌশল্যা অবশ্যই সম্মানীয়া। তাঁকেও ধর্মসংগত বন্দনা অবশ্যই কর্তব্য। একইভাবে অন্য জননীদেরও সম্মান প্রাপ্য। তাঁরাও পূজনীয়া। স্নেহপ্রীতি প্রদর্শন এবং ভোগ্যবস্তুপ্রদানহেতু সকল জননীই আমার সম্মানীয়া।
রামের প্রাণ অপেক্ষা প্রিয়তম ভাই ভরত ও শত্রুঘ্ন, যথাক্রমে সীতার ভাই এবং পুত্রতুল্য। তাঁদের দুজনের প্রতি সীতার স্নেহদৃষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে যেন। রাজা ভরত, তিনি এখন দেশ ও বংশের প্রভু। ভরতের অপ্রিয় কোন কাজ কদাপি নয়। বিপ্রিয়ঞ্চ ন কর্ত্তব্যং ভরতস্য কদাচন। স হি রাজা চ বৈদেহি দেশস্য কুলস্য চ।। সেবা ও সৎকাজে রাজারা তুষ্ট হন। তা না হলে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে ক্রুদ্ধ হন। রাজারা অকল্যাণকামী ঔরসজাত পুত্রকেও পরিত্যাগ করেন এবং কল্যাণকামী অনাত্মীয় দক্ষ মানুষকেও গ্রহণ করেন। ঔরসানপি পুত্রান্ হি ত্যজন্ত্যহিতকারিণঃ। সমর্থান্ প্রতিগৃহ্ণন্তি জনানপি নরাধিপাঃ।। তাই হে কল্যাণি জানকি তুমি এই রাজধর্মবিষয়ে অবগত হয়ে সত্যনিষ্ঠতা ও ধর্মবোধ বজায় রেখে,ভরতের অনুগামিনী হয়ে এখানেই বসবাস কর। সা ত্বং বসেহ কল্যাণি রাজ্ঞঃ সমনুবর্ত্তিনী। ভরতস্য রতা ধর্ম্মে সত্যব্রতপরায়ণা।। রাম মহারণ্যে গমন করবেন আজই। সীতাকে এইখানেই থাকতে হবে। রামের উপদেশ হল—সীতা যেন কারুর কোন ক্ষতিকর কাজে প্রবৃত্ত না হন। যথা ব্যলীকং কুরুষে ন কস্যচিৎ।তথা ত্বয়া কার্য্যমিদং বচো মম।।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে সীতাকে ভরণপোষণের দায়িত্ব যদিও ভরতের, তবুও ভরতের সঙ্গে সঙ্গত ব্যবহারে, সহাবস্থান করতে হবে সীতাকে। তবেই তিনি এখানে অনুকূল পরিবেশে থাকতে পারবেন। ভরতকে পরম্পরাক্রমে প্রাপ্ত রাজ্যে অভিষিক্ত করেছেন স্বয়ং রাজা, দশরথ। সুতরাং রাজা হিসেবে তাকে সদয় রাখা সীতার অবশ্যকর্তব্য। পিতার আদেশে আজ বনবাসে প্রস্থান করবেন রাম। সীতা ব্যাকুল না হয়ে যথানিয়মে যেন নিত্যকর্তব্য পালন করেন। দেবতার আরাধনা এবং পিতা দশরথের বন্দনা করেন যেন সীতা। শোকার্তা মা কৌশল্যা অবশ্যই সম্মানীয়া। তাঁকেও ধর্মসংগত বন্দনা অবশ্যই কর্তব্য। একইভাবে অন্য জননীদেরও সম্মান প্রাপ্য। তাঁরাও পূজনীয়া। স্নেহপ্রীতি প্রদর্শন এবং ভোগ্যবস্তুপ্রদানহেতু সকল জননীই আমার সম্মানীয়া।
রামের প্রাণ অপেক্ষা প্রিয়তম ভাই ভরত ও শত্রুঘ্ন, যথাক্রমে সীতার ভাই এবং পুত্রতুল্য। তাঁদের দুজনের প্রতি সীতার স্নেহদৃষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে যেন। রাজা ভরত, তিনি এখন দেশ ও বংশের প্রভু। ভরতের অপ্রিয় কোন কাজ কদাপি নয়। বিপ্রিয়ঞ্চ ন কর্ত্তব্যং ভরতস্য কদাচন। স হি রাজা চ বৈদেহি দেশস্য কুলস্য চ।। সেবা ও সৎকাজে রাজারা তুষ্ট হন। তা না হলে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে ক্রুদ্ধ হন। রাজারা অকল্যাণকামী ঔরসজাত পুত্রকেও পরিত্যাগ করেন এবং কল্যাণকামী অনাত্মীয় দক্ষ মানুষকেও গ্রহণ করেন। ঔরসানপি পুত্রান্ হি ত্যজন্ত্যহিতকারিণঃ। সমর্থান্ প্রতিগৃহ্ণন্তি জনানপি নরাধিপাঃ।। তাই হে কল্যাণি জানকি তুমি এই রাজধর্মবিষয়ে অবগত হয়ে সত্যনিষ্ঠতা ও ধর্মবোধ বজায় রেখে,ভরতের অনুগামিনী হয়ে এখানেই বসবাস কর। সা ত্বং বসেহ কল্যাণি রাজ্ঞঃ সমনুবর্ত্তিনী। ভরতস্য রতা ধর্ম্মে সত্যব্রতপরায়ণা।। রাম মহারণ্যে গমন করবেন আজই। সীতাকে এইখানেই থাকতে হবে। রামের উপদেশ হল—সীতা যেন কারুর কোন ক্ষতিকর কাজে প্রবৃত্ত না হন। যথা ব্যলীকং কুরুষে ন কস্যচিৎ।তথা ত্বয়া কার্য্যমিদং বচো মম।।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৫: প্রতিযোগিতা সর্বদা স্বাস্থ্যকর নয়, কদ্রুবিনতার শত্রুতায় কি তারই ইঙ্গিত?
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩১: সুন্দরবনের ঐতিহ্য গঙ্গাসাগরমেলা ও কপিল মুনির আশ্রম
প্রিয়বচন শুনতেই অভ্যস্ত প্রিয় প্রিয়ভাষিণী সীতা। স্বামী রামের এই কঠোর হৃদয়বিদারক সংবাদে ক্রোধে, প্রণয়বিভঙ্গে বলে উঠলেন, রাম সাধারণ মানুষের মতো এইসব কথা বলছেন? এই কথাগুলি উপহাস বলে মনে হচ্ছে। সীতাকে নিতান্তই নবীনা মনে করে এই কথাগুলি বলছেন রাম? রামের বক্তব্যবিষয় অস্ত্রবিদ্যাবিদ বীর রাজকুমারদের পক্ষে যথাযথ নয় এবং রামের বক্তব্য অগৌরবেরও। তাই সে কথা শ্রবণযোগ্য নয়। বীরাণাং রাজপুত্রাণাং শস্ত্রাস্ত্রবিদুষাং নৃপ। অনর্হমযশস্যঞ্চ ন শ্রোতব্যং ত্বয়েরিতম্।। পিতা-মাতা, ভাই, পুত্র, পুত্রবধূ, প্রত্যেককে নিজের ভাগ্যফল ভোগ করে থাকে। শুধুমাত্র নারীর ভাগ্য স্বামীর ভাগ্য ওপর নির্ভরশীল। সুখ-দুঃখ সবকিছুই স্বামীর ভাগ্যের অধীন। সেই অনুসারেই ফলভোগ করতে হয়। হয়তো সেই কারণেই এ যেন আমারই প্রতি, স্বামীর সঙ্গে বনবাসের আদেশ। ভর্ত্তুর্ভাগ্যন্তু নার্য্যেকা প্রাপ্নোতি পুরুষর্ষভ। অতশ্চৈবাহমাদিষ্টা বনে বস্তব্যমিত্যপি।।
ইহলোকে বা পরলোকে সর্বত্রই নারীর পতিই পরম আশ্রয়। পিতা, পুত্র, স্বয়ং নিজে, মাতা, সখীজন কেউই তার আশ্রয় নয়। রাঘব, তুমি যদি আজ দুর্গম অরণ্যে যাও, তবে কুশকাঁটার বন ভেঙ্গে আমিও তোমার আগে আগে যাব। যদি ত্বং প্রস্থিতো দুর্গং বনমদ্যৈব রাঘব। অগ্রতস্তে গমিষ্যামি মৃদ্নন্তী কুশকণ্টকম্।। সুতরাং রাম রাগ ও বিদ্বেষ বর্জন করে, বিশাল অরণ্যে যাত্রী যেমন পানাবশিষ্ট জল বর্জন না করে সঙ্গে নিয়ে যায় তেমনই সেই অবশিষ্ট তৃষ্ণার জলের মতো আমায় গ্রহণ কর। ঈর্ষ্যারোষৌ বহিষ্কৃত্য পীতশেষমিবোদকম্। নয় মাং বীর বিশ্রব্ধঃ পাপং ময়ি ন বিদ্যতে।। আমার মনে কোন পাপ নেই। সীতার এক কথা, স্বামী যদি প্রাসাদশিখরে সুখাসনে বা বিমানে আকাশপথে ভ্রমণরত অবস্থাতেও থাকেন স্বামীর পায়ের ছায়া অনুসরণ করেন স্ত্রী। স্বামীর সুস্থিতি বা দুর্গতি সব অবস্থাতেই স্বামীর ছত্রচ্ছায়ায় নারীর দিনযাপন। তাঁদের চরম পার্থিব সিদ্ধি, অলৌকিক সিদ্ধি থেকেও সুখকর স্বামীর সঙ্গসুখ।
জীবনে চলার পথের আচরণ শিক্ষাসহবত মা বাবা শিখিয়েছেন। তাই সে বিষয়ে উপদেশ নিষ্প্রয়োজন। তিনি যাবেন সেই দুর্গম,মৃগসমাকীর্ণ শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যে। তিনি যাবেনই। স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন সীতা। সেই শৈশবে যেমন পিত্রালয়ে স্বচ্ছন্দে দিন কাটাতেন তেমনই বনেও স্বামীসাহচর্য্যে ব্রহ্মচারিণীর মতো নিষ্ঠাভরে, স্বামীর সেবায় মনোনিবেশ করবেন সীতা। রামের সঙ্গে একত্রে ভ্রমণ করবেন। রাম জীবকুলের প্রতিপালক। তাই অরণ্যেও নিঃসন্দেহে সীতার প্রতিপালনের ভার গ্রহণ করতে পারবেন। দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন সীতা, সাহং ত্বয়া গমিষ্যামি বনমদ্য ন সংশয়ঃ। নাহং শক্যা মহাভাগ নিবর্ত্তয়িতুমুদ্যতা।। আমি তোমার সঙ্গে বনে যাবই। হে মহানুভব কিছুতেই তুমি আমায় ফেরাতে পারবে না। অরণ্যবাসে কৃচ্ছ্রসাধনে সীতার কোন দুঃখবোধ নেই। রামের সঙ্গে বন্যফলমূলভক্ষণে সীতার সুখ। তাই সেই কারণে রামের কোন ক্লেশ সইতে হবে না। তিনি বনগমনে রামের অগ্রবর্তিনী হবেন। স্বামীর ভোজনের পর ভোজন করবেন।
স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে,তিনি চারিদিকের পর্বত, নদী, সরোবর, জলাশয় দেখবেন। এটি তার একমাত্র কামনা। তিনি স্বামীর সঙ্গে একযোগে হংস ও কারণ্ডব সমাকীর্ণ,সুন্দর প্রস্ফুটিত কমলদলে পূর্ণ সরোবর দেখবেন। সেই সব সরোবরে স্নান করবেন। এ ভাবে শত সহস্র বৎসর অরণ্যবাসেও কোনও ক্লান্তি অনুভব করবেন না সীতা। স্বর্গবাস সীতার অভিপ্রেত নয়। পিত্রালয়ে সুখের দিনগুলির মতো স্বামীর সেবারত অবস্থায় আনন্দে অরণ্যবাসের দিনগুলি অতিবাহিত হবে। রামের প্রতি অনন্যচিত্ত সীতা। রাম তাঁর মনোজগতের একেশ্বর। রাম যদি সীতাকে পরিত্যাগ করেন তবে মৃত্যুই তার শেষ আশ্রয় হবে। তাই সীতার একমাত্র প্রার্থনা—রাম তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলুন। তাতে তাঁর কষ্ট কোথায়?সীতার কথায় কর্ণপাত করলেন না রাম। সীতাকে বনবাসে নিবৃত্ত করবার জন্যে অরণ্যবাসের কষ্টগুলি বর্ণনা করতে লাগলেন।
ইহলোকে বা পরলোকে সর্বত্রই নারীর পতিই পরম আশ্রয়। পিতা, পুত্র, স্বয়ং নিজে, মাতা, সখীজন কেউই তার আশ্রয় নয়। রাঘব, তুমি যদি আজ দুর্গম অরণ্যে যাও, তবে কুশকাঁটার বন ভেঙ্গে আমিও তোমার আগে আগে যাব। যদি ত্বং প্রস্থিতো দুর্গং বনমদ্যৈব রাঘব। অগ্রতস্তে গমিষ্যামি মৃদ্নন্তী কুশকণ্টকম্।। সুতরাং রাম রাগ ও বিদ্বেষ বর্জন করে, বিশাল অরণ্যে যাত্রী যেমন পানাবশিষ্ট জল বর্জন না করে সঙ্গে নিয়ে যায় তেমনই সেই অবশিষ্ট তৃষ্ণার জলের মতো আমায় গ্রহণ কর। ঈর্ষ্যারোষৌ বহিষ্কৃত্য পীতশেষমিবোদকম্। নয় মাং বীর বিশ্রব্ধঃ পাপং ময়ি ন বিদ্যতে।। আমার মনে কোন পাপ নেই। সীতার এক কথা, স্বামী যদি প্রাসাদশিখরে সুখাসনে বা বিমানে আকাশপথে ভ্রমণরত অবস্থাতেও থাকেন স্বামীর পায়ের ছায়া অনুসরণ করেন স্ত্রী। স্বামীর সুস্থিতি বা দুর্গতি সব অবস্থাতেই স্বামীর ছত্রচ্ছায়ায় নারীর দিনযাপন। তাঁদের চরম পার্থিব সিদ্ধি, অলৌকিক সিদ্ধি থেকেও সুখকর স্বামীর সঙ্গসুখ।
জীবনে চলার পথের আচরণ শিক্ষাসহবত মা বাবা শিখিয়েছেন। তাই সে বিষয়ে উপদেশ নিষ্প্রয়োজন। তিনি যাবেন সেই দুর্গম,মৃগসমাকীর্ণ শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যে। তিনি যাবেনই। স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন সীতা। সেই শৈশবে যেমন পিত্রালয়ে স্বচ্ছন্দে দিন কাটাতেন তেমনই বনেও স্বামীসাহচর্য্যে ব্রহ্মচারিণীর মতো নিষ্ঠাভরে, স্বামীর সেবায় মনোনিবেশ করবেন সীতা। রামের সঙ্গে একত্রে ভ্রমণ করবেন। রাম জীবকুলের প্রতিপালক। তাই অরণ্যেও নিঃসন্দেহে সীতার প্রতিপালনের ভার গ্রহণ করতে পারবেন। দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন সীতা, সাহং ত্বয়া গমিষ্যামি বনমদ্য ন সংশয়ঃ। নাহং শক্যা মহাভাগ নিবর্ত্তয়িতুমুদ্যতা।। আমি তোমার সঙ্গে বনে যাবই। হে মহানুভব কিছুতেই তুমি আমায় ফেরাতে পারবে না। অরণ্যবাসে কৃচ্ছ্রসাধনে সীতার কোন দুঃখবোধ নেই। রামের সঙ্গে বন্যফলমূলভক্ষণে সীতার সুখ। তাই সেই কারণে রামের কোন ক্লেশ সইতে হবে না। তিনি বনগমনে রামের অগ্রবর্তিনী হবেন। স্বামীর ভোজনের পর ভোজন করবেন।
স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে,তিনি চারিদিকের পর্বত, নদী, সরোবর, জলাশয় দেখবেন। এটি তার একমাত্র কামনা। তিনি স্বামীর সঙ্গে একযোগে হংস ও কারণ্ডব সমাকীর্ণ,সুন্দর প্রস্ফুটিত কমলদলে পূর্ণ সরোবর দেখবেন। সেই সব সরোবরে স্নান করবেন। এ ভাবে শত সহস্র বৎসর অরণ্যবাসেও কোনও ক্লান্তি অনুভব করবেন না সীতা। স্বর্গবাস সীতার অভিপ্রেত নয়। পিত্রালয়ে সুখের দিনগুলির মতো স্বামীর সেবারত অবস্থায় আনন্দে অরণ্যবাসের দিনগুলি অতিবাহিত হবে। রামের প্রতি অনন্যচিত্ত সীতা। রাম তাঁর মনোজগতের একেশ্বর। রাম যদি সীতাকে পরিত্যাগ করেন তবে মৃত্যুই তার শেষ আশ্রয় হবে। তাই সীতার একমাত্র প্রার্থনা—রাম তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলুন। তাতে তাঁর কষ্ট কোথায়?সীতার কথায় কর্ণপাত করলেন না রাম। সীতাকে বনবাসে নিবৃত্ত করবার জন্যে অরণ্যবাসের কষ্টগুলি বর্ণনা করতে লাগলেন।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৮: শান্তা দেবী— এক মহীয়সী!
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৯০: মৎস্যজীবীদের সুরক্ষার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে
রামচন্দ্র বনবাসগমনে মনস্থির করে বনবাসবৃত্তান্ত সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অনবহিতা স্ত্রী সীতাকে জানানো প্রয়োজন মনে করছেন। তখন সীতা, রামের যৌবরাজ্যে অভিষেকের সুখস্বপ্নে বিভোর। তাঁর মনে কণামাত্র আশঙ্কা নেই। একমনে প্রাণপ্রিয়র মঙ্গলচিন্তায় দেবপূজায় নিরতা। তিনি রাজনন্দিনী, রাজধর্মে অভিজ্ঞা। হঠাৎ প্রস্তুতিহীন অবস্থায় রামের প্রবেশে হতচকিত সীতা কিছুটা লজ্জিতাও বটে। চোখ পড়ল রামের বিবর্ণ,ঘর্মাক্ত মুখের দিকে। এ কি চেহারা অযোধ্যার ভাবি রাজার? রামচন্দ্র রাজোচিত সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন স্বেচ্ছায়। রামের এই আত্মপীড়ণ, যেটা তাঁর নয় তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, একমাত্র বৈরাগ্যের ধূসররঙে রাঙ্গানো মনটিতেই সম্ভব। তাঁর এই মানসিক অবস্থান্তরের কারণ জানালেন স্ত্রী সীতাকে, তিনি প্রকৃত অর্থেই সহধর্মচারিণী।
রাম যে নির্লিপ্ততায়, যে ঔদাসীন্য বনবাসে মেনে নিয়েছেন সীতা তার ব্যতিক্রম নন। তিনি রাজপ্রাসাদের বৈভবময় জীবনে বড় হয়েছেন, অযোধ্যার রাজা দশরথের বড় আদরের রামের বধূমাতা, কিন্তু তাঁর রাজসুখভোগে অনীহা রামের সেই সর্বত্যাগীরূপের পাশে সমানভাবে প্রোজ্জ্বল। বনবাসের সিদ্ধান্তে, কারও প্রতি, ক্ষোভ, দুঃখ, অভিসম্পাত, কোনও প্রতিক্রিয়াই তাঁর নেই। বনগমনের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন রাম। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী সীতার রাজপ্রাসাদে অবস্থান যাতে বিঘ্নহীন হয় সেই বিষয়েই তাঁর যত চিন্তা।
একটি যৌথ পরিবারের জ্যেষ্ঠপুত্র প্রবাসগমনের আগে যেভাবে স্ত্রীকে আচরণের শিক্ষা দেন ঠিক সেইভাবেই রামের উপদেশ। কত সুন্দর তাঁর জীবনদর্শন। উন্নতিকামী পুরুষেরা অপরের প্রশংসা সহ্য করতে পারেননা তাই ভরতের কাছে রামের প্রশংসা কদাপি নয়। ভাবি প্রজানুরঞ্জক রাজা রাম সর্বদাই প্রশাসনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তাই রাজা ভরতের শাসনাধীন অবস্থায় কখনও বিরোধিতা নয়। পিতা দশরথকে, পুত্রশোকাতুরা মা কৌশল্যার সঙ্গে অন্য মায়েরাও যে সমানভাবে সম্মানীয়া,রামের অনুপস্থিতিতে সীতা যেন ভুলে না যান। সুযোগ্য স্বামীর মতোই ভার্যার আচরণ যেন গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন,আর কিছু নয়। সেই উপদেশ, যৌথপরিবারের এক সুযোগ্য দায়িত্বশীল সদস্যের উপদেশমাত্র,স্বামীর সংবেদনশীল মানসিকতার হয়তো কিছুটা হলেও অভাব থেকে যায় সেখানে। বনবাস জীবনবরণ রামচন্দ্রের নিজের কাছে গৌরবের, পিতৃসত্যরক্ষার দায়বদ্ধতা পালন করেছেন তিনি। সদ্যযৌবনে উপনীতা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন রাম, দীর্ঘ প্রবাসে,যে জীবন অনিশ্চিত, যেখান থেকে ফিরে এলেও অযোধ্যার রাজপ্রাসাদে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সংশয়াতীত নয়,সেই পরিস্থিতিতে তাঁর শুষ্ক উপদেশ একটু কঠোর মনে হওয়াই স্বাভাবিক নয় কী?রামের এই লৌকিক ভাবমূর্তি, অলৌকিক অবতাররূপের পাশে বড় বেশি হৃদয়গ্রাহী।
রাম যে নির্লিপ্ততায়, যে ঔদাসীন্য বনবাসে মেনে নিয়েছেন সীতা তার ব্যতিক্রম নন। তিনি রাজপ্রাসাদের বৈভবময় জীবনে বড় হয়েছেন, অযোধ্যার রাজা দশরথের বড় আদরের রামের বধূমাতা, কিন্তু তাঁর রাজসুখভোগে অনীহা রামের সেই সর্বত্যাগীরূপের পাশে সমানভাবে প্রোজ্জ্বল। বনবাসের সিদ্ধান্তে, কারও প্রতি, ক্ষোভ, দুঃখ, অভিসম্পাত, কোনও প্রতিক্রিয়াই তাঁর নেই। বনগমনের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন রাম। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী সীতার রাজপ্রাসাদে অবস্থান যাতে বিঘ্নহীন হয় সেই বিষয়েই তাঁর যত চিন্তা।
একটি যৌথ পরিবারের জ্যেষ্ঠপুত্র প্রবাসগমনের আগে যেভাবে স্ত্রীকে আচরণের শিক্ষা দেন ঠিক সেইভাবেই রামের উপদেশ। কত সুন্দর তাঁর জীবনদর্শন। উন্নতিকামী পুরুষেরা অপরের প্রশংসা সহ্য করতে পারেননা তাই ভরতের কাছে রামের প্রশংসা কদাপি নয়। ভাবি প্রজানুরঞ্জক রাজা রাম সর্বদাই প্রশাসনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তাই রাজা ভরতের শাসনাধীন অবস্থায় কখনও বিরোধিতা নয়। পিতা দশরথকে, পুত্রশোকাতুরা মা কৌশল্যার সঙ্গে অন্য মায়েরাও যে সমানভাবে সম্মানীয়া,রামের অনুপস্থিতিতে সীতা যেন ভুলে না যান। সুযোগ্য স্বামীর মতোই ভার্যার আচরণ যেন গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন,আর কিছু নয়। সেই উপদেশ, যৌথপরিবারের এক সুযোগ্য দায়িত্বশীল সদস্যের উপদেশমাত্র,স্বামীর সংবেদনশীল মানসিকতার হয়তো কিছুটা হলেও অভাব থেকে যায় সেখানে। বনবাস জীবনবরণ রামচন্দ্রের নিজের কাছে গৌরবের, পিতৃসত্যরক্ষার দায়বদ্ধতা পালন করেছেন তিনি। সদ্যযৌবনে উপনীতা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন রাম, দীর্ঘ প্রবাসে,যে জীবন অনিশ্চিত, যেখান থেকে ফিরে এলেও অযোধ্যার রাজপ্রাসাদে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সংশয়াতীত নয়,সেই পরিস্থিতিতে তাঁর শুষ্ক উপদেশ একটু কঠোর মনে হওয়াই স্বাভাবিক নয় কী?রামের এই লৌকিক ভাবমূর্তি, অলৌকিক অবতাররূপের পাশে বড় বেশি হৃদয়গ্রাহী।
আরও পড়ুন:
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-২৩: ডো অ্যাজ ইউ লাইক
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৯: আবার পুরী ভ্রমণ
রামচন্দ্র যৌবরাজ্যাভিষেকে তাঁকে প্রত্যাখ্যান এবং বনবাসগমনে বাধ্য করা, এই দুই সিদ্ধান্ত স্থিতধী পুরুষের মতোই গ্রহণ করেছেন কিন্তু প্রিয়ভার্যার সম্মুখে ভেঙ্গে পড়েছেন। তাঁর বিবর্ণমুখের নৈরাশ্য, চারিপাশের রাজকীয় বৈভব, নিরানন্দ মনোভাব সত্ত্বেও তিনি নিজেকে সংযত রেখেছেন শুধু স্ত্রীর কথা ভেবে। সীতা, তাঁর আচরণে আভিজাত্যের পরিচয় রেখেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাষায় জানিয়েছেন, পরিবার পরিজনের সঙ্গে আচরণবিধি তিনি অবগত আছেন। প্রকারান্তরে রামচন্দ্রকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এ বিষয়ে উপদেশ নিষ্প্রয়োজন। মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়া ভারতীয় নারীর মজ্জাগত।
এই নতিস্বীকারে—স্বামীর সঙ্গে একযোগে স্বার্থহীনভাবে সুখদুঃখ ভাগ করে নিতেই, বোধ হয় তাঁদের আত্মতৃপ্তি। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই পরম্পরা চলে আসছে। সীতা মনেমনে, একটি সদর্থক সুখানুভবের ভাবি চিত্র এঁকেছেন। তিনি অরণ্যের প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে স্বামীর সাহচর্যে দিন কাটাতে চেয়েছেন। দ্বিধাহীন তাঁর সিদ্ধান্ত। সরলা সীতার এই জীবনবোধ, প্রাসাদের স্বাচ্ছন্দ্য তিনি এককথায় ছেড়ে, বনে যেতে আগ্রহী হয়েছেন—এ কোন বিলাসিনীর যৌথপরিবারের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হয়ে নিভৃতে স্বামীসঙ্গসুখলাভের তৃষ্ণা নয়, সে চিন্তায় প্রবল স্বার্থনিষ্ঠ চিন্তার খেলা নেই, কামনার বিষগন্ধমুক্ত এ ভাবনা।
সীতার মধ্যে রয়েছে এক সাহসিনীর অদম্য উৎসাহ আর নিষ্পাপমনে জীবনের অবশ্যম্ভাবিতাকে বরণ করে নেবার অন্তর্লীন তাগিদ। আধুনিক ভারতবর্ষে রামচন্দ্রের সঙ্গে একযোগে সমানভাবে সম্মানীয়া জনকনন্দিনী সীতা, তাঁর ঋজু,উন্নত অথচ সরল ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি যুগান্তরেও সমানভাবে প্রোজ্জ্বল।—চলবে।
এই নতিস্বীকারে—স্বামীর সঙ্গে একযোগে স্বার্থহীনভাবে সুখদুঃখ ভাগ করে নিতেই, বোধ হয় তাঁদের আত্মতৃপ্তি। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই পরম্পরা চলে আসছে। সীতা মনেমনে, একটি সদর্থক সুখানুভবের ভাবি চিত্র এঁকেছেন। তিনি অরণ্যের প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে স্বামীর সাহচর্যে দিন কাটাতে চেয়েছেন। দ্বিধাহীন তাঁর সিদ্ধান্ত। সরলা সীতার এই জীবনবোধ, প্রাসাদের স্বাচ্ছন্দ্য তিনি এককথায় ছেড়ে, বনে যেতে আগ্রহী হয়েছেন—এ কোন বিলাসিনীর যৌথপরিবারের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হয়ে নিভৃতে স্বামীসঙ্গসুখলাভের তৃষ্ণা নয়, সে চিন্তায় প্রবল স্বার্থনিষ্ঠ চিন্তার খেলা নেই, কামনার বিষগন্ধমুক্ত এ ভাবনা।
সীতার মধ্যে রয়েছে এক সাহসিনীর অদম্য উৎসাহ আর নিষ্পাপমনে জীবনের অবশ্যম্ভাবিতাকে বরণ করে নেবার অন্তর্লীন তাগিদ। আধুনিক ভারতবর্ষে রামচন্দ্রের সঙ্গে একযোগে সমানভাবে সম্মানীয়া জনকনন্দিনী সীতা, তাঁর ঋজু,উন্নত অথচ সরল ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি যুগান্তরেও সমানভাবে প্রোজ্জ্বল।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।