রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটা তখনও হয়ে চলেছে হলে। হল ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলাম একটা অদ্ভুত ভালোলাগা নিয়ে। সিঁড়ির প্রতি বাঁকেই একজন করে মোবাইল ক্যামেরা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, প্রশ্ন তাদের একটাই, কেমন লাগল সিনেমাটা। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ভালোলাগাটা চোখেমুখে ফুটে উঠছে সকলের। চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথমদিন অর্থাৎ শনিবারে হাওয়া চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়েছিল। ইদানীংকালের বহুলচর্চিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম এটি। দেখবার জন্য লাইন এঁকেবেঁকে কতদূর পৌঁছেছিল তার ঠিক নেই। এমন উন্মাদনার জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট শো এর অতিরিক্ত একটি করে শো সোমবার আর বুধবার নন্দন-১ এ দেখানো হবে বলে ঘোষণা করেন।
এছাড়াও পূর্বনির্ধারিত শোগুলো তো রয়েইছে। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত এই ছবিটি বাংলাদেশে চলতি বছরের জুলাই মাসে মুক্তি পেলেও এ দেশের মানুষের কাছে এটি দেখার সুযোগ মিলেছে এই চলচ্চিত্র উত্সবের দৌলতে।
এটি মূলত একটি রহস্যধর্মী ছবি। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল একটি মস্ত মাঝি নৌকো। এ পথে এমন অনেক নৌকোই যেমন বেরোয় মাছের খোঁজে। সেসব নৌকোয় মাঝিমাল্লারা সব পুরুষ। নারীবিহীন সমুদ্রের জীবন তাদের। একদিন মাঝসমুদ্রে তাদের জালে ধরা পড়ে এক পরমাসুন্দরী বেদেনি। সে কথা বলে না। তাকে ঘিরে নৌকোর মাঝিমাল্লাদের দিনগুলো বদলে যায়। সকলের মনে প্রশ্ন ঘোরে-ফেরে, কে এই রহস্যময়ী।

প্রধান মাঝি চানমাঝি তাকে কাছে পেতে চায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, আবার পারকেস কিংবা উরকেস মাঝিরা তার সঙ্গে ছেলেমানুষী খেলায় মেতে ওঠে। তারপর একরাতে সেই রহস্যময়ী মাঝদরিয়ায় সবার অলক্ষ্যে ইব্রাহিমের কাছে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করে। যুগপত মুগ্ধতা আর ভয়ভরা চিত্তে ইব্রাহিম রাতের অন্ধকারে রহস্যময়ী সুন্দরীর চোখে তীব্র প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠতে দেখে। মাঝসমুদ্রের গল্প পারের রোজের জীবনের সঙ্গে মেলে না। সমুদ্রে অনিশ্চয়তার জীবন, রহস্যেমাখা রাত। কতশত গল্প সেখানে যা পারের নিশ্চিন্ত জীবনে এসে পৌঁছয়ও না।
আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিন কলকাতায় সকাল থেকেই ঝড়ো ‘হাওয়া’, নন্দনে লম্বা লাইন

‘নো এন্ট্রি’র দ্বিতীয় পর্বে থাকছেন না সলমন? মুখ খুললেন পরিচালক আনিস বাজমি

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৯: দুঃসময়ের স্মৃতিগুলো ‘কার পাপে’? [১৫/০৮/১৯৫২]

দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন

রহস্যময়ী আগমনে সে নৌকোয় ঘটে চলতে থাকে নানানরকম অদ্ভুত ঘটনা। বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিন দ্বীপে শুটিং হওয়া এই চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু অবশ্য প্রশংসনীয়। ছবির সঙ্গীতবিষয়ে তো বিশেষ কিছু বলবার নেই। জীবনের গানগুলি ইতিমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ এই সিনেমাটি পছন্দ করলেও বিশেষ করে আজকের প্রজন্ম এই ছবি এবং তার গানগুলি বেশি আপন করে নিয়েছেন, সেটা সিনেমাহলে বসেই বেশ টের পাচ্ছিলাম। চঞ্চল চৌধুরীর অনবদ্য অভিনয় মুগ্ধ করেছে।

দ্বিতীয় দিন সন্ধেবেলায় 'হাওয়া' দেখতে লম্বা লাইন।

রহস্যময়ী গুলতির ভূমিকায় নাজিফা তুষি আর ইব্রাহিমের ভূমিকায় শরিফুল রাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে উরকেস আর পারকেসের ভূমিকায় সোহেল ণ্ডল আর রিজভী রাজু নৌকোয় নানান টানাপোড়েনের মধ্যেও নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে দর্শকের মন জয় করেছেন। অন্যান্য মাঝি এজা, ফনি, মরা, নাগুর ভূমিকায় সুমন আনোয়ার, মাহমুদ আলম, বাবলু বোস এবং নাসিরুদ্দিন খান এর অভিনয়ও মনকাড়া। পরিচালনা, অভিনয়, ক্যামেরার কাজ, গল্প বলা এই সবকটি বিভাগেই হাওয়া এই ছবি বছর শেষের আগে কলকাতার চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকের মনে জায়গা করে নিল, একথা বলাই যায়।

Skip to content