বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


চেহারার মতো সম্পর্ক মিলিয়ে যায়। (চিত্রকলা: সংগৃহীত)।

 

ভাগ- ৫

পার্কের অংশে–সেখানে দামী ট্র্যাকস্যুট পরে পার্কের সবুজ কাঠের বেঞ্চে বিদেশী কোম্পানির এক সময়ের দাপুটে বড় সাহেব শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জী। এখন ৬০/৬২। চোখে রীমলেস চশমা – লম্বা- ক্লিন শেভড – তার সঙ্গে কথা বলছে – অমলকান্তি। চোখে মোটা সাধারণ চশমা– মাথায় কাঁচা-পাকা চুল মুখে দাড়ি – পরণে সাধারণ পাজামা পাঞ্জাবি।

অমলকান্তি: আপনার পরিচিত। পরে সেটা বলবো! তার আগে বলে নিই শ্রমিক অসন্তোষ আসলে তৈরি করা হয়! অদক্ষ বা অতিদক্ষ মিডল ম্যানেজারেরা না-বুঝে বা বুঝে শ্রমিক অসন্তোষ বানায়! শ্রমিকদের কাছে রোজগারের জায়গাটার গুরুত্ব অসীম – কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকের রুজিই কাটা যাবে!

শ্যামলেন্দু: বুঝলাম আপনি ট্রেড ইউনিয়ন লিডার!

অমলকান্তি: কিস্যু বোঝেননি! আপনার আপিসের রামলিঙ্গম সাহেব খুব খাঁটি কথা বলেছিলেন আপনাকে- উচ্চাশা জ্বলন্ত আগুনের মতো। খুব দূরে থাকলে সে তাপ তোমায় ছোঁবে না- খুব কাছে পৌঁছলে ঝলসে যাবে- বলেছিল আপনার ঝলসানিটা ভেতরে হবে অন্তর্দাহ! টুটুলের কি খবর?

শ্যামলেন্দু: কে?

অমলকান্তি: আপনার এক মাত্র শ্যালিকা সুদর্শণা!

শ্যামলেন্দু: ইউ আর ক্রসিং ইওর লিমিট!

অমলকান্তি: আরে সুদর্শণাও তো আপনার আচিভমেন্ট!

শ্যামলেন্দু: আচিভমেন্ট! কী যাতা বলছেন!

অমলকান্তি: মানে সুদর্শণাকে ফিরিয়ে আনা। তার বেকার বিপ্লবী প্রেমিকের পাশ থেকে তাকে ছোঁ মেরে – ডাই সাইটে আডভোকেট পৃথ্বীশ সেনগুপ্তের ঘরণী করানোটা আপনার কাছে আডিশনাল ডিরেক্টর হওয়ার মতোই সাংঘাতিক প্রাপ্তি!
শ্যামলেন্দু: রিজন?

অমলকান্তি: প্রিয় শ্যালিকার কাছে আপনার সততা আপনার সূক্ষ্মতা আপনার মেধার মৃত্যু ঘটেছিল –আপনি সে হারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না –কিন্তু তাকে আপোষের দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনতে পেরে আপনি নিশ্চিন্ত!

শ্যামলেন্দু: সূদর্শণা আই মিন টুটুল এখন সোশ্যাল আক্টিভিস্ট! খুব ইনভলভড!

অমলকান্তি: জানিতো। ওঁর হাতব্যাগে গোছাগোছা এয়ার টিকিট – উনি আজ ওড়িশার কালাহান্ডিতে, তো কাল দিল্লির যন্তরমন্তরে – পরশু ভাঙ্গড়- তরশু জে-এন-ইউ – ফ্যাব ইন্ডিয়ার ড্রেস অ্যান্ড জুয়েলারিতে সদা-সনাতনী। আঁচলে ঘাম মুছতে মুছতে মানুষের দূর্দশার সঙ্গী। বেশ আছেন কিন্তু আপনারা!

শ্যামলেন্দু: ওকে ফাইন! একটা কথার সত্যি জবাব দিন তো!

অমলকান্তি: আমায় প্রশ্ন করে কোন মিথ্যে উত্তর পেয়েছেন?

শ্যামলেন্দু: কে আপনি?? নিশ্চয়ই ভীষণ পরিচিত কিন্তু আমি ঠিক স্পট করতে পারছি না।
অমলকান্তি: আমি অমলকান্তি!

শ্যামলেন্দু: অ-ম-ল-কা-ন্তি মানে তুমি কি আমাদের সঙ্গে।

অমলকান্তি: পড়তাম! কিন্তু তুমি আমায় একবারের জন্যেও চিনতে পারলে না – চলি!

শ্যামলেন্দু: অমলকান্তি শোনো! শোনো অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি! আমি মানে- চলো আমার বাড়ি কাছেই। সঙ্গে গাড়ি আছে।

অমলকান্তি: নাঃ! প্রয়োজন হবে না। কিছু মনে করো না শ্যামলেন্দু – হয়তো অনেক আজেবাজে প্রশ্ন করলাম।

শ্যামলেন্দু: তুমি এমন অনেক প্রশ্ন করলে যার উত্তর তোমার জানার কথা নয়।

অমলকান্তি: হয়তো এগুলো তোমারই ভিতরের জিজ্ঞাসা! হারিয়ে ফেলা সততা সূক্ষ্মতা আর মেধার অস্তিত্ব হয়তো টের পাচ্ছো- চলি। হ্যাঁ একটা কথা শরীরকে যদি সত্যিই পরিশ্রম করাতে চাও তাহলে খামোকা গাড়ি আনা কেন? বাড়ি তো কাছেই!
শ্যামলেন্দু হতভম্বের মতো তাকিয়ে – অমলকান্তি একবারও পিছনে না ফিরে এগিয়ে যায়! শ্যামলেন্দুর অংশে আলোনেভে
আরও পড়ুন:

নাট্যকথা: রোদ্দুর ও অমলকান্তি/৩

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪: ধীরে চলো ‘ওরে যাত্রী’ [০২/০২/১৯৫১]

যোগা-প্রাণায়াম: ঘাড়ের ব্যথায় যোগাভ্যাস খুব উপকারী

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৬: শারদীয় সংখ্যায় লিখে পাওয়া অর্থ বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণে

 

ভাগ- ৬

স্টেজের অন্য অংশে এক চায়ের দোকানের সামনে আলো জ্বলে। সেখানে বেঞ্চে বসে বছর ৪৫/৪৬ চশমা পরা ছাপোষা সোমনাথ ও তার স্ত্রী বাণী (৩৮/৩৯) -মেয়েটি কাউকে দেখে দাঁড়িয়ে ওঠে। ছেলেটি একটু অবাক- মেয়েটি ছেলেটিকে অমলকান্তি যেদিকে গেলো সেদিকে কিছু দেখায়

বাণী: এই ! ওই দ্যাখো! ওই তো বাসস্টপে!

সোমনাথ: ভাই! আর একটা চা হবে!
চায়ের গ্লাসটা বেঞ্চে রেখে দ্রুত কথাটা বলে আগত অমলকান্তির দিকে এগিয়ে যায়

সোমনাথ: (অস্ফূটে) এই যে শুনছেন! এই দিকে! না না আপনি নন – পাশে – হ্যাঁ হ্যাঁ! আপনাকে
অমলকান্তি এগিয়ে আসছে। সোমনাথ অমলকান্তির হাতটা দু’হাত দিয়ে ধরে।

সোমনাথ: আমায় চিনতে পারছেন? আমি সোমনাথ! আপনি অমলদা তো! অমলকান্তি!

অমলকান্তি: হ্যাঁ আমি অমলকান্তি ঠিকই। কিন্তু সোমনাথ বললেই আমি কী করে চিনবো ভাই!! এই বুড়ো বয়েস পর্যন্ত কত কত সোমনাথ দর্শণ করেছি এক বার ভেবে দ্যাখো ! তবে তোমার মুখটা আমার এক স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে…তুমি কি ভোম্বলের।

সোমনাথ: ভাই! ছোটভাই!

অমলকান্তি: তাই বল!! সোমনাথ মানে খোকন তাই তো–দেখে আমার বড্ড চেনা লাগছিল কিন্তু ঠিক- তোমাদের দুজনের মুখের গড়নটা অনেকটা একরকম তবে তুমি একটু রোগাটে।

সোমনাথ: আপনি আমাদের বাড়িতে এসেছেন-

অমলকান্তি: আমিই তো যাই – সক্কলের কাছে যাই -তোমার দাদার বিয়েতে গিয়েছিলাম তোমার বউদির নাম কমলা তো!!

সোমনাথ: হ্যাঁ – আসুন আপনাকে আরেকজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই!
সোমনাথ অমলকান্তির হাতটা ধরে বাণীর কাছে নিয়ে আসে – বাণী প্রণাম করতে যায়। অমলকান্তি পিছিয়ে যায়।

রঙমিলান্তি। (চিত্রকলা: সংগৃহীত)।

অমলকান্তি: আরে আরে এসব কী রাস্তার মধ্যে! তাছাড়া আমি প্রণামে বিশ্বাসী নই!

সোমনাথ: বাণী আমার স্ত্রী! (চায়ের দোকানে) ভাই চাটা দেবেন। আমারটা না ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে! আমাকেও একটা দেবেন! বাণী তুমি?

বাণী: উঁহু!!

সোমনাথ: বাণীকে আপনি চেনেন! অবশ্য ও তখন স্কুলে!

বাণী: আপনি আমার দাদার কাছে আসতেন – বাবার সঙ্গেও দেখা করে যেতেন- প্রিয় গোপাল মজুমদার!!

অমলকান্তি: কী আশ্চর্য তার মানে তুমি তো প্রিয়গোপাল স্যারের মেয়ে! (বাণী সায় দেয়) আমাদের স্কুলের মাস্টারমশাই
উইংসের আড়াল থেকে একটি হাত একে একে দুটি চা বাড়িয়ে ধরে সোমনাথ হাত থেকে চা নিয়ে নিজে নেয় ও অমলকে দেয়।

সোমনাথ: ওর দাদা-বউদিকেও আপনি।

অমলকান্তি: বিলক্ষণ চিনি!! সুব্রত মজুমদার- নিউ ভারত ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন –ব্যাঙ্ক ফেল করলো –আরতি বউদি সেলস গার্লের কাজ নিয়ে একা – সুব্রতদা আরতি বউদি অত্যন্ত ভদ্র। বড্ড ভালো মানুষ ওরা! আজকাল ভদ্রলোকের সংখ্যা বড্ড কম – ভুলে যাবই বা কি করে?! বোধহয় একটিই ছেলে ওঁদের।

বাণী: হ্যাঁ পিন্টু!! দাদা-বউদি দুজনেই মারা গিয়েছেন। পিন্টুকে আমরা মানুষ করেছি ও কলেজে পড়ছে। আমার কাছে থাকে।

সোমনাথ: আপনি এত সকালে এখানে!

অমলকান্তি: আমার এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে গড়ের মাঠে দেখা করার ছিল –তার পর হাঁটতে হাটঁতে- আর তোমরা কি ভিক্টোরিয়ায়।
সোমনাথ-বাণী দুজনেই হেসে ফেলে।
আরও পড়ুন:

শারদীয়ার গল্প-১: প্ল্যানচেট রহস্য

অচেনা টলিউড, পর্ব-৩: সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্রের পরিচালক স্বপন সাহা

ডাক্তারের ডায়েরি, পর্ব-২৩: তরুণ মজুমদার মানেই ষোলো আনা বাঙালিয়ানা

উৎসব-মুখর মথুরা: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /১

সোমনাথ: নানা! আসলে বউদি একটু অসুস্থ- গলস্টোন ধরা পড়েছে।

অমলকান্তি: কমলা অসুস্থ?

সোমনাথ হ্যাঁ: কাল পিজিতে ভর্তি করেছি তাই ওকে নিয়ে সকালে এসেছি।

অমলকান্তি: আর ভোম্বল? (খুঁজে দেখে) সে কই? তোমার দাদা আসেনি? কত দিন বাদে আজ তার সঙ্গে
সোমনাথ-বাণী একে অপরের দিকে তাকায়।

সোমনাথ: দাদা মারা গিয়েছেন-বউদি আমাদের কাছে থাকেন।

অমলকান্তি: ও!! ভোম্বল( চশমাটা খোলেন – একটু সময় নিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টান )তুমি তো বোধহয় ব্যবসা করতে -মানে এখনও কি সেই জেনারেল অর্ডার সাপ্লায়ার?! এই জন-অরণ্যে , যার- যখন-যেটা চাহিদা, তাকে তখন, ‘সেটাই’ পৌঁছে দাও??

সোমনাথ: আপনার কথাটা আমি বুঝেছি! (সোমনাথ মাথা নামিয়ে নেয় – বাণী এসে তার হাতটা ধরে )- — চলবে

[বহুরূপী ব্যতীত আর কোনও নাট্যদলকে এ নাটকের মঞ্চাভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। নাটকটি ভারত সরকারের রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস-এ দ্বারা আইনত রেজিস্ট্রিকৃত (L-76713/2018) নাটকের পূর্ণ বা আংশিক মঞ্চ, শ্রুতি বা চিত্রাভিনয় বা কোনপ্রকার অনুবাদ আইনত দণ্ডনীয়]

Skip to content