শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অভিষেক চট্টোপাধ্যায়।

না-ফেরার দেশে চলে গেলেন অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। শোকস্তব্ধ টলিউড থেকে বিনোদন জগৎ।
বুধবার তিনি একটি টিভি চ্যানেলের হয়ে শ্যুটিং করছিলেন। সেখানেই বারবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বমিও করেন। বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা শুরু হয় এবং স্যালাইনও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। গতকাল রাত ১টা নাগাদ তাঁর দেহান্তর ঘটে৷ রেখে গেলেন স্ত্রী, একমাত্র কন্যা ও অসংখ্য গুণমুগ্ধকে৷
অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন তাঁর এককালীন সহকর্মী শতাব্দী রায়। তিনি জানান অভিষেকের ফুড পয়জনিং হয়েছিল। তাঁর এই চলে যাওয়া কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
অভিষেকের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী। ছিলেন অভিনেত্রী লাবনি সরকার। বন্ধু অভিষেক আর নেই, আর তার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না এই নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন লাবনি সরকার। তিনি অভিষেকের পরিবারের পাশেই রয়েছেন।
অভিষেকের জন্ম হয় ১৯৬৪ সালের ৩০ এপ্রিল৷ আদিবাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না থানার অন্তর্গত রামবাটি গ্রামে৷ দুই ভাই এক বোনের মধ্যে অভিষেক ছোট৷ তাঁর ডাকনাম ছিল মিঠু৷ ছেলেবেলা কেটেছে বরানগরের মতিলাল মল্লিক রোড অঞ্চলে৷ বাবা প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়ও সিনেমায় অভিনয় করতেন৷ বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন হাইস্কুলে তিনি দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। তারপর শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ থেকে তিনি স্নাতক হয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসতেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি অধিনায়কত্বও করেছেন৷ ফুটবলকে অবলম্বন করেই তিনি নিজের কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। কখনও ভাবেননি তিনি সিনেমাজগতে আসবেন।
১৯৮৬ সালে তরুণ মজুমদারের ‘পথভোলা’ ছবি দিয়ে বড়পর্দায় প্রথম আত্মপ্রকাশ। যদিও ‘অপরাধী’ নামক একটি ছবিতে তিনি প্রথম কাজ করেন। কিন্তু ওঁর প্রথম সিনেমা ধরা হয় ‘পথভোলা’কেই। এরপর তিনি কাজ করেছেন একাধিক ছবিতে। তাঁকে খ্যাতির শিরোপা দিয়েছিল ১৯৯৪ সালের সুভাষ সেন পরিচালিত ছবি ‘গীত সংগীত’।
তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলি হল–‘সুজন সখী’, ‘সবার উপরে মা’, ‘মা আমার মা’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘মধুর মিলন’, ‘নিষ্পাপ আসামী’, ‘আপন হল পর’, ‘যুগাবতার লোকনাথ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘নতুন সংসার’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘ইন্দ্রজিৎ’, ‘বকুল প্রিয়’, ‘সখী তুমি কার’, ‘মেজবউ’, ‘স্বপ্ন’। এরকম অসংখ্য ছবিতে কাজ করে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। সিনেমা জগতের খারাপ দিকটিও তিনি দেখেছেন। সিনেমায় রাজনীতি নিয়ে তাঁকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে৷
সিনেমা জগৎ থেকে তিনি দীর্ঘদিন বিরত থাকেন। বর্তমানে তাঁকে ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে তিনি মানুষকে দিতেন আনন্দ। আবারও তিনি ফিরে এসেছিলেন নিজের ছন্দে। কিন্তু সহসা হল ছন্দপতন। এই গুণী অভিনেতার অবদান বাংলা সিনেমার জগতে আজীবন থাকবে। তিনি জীবিত থাকবেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে, তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।

Skip to content