মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


‘ড্রিমগার্ল ২’ একটি নিছক হাসির ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ভাষা: হিন্দি
কাহিনী চিত্রনাট্য: নরেশ কাঠুরিয়া
পরিচালনা: রাজ শাণ্ডিল্য
অভিনয়: আয়ুষ্মান খুরানা, অনন্যা পাণ্ডে, অন্নুকাপুর, পরেশ রাওয়াল প্রমুখ
ওটিটি রিলিজ: নেটফ্লিক্স
সময়: ১৩৪ মিনিট
রেটিং: ৫.৭৫/১০


২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল আয়ুষ্মান খুরানা ও নুসরাত ভারুচার ছবি ‘ড্রিমগার্ল’। ২৮ কোটি টাকায় বানানো সেই আদ্যন্ত কমেডি ছবি বিদগ্ধ ফিল্ম ক্রিটিকদের চমকে দিয়ে সর্বমোট ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।

২০২৩ এর আগস্ট মাসে মুক্তি পেয়েছে আয়ুষ্মান খুরানা ও অনন্যা পাণ্ডের ছবি ‘ড্রিমগার্ল ২’। প্রথম ছবির চার বছর বাদে বাজেট মোটামুটি একই রকম রয়েছে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। আর অগাস্ট থেকে অক্টোবরে ব্যবসা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।
ড্রিম গার্ল-এর বিষয় ভাবনায় একটা নতুনত্ব ছিল। আজকের ব্যস্ত জটিল জীবনে ‘মনের মানুষ কম পড়িতেছে’। তাই রাস্তায় ঘাটে বাজারে দোকানে পত্রিকার পাতায় মন-ভালো-রাখা মনের মানুষের বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ। বে-রোজগারের দুনিয়ায় ড্রিমগার্ল ছবির নায়ক কর্মবীর সিং ওরফে করম পুরুষ আইডেন্টিটি লুকিয়ে তার কণ্ঠস্বর বদলে পালটে কলসেন্টারের ‘পূজা’ হয়েছিল। এদিকে তার প্রেমিকা মাহি’র (নুসরত ভারুচা) কাছে পূজার অস্তিত্ব গোপন রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হয়েছে। কমবয়সী থেকে বয়স্ক সকল পুরুষ মানুষই পূজার প্রেমে মশগুল এমনকি করমের বাবা জগজিৎ সিং (অন্নু কাপুর) তার অন্যথা নন। আপাদমস্তক মজায় মোড়া ড্রিম গার্ল সুপার হিট হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

রিভিউ: বলিউডের চেনা চাকচিক্যের আড়ালের অন্ধকারকে আলোয় এনেছে ‘দ্য ফেম গেম’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৫: কানে তালায় কানের ড্রপ?

ড্রিম গার্ল ২ সরাসরি আগের ছবি ড্রিম গার্ল এর সিক্যুয়েল বা দ্বিতীয় ভাগ নয়। এ যেন অনুবাদ নয় ভাবানুবাদ। তাই ছবির প্রচারে একটি সুন্দর শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। স্পিরিচুয়াল সিক্যুয়েল। কয়েকটি চরিত্র বদলেছে। মূল চরিত্রদের নাম বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একই রকম আছে। এই ছবিতে করম কিছুতেই মহিলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না কিন্তু তার প্রেমের স্বার্থে তাকে তাই করতে হয়। প্রেমিকা পরী শ্রীবাস্তবকে বিয়ে করার জন্যে পরীর উকিল বাবা ছয় মাসের মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স গড়ে তোলার কঠিন শর্ত দেয়। তাই আবার করমকে পূজা হতে হল। এরপর একেবারে শেষ পর্যন্ত দুরন্ত গতিতে ছুটেছে এই কমেডি ছবি। বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা চিত্রগ্রহণ ও চিত্রসম্পাদনায় মুন্সীয়ানা পরিচালনায় ঝলসানো দ্যুতি এসব খোঁজার ন্যূনতম সময়টুকুও আপনি পাবেন না।
সারা ছবিতে আপনাকে অবাক হয়ে দেখতে হবে অসাধারণ সুন্দরী এক মহিলার ভূমিকায় কীভাবে সারা শরীর দিয়ে অভিনয় করেছেন অভিনেতা আয়ুষ্মান।

সেই মহাভারতের আমলের বৃহন্নলা থেকে পুরুষরা মহিলাদের ছদ্মবেশ নিয়েছেন। বহু হিন্দি, বাংলা, ইংরিজি ছবিতে কমেডির তাগিদে পুরুষ অভিনেতা মহিলা সেজেছেন। আবার অভিনেত্রীরাও পুরুষের ছদ্মবেশ নিয়েছেন। মেরা নাম জোকারে পদ্মিনী, হম আপকে হ্যায় কৌন ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত। কোনও একটি পুরোনো বাংলা ছবিতে লিলি চক্রবর্তী অল্পসময়ের জন্য পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু মহিলাদের পুরুষ ছদ্মবেশ নিখুঁত নয়।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৩: উইলসন-এ-কথা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২১: সুন্দরবনের সর্পদেবী মনসা

গল্পের স্বার্থে কমেডির স্বার্থে দর্শক মেনে নেন। আমার দেখা একমাত্র ব্যতিক্রম অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিত ভালোমানুষ নাটকে শান্তাপ্রসাদের ভূমিকায় কিংবদন্তী কেয়া চক্রবর্তী। একই সঙ্গে মহিলা ও পুরুষের ভুমিকায় নাচে গানে অভিনয়ে মঞ্চ মাতাতেন কেয়া চক্রবর্তী। আর বাংলা মঞ্চ নাটকের বিরলতম প্রতিভা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেয়া চক্রবর্তীকে মঞ্চে দেখার সেই অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা আমার জীবনের এক সম্পদ।
ড্রিমগার্লে আয়ুস্মানের কণ্ঠস্বর ডাব করাননি পরিচালক। এই সিদ্ধান্ত ছবির অসম্ভব জনপ্রিয়তার একটি কারণ। আয়ুষ্মান কথা বলার একটা অদ্ভুত মডুলেশন বা ঢং বেছে নিয়েছিলেন ২০১৯ এর ড্রিম গার্ল ছবিতে। আর সেই কথা বলার ধরণের সঙ্গে উপযুক্ত শারীরিক এবং চোখ মুখের বিভঙ্গে সুন্দরী পূজা সামনে এসেছে ড্রিম গার্ল টুতে। শুধুমাত্র নাচের ভঙ্গিমায় চমকে দিয়েছেন আয়ুষ্মান খুরানা।

শুধু প্রেমের অভিনয় নয়, বিরহের মুহূর্তেও আয়ুষ্মানকে পূজার থেকে আলাদা করা যাবে। ভিকি ডোনার, আর্টিকেল ফিফটিন, অন্ধাধুন থেকে ‘ড্রিম গার্ল ২’ পুরুষ থেকে নারী ভিন্নধারার চরিত্রায়ণের একটি বৃত্তের একদিক থেকে অন্যদিকে একজন সার্থক অভিনেতা হিসেবে আয়ুষ্মান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঈর্ষণীয় এই ক্ষমতা অভিনেতা হিসেবে আয়ুষ্মান খুরানার জাত চিনিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২২: এদিক ওদিক বেড়ায় তবু ভুলের পাড়া বেড়ায় না

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৯: ইষ্টদেবী জগদ্ধাত্রী

বেশ সাবলীল অভিনয়ে আকর্ষণীয় অনন্যা পাণ্ডে। অন্নুকাপুর, পরেশ রাওয়াল ও বিজয় রাজ অনবদ্য। দূর্দান্ত কমেডিতে আনন্দ দিয়েছেন রাজপাল যাদব, সীমা পাওয়াহ, পাতাললোক-সহ বহু ওয়েব সিরিজের অনবদ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনজোত সিং। পুরোদস্তুর এই বিনোদনমূলক ছবিতে একটি ছোট্ট ভূমিকায় নজর কেড়েছেন কোটা ফ্যাক্টরি খ্যাত রঞ্জন রাজ।
* ফিল্ম রিভিউ: জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন।

Skip to content