শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


জমল কি ‘মিথ্যে প্রেমের গান’? ছবি: সংগৃহীত।

প্রথমেই বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: আমি কোনও ফিল্ম জার্নালিস্ট বা ক্রিটিক একেবারেই নই। সাধারণ একজন সিনেমাপ্রেমী। এবং “মিথ্যে প্রেমের গান” আমাকে নিরাশ করেনি। যদিও সিনেমাটা দেখতে বসে মাঝে মাঝে গুলিয়ে যাচ্ছিলো এটা বাংলা নাকি হিন্দি ছবি! বলিউডি টাচ প্রচুর এই ছবিতে। তবে সেটা মন্দ লাগছিলো না।
একজন ব্যর্থ, গুটিয়ে যাওয়া, হতাশ মানুষ, প্রেমিক এবং গায়ক থেকে রকস্টার হয়ে ওঠার সফরে অনির্বাণ এক্কেবারে নিখুঁত! ইশা সাহার প্রাণোচ্ছল উপস্থিতি যেন এক ঝলক তাজা হাওয়া। অনির্বাণের বন্ধুর চরিত্রে সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় মুগ্ধ করে। অর্জুন চক্রবর্তীর অভিনয় নিয়ে কিচ্ছু বলার নেই। কিন্তু কাস্টিং ক্রুর বিরুদ্ধে আমার একটা ছোট্ট অভিযোগ আছে। অমন প্রেমিক চেহারার সঙ্গে অতখানি রূঢ়তা বোধহয় বেমানান। কিছু মানুষ চাইলেও ক্রুর হতে পারেন না। অর্জুন সেই গোত্রের। আর সেটা তিনি জানেন বলেই অভিনয় দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে, সামনে পরীক্ষা? চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য রইল ১০টি জরুরি পরামর্শ

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৭: ঈশ্বরের ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিলে তবেই ভক্তিরূপ মুক্তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব

কোনও একটি টিভি নিউজ চ্যানেলে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে মজা করে বলতে শুনেছিলাম যে, যেখানেই তিনি ভালো অভিনয় দ্যাখেন, সেটাকে নির্লজ্জের মতো ঝেঁপে দেন। ঠাট্টার ছলে এই কথা বলার সাহস বোধহয় একমাত্র অনির্বাণই করতে পারেন। যে কোনও ভালো অভিনেতার অভিনয়কে আত্মস্থ করে এক্কেবারে নিজের রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন তিনি।

কোথাও বিদ্রোহী ‘রকস্টার’ যার চোখে অনির্বাণ বহ্নি, আবার কোথাও অভিমানী, জেদি অথচ অসহায় প্রেমিক, যার গানের মধ্যে দিয়ে ভাষা খুঁজে ফেরে তার অব্যক্ত যন্ত্রণা—সবেতেই সাবলীল বিচরণ তাঁর! তবে একটা কথা না বলে পারছি না, কিছু কিছু দৃশ্যে অনির্বাণের ডায়লগ ডেলিভারি এবং ম্যানারিজম শাহরুখ খানকে বড্ড বেশি মনে করিয়ে দেয়। সেটা হয়তো না হলেই ভালো হতো। একটু যেন অনির্বাণের স্বকীয়তা কোথাও একটা হোঁচট খাচ্ছিলো এই জায়গাগুলিতে।
আরও পড়ুন:

প্রেম দিবসে বিয়ের পিঁড়িতে হার্দিক-নাতাশা, কোন কোন তারকা রয়েছেন অতিথি তালিকায়?

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৪: কাশীর পথে-ঘাটে

সিনেমায় কয়েকটি অসাধারণ মুহুর্ত এঁকেছেন পরিচালক পরমা নেওটিয়া। ক্যামেরার ব্যবহারে বেশ খানিকটা নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে এরিয়েল শটে অনির্বাণ এবং ইশার বিচ্ছেদ এবং দু’জনের রাস্তা আলাদা হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি সত্যিই কাব্যময়। একজন তাঁর গোছানো জীবনের বাঁধানো রাস্তায় পা বাড়ালেন, অপর জন তাঁর চিরকালের অগোছালো অস্তিত্বের বন্ধুর পথে এগিয়ে চললেন।
দীর্ঘ সাত বছর পরে আবার দু’জনের দেখা হওয়ার আগে, দু’জনের মনে মনে প্রস্তুতির দৃশ্যগুলি বড্ড হৃদয়স্পর্শী। হঠাৎ করে লিফটে দেখা হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি যেন হুবহু প্রেমিকের কল্পনা। আর শেষটা? না, ওটা শেষের জন্যেই থাক!

ছবির গান এবং কবিতা দুইই যুগপোযগী। একটু কোথাও হিন্দি ছবি ঘেঁষা, তবে সুখশ্রাব্য। ছবিটির দ্বিতীয়ার্ধের দৈর্ঘ্য হয়তো আরও মিনিট দশেক ছেঁটে ফেলা যেত। কিন্তু সব মিলিয়ে দেখতে গেলে “মিথ্যে প্রেমের গান” সিনেমাটিতে সাফল্যের সমস্ত উপকরণই মজুদ আছে। বাকিটা দর্শকদের হাতে।

আজ প্রেমের দিনে, সত্যি এবং মিথ্যে, সকল প্রেমিক-প্রেমিকারা — “মিথ্যে প্রেমের গান” দেখে আসতে পারেন। হয়তো কোথাও আপনারই প্রেমের গল্পের চেনা সংলাপ খুঁজে পেয়ে যেতে পারেন!
* লেখিকা পর্ণা চৌধুরী ইংরেজির শিক্ষিকা, গভঃ বেসিক কাম মাল্টিপারপাস স্কুল, বাণীপুর।

Skip to content