বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


 

তাজ ‘সিরিজ ১’ এবং ‘সিরিজ ২’

ভাষা: হিন্দি, তামিল, তেলেগু
সৃজন: অভিমন্যু সিং
কাহিনি বিন্যাস : ক্রিস্টোফার বুটেরা
চিত্রনাট্য: উইলিয়াম বর্থুইক এবং সায়মন ফ্যন্টাওজো
সংলাপ: অজয় সিং
পরিচালনা: রণ স্ক্যালপেলো এবং বিভু পুরি
অভিনয়ে: ধর্মেন্দ্র, নাসিরুদ্দিন শাহ, অসীম গুলাটি, অদিতি রাও হায়দারি, রাহুল বোস, জারিনা ওয়াহাব, সন্ধ্যা মৃদুল প্রমুখ
পর্ব: ১০টি
রেটিং: ৭.৭৫/১০

১৯৮৬ সালে ইনফোকম-এর প্রযোজনায় প্রথম স্পনসর্ড টেলিধারাবাহিক ‘সোনার সংসার’। শঙ্করের বিখ্যাত উপন্যাস। সময়ের হিসেবে কলকাতা দূরদর্শনে প্রথম গল্পের সিরিজ গৌতম ঘোষের ‘বাংলা গল্প বিচিত্রা’-প্রথম বাংলা ধারাবাহিক কাহিনি ‘সোনার সংসার’। এর ঠিক পরে পরেই সোনেক্স-এর ‘তেরো পার্বণ’। তারপর আবার ইনফোকমের গল্পের সিরিজ ‘সম্পর্ক’। বাংলা দূরদর্শনের সিরিয়ালের আদি প্রস্তরযুগ সেটা। তার আগে ১৯৮৪ সালে হিন্দিতে হমলোগ। আর ‘৮৬ তেই বুনিয়াদ।
ভারতীয় টেলিভিশনে জি ফাইভের ওয়েবসিরিজ ‘তাজ’ দেখতে দেখতে সেই সময়টার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। রবীনদার (ইনফোকমের কর্ণধার রবীন ঘোষ) আমন্ত্রণে সোনার সংসার উপন্যাস অবলম্বনে ১৩ পর্বের ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখার বিরল সুযোগ পেয়েছিলাম। ২২ থেকে ২৩ মিনিটের মধ্যে প্রতিপর্ব। নিশীথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রদীপ মুখোপাধ্যায় শ্রীলা মজুমদার নেপাল নাগ, স্মিতা সিনহা, শিলাদিত্য পত্রনবিশ, সুনীল মুখোপাধ্যায় দুলাল লাহিড়ি সারা অধিকারী-সহ বহু অভিনেতা অভিনেত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ে হরলিক্স নিবেদিত সোনার সংসার দেখানো হতো প্রতি শুক্রবার রাত ৮ টায়।
আরও পড়ুন:

রিভিউ: হাসতে হলে দেখতে হবে ‘স্বপ্নসুন্দরী’র দ্বিতীয় যাত্রা! ‘ড্রিম গার্ল ২’ ছবিতে জাত চিনিয়েছেন আয়ুষ্মান

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২২: সুন্দরবনে গোয়াল পুজো আর ‘ধা রে মশা ধা’

সেই সময় সাধারণ বাংলা ছবির মতো একটি ক্যামেরায় শুটিং করা। ইকেগ্যামি ভিডিও ক্যামেরা। বেশ ভারি বড়সড় চেহারা। ভয়ংকর ব্যাটারির খিদে। হার্ডকভার বইয়ের মত বড়সড় ইউমেটিক ভিডিও ক্যাসেটে শুটিং হতো। তার ৩/৪ ইঞ্চি ফিতে। সেটা লিনিয়ার এডিটিংয়ের যুগ। শঙ্করের মতো বিখ্যাত ঔপন্যাসিকের পরিচিত কাহিনি। তাই জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য গল্প বদলে দেওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। সপ্তাহে একবারই দেখানো হত। তাই আজকের ডেলিসোপের মতো একই চরিত্রকে বারবার দেখার অভ্যাস তৈরি করিয়ে দেওয়া যেত না। তখন গুণী মানুষজনের ছবি নিয়ে গোগ্রাসে গেলা আড্ডায় আলোচনায় প্রায়ই একটা কথা খুব শুনতাম- ছবির মাউণ্টিং। তখন বুঝতে পারতাম না। পরে আমার স্বল্পধারণায় যা বুঝেছি এটা ছবির বিশালত্ব উচ্চতা। ঘাড় উঁচু করে অবাক চোখে হাঁ হয়ে যা দেখতে হয়। যেমন ক্লিওপেট্রা, বেনহুর পরবর্তীকালে মেরা নাম জোকার বা শোলে।
তারপর ৩৬ বছর কেটে গিয়েছে। পরিবর্তন পরিমার্জন আধুনিকতার মাধ্যমে সাবলীল সাবলম্বী হয়ে উঠেছে টেলিভিশন সিরিয়াল। সিরিয়াল থেকে সিরিজ হয়ে উঠে বড় পর্দার সিনেমার ঘাড়ে ছোবল দিচ্ছে ছোট পর্দার বেপরোয়া সিরিজ। তাই ইতিহাসের পাতায় পড়া চরিত্রদের ঘটনাগুলোকে দুচোখ ভরে নতুন করে দেখার এক বিরলতম অভিজ্ঞতা জি-ফাইভ-এর তাজ ‘সিরিজ ১’ এবং ‘সিরিজ ২’।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৬: বুকে ব্যথা মানেই কি গ্যাসের ব্যথা? হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ না কি গ্যাসের ব্যথা, বুঝবেন কী ভাবে?

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৩: অকালে খেয়েছ কচু, মনে রেখো কিছু কিছু

মুঘল আমলে আমাদের জানা চেনা অনেক ইতিহাসকে মিলিয়ে মিশিয়ে আকর্ষণীয় কাহিনি বিন্যাস করেছেন ক্রিস্টোফার বুটেরা। সেই কাহিনির ভিত্তিতে অসাধারণ চিত্রনাট্য রচনা করেছেন উইলিয়াম বর্থুইক এবং সায়মন ফ্যন্টাওজো। অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখেন সিরিজের চিত্রগ্রাহক সাইমন টেম্পল ও তেজাল শেত্যে এবং চিত্রসম্পাদক ইরফান ঈশাক, বেন কিং ও রুচি বরার।

এই সুবিশাল পটভূমিকায় গড়ে ওঠা অনবদ্য ইতিহাসকে তাক লাগিয়ে দেওয়া নির্দেশনায় বিশ্বাস্য করে তুলেছেন রন স্ক্যালপেলো এবং বিভু পুরি। বিভু এর আগে “হাওয়াইজাদা” ছবিটি পরিচালনা করেন এবং “সাওয়ারিয়া”, “গুজারিশ”, “শিরিন ফারহাদ কি তো নিকল পড়ি” ছবিগুলির রচয়িতা।
দর্শকের চোখ এখন ভিএফএক্সে সয়ে গেছে। বাহুবলির লাফ দিয়ে দিয়ে ভয়ংকর ঝরনায় চড়ে উঠে যাওয়া বা রোবট ছবিতে হাজারে হাজারে রোবট মিলিতভাবে বা একা একা গোটা শহরকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে এসব দেখে এখন আর চোখ বড় বড় হয়ে যায় না। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় বা আপনার মোবাইলে জি ফাইভের তাজ দেখার সময় এমনটা হবে।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৪: একটু হোক-ফোক!

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২০: পাঁচ ভাইয়ের বড়দিদি

 

তাজ: রক্তেই বিভাজন [সিজন ১]

সাধারণভাবে রক্তের সম্পর্কে আত্মীয়তার সূচনা হলেও মুঘল আমলে সেই রক্তেই মিশেছিল ভাঙণের বীজ। ১৬০০ সনের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া এই সিরিজের প্রধান উপজীব্য আকবর এবং তার তিনছেলে সেলিম, মুরাদ এবং দানিয়ালের মধ্যে উত্তরাধিকার যুদ্ধ, পারিবারিক ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ক্ষমতার জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক রাজনীতি, বৈভব সৌন্দর্য, প্রেমের তীব্র উন্মাদনা, শীতল বিশ্বাসঘাতকতা এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের নানান ভয়ংকর কাহিনি এসেছে পর্বে পর্বে। মুঘল রাজবংশের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি চরিত্রের একাধিক অজানা স্তর উন্মোচন করেছে এই সিরিজ। মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রজন্মের উত্থান এবং পতনকে নিখুঁত নাটকীয়তায় উপস্থাপন করে এই সিরিজ। দরবার থেকে হারেমের রাজনীতির ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ঐতিহাসিক ধারাবাহিক।

নাসিরুদ্দিন শাহের আকবর মুঘলে আজমের পরিচিত পৃথ্বীরাজ কাপুরের ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ আকবরের তুলনায় একেবারেই অন্যধারার- অনেক বেশি সেরিব্রাল অনেক তীব্র। কখনও অসহায় কখনও প্রতিহিংসাপরায়ণ। সেলিম চিস্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ অথচ স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে ধর্মেন্দ্র নিজের অভিনয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সফল। অসীম গুলাটির সেলিম এবং অদিতি রাও হায়দারির আনারকলি অসাধারণ। তাহা শাহের মুরাদ অবাক করে। রাহুল বোস, সন্ধ্যা মৃদুল ও জারিনা ওয়াহাব নিজ নিজ চরিত্রে যথাযথ।
 

সিজন-২ পরের সপ্তাহে

* ফিল্ম রিভিউ: জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন।

Skip to content