রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ।

কথায় বলে জীবনে যিনি প্রথম আলো দেখান তিনিই প্রথম গুরু। যে মানুষটি হাত ধরে সমস্ত বাধা বিপত্তি টালতে করতে সাহায্য করেন তিনি দ্বিতীয়, আর অবশ্যই হাজার চড়াই উতরাই পার করতে জীবনের জ্ঞান সমৃদ্ধ করার চেষ্টায় যিনি আমাদের প্রতিনিয়ত নানাভাবে সাহায্য করে চলেছেন তিনি শিক্ষাগুরু। ছোটবেলা থেকে সবাই শিক্ষকের প্রতি এক অগাধ শ্রদ্ধা, সম্মান এবং ভালোবাসা নিয়েই পথ চলতে শুরু করে।

আজ ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। সমস্ত শিক্ষকদের প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি। ভারতের ইতিহাসে ৫ সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন। আমাদের জীবনে সমাজ ও দেশে শিক্ষকদের অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতি বছর এই দিনে ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে।

এই দিনটি সম্পর্কে জানতে গেলে একজনের কথাই আমাদের মনে আসে যিনি হলেন ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। আমরা সবাই জানি ৫ সেপ্টেম্বর ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন। ১৮৮৮ সালে আজকের দিনে তামিলনাড়ুর তিরুটানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, সর্বোপরি একজন প্রকৃত শিক্ষক। যিনি তাঁর জীবনের ৪০ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি ছাত্রদের জীবনে শিক্ষকদের অবদান এবং ভূমিকার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি দেশের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বেনারস, চেন্নাই, কলকাতা, মহীশূর এবং লন্ডনের অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন শিক্ষা দিয়েছেন।

তিনি বিশ্বাস করতেন একজন শিক্ষক এমন একজন ব্যাক্তি যিনি যুব সমাজকে দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রস্তুত করেন। এই কারণেই তিনি অধ্যাপকের এই দায়িত্ব এত আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছেন এবং সর্বদা তাঁর ছাত্রদের ভালো মূল্যবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শিক্ষকতা পেশায় সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে ভারতরত্ন সম্মান পান।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর দিনটিতে তিনি যখন নিজের কার্যালয়ে পৌঁছচ্ছিলেন যেখানে তাঁর কিছু গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধু আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তাঁর জন্মদিন পালন করবেন বলে। তবে তিনি কার্যালয়ে পৌঁছনো মাত্রই জানিয়ে দেন কোনওরকম সেলিব্রেশন তিনি করতে চান না। তবে তিনি তাঁর ছাত্রদের এটাও বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর দিনটা দেশের শিক্ষকদের উৎসর্গ করা হলেই তিনি অধিক সম্মানিত বোধ করবেন। সেই থেকে শুরু হয় শিক্ষক দিবস পালন করা যা এখনও সকল ভারতবাসী তাঁকে এবং সমস্ত শিক্ষকদের সম্মান জানানোর জন্য পালন করে থাকে। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ বলেছিলেন — দেশের সবথেকে সেরা মস্তিষ্কের অধিকারী হলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকরাই তৈরি করেন আগামীর ভবিষ্যৎ এক উন্নত দেশ।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৩: রবীন্দ্রনাথের মাস্টারমশায়

হার্ট অ্যাটাক নীরবেও হতে পারে! কোন উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন? জেনে নিন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ

যে জীবন মানেনি বাধা…

পুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে সন্তান কোলে ঢুঁ মারতে শাড়ির সাজ হোক আরামদায়ক

শিক্ষক দিবস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এবং কাজের প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন হিসেবে উদযাপন করি। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শিক্ষকতা পেশা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি, কারণ তাদের রয়েছে তরুণদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব। তাই সমাজের মেরুদণ্ড হলেন শিক্ষক। একমাত্র শিক্ষকরাই পারেন এই সমাজকে সঠিক পথে চালনা করতে।

শিক্ষক যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হবে তা নয়। তিনি থাকতে পারেন জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই। একজন আদর্শ শিক্ষক সবসময় তাঁর ছাত্রদের স্বার্থকে বিবেচনায় চেন এবং তাদের যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেন। তিনি যে পড়ুয়াকে শুধু শেখাবেন তা নয়, তিনি তাঁকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন। ব্যর্থতায় পাশে দাড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি তাঁকে শুধু সফল নয়, সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হতে শেখাবেন।

একজন শিক্ষককে মোমবাতির সংগে তুলনা করা হয়ে থাকে, কেন না মোমবাতি যেমন নিজে পুড়ে অন্যের পথ প্রদর্শন করে। তেমনি শিক্ষক সারাজীবন ধরে তাঁর মেধার মাধ্যমে শিক্ষাদান করে অন্যের পথ প্রদর্শন করে। তাই একজন সফল মানুষের পেছনে একজন শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
আরও পড়ুন:

ভালোবাসা এবং ভরসা

সাফল্য না পেলে নিজেকে ব্যর্থ ভেব না, সফল হওয়ার সুযোগ আসবেই

গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক যত মজবুত হবে, সমাজের ভিত ততই শক্তিশালী হবে

প্রতি বছর ছোট বড় সকলেই নিজেদের সাধ্য মতো শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ফুল, চকোলেট, উপহার, আরও কত কিছুর আয়োজন করা হয়। এই একটা দিন শিক্ষকদের থেকে কোনও বকাঝকা নেই এককথায় তাদের ভয় পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আনন্দ অনুষ্ঠান তাঁর সংগে খাওয়া দাওয়া হই হই করে কেটে যায় গোটা দিন। সঠিক শিক্ষার আলোয় শিক্ষিত হোক সব ক্ষুদ্র প্রাণ। একদিন তাদেরই বেড়ে ওঠায় নতুন আশা পাক বিশ্বের আনাচ-কানাচ।

কিন্তু এই একদিনের ভালোবাসা সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঠিক সম্মান প্রদর্শন করা হয় না। একজন শিক্ষক তিনি সবসময়ের জন্যই শিক্ষক। শিক্ষক ছাড়া যোগ্য সমাজ ও উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত। প্রতিটা দিনই প্রত্যেকটা শিক্ষককেই সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা উচিত। তাই শিক্ষকদের সম্মান শিক্ষক দিবসের একটা দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। প্রতিটা দিনই আমাদের শিক্ষক দিবস মনে করা উচিত। তবেই শিক্ষকদের আসল সম্মান প্রদর্শন করা যাবে।

লেখাটি ড. এপিজে আব্দুল কালাম-এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি —
“Teaching is a very noble profession that shapes the character, caliber, and future of an individual. If the people remember me as a good teacher, that will be the biggest honour for me.”

অর্থাৎ, শিক্ষকতা খুব মহান একটি পেশা যেটা কারও চরিত্র, ক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ গঠন করে। যদি মানুষজন আমাকে একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে মনে রাখে, তাহলে এটাই হবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় সম্মান।

Skip to content