ছবি: সংগৃহীত।
রিভিউ: কফস (ওয়েবসিরিজ, সিজন ওয়ান)
মূল কাহিনি: ডার্ক মানি
চিত্রনাট্য: করণ শর্মা
পরিচালনা: সাহিল সাঙ্গা
অভিনয়: শরমন জোশী, মোনা সিং, জারিনা ওয়াহাব, মিখাইল গান্ধী, তেজস্বী সিং আহ্লায়াৎ, মুকেশ ছাবরা
ভাষা: হিন্দি, তালিম, তেলুগু, মালায়লম, কানাড়া, বাংলা, মারাঠি
পর্ব: ৬টি
রেটিং: ৮.২৫/ ১০
কফস কোনও থ্রিলার নয়। কিন্তু মধ্যবিত্ত জীবনবৃত্তে আমাদের খুব চেনা মানুষজনের রোজকার চাওয়া পাওয়া আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নিস্তরঙ্গ সাধারণ জীবনে আচমকা এক তুফান। উত্তেজনা বা আকর্ষণ যেটা সেটা হল, এই মানুষগুলো হেরে যাবে নাকি ঘুরে দাঁড়াবে। সম্প্রতি সোনি লিভ-এ ৬ পর্বের এই সিরিজ রিলিজ করেছে। জনপ্রিয়তা নিরিখে দশের মধ্যে নয়। তেমন জনপ্রিয় নয়, অথচ তাকে নিয়ে আলোচনা কেন?
মুম্বইয়ের একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। মেয়ের পর ছেলে, ছোট সংসার। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক রাজধানীতে ভদ্রস্থ এলাকায় একটা দু কামরার ফ্ল্যাটের ভাড়া, ছেলেমেয়ে লেখাপড়া সংসারের সব চাহিদা মিটিয়ে জীবনধারণ বড্ড শক্ত। বাবা রাঘব বশিষ্ঠ এক মাল্টিপ্লেক্সের ম্যানেজার। স্ত্রী সীমা একটি বিউটি পার্লারে কাজ করে। এই একঘেয়ে লড়াইয়ের মধ্যে হঠাৎ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল। স্কুলপড়ুয়া ছেলে সানি হঠাৎ করে সুযোগ পেয়ে গেল একটি বড়সড় সিনেমায়। এক বিখ্যাত স্টার বিক্রম বাজাজের সঙ্গে তার ছেলের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ। বিগ বাজেটের এই ছবির নাম ‘সুপার ড্যাড’। শুটিং শ্রীলঙ্কায়। সীমার ছবিতে অভিনয় করার বহুদিনের স্বপ্নপূরণ হয়নি। তাই ছেলেকে দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন এবং এক অডিশনেই বাজিমাত।
মুম্বইয়ের একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। মেয়ের পর ছেলে, ছোট সংসার। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক রাজধানীতে ভদ্রস্থ এলাকায় একটা দু কামরার ফ্ল্যাটের ভাড়া, ছেলেমেয়ে লেখাপড়া সংসারের সব চাহিদা মিটিয়ে জীবনধারণ বড্ড শক্ত। বাবা রাঘব বশিষ্ঠ এক মাল্টিপ্লেক্সের ম্যানেজার। স্ত্রী সীমা একটি বিউটি পার্লারে কাজ করে। এই একঘেয়ে লড়াইয়ের মধ্যে হঠাৎ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল। স্কুলপড়ুয়া ছেলে সানি হঠাৎ করে সুযোগ পেয়ে গেল একটি বড়সড় সিনেমায়। এক বিখ্যাত স্টার বিক্রম বাজাজের সঙ্গে তার ছেলের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ। বিগ বাজেটের এই ছবির নাম ‘সুপার ড্যাড’। শুটিং শ্রীলঙ্কায়। সীমার ছবিতে অভিনয় করার বহুদিনের স্বপ্নপূরণ হয়নি। তাই ছেলেকে দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন এবং এক অডিশনেই বাজিমাত।
৬ পর্বের এই সিরিজ শুরু হয় মুম্বই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে, যেখানে শুটিং শেষ করে সানি ফিরে আসছে। তার সঙ্গে শ্রীলংকা গিয়েছিল তার দিদিমা। এমন একটা সাংঘাতিক সুযোগ। শুটিংও শেষ। কিন্তু তবুও সানির মুখে হাসি নেই? কেন? সে উত্তরটা দর্শককে খুঁজে নিতে হবে সিরিজ দেখতে দেখতে।
এই শুটিংয়ে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যেটা পাঁচজনের সামনে আলোচনার মতো নয়। তবু কিশোর সানি মা-বাবাকে সবটা জানায়। তার ওপর ঝড় বয়ে গিয়েছে। সে চায় না তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় দিদিও এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারুক।
এই শুটিংয়ে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যেটা পাঁচজনের সামনে আলোচনার মতো নয়। তবু কিশোর সানি মা-বাবাকে সবটা জানায়। তার ওপর ঝড় বয়ে গিয়েছে। সে চায় না তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় দিদিও এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারুক।
আরও পড়ুন:
রিভিউ: ওয়েব সিরিজ ‘স্কুপ’, ওটিটি হল বিনোদনের আইপিএল
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-২৫: মাথায় নকল চুল, নকল চোখের পাতায় চড়া মেকআপ, যেন জেল্লা ঠিকরে বেরোচ্ছে
বাবা-মা আর সানি তিনজনে এক দমবন্ধ পরিবেশের মধ্যে। এই বিষয় নিয়ে অন্য ধারার ছবি হয়। হতে পারত। কিন্তু ওয়েবসিরিজ তৈরি করতে পারা যথেষ্ট সাহসের পরিচয়। অভিনয়ের ধারকে এমন একটা তীব্রতর জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যেটা দর্শককে সিরিজ দেখতে বাধ্য করবে। অবশ্য নিশ্চয়ই সব ধরনের দর্শক নয়, যে জন্য জনপ্রিয়তার নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে কফস।
কফস বিবিসি ওয়ানের মিনি সিরিজ ‘ডার্ক মানি’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। চার পর্বের এই টেলিভিশন সিরিজটি লিখেছিলেন ব্রিটিশ মঞ্চ নাটক রচয়িতা এবং চিত্রনাট্যকার লেভি ডেভিড অ্যাড্যাই। পরিচালনা ল্যুইস আর্নল্ড। ২০২২ পর্যন্ত দেখানো হয়েছিল নেটফিক্সে। এখন আর নেই। ইচ্ছে থাকলেও মূল সিরিজটি আমার দেখা হয়নি।
কফস বিবিসি ওয়ানের মিনি সিরিজ ‘ডার্ক মানি’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। চার পর্বের এই টেলিভিশন সিরিজটি লিখেছিলেন ব্রিটিশ মঞ্চ নাটক রচয়িতা এবং চিত্রনাট্যকার লেভি ডেভিড অ্যাড্যাই। পরিচালনা ল্যুইস আর্নল্ড। ২০২২ পর্যন্ত দেখানো হয়েছিল নেটফিক্সে। এখন আর নেই। ইচ্ছে থাকলেও মূল সিরিজটি আমার দেখা হয়নি।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৭: তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
তবে এটা নিশ্চিত যে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই চরিত্রগুলি অন্যরকম ছিল। সানির দিদিমা সঙ্গে যাওয়া সত্ত্বেও এমন একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তাদের সন্তানের প্রতি এই অন্যায় মা-বাবা দু’ জনেই মেনে নিতে পারছিলেন না। প্রতি মুহূর্তে নানান সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলেছে এই দম্পতি। যেদিন ছেলে শ্রীলংকা থেকে ফিরবে, সেদিন একটু আগে ছুটি চেয়েছিল বলে বদমেজাজি পার্লারের মালকিন সীমাকে পার্লারে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। সানির বিষয়ে ওঁরা উকিলের পরামর্শ নিয়েও দেখেছেন খুব একটা সুবিধে কিছু হবে না। উল্টে জলের মতো পয়সা খরচ হবে। চলচ্চিত্র জগতের এক সাংবাদিকের কাছে এ প্রসঙ্গে জানাতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসে রাঘব বশিষ্ঠ। অনেক সংশয় অনেক দোলাচলের পর তারা প্রযোজনা সংস্থাকে সরাসরি ব্যাপারটা জানালেন, তাঁদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণও ছিল।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’
প্রযোজনা সংস্থা এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন যেটাতে সব যেন ওলটপালট হয়ে গেল। আর সেই তুফানকে সামলাতেই এই পরিবারের নিজস্ব লড়াই। সেই নিয়েই কফস।
কফস এমন একটা বিষয় নিয়ে ওয়েব সিরিজ, যা চমৎকারভাবে সময়টা কাটায় না। এক একটা পর্বের পর আমরা নিজেরা আমাদের কাহিনির মধ্যে দেখতে পাই। আমাদের চাওয়া পাওয়া দৈন্যতা ভুল-ভ্রান্তি সবকিছু স্পষ্ট করে আয়নার মতো দেখায় কফস।
এই সিরিজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাবপ্লট রয়েছে যেগুলো সিরিজ দেখতে দেখতে উপভোগ নয়, অনুভব করা যাবে। ছোট ছোট ভূমিকার চরিত্রাভিনেতারা অবাক করেছেন। চমকিত হয়েছি সানির ভূমিকায় কিশোর অভিনেতা মিখাইল গান্ধীর সংবেদনশীল অভিনয়ে। রাঘব বশিষ্ঠ এবং সীমা বশিষ্ঠের ভূমিকায় অসম্ভব সূক্ষ্ম অভিনয়ে মন ভরিয়ে দিয়েছেন শরমন জোশী এবং মোনা সিং।
কফস এমন একটা বিষয় নিয়ে ওয়েব সিরিজ, যা চমৎকারভাবে সময়টা কাটায় না। এক একটা পর্বের পর আমরা নিজেরা আমাদের কাহিনির মধ্যে দেখতে পাই। আমাদের চাওয়া পাওয়া দৈন্যতা ভুল-ভ্রান্তি সবকিছু স্পষ্ট করে আয়নার মতো দেখায় কফস।
এই সিরিজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাবপ্লট রয়েছে যেগুলো সিরিজ দেখতে দেখতে উপভোগ নয়, অনুভব করা যাবে। ছোট ছোট ভূমিকার চরিত্রাভিনেতারা অবাক করেছেন। চমকিত হয়েছি সানির ভূমিকায় কিশোর অভিনেতা মিখাইল গান্ধীর সংবেদনশীল অভিনয়ে। রাঘব বশিষ্ঠ এবং সীমা বশিষ্ঠের ভূমিকায় অসম্ভব সূক্ষ্ম অভিনয়ে মন ভরিয়ে দিয়েছেন শরমন জোশী এবং মোনা সিং।
রাজকুমার হিরানির যুগান্তকারী ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে শরমন এবং মোনা আমরা দু’ জনকেই দেখেছি। প্রথমদিকের আপাত ভিতু, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাজু রাস্তোগিকে আমরা এখনও কেউ ভুলতে পারিনি। আর ভিরু সহস্রবুদ্ধে (ভাইরাস)-এর বড় মেয়ে, নায়িকা ডাঃ প্রিয়ার দিদি মোনা সহস্রবুদ্ধে’র মজাদার চরিত্রে ছিলেন মোনা সিং। মোনাকে অবশ্য আমরা এর বহু আগে থেকেই দেখেছি, ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চলা সিরিয়াল ‘জস্সি জ্যায়সি কোয়ি নহি’ সিরিয়ালের মূখ্যচরিত্র জসমিত বা জস্সি’র ভূমিকাভিনেত্রী ছিলেন মোনা।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: রোজের খাদ্যতালিকায় তেঁতুল নেই! এ সব জানলে এমন ভুল আর নয়
ইরফান আখতার নামে এক সাংবাদিকের ভূমিকায় দারুণ অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবির ব্যস্ত কাস্টিং ডিরেক্টার মুকেশ ছাবরা স্বয়ং। যখন ছেলে সানি এত কমবয়েসে জীবন-বদলে দেওয়া একটা দূর্দান্ত ঈর্ষনীয় সুযোগ পেয়ে যায়, তখন মধ্যবিত্ত বশিষ্ঠ-দম্পতি গোটা সংসারের সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পেলেন। এতে কোনও অন্যায় ছিল না। কিন্তু এই বদলে যাওয়ার মধ্যে একটা ভয়ংকর আপোষ ছিল। সেই আপোষের জালে জড়িয়ে যায় বাবা-মা-দিদি শ্রেয়া আর ভাই সানি।
ছবি: সংগৃহীত।
ক্লাইম্যাক্সে যে সাংঘাতিক ট্রমার সৃষ্টি হয় তা পর্দা থেকে বাইরে এসে দর্শকের কাছে অর্থ সম্পত্তি, প্রতিপত্তি বনাম নৈতিকতা নিয়ে মর্মস্পর্শী প্রশ্ন উত্থাপন করে। মূল কাহিনি বিবিসি ওয়ানের ডার্ক মানি অবলম্বনে সোনি লিভ-এ প্রকাশিত কফস ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য লিখেছেন করণ শর্মা। এটি সম্ভবত তার প্রথম কাজ এবং সেজন্যে তাঁকে হাজারও কুর্নিশ। পরিচালনা করেছেন সাহিল সাঙ্গা। ওয়েব সিরিজের চিরাচরিত আবহ সংগীতের সঙ্গে ক্যামেরার দৌড় নাটকীয় ফ্রেমিং-এর চালু গিমিক বর্জন করে একটি টানটান জীবনকথা উপহার দেওয়ার জন্য তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
স্বাদ বদলে একটা অন্যরকম কিছু দেখার কথা ভাবলে অবশ্যই সোনি লিভ-এ কফস দেখুন।
স্বাদ বদলে একটা অন্যরকম কিছু দেখার কথা ভাবলে অবশ্যই সোনি লিভ-এ কফস দেখুন।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।