মুখবন্ধ
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম…
আমরা কেউ মাস্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল
অমলকান্তি সে সব কিছু হতে চায়নি
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল
ক্ষান্তবর্ষণ কাক ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর…”
অমলকান্তি ছাড়া আর কখনও কেউই রোদ্দুর হতে চায়নি, বোধহয় চাইবেও না!! কারণ বিশ্ববাজারের ভেসে যাওয়া যোগান-চাহিদার স্রোতের উল্টোমুখে হাঁটা বিদ্রোহীরা, যারা নিজের জীবনটা নিজের মর্জিমতো বাঁচার স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখার সাহস রাখে, তারা সংখ্যায় যে দ্রুত কমে আসছে! অমলকান্তি বাংলা সাহিত্যের বাংলা কবিতার অমিত অক্ষয় ভাণ্ডারের বোধহয় সবিশেষ পরিচিত এক অনন্যসাধারণ কল্পনা — এক সম্মানিত সাররিয়্যাল বা পরা-বাস্তব চরিত্র। যে অমলকান্তির স্রষ্টা প্রয়াত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
এ নাটকে আমরা ষাট ছুঁইছুঁই অমলকান্তিকে খুঁজে পাই। সে তার পুরোনো স্কুলের সহপাঠী বন্ধুদের কাছে যায়, তারাও এখন তারই সমবয়সী সমাজের নানা ক্ষেত্রে নানাধাপে প্রতিষ্ঠিত মানুষজন। একেবারে আজকের সমস্যা থেকে বদলে যাওয়া সততা দায়বদ্ধতা মূল্যবোধ, বেঁচে থাকার ভয়ংকর ইঁদুরদৌড়, সব কিছু ছুঁয়ে যায় এ নাটক, এক আশ্চর্য আঙ্গিকে ঘটনা থেকে ঘটনান্তরে যায় এ নাটক।
অমলকান্তির বন্ধু এবং তার পরিচিতেরা সকলেই আবার আমার আপনার খুবই পরিচিত। কীভাবে? তারা যে সকলেই বাংলা ছবির অত্যন্ত বিখ্যাত কিংবদন্তি হয়ে থাকা সব চরিত্র। যাঁদের অতি যত্নে রক্ত মাংস কাঠামো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন বিশ্বখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিত রায়, কাহিনীচিত্রের জাদুকর তপন সিনহা বা বাংলার আরও অনেক কৃতী চিত্রপরিচালক।
● অমলকান্তি যে অন্ধকার ঘটঘটাং ছাপাখানায় কাজ করতো সেটা আমরা কবিতা থেকেই জানতাম। মালিক এককালের জমিদার বিশম্ভর রায়ের বদান্যতায় এখন সে জেরক্সের দোকানে কাজ করে। এই বিশম্ভর রায়ের কথা আছে সত্যজিতের জলসাঘর ছবিতে। অমলকান্তি থাকে ইস্ট ক্যানাল রোডের ছোট্ট আলো-না-ঢোকা এক বস্তির ঘরে।
● ‘অপুর সংসার’ বা ‘অপরাজিত’-র অপু এখানে বিখ্যাত লেখক কবি এবং বাংলা ছবির হাল আমলের গীতিকার যার লেখা গানের কথা এখন মারকাটারি হিট! স্ত্রী অপর্ণা যে ,ছেলে কাজল জন্মাবার সময় মারা গিয়েছিলেন সেটা দর্শক জানে। একমাত্র ছেলে কাজল এখন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে মোটা মাইনের চাকুরে বিরাট অবস্থা। তবে কিশোরী মেয়ে মিনিকে কলকাতায় দাদুর কাছে রেখে গিয়েছে। অপু থাকে সাদার্ন অ্যাভিন্যুতে একা আকাশছোঁয়া আধুনিক ফ্ল্যাটে। সেখানে প্রায়ই আসে বন্ধু অমলকান্তি চা খায় – এটা ওটা গল্প করে। মিনিকে আমরা জানি তপন সিনহার ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিতে।
● অমলকান্তি থাকে বিধবা ভাইঝি নীতার কাছে থাকে। নীতার একটা চালু লেডিজ টেলারিং-এর দোকান আছে। ছোট্ট বেলায় পোলিও-র প্রকোপে হাঁটতে না পারা একমাত্র ছেলেকে সুস্থ করেছিল একসময়ের প্রেমিক এক ডাক্তার বন্ধু। নীতার বিয়ের পর যে কলকাতা ছেড়ে এক গন্ডগ্রামের হাসপাতালে কাজ করত। নীতার সেই ছেলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী নিয়ে এখন মুম্বইয়ের থানের বাসিন্দা। এই নীতাকে আমরা চিনি তপন সিনহার, অনবদ্য ছবি ‘ক্ষণিকের অতিথি’ থেকে।
● স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রশান্ত এক নার্সিং হোমের মালিক। কিছুদিন আগে এক অবিবাহিতার অবৈধ গর্ভপাত করাতে গিয়ে মেয়েটির মৃত্যু হতে বিশ্রী ভাবে জড়িয়ে যায়। কিন্তু প্রশান্তর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু আর অমলকান্তির আরেক সহপাঠী ডাঃ সুধীর সব দায় নিয়ে জেলে গিয়েছে। প্রশান্ত এখন ডাক্তারির সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাট ব্যবসায় টাকা লাগায় তার ব্যবসার সঙ্গী চালকল মালিক সঞ্জীব হালদার। তবে বাড়ি তৈরি, বিক্রির সব দায়দায়িত্ব ক্ষমতাবান প্রোমোটার বিল্ডার শান্তাপ্রসাদের। এই চরিত্রদের আমরা দেখেছি ‘আমি সে ও সখা’ আর ‘জীবন-মৃত্যু’ ছবিতে।
● আমরা দেখেছি অমলকান্তি পৌঁছে গিয়েছে সত্যজিতের ‘সীমাবদ্ধ’ ছবির নায়ক শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জীর কাছে। অধুনা অবসর নেওয়া বহুজাতিক সংস্থার কর্তা শ্যামলেন্দু কিন্তু সহপাঠীকে চিনতেই পারেনি, যে ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষজন তাঁর অতীত ভুলে যান।
● অমলকান্তিকে রাস্তা থেকে ডেকে চা খাইয়েছে ‘জন-অরণ্য’-র সোমনাথ, যে ঘুরপথে জীবন সুরু করলেও এখন সোজাপথে মাথা উঁচু করে ব্যবসা করে। সোমনাথ ‘মহানগর’-এর বাণীকে বিয়ে করেছে। বাণী অমলকান্তির একসময়ের মাস্টারমশাইয়ের মেয়ে। দাদা-বউদি সুব্রত-আরতি মজুমদার মারা গিয়েছেন। ওদের ছেলে পিন্টু এখন পিসি বাণীর কাছে মানুষ। যেমন অমলকান্তির এক সহপাঠী সোমনাথের দাদা ভোম্বলও মারা গিয়েছে। বউদি কমলা রয়েছে বাণী-সোমনাথের কাছে।
● অমলকান্তিকে আরেক সহপাঠী ‘আগন্তুক’ ছবির সুধীন্দ্র বোসের কাছে গিয়ে খুব অপমানিত হতে হল। ভূপর্যটক মামাশ্বশুর মনমোহন মিত্র মারা যাবার পর স্ত্রী অনিলা প্রভূত সম্পত্তি পেয়েছে। ছেলে বিদেশে পড়ছে। সুধীন্দ্রের ঔদ্ধত্য আরও বেড়েছে। তার ওপর এসে জুটেছিল অ্যাডভোকেট পৃথ্বীশ সেনগুপ্ত। পৃথ্বীশই গায়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো।
এইসব চরিত্রদের নিয়ে নিটোল বুনোটে কাহিনী এগোয়। আর রাস্তায়-ঘাড়-গুঁজে মাথা নামিয়ে চলা অতি নগণ্য আমজনতার প্রতিনিধি, এক অমলকান্তি ক্রমাগত প্রশ্নে প্রশ্নে আঘাত করতে থাকে নিশ্চিন্ত প্রতিষ্ঠিত সমাজকে। কিন্তু আরও পাওয়ার লোভে প্রতি মূহুর্তে আপোষ করতে থাকা, সার্থক সহপাঠীদের কাছে উত্তর নেই। উত্তর অপুর কাছে নেই। প্রশান্ত শ্যামলেন্দু, সুধীন্দ্র পৃথ্বীশ কারো কাছে নেই। কিন্তু হয়ত সোমনাথ বা বাণীর কাছে আছে। তবে অমলকান্তি কি এক অজানা কারণে কাউকে ঠিকানা দেয় না। সে জানে তার সুপ্রতিষ্ঠিত বন্ধুরা কেউই তার ঠিকানায় দেখা করতে যাবে না। কেউ যায় না।
এর পর টুকুর জন্যে অবশ্য কেউই তৈরি ছিলাম না। সারা নাটকে যাকে আমরা অমলকান্তি হিসেবে দেখলাম তাকে খুঁজে পেলাম। একটা আই ক্লিনিকে। জানলাম এক দূরূহ চোখের রোগে ৪৭-৪৮বছর বয়স থেকেই মানুষটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এখন চোখ ফেরানোর চেষ্টা করছে এক যুবক চিকিৎসক, নিখরচায়!
ইস্ট ক্যানাল রোডের ছোট্ট আলো-না-ঢোকা বস্তির ঘরেলোকটি একাই কালো চশমা পরে বসে থাকে আর চোখ যখন ছিল তখন গোগ্রাসে দেখা, পড়া চরিত্রদের নিয়ে রোজই নিজের মনের ভেতরে এক পরাবাস্তব অনুভূতি তৈরি করে। তার মধ্যে ডুবে থেকে এভাবেই বেঁচে আছে মানুষটা! আমরা এতক্ষণ তার সঙ্গেই তার মনের মধ্যে ছিলাম।
একজন কাজের মাসি আসে রেণুদি। তাকে আমরা অপুর বাড়িতে দেখেছি। তবে সেই একমাত্র সত্যি। রান্না করে দেয়। অমলকান্তি তাকে বলে, সকালে জানলাটা হাট করে খুলে দিতে, যে রোদ্দুর সে এখন দেখতে পায় না। সেই রৌদ্রকণারা যেন তার শরীরকে স্পর্শ করে। আমরা আবার শুনতে পাই—
“আমাদের মধ্যে যে মাস্টারি করে
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারতো
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিলো,
উকিল হলেও তার এমন কিছু ক্ষতি হোত না
অথচ সকলের ইচ্ছাপূরন হলো এক অমলকান্তি ছাড়া
সেই অমল কান্তি রোদ্দু্রের কথা ভাবতে ভাবতে যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো।।
এ নাটকে আমরা ষাট ছুঁইছুঁই অমলকান্তিকে খুঁজে পাই। সে তার পুরোনো স্কুলের সহপাঠী বন্ধুদের কাছে যায়, তারাও এখন তারই সমবয়সী সমাজের নানা ক্ষেত্রে নানাধাপে প্রতিষ্ঠিত মানুষজন। একেবারে আজকের সমস্যা থেকে বদলে যাওয়া সততা দায়বদ্ধতা মূল্যবোধ, বেঁচে থাকার ভয়ংকর ইঁদুরদৌড়, সব কিছু ছুঁয়ে যায় এ নাটক, এক আশ্চর্য আঙ্গিকে ঘটনা থেকে ঘটনান্তরে যায় এ নাটক।
অমলকান্তির বন্ধু এবং তার পরিচিতেরা সকলেই আবার আমার আপনার খুবই পরিচিত। কীভাবে? তারা যে সকলেই বাংলা ছবির অত্যন্ত বিখ্যাত কিংবদন্তি হয়ে থাকা সব চরিত্র। যাঁদের অতি যত্নে রক্ত মাংস কাঠামো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন বিশ্বখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিত রায়, কাহিনীচিত্রের জাদুকর তপন সিনহা বা বাংলার আরও অনেক কৃতী চিত্রপরিচালক।
এইসব চরিত্রদের নিয়ে নিটোল বুনোটে কাহিনী এগোয়। আর রাস্তায়-ঘাড়-গুঁজে মাথা নামিয়ে চলা অতি নগণ্য আমজনতার প্রতিনিধি, এক অমলকান্তি ক্রমাগত প্রশ্নে প্রশ্নে আঘাত করতে থাকে নিশ্চিন্ত প্রতিষ্ঠিত সমাজকে। কিন্তু আরও পাওয়ার লোভে প্রতি মূহুর্তে আপোষ করতে থাকা, সার্থক সহপাঠীদের কাছে উত্তর নেই। উত্তর অপুর কাছে নেই। প্রশান্ত শ্যামলেন্দু, সুধীন্দ্র পৃথ্বীশ কারো কাছে নেই। কিন্তু হয়ত সোমনাথ বা বাণীর কাছে আছে। তবে অমলকান্তি কি এক অজানা কারণে কাউকে ঠিকানা দেয় না। সে জানে তার সুপ্রতিষ্ঠিত বন্ধুরা কেউই তার ঠিকানায় দেখা করতে যাবে না। কেউ যায় না।
এর পর টুকুর জন্যে অবশ্য কেউই তৈরি ছিলাম না। সারা নাটকে যাকে আমরা অমলকান্তি হিসেবে দেখলাম তাকে খুঁজে পেলাম। একটা আই ক্লিনিকে। জানলাম এক দূরূহ চোখের রোগে ৪৭-৪৮বছর বয়স থেকেই মানুষটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এখন চোখ ফেরানোর চেষ্টা করছে এক যুবক চিকিৎসক, নিখরচায়!
ইস্ট ক্যানাল রোডের ছোট্ট আলো-না-ঢোকা বস্তির ঘরেলোকটি একাই কালো চশমা পরে বসে থাকে আর চোখ যখন ছিল তখন গোগ্রাসে দেখা, পড়া চরিত্রদের নিয়ে রোজই নিজের মনের ভেতরে এক পরাবাস্তব অনুভূতি তৈরি করে। তার মধ্যে ডুবে থেকে এভাবেই বেঁচে আছে মানুষটা! আমরা এতক্ষণ তার সঙ্গেই তার মনের মধ্যে ছিলাম।
একজন কাজের মাসি আসে রেণুদি। তাকে আমরা অপুর বাড়িতে দেখেছি। তবে সেই একমাত্র সত্যি। রান্না করে দেয়। অমলকান্তি তাকে বলে, সকালে জানলাটা হাট করে খুলে দিতে, যে রোদ্দুর সে এখন দেখতে পায় না। সেই রৌদ্রকণারা যেন তার শরীরকে স্পর্শ করে। আমরা আবার শুনতে পাই—
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারতো
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিলো,
উকিল হলেও তার এমন কিছু ক্ষতি হোত না
অথচ সকলের ইচ্ছাপূরন হলো এক অমলকান্তি ছাড়া
সেই অমল কান্তি রোদ্দু্রের কথা ভাবতে ভাবতে যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো।।
—চরিত্র লিপি এরপর…
আরও পড়ুন:
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৬: বসুন্ধরা এবং…
ছোটদের যত্নে: শিশু পেটের ব্যথায় ভুগছে? তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি মেনে চলুন
পর্ব-৩৫: শেকল-বাঁধা ঠাকুরবাড়ির খাতা
পুজোর ছুটিতে সপরিবারে ঘুরতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন? রইল ডাক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ
চরিত্র বিন্যাস
কম্পিউটার টাইপিং জেরক্সের দোকানের ছাপোষা কর্মী। তার নিজের বলতে বিধবা ভাইঝি নীতা।(চরিত্র সূত্রঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা অমলকান্তি)
কবি/সাহিত্যিক/অধুনা গীতিকার/ স্ত্রী অপর্ণা মৃতা (চরিত্র সূত্রঃ অপুর সংসার)
নামকরা ব্যস্ত আডভোকেট (চরিত্র সূত্রঃ আগন্তুক)
নার্সিং হোমের মালিক/গর্ভপাতের বে-আইনী ব্যবসা প্রশান্তের স্ত্রী চন্দ্রাণীর সম্মান বাঁচাতে বন্ধু ডাঃ সুধীর দত্ত অন্যায়ের সব দায় মাথায় নিয়ে জেল খাটছে (চরিত্র সূত্রঃ আমি সে ও সখা)
বিরাট এক্সিকিউটিভ ওঁর শালিকা টুটুলকে (সুদর্শণা) বিয়ে করেছে আডভোকেট পৃথ্বীশ। এখন সোস্যাল আক্টিভিস্ট। সরকার মানেগোনে কাগজে নাম বেরোয়। (চরিত্র সূত্রঃ সীমাবদ্ধ)
পৈতৃক ব্যবসা ছিলই তার ওপর তার স্ত্রী অনিলার মামা মনমোহন মিত্র বিস্তর টাকাপয়সা দিয়ে গিয়েছেন— ছেলে সাত্যকিকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। (চরিত্র সূত্রঃ আগন্তুক)
বিশুদা আর নটবর মিত্তিরের কল্যাণে শুরুটা ঘুরপথে হলেও এখন সোমনাথ ব্যবসাটা সৎপথেই করে। বন্ধু সুকুমারকেও সাহায্য করেছে চেনা ফাইনান্সারের টাকায় তার গাড়ীভাড়া দেওয়ার ব্যবসা-সুকুমারের বোন কণাকে নিজে দাঁড়িয়ে পাত্রস্থ করেছে— সোমনাথ বিয়ে করেছে বাণীকে। বাবা তো আগেই গিয়ে ছিলেন— দাদা ভোম্বলের মৃত্যুর পর বউদি কমলাকে তার বাড়িতে সস্মমান রেখেছে। (চরিত্র সূত্রঃ জনঅরণ্য)
সুব্রত মজুমদারের বোন। দাদা-বউদি পরপর চলে গেলেন। অমলকান্তি পাড়াতুতো দাদাবউদি সুব্রত/আরতি মজুমদারদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। ভাইপো পিন্টুকে বাণীই মানুষ করেছে। (চরিত্র সূত্রঃ মহানগর)
অমলকান্তির বিধবা ভাইঝি নীতা। একমাত্র ছেলে হাঁটতে পারতো না। নীতার এক সময়ের বন্ধু প্রেমিক এক ডাক্তার তাকে সুস্থ করে দেয়। বিয়েটা হয়নি কিন্তু ভালোবাসাটা বেঁচে ছিল। নীতার সে ছেলে বিয়ে থা করে থানেতে ফ্ল্যাটে থাকে। নীতা তার বাউন্ডুলে কাকার দেখাশোনা করতে থেকে গেল কলকাতায়। একটা বড় লেডিজ টেলারিং আছে ওঁর। (চরিত্র সূত্রঃ ক্ষণিকের অতিথি)
শিক্ষাসদনের ছাত্রী/অপুর ছেলে কাজলের একমাত্র মেয়ে। অপুর ছেলে কাজল বড়চাকুরে। বউকে নিয়ে রিয়াধের আল ওলাইয়া নামের জায়গায় থাকে মেয়েকে দাদুর কাছে রেখে গিয়েছে। (চরিত্রসূত্রঃ কাবুলিওয়ালা)
অপুর বাড়ির কাজের লোক / আবার আমাদের অমলকান্তির এক প্রতিবেশি।
অমলকান্তির সাময়িক অন্ধত্ব সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
এ নাটকের প্রথাগত দৃশ্য বা অঙ্ক নেই — দুই অসম মানুষের নির্ভেজাল বন্ধুত্ব, স্মৃতিচারণা- মাঝে চলে যাওয়া অনেকগুলো বছর। বদলে যাওয়া মানুষ, মানসিকতা আর সম্পর্কের নতুন দৃষ্টিভঙ্গী। এই নিয়েই এ নাটক – অতীত থেকে বর্তমানে বারবার এদের ফিরিয়ে আনে অপুর কিশোরী নাতনি। কাহিনীর প্রয়োজনে মুখ্যচরিত্র অমলকান্তি নানা অংশে পৌঁছে যায় আবার লেখক অপুর কাছে মূল আলাপচারিতায় ফিরে আসে।
নাটকের মঞ্চসজ্জা বলতে মঞ্চের নানান অংশে ভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে এমন নানা ভাবে রাখা নানান উচ্চতার চেয়ার বা বসার আসন। কাঠের সাবেকি হাতল ভাঙা থেকে হালফ্যাশনের উজ্জ্বল রঙ্গের স্টুল, বেতের ডেক চেয়ার, কাঠের বেঞ্চ সব। অমলকান্তির চাল চুলো নেই সামাজিক প্রতিষ্ঠা নেই নীতা ছাড়া আপন কেউ নেই কিন্তু তবু সে উদ্দাম এবং নিজস্ব ভালোলাগা বা পছন্দের ব্যাপারে ভয়ানক একগুঁয়ে – লেখক বলতে রবীন্দ্রনাথ। কবিতা সাহিত্য দুটোই। গান বলতে রবীন্দ্রনাথ। আর বাংলা সিনেমা একসময় খুব দেখত। তবে পছন্দের পরিচালক বলতে সত্যজিৎ রায় তপন সিনহা আর সবাইকে ফেলে এসে হালের ঋতুপর্ণ ঘোষ।
নাটকের মঞ্চসজ্জা বলতে মঞ্চের নানান অংশে ভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে এমন নানা ভাবে রাখা নানান উচ্চতার চেয়ার বা বসার আসন। কাঠের সাবেকি হাতল ভাঙা থেকে হালফ্যাশনের উজ্জ্বল রঙ্গের স্টুল, বেতের ডেক চেয়ার, কাঠের বেঞ্চ সব। অমলকান্তির চাল চুলো নেই সামাজিক প্রতিষ্ঠা নেই নীতা ছাড়া আপন কেউ নেই কিন্তু তবু সে উদ্দাম এবং নিজস্ব ভালোলাগা বা পছন্দের ব্যাপারে ভয়ানক একগুঁয়ে – লেখক বলতে রবীন্দ্রনাথ। কবিতা সাহিত্য দুটোই। গান বলতে রবীন্দ্রনাথ। আর বাংলা সিনেমা একসময় খুব দেখত। তবে পছন্দের পরিচালক বলতে সত্যজিৎ রায় তপন সিনহা আর সবাইকে ফেলে এসে হালের ঋতুপর্ণ ঘোষ।