অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুণ্ডু
২০২১-এর ৪ জানুয়ারি। জনাই থেকে মিষ্টির হাঁড়ি মাথায় নিয়ে মনোহরায় প্রবেশ করেছিল একটা মিষ্টি মেয়ে। আর সেই প্রবেশের পরেই আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মিষ্টির দেশের মিষ্টি কন্যে মিষ্টত্বে যেমন ভরপুর তেমনই তার লড়াকু স্বভাবও খুব সহজেই নজর কেড়েছে দর্শকবৃন্দের। হ্যাঁ, ঠিকই বুঝেছেন। কথা হচ্ছে জি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মিঠাই’এর মিষ্টি কন্যে মিঠাইকে নিয়ে। তবে আজ কিন্তু কেবল মিঠাই নয়, মিঠাই থেকে সৌমিতৃষা থুড়ি সৌমিতৃষা থেকে মিঠাই হয়ে এই যাত্রাপথের বর্ণনাচিত্র নিয়ে সৌমিতৃষা স্বয়ং রয়েছেন আমাদের সঙ্গে। সৌমিতৃষার এই জার্নি নিয়েই টেলিফোনে ‘সময় আপডেটস’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নানা কথা তুলে ধরলেন মিঠাই থুড়ি সৌমিতৃষা কুণ্ডু ।
● প্রশ্ন : সৌমিতৃষা থেকে সবার প্রিয় মিঠাই হয়ে ওঠার জার্নিটা কেমন ছিল?
●● আমার অভিনয় জীবন শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। আমার বাড়ি বারাসতে। আমি কলকাতায় ডান্স ক্লাস করতে আসতাম। ওই ক্লাসেরই একজন, যিনি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে ক্লাসে দেখেছিলেন। এরপর তিনিই আমার মা-কে বলেন, যে ওকে দেখতে তো ভালোই, ও কি মডেলিং করবে? মা তখন আমাকে বলল যে দেখ কী করবি। কারণ তখন আমার ডান্স কোরিওগ্রাফার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। সেইসময় এরকম একটা অফার পেয়ে আমিও ভাবছিলাম যে কী করব। তারপর মা বলল মডেলিং করলে নতুন একটা অভিজ্ঞতাও হবে। তাই মডেলিংয়ের পথেই আমি এগোলাম। সেইসময় একটা চ্যানেল থেকে ফোন আসে। তাঁরা বলেন যে চ্যানেলের একটি চলতি ধারাবাহিকে নতুন একটা ট্র্যাক আসছে, সেখানে নেগেটিভ চরিত্রের জন্য আমাকে বেছে নিয়েছে। আমি তখন তাঁদের বলেছিলাম, আমি তো অভিনয় কোনওদিন করিনি। অডিশনও কোনওদিন দিইনি। তখন চ্যানেল থেকে বলা হয়, অডিশন দিতে হবে না, হ্যাঁ, বললে তারা লুক সেট করে একবার দেখে নেবে। এই অভিনয়ের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলার সিদ্ধান্তটা আমি একা নিতে পারিনি। সবসময় আমার প্রতিটা কাজে বাবা-মা যেমন সাপোর্ট করেছে, এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বাবা, মা পাশে থেকেছেন এবং আমি যখন তাঁদের বলি যে অভিনয় করলে আমার বাকি স্বপ্নগুলোর কী হবে? এর উত্তরে তাঁরা বলে, যেটা সামনে এসেছে, ভগবান যখন সামনে একটা পথ খুলে দিয়েছে, তখন এই পথেই এগিয়ে যা। বাবা-মা-র এই সাপোর্টটা ছিল বলেই আমি অভিনয়ের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলতে পেরেছিলাম। আমার অভিনয়ের জার্নিটা এভাবেই শুরু হয়েছিল। তারপর বেশকিছু চরিত্রে অভিনয় করেছি। এরপর সান বাংলার ধারাবাহিক ‘কনে বউ’-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই। আর তারপরই জি বাংলার ‘মিঠাই’-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেলাম।
● সৌমিতৃষা আর মিঠাইয়ের মধ্যে মিল কোথায়?
●● মিঠাই যেমন হাঁটতে গেলে পড়ে যায় ধুপধাপ। সেরকম আমিও হাঁটতে চলতে গেলে প্রায়ই পড়ে যাই। এই বিষয়ে আমার সঙ্গে মিঠাই চরিত্রের খুব ভালো মিল রয়েছে। অনেক সময় হয়তো ধারাবাহিকে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য নেই, কিন্তু আমি শুট করতে করতে পড়ে গিয়েছি, তখন পরিচালক আর কাট করেন না। পড়ে যাওয়ার দৃশ্য এভাবেই শুট হয়ে যায়। প্রায়ই এই দৃশ্য একেবারে রিয়েল হয়। আমি হয়তো সত্যিই পড়ে গিয়েছি আর পরিচালক ওটাই শুট করে নিল। বহুবার এমন হয়েছে। এটাই মিঠাইয়ের ইউনিক স্টাইল। এছাড়া, আত্মসম্মানবোধ যেমন মিঠাইয়ের আছে, আমারও সেটা আছে প্রচণ্ডভাবে। মিঠাই যেমন সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাকে, তেমন আমিও এরকম সবাইকে নিয়ে হাসি আড্ডা করে একেবারে আনন্দে মেতে থাকি। অনেকসময়ই হয়েছে অফস্ক্রিন অনেকেই এনার্জি লস করেছে কিন্তু আমি হেসে যাচ্ছি, নেচে যাচ্ছি।
● সৌমিতৃষা আর মিঠাইয়ের মধ্যে অমিল কী?
●● মিঠাই রান্নাবান্নায় পোক্ত হলেও আমি একেবারেই রান্না করতে পারি না। মা আমাকে গ্যাসও জ্বালানো শেখায়নি। মা বলে, আমি প্রচণ্ড দস্যি। গ্যাস জ্বালানোর পর যদি বন্ধ করতে ভুলে যাই তাহলে পুরো বাড়ি জ্বলে যাবে, তাই গ্যাসের আশপাশেও যাই না। মিঠাই খুব একটা রাগী নয়, তবে আমি প্রচণ্ড রেগে যাই। যদিও সেটা পরিস্থিতি এবং রেগে যাওয়ার কারণের উপর নির্ভর করে। আর মিঠাই সিদ্ধার্থকে ভয় পায়, কিন্তু আমি আমার বরকে ভয় পাব না।
● মিঠাই কি সৌমিতৃষাকে মিষ্টি তৈরি করা শিখিয়েছে?
●● হ্যাঁ। প্রথমেই জিলিপির প্যাঁচ দেওয়া শিখি। তারপর মনোহরা তৈরি করাটা শিখতে হয়েছে আমাকে। প্রথম প্রথম ভেঙে যেত। তবে এখন আমি ভালো মনোহরা তৈরি করতে পারি। গোলাপজামও তৈরি করতে পারি। আসলে আমাদের শুটিংয়ে পরপর রেসিপি দেওয়া থাকে। অভিনয় করার সময় সবকিছু মাথায় রাখতে হয়, যে কোনটার পর কী দিতে হবে। সেইভাবেই আমার মিষ্টি তৈরি শেখা আর কী। মিঠাই, সৌমিতৃষাকে রান্না শেখাতে না পারলেও মিষ্টি তৈরি করা ঠিকই শিখিয়ে দিয়েছে।
● কলি না মিঠাই, দুটি ধারাবাহিকে তোমার অভিনীত এই দুই প্রধান চরিত্রগুলির মধ্যে কোনটা তোমার সবচেয়ে বেশি কাছের?
●● আমার অভিনীত প্রধান চরিত্র কলি আর মিঠাই, দুটো চরিত্রই আমার খুব কাছের। আমার অভিনীত ‘কনে বউ’ ধারাবাহিকের কলি চরিত্রটি অতীত এখন আমার কাছে। আর মিঠাই বর্তমান। আর আমি বর্তমানকেই ধরে রাখতে বেশি পছন্দ করি। তাই মিঠাই আমার বেশি কাছের। আবার এরপর আমি যে চরিত্রেই অভিনয় করি না কেন, তখন সেই চরিত্রটাই আমার কাছের হবে।
● মিঠাই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এখনও পাচ্ছে। এতে তোমার অনুভূতি কেমন?
●● মিঠাই আমার কাছে একটা মাইলস্টোন। আজ পর্যন্ত যা যা কাজ করেছি, তার মধ্যে মিঠাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিঠাইয়ের এই জনপ্রিয়তায় আমি সত্যিই আপ্লুত। মিঠাইয়ের প্রোমো যেদিন শুরু হয়েছিল, সেদিন থেকে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তারপর ধীরে ধীরে সেই ভালোবাসাটা আরও বেড়েছে। এর জন্য ভগবানকে অনেক ধন্যবাদ। আর দর্শকরা যেভাবে মিঠাইকে পছন্দ করছেন তাতে খুবই ভালো লাগছে।
● টলিউডে এমন কোন অভিনেতা এবং অভিনেত্রী রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে এখনও অভিনয় করোনি কিন্তু ভবিষ্যতে করতে চাও?
●● অভিনেতাদের মধ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং অভিনেত্রীদের মধ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-র সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
● বড়পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছে আছে?
●● অবশ্যই। বড়পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছা তো আছেই। এবছরই দুটো ছবির জন্য অফার এসেছিল। কিন্তু আমি একটা ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্রের জন্য চুক্তিবদ্ধ রয়েছি তাই অফারগুলো ফেরাতে হয়েছে। তাছাড়া, আমি মনে করি বড়পর্দায় অভিনয় করার জন্য সঠিক গ্রুমিং দরকার, ওজন কমানোর দরকার। যেহেতু সেটা আমার প্রথম সিনেমা হতে চলেছে তাই মনোযোগ দিয়ে অভিনয়টা করতে হবে। সেই কারণে আমি ২০২১ সালে বড়পর্দায় কোনও কাজ করতে চাইনি।
● ওটিটি প্ল্যাটফর্মটাকে তোমার কেমন লাগে? কোনওদিন ওটিটিতে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে?
●● খুবই ভালো লাগে। ভালো ভালো কাজ হয় ওটিটিতে। আর হ্যাঁ, ওটিটিতে অবশ্যই অভিনয় করার ইচ্ছা রয়েছে। নিজেকে ভেঙে অন্যরকম চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে তো আছেই। তবে বর্তমানে মিঠাই চরিত্রে অভিনয় করছি। তাই এখন এই কাজটাই মন দিয়ে করতে চাই। পরবর্তীতে যা হবে দেখা যাবে।
● তোমার পরবর্তী কাজ কী আসছে?
●● আপাতত ‘মিঠাই’ ধারাবাহিকে মিঠাই চরিত্রেই আমাকে সকলে দেখতে পাবেন। এখনই অন্য কিছু করার কোনও পরিকল্পনা নেই।