Skip to content
মঙ্গলবার ১ এপ্রিল, ২০২৫


সন্তুর বাদ্যযন্ত্রটিকে আমার ভারী অভিমানী মনে হয়। খুব সাবধানে, খুব যত্নে আর খুব আদরে তাকে স্পর্শ করতে হয় যেন। তবেই তার অভিমানে টান টান তারগুলো সাড়া দেবে। সঠিক মনোযোগ দিয়ে তাকে না ছুঁলে সে যেন ফিরেও তাকাবে না, সুর তোলা তো দূরের কথা! প্রথম যেদিন দূরদর্শনের পর্দায় এক শুভ্রকেশ সুরসাধককে সন্তুর বাজাতে দেখি, আমার একটাই অনুভূতি হয়েছিল যেন কোনও যোগী আত্মমগ্ন হয়ে সুরসাধনা করছেন। আমার তখন বছর দশেক বয়েস; সেতার এবং সরোদের সঙ্গে পরিচয় থাকলেও, সন্তুর এবং পণ্ডিত শিবকুমার শর্মাকে আমার সেই প্রথম দেখা এবং সেই প্রথম দর্শনেই গভীর প্রেম। ঠিক যেমন আপ্লুত হই পণ্ডিত রবিশংকরের সেতার শুনে, চোখে জল আসে উস্তাদ আমজাদ আলীর সরোদে, গায়ে শিহরন লাগে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশিতে আর কী জানি এক অব্যক্ত অনুভূতি হয় উস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সানাই শুনে, ঠিক তেমনি একটা মিশ্র অনুভূতি হয় পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সন্তুর শুনলে।

ওঁর সন্তুর বাদন সামনে বসে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল একবার। আজও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল সেই স্মৃতি! প্রথমেই বলেছি সন্তুর বাদ্যযন্ত্রটিকে আমার বড্ড অভিমানী মনে হয়। সেদিন শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল সন্তুরের প্রতিটি তারের অমোঘ অভিমান শুধুমাত্র এই একজনই ভাঙাতে জানেন! এমন আত্মিক বোঝাপড়া খুব কমই হয় বোধকরি। আজ সুরসাধক যখন মহানিদ্রায় শায়িত, সব থেকে মর্মস্পর্শী যন্ত্রণা হয়তো অনুভব করছে তাঁর সেই সন্তুর! কাল থেকে কে তার অভিমান ভাঙাবে?