রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

আসন্ন আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম মূল্যায়ন এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে চলেছে সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ চালু করতে শুক্রবার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে।

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের উচ্চশিক্ষা দফতরের সহ-সচিবের স্বাক্ষরিত এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি বিষয়টিকে বাস্তবায়িত করতে ৩১ জানুয়ারি সব রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়েছিল। তার পরে রাজ্য সরকারের এই নির্দেশ।

নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্নাতকের মেয়াদ হবে দু’রকম। তিন বছরের কোর্সের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী সাধারণ স্নাতক হিসেবে পরিগণিত হবে। কিন্তু যে সকল শিক্ষার্থীরা চার বছরের কোর্সের শেষ বছরে গবেষণা করবে তাদের পছন্দের বিষয়গুলি নিয়ে তারা স্নাতক অনার্স গবেষণা-সহ হিসাবে উত্তীর্ণ হবে। এই কোর্সে ‘মাল্টিপেল এন্ট্রি’ এবং ‘একজিস্ট’ চালু হবে। কোনও শিক্ষার্থী যদি এই চার বছরের কোর্স মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে দেন, তাহলে ভবিষ্যতে তিনি আবার নতুন ভাবে এই কোর্সে ঢোকার সুযোগ পাবেন। এই শিক্ষা নীতিতে একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি পেতে গেলে এক বছর বেশি পড়তে হবে।
স্নাতক স্তরের ক্ষেত্রে দুটি সেমিস্টার এবং নম্বরের বদলে শিক্ষার্থীকে ৪০ ক্রেডিট অর্জন করতে হবে। তাহলেই তিনি সার্টিফিকেট পাবেন। চারটি সেমিস্টার এবং ৮০ ক্রেডিট যদি কেউ অর্জন করতে পারেন তাহলে তাঁকে দেওয়া হবে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট। আর ছটি সেমিস্টার এবং তাতে নির্দিষ্ট ১২০ ক্রেডিট এর জন্য মিলবে সাধারণ স্নাতক ডিগ্রি। ১৬০ ক্রেডিট ও আটটি সেমিস্টার যে শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ করতে পারবেন, তিনি পেয়ে যাবে অনার্স রিসার্চ ডিগ্রি।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৬: দুয়ারে অপচ্ছায়া

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১১: বন থেকে বনান্তরে

তবে এক্ষেত্রে স্নাতক স্তরে প্রত্যেক পড়ুয়াকে প্রথম এবং দ্বিতীয় বছরে ‘স্কিল বেস্ট ভোকেশনাল কোর্স’ পড়তে হবে অন্যান্য বিষয়গুলির সঙ্গে। এতদিন পর্যন্ত স্নাতক স্তরে যদি কোনও শিক্ষার্থী পড়াশোনা বন্ধ করে দিতেন, তাহলে তাঁকে কোনও সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীরা যদি ‘স্কিল বেস্ট ভোকেশনাল কোর্স’ সম্পূর্ণ করতে পারেন, তাহলে তাঁকে প্রথম বছরে সার্টিফিকেট এবং দ্বিতীয় বছরে ডিপ্লোমা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা: সেই ষোলো মিনিটের দূরত্ব কোনওদিন পূরণ হয়নি

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: চৈত্রের বন্ধু বেল

এই স্নাতক স্তরে পাঠক্রমও সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যে বিষয়গুলির উপর বেশি পেপার নিয়ে পড়বেন সেগুলিকেই তাঁদের ‘মেজর সাবজেক্ট’ হিসেবে মনে করা হবে। এই নির্দেশনামা পেয়ে শিক্ষা মহলের প্রায় সবাই বিস্মিত। শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় ভার আরও বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, উচ্চশিক্ষায় ড্রপ আউটের সংখ্যাও বাড়বে। অনেক ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী একটি কলেজে কিছুদিন পড়ে কিছু ক্রেডিট সংগ্রহ করে অন্য একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। আবার সেখানেও কিছুদিন পড়ে তাঁর ইচ্ছামত বা সুবিধা মতো অন্য কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারবেন।

প্রসঙ্গে সারা ভারত সেফ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর জানান, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের মতোই জনবিরোধী শিক্ষা নীতি চালু করতে চলল। এর ফলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় যে শৃঙ্খলা রয়েছে, তা নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা এই শিক্ষানীতির বিরোধিতা করছি। ওয়েবকুটার সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত বলেন, রাজ্য সরকার এবার কার্যত কেন্দ্রের কাছে আত্মসমর্পণ করল।

Skip to content