বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


কোভিডকালে দীর্ঘ দু-বছর থমকে থাকার পর বাংলা নাট্যজগতে আবার ব্যস্ততা। অতিমারির আগে সমরেশ মজুমদারের ছোটগল্প ‘নিজের জন্য’-র কাহিনিসূত্র থেকে জিৎ সত্রাগ্নি রচিত নাটক ‘চিলেকোঠায়’ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কোরাস নাট্যদল প্রযোজিত এই নাটক শহর ও রাজ্যের বিভিন্ন অংশে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি আমন্ত্রিত অভিনয় থাকা সত্বেও করোনার ভয়ংকর প্রভাবে অভিনয় বাতিল করতে হয়। তারপর দু বছর পেরিয়ে আবার নতুন করে শুরু।
চম্পাহাটি সুশীল কর কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ২১ মার্চ সোমবার মঞ্চস্থ হবে বিশ্বনাথ বসু ও বেবী সরকারের অনবদ্য অভিনয়শৈলীতে ধন্য মর্মস্পর্শী নাটক ‘চিলেকোঠায়’। মৌমিতা চক্রবর্তীর নির্দেশনায় এই নাটকে এক অন্য ধারার আবহ রচনা করেছেন গৌতম ঘোষ। এ নাটকের মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন চন্দন সেন। আলোক প্রক্ষেপণ মনোজপ্রসাদ। পোশাক বুবু, নামাঙ্কন নীলাভ চট্টোপাধ্যায়। সামগ্রিক পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা বিন্দিয়া ঘোষ। অভিনয়ে ঝিমলি ভট্টাচার্য, ঋতু চক্রবর্তী, বেবী সরকার ও বিশ্বনাথ বসু। নেপথ্য সহযোগী বিশ্বজিৎ বাবুয়া প্রলয় প্রশান্ত ও পল্লবী।
নাটকের কাহিনিসূত্র আমার আপনার পরিচিত। আমরা যেখানে থাকি তার আশপাশেই হয়তো এ রকম কোনও ঘটনা ঘটছে।
৭২ বছরের বৃদ্ধা বিধবা প্রতিমা একা। ছেলে অতীন আর বউমা তৃষার সংসার থেকে দোতলার চিলেকোঠায় নিজেকে সরিয়ে গুটিয়ে রেখেছেন, সংসারে ক্রমশ অপাংক্তেয় হয়ে ওঠা মানসিক যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট প্রতিমা। শুধু বেঁচে আছেন এই দোতলা বাড়িতে একা একা। কাজের মেয়ে বিন্তিই তাঁর সংসারের একমাত্র যোগসুত্র।
হঠাৎ ছেলে বউমা তাঁকে কিছু না জানিয়ে সাতদিনের জন্য নেপাল বেড়াতে যাবার সব ব্যবস্থা করে ফেলল। কাজের মেয়েকে ছুটি দিয়ে নীচে থেকে গোটা বাড়ি চাবি দিয়ে মাকে চিলেকোঠা আর ছাদটুকুতে বন্দি করে গেল। আমাদের আশপাশের দেখা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলা সংসারের উচ্ছিষ্ট হয়ে ওঠা বয়স্ক মানুষদের মতোই রাগে-দুঃখে আতঙ্কে ছটফট করে প্রতিমা। দুদিন পর মাঝরাতে পাইপ বেয়ে জলের ট্যাঙ্ক টপকে হানা দেয় এক চোর। বাড়ি ফাঁকা। থাকার মধ্যে বৃদ্ধা প্রতিমা একা। ঘুমটা ভেঙে গেল। প্রতিমা আর চোর মুখোমুখি। তাঁর হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে দরজা ভেঙে বাড়ি ফাঁকা করে দেওয়ায় এই চোর তো সিদ্ধহস্ত। প্রয়োজনে রডের এক ঘায়ে… রাতের পর রাত এত বছর ধরে সে এই কাজই করে আসছে।
তবুও হঠাৎ কী এমন ঘটল? কোন গূঢ় নাটকীয় ঘটনায় সবকিছু বদলে গেল? কোন সম্পর্কের বাঁধনে সেই চোর বৃদ্ধা প্রতিমার কাছে ধরা দিল? ছেলে-বউমা ফিরে আসার পর কী হবে!
সেই সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েই সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের গল্পের কাহিনিসূত্র থেকে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে অনবদ্য সংলাপের বুনোটে এই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া নাটক লিখেছেন জিৎ সত্রাগ্নি। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে এ নাটকে অসাধারণ নাট্যমুহূর্ত সৃষ্টি করেছেন নির্দেশিকা মৌমিতা চক্রবর্তী। মঞ্চ অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন বিশ্বনাথ বসু। অভিজ্ঞ অভিনেত্রী বেবী সরকারের সঙ্গে দুটি ভিন্ন চরিত্রে বিশ্বনাথ বসুর অতুলনীয় অভিনয়ের সাক্ষী থাকা এক অন্যতর অভিজ্ঞতা। এ নাটকে জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগে একদিন’ কবিতাটি ব্যবহার করা হয়েছে। একটি নেপথ্য চরিত্রে অভিনয় ও জীবনানন্দের এই কবিতা আবৃত্তি করেছেন চলচ্চিত্র ও মঞ্চাভিনেতা রজতাভ দত্ত।

Skip to content