ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
ঘটনাটা ইন্দ্রজিৎ নামে এক ড্রাইভারকে নিয়ে। কাজের তাগিদে (আসলে পেটের) গাড়ি চালালেও ইন্দ্রজিৎকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, সত্যিই ও ড্রাইভার না হিরো! গায়ের রং, উচ্চতা, শৌখিন চুল, সব মিলিয়ে একেবারে ‘হিরো’ যাকে বলে। আর একটা সম্মানজনক বিশেষণও তার নামের আগে বসত, ‘প্রোডিউসারের ড্রাইভার’। প্রোডিউসারও একেবারে আনকোরা কেউ নন। মোটামুটি পরিচিতি তার আছে। তাই ইন্দ্রজিৎকে সব টেকনিশিয়ানরা একটু অন্য চোখে দেখত। তাছাড়া ওর মিশুকে স্বভাবের জন্য সবাই ওকে পছন্দ করত, এমনকী সজলবাবুও। ইনডোর, আউটডোর যেখানেই শুটিং হোক, ইন্দ্রজিৎ ছিল সজলবাবুর ড্রাইভার কাম অ্যাসিস্ট্যান্ট। টাকাভর্তি ব্রিফকেস, মোবাইল, সব ওর হেফাজতে রেখে নিশ্চিন্তে শুটিং ‘এনজয়’ করতেন। সেই ইন্দ্রজিৎকেই সেবার যখন শিলিগুড়ি আউটডোরে পৌঁছে পরের দিনই কলকাতায় ফেরত পাঠিয়ে দিলেন সজলবাবু, তখন সবাই বেশ অবাকই হলাম। খুব ভোরে কারও সঙ্গে দেখা না করে চলে গেল ইন্দ্রজিৎ। গাড়িটা ছিল, সেটা ভাড়া করা লোকাল ড্রাইভার চালাত। অথচ ইন্দ্রজিৎ বলেছিল, আউটডোরের পুরো ছ’দিনই আমাদের সঙ্গে থাকবে। তারপর যাওয়ার সময় যে যেভাবে এসেছে, সেভাবেই ফিরে যাবে। শুধু ‘চেঞ্জ’ বলতে ইন্দ্রজিৎ হিরোইন শ্রেয়াশ্রীকে নিয়ে গাড়িতে একাই এসেছে কিন্তু ফেরার সময় সঙ্গে সজলবাবুও থাকবেন। কারণ উনি আসার সময় প্লেনে এসেছেন, ফিরবেন গাড়িতে। বাদবাকি টেকনিশিয়ানরা ট্রেন এসেছে, ট্রেনেই ফেরত যাবে। ইন্দ্রজিৎ চলে গেছে। যেতেই পারে! সে নিয়ে ভাবার কিছু নেই। কিন্তু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুটিংয়ে, আড্ডায় তার চলে যাওয়ার কারণ নিয়ে নানান মুখরোচক গুজবে ইউনিট একেবারে সরগরম। কেউ বলছে, কলকাতা থেকে আসার সময় ইন্দ্রজিতের সঙ্গে শ্রেয়াশ্রীর নাকি ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে, যেটা সজলবাবু ভালোভাবে নেননি। কারও আবার সন্দেহ, সজলবাবু শ্রেয়াশ্রীর সম্পর্কটা যাতে বউদির কানে না যায়, তাই আগেভাগেই সরিয়ে দেওয়া। হেয়ার ড্রেসার মালতীদির কথাটা সবচেয়ে ‘রহস্যময়’। সে নাকি গভীর রাতে করিডোর দিয়ে যেতে গিয়ে শুনেছে, কোনও একটা ঘরে একজন মেয়ে কাঁদছে, আর কেউ তার কাছে বারবার ‘সরি’ বলে ক্ষমা চাইছে। কিন্তু কে কাঁদছে, কে ‘সরি’ বলছে, সেটা সে জানে না। হয়তো জানে, বলবে না।
তবে রাতে যে কিছু একটা ঘটেছে, সেটা সজলবাবু আর শ্রেয়াশ্রীর ‘রিঅ্যাকশন’এ পরিষ্কার। কারণ শুটিংয়ের অবসরে সজলবাবু নিজের মতো মোবাইল ঘাঁটছেন আর শ্রেয়াশ্রী উদাস মনে আকাশ দেখছে। অথচ যার কথা ভেবে সিনেমায় টাকা ঢালা, যার জন্য নিজের মেয়ে, বউ ছেড়ে আউটডোর আসা, তার থেকে মোবাইল বেশি গুরুত্ব পাবে এটা অস্বাভাবিক ! কিন্তু ‘স্বাভাবিক’-এর পথে বাধা কোথায় হল? আমরা এটাও ভাবছি, দিন গড়িয়ে সন্ধে যত নামবে, ততই নিশ্চয়ই ‘দূরত্ব’ কমবে। আর বাকিটুকু শুধু রাত নামার অপেক্ষা। শুটিং লোকেশানে টেকনিশিয়ানদের চোখ আর মন ভাগ হয়ে গেল। একটা রইল কাজে, অন্যটা ওদের দিকে। ‘প্যাকআপ’এর পরও কৌতূহল! দেখা যাক, পরের দিন কী হয়? কিন্তু সেই একই দূরত্ব দুজনের। আমাদের এক সহকারী বলল, চাইলে কারণটা একজনই বের করতে পারে, মালতীদি। কথাটা শুনেই মালতীদি হাত-পা নেড়ে বলল, ওরে বাবা, আমি এর মধ্যে নেই। যে যা করছে করুক, আমি নেই। কিন্তু আমরা ভাবছি, কে কী করেছে, আদৌ করেছে কি না, সেটাই তো রহস্য! দেখতে দেখতে ছ’দিন কেটে গেল। কাল কলকাতা ফেরার পালা।
‘রহস্য’র ‘র’-এরও সন্ধান পেল না কেউ। পরের দিন ব্যাগপত্র নিয়ে বেরোবার সময় রিসেপশনে ইন্দ্রজিৎকে দেখে আমরা সবাই অবাক। জিজ্ঞাসা করা হল, কী ব্যাপার! হঠাৎ করে চলে গেলে, আবার ফিরেও এলে! কী হয়েছিল? ইন্দ্রজিৎ বলল, কিছু তো একটা হয়েছিল, নইলে…। অবশ্য দোষটা আমারই। বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম। তাই লোভ সামলাতে পারিনি। কিন্তু কীসের লোভ? যেটা না সামলাতে পেরে দোষ করে ফেলা? সেসব না জেনে আমরাও কি ছাড়ি? আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে যত ঠাকুর ছিল সব ঠাকুরের দিব্যি খেয়ে ভরসা জোগাতে ইন্দ্রজিৎ নিশ্চিন্তে দোষ কবুল করল। ‘স্বীকারোক্তি’ শুনে সবাই ‘থ’। প্রথম দিন প্রোডিউসার সজলবাবু প্লেনে একাই এসেছেন। তারপর নানান ঝামেলায় এত ব্যস্ত ছিলেন যে, শ্রেয়াশ্রীর সঙ্গে দেখা বা কথা বলার কোনও সময় পাননি। রাত সাড়ে দশটায় হোটেলের তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীচের সজলবাবুকে শ্রেয়াশ্রী এসএমএস করেছে : রুম নম্বর ১০৪ ; দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সজলবাবুর ফোনটা সেই সময় ছিল ইন্দ্রজিতের কাছে। ইন্দ্রজিৎ ভেবেছে, এসএমএসটা বোধহয় শ্রেয়াশ্রী তাকেই করেছে। সেও উত্তর দেয়, ‘ওকে’। এবার মিটিং, ডিনার সব সেরে রাত সাড়ে বারোটায় শ্রেয়াশ্রীর ঘরে ঢুকে চমকে ওঠেন সজলবাবু। ইন্দ্রজিৎ-শ্রেয়াশ্রীকে ওইরকম অবস্থায় দেখে, কাউকে বুঝতে না দিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, শ্রেয়াশ্রী ইন্দ্রজিৎকে অ্যালাউ করল কেন? সেটা বোঝার ভুলের খেসারত। সজলবাবুর ব্যবহার করা দামি পারফিউমটাই তাকে ভুল পথে চালিত করেছে। অন্ধকার ঘরে এসি আর পাখার মিলিত আওয়াজে প্রায় একইরকম গোঁফ আর পরিচিত পারফিউমের ঝাঁঝে প্রথমটায় আসল-নকল কিছুই বুঝতে পারেনি শ্রেয়াশ্রী। যখন পেরেছে, তখন আর কিছু করার ছিল না। অযথা সিনক্রিয়েট না করে, কাউকে কিছু না বলে শুধু কাঁদতে কাঁদতে শ্রেয়াশ্রী বলেছেন, এটা তুমি কী করলে ইন্দ্রজিৎ! কেন করলে? উত্তরে ইন্দ্রজিৎ বারবার বলেছে ‘সরি’। আমরাও মেলালাম, মালতীদি’র বলা সেই রহস্যময় সংলাপের উৎস: ‘মাঝরাতে কে যেন কাঁদছে, আর কেউ বারবার বলছে, ‘সরি’৷
তবে রাতে যে কিছু একটা ঘটেছে, সেটা সজলবাবু আর শ্রেয়াশ্রীর ‘রিঅ্যাকশন’এ পরিষ্কার। কারণ শুটিংয়ের অবসরে সজলবাবু নিজের মতো মোবাইল ঘাঁটছেন আর শ্রেয়াশ্রী উদাস মনে আকাশ দেখছে। অথচ যার কথা ভেবে সিনেমায় টাকা ঢালা, যার জন্য নিজের মেয়ে, বউ ছেড়ে আউটডোর আসা, তার থেকে মোবাইল বেশি গুরুত্ব পাবে এটা অস্বাভাবিক ! কিন্তু ‘স্বাভাবিক’-এর পথে বাধা কোথায় হল? আমরা এটাও ভাবছি, দিন গড়িয়ে সন্ধে যত নামবে, ততই নিশ্চয়ই ‘দূরত্ব’ কমবে। আর বাকিটুকু শুধু রাত নামার অপেক্ষা। শুটিং লোকেশানে টেকনিশিয়ানদের চোখ আর মন ভাগ হয়ে গেল। একটা রইল কাজে, অন্যটা ওদের দিকে। ‘প্যাকআপ’এর পরও কৌতূহল! দেখা যাক, পরের দিন কী হয়? কিন্তু সেই একই দূরত্ব দুজনের। আমাদের এক সহকারী বলল, চাইলে কারণটা একজনই বের করতে পারে, মালতীদি। কথাটা শুনেই মালতীদি হাত-পা নেড়ে বলল, ওরে বাবা, আমি এর মধ্যে নেই। যে যা করছে করুক, আমি নেই। কিন্তু আমরা ভাবছি, কে কী করেছে, আদৌ করেছে কি না, সেটাই তো রহস্য! দেখতে দেখতে ছ’দিন কেটে গেল। কাল কলকাতা ফেরার পালা।
‘রহস্য’র ‘র’-এরও সন্ধান পেল না কেউ। পরের দিন ব্যাগপত্র নিয়ে বেরোবার সময় রিসেপশনে ইন্দ্রজিৎকে দেখে আমরা সবাই অবাক। জিজ্ঞাসা করা হল, কী ব্যাপার! হঠাৎ করে চলে গেলে, আবার ফিরেও এলে! কী হয়েছিল? ইন্দ্রজিৎ বলল, কিছু তো একটা হয়েছিল, নইলে…। অবশ্য দোষটা আমারই। বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম। তাই লোভ সামলাতে পারিনি। কিন্তু কীসের লোভ? যেটা না সামলাতে পেরে দোষ করে ফেলা? সেসব না জেনে আমরাও কি ছাড়ি? আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে যত ঠাকুর ছিল সব ঠাকুরের দিব্যি খেয়ে ভরসা জোগাতে ইন্দ্রজিৎ নিশ্চিন্তে দোষ কবুল করল। ‘স্বীকারোক্তি’ শুনে সবাই ‘থ’। প্রথম দিন প্রোডিউসার সজলবাবু প্লেনে একাই এসেছেন। তারপর নানান ঝামেলায় এত ব্যস্ত ছিলেন যে, শ্রেয়াশ্রীর সঙ্গে দেখা বা কথা বলার কোনও সময় পাননি। রাত সাড়ে দশটায় হোটেলের তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীচের সজলবাবুকে শ্রেয়াশ্রী এসএমএস করেছে : রুম নম্বর ১০৪ ; দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সজলবাবুর ফোনটা সেই সময় ছিল ইন্দ্রজিতের কাছে। ইন্দ্রজিৎ ভেবেছে, এসএমএসটা বোধহয় শ্রেয়াশ্রী তাকেই করেছে। সেও উত্তর দেয়, ‘ওকে’। এবার মিটিং, ডিনার সব সেরে রাত সাড়ে বারোটায় শ্রেয়াশ্রীর ঘরে ঢুকে চমকে ওঠেন সজলবাবু। ইন্দ্রজিৎ-শ্রেয়াশ্রীকে ওইরকম অবস্থায় দেখে, কাউকে বুঝতে না দিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, শ্রেয়াশ্রী ইন্দ্রজিৎকে অ্যালাউ করল কেন? সেটা বোঝার ভুলের খেসারত। সজলবাবুর ব্যবহার করা দামি পারফিউমটাই তাকে ভুল পথে চালিত করেছে। অন্ধকার ঘরে এসি আর পাখার মিলিত আওয়াজে প্রায় একইরকম গোঁফ আর পরিচিত পারফিউমের ঝাঁঝে প্রথমটায় আসল-নকল কিছুই বুঝতে পারেনি শ্রেয়াশ্রী। যখন পেরেছে, তখন আর কিছু করার ছিল না। অযথা সিনক্রিয়েট না করে, কাউকে কিছু না বলে শুধু কাঁদতে কাঁদতে শ্রেয়াশ্রী বলেছেন, এটা তুমি কী করলে ইন্দ্রজিৎ! কেন করলে? উত্তরে ইন্দ্রজিৎ বারবার বলেছে ‘সরি’। আমরাও মেলালাম, মালতীদি’র বলা সেই রহস্যময় সংলাপের উৎস: ‘মাঝরাতে কে যেন কাঁদছে, আর কেউ বারবার বলছে, ‘সরি’৷