শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


সবুজ বিএড কলেজ

সীমন্তিনী মন্ডল

সাদা রঙের গোল্ডেন বর্ডার দেওয়া শাড়ি পরেছি

আজ আমার বাড়িতে সরস্বতী পুজো। তাই অনেক সকালে উঠতে হয়েছে। সকালে উঠে ঘরে একটু ডেকোরেশন করেছি। তারপর নিজে সেজেছি। একটা সাদা রঙের গোল্ডেন বর্ডার দেওয়া শাড়ি পরেছি। এটা পরেই অঞ্জলি দেব। নিজের সাজগোজ হয়ে যাওয়ার পর যে ঘরে মা সরস্বতীকে রাখা হয়েছে, সেই ঘরটা আমি ফুল ও শিকলি দিয়ে সাজিয়েছি। তারপর মা সরস্বতীকে সাজালাম। ফুলের মালা আর দু’ তিনটে গয়না দেখে রেখেছিলাম, সেগুলো ঠাকুরকে পরিয়ে দিলাম। সরস্বতী ঠাকুরের পাশে বইও রেখেছি। এবার ঠাকুরমশাই এসে পুজো করবেন। বাড়ির সবাই মিলে অঞ্জলি দেবো। তারপর পাড়ায় সব বাড়িতে প্রসাদ দিতে যাব। এভাবেই সরস্বতীর পুজোর দিনটা আমি আনন্দ করে কাটাবো। আর মা সরস্বতীর কাছে আমি প্রার্থনা করবো যেন আমার অঙ্ক আর এসএসটি পরীক্ষাটা ভালো হয়।
সীমন্তিনী মন্ডল, ষষ্ঠ শ্রেণি, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল, হুগলি

অনন্যব্রত সামন্ত

সরস্বতী পুজোর দিনে…

আজ সরস্বতীপুজো। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি। ঠাকুরমাশাই আসবেন একটু পরে। স্নান সেরে নতুন জামা পরে পুজো দেখব। পুষ্পাঞ্জলি দেব। মন্ত্র বলব। মানে যদিও বুঝব না। তবু বলব। বলতে ভালো লাগে আমার। বড় হয়ে মানে শিখে নেব। গত পরশু স্কুল খুলেছে। যদিও আমাদের জন্য এখনও সেভাবে খোলেনি। নিশ্চয়ই খুব শিগগিরি আমাদের জন্যও স্কুল খুলবে। আমাদের স্কুলে খুব বড় সরস্বতী পুজো হয়। আমি যাব এবার স্কুলে। বাড়ির পুজোয় আমরা সবাই খুব ব্যস্ত। ঠাকুর কেনা, সাজানো, দশকর্মার জিনিস আনা, ফল ফুল কেনা সবই করেছি সবাই মিলে। ইস্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। অনেকেই আসবে বলেছে। আমরা সবাই পাজামা পাঞ্জাবি পরে যাব। গতকাল থেকে আকাশ মেঘলা। সরস্বতীপুজোর দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে কিনা কখনও মনে পড়ে না। মনে পড়ে, শীত থাকে। দুপুরবেলা বাড়িতে খিচুড়ি হবে। আমার খুব প্রিয় খাদ্য খিচুড়ি। তাছাড়া আজ যে মাছ খেতে হবে না, এর চাইতে ভালো আর কিছু নেই। দেবী সরস্বতী বিদ্যার ও চারুকলার শিক্ষার্থীদের পূজনীয়া। আমার বাড়ির চারপাশেও অনেকগুলো পুজো হয়। জোরে গান বাজে। অদ্ভুত ভাষার গান। না হিন্দি। না ইংরেজি। তারও মানে আমি কিছু বুঝি না। তবে সেটাও চারুকলা কিনা জানি না।
অনন্যব্রত সামন্ত, সপ্তম শ্রেণি, বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যামিক)

ইন্দ্রজা চক্রবর্তী

বাগদেবীর ছবিটি এঁকেছে শিঞ্জনা দে, কে জি শ্রেণি, অ্যাবট শিশু হল

ফিরিয়ে দাও আমার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ

আমি সরস্বতী পুজোয় একটু ক্যারাটে প্র্যাক্টিস করবো। কাল তো পড়াশোনা নেই। মা একবারও বলবে না পড়তে বসতে। যদি আজ বৃষ্টি না পড়ে তাহলে সকালবেলা আমাদের আবাসনের পুজো মণ্ডপে যাবো আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবো। পরে বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে আমি একটু ঘুমাবো। ঘুম থেকে ওঠার পর আমি বন্ধুদের সঙ্গে একটু ফোনে কথা বলবো। কথা বলা হয়ে গেলে একটু অ্যানিমে দেখবো। তার পর যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে নিচে খেলতে যাবো। খেলে এসে একটু চকলেট খাবো। এখন করোনা চলছে, তাই এইবারের পুজোয় বেশি কিছু হচ্ছে না। প্রথমে পুজো, তারপর অঞ্জলি। ভোগ থাকবে কি না সেটা আমি জানি না। পুজোর প্রসাদ, বিশেষ করে ভোগ খেতে ভীষণ ভালোবাসি আমি। কিন্তু করোনার জন্য আমাদের ফ্ল্যাটের পুজোমণ্ডপে বসে বন্ধুদের সঙ্গে ভোগ খাওয়া প্রায় বন্ধ। আবার কবে হবে জানি না। বাড়ি এসে একটু ইচ্ছে হলে ‘অ্যাটাক অন টাইটান’ দেখবো। ওটা আমার ভালো লাগে। ‘অ্যাটাক অন টাইটান-এ অনেক ভয়ের জিনিস আছে। কিন্তু ওটাতে যা গল্প বলতে চাইছে সেটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। পরে হয়তো একটু মনে মনে গল্প বানাবো। আর সেইসঙ্গে মা সরস্বতী কে বলবো- আর লকডাউন নয়, এবার আমার স্কুলটা খুলে দাও মা। খুব মিস করি আমার ক্লাসরুম, করিডর, ম্যাডাম, বন্ধুদেরকে। স্কুলে গিয়ে তোমাকে আবার দেখতে চাই মা। ফিরিয়ে দাও আমার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সুস্থ হয়ে উঠুক এই পৃথিবী।
ইন্দ্রজা চক্রবর্তী, পঞ্চম শ্রেণি, নারায়ণা স্কুল, নিউ টাউন

রোহণ বন্দ্যোপাধ্যায়

মা’য়ের পায়ের কাছে বই-খাতার সঙ্গে মোবাইলটাকেও ছুঁইয়ে নেব…

প্রত্যেক বারের মতো এবারও আমাদের বাড়িতে পুজো হচ্ছে। এবারের ঠাকুর আমি নিজে পছন্দ করে এনেছি। কাগজ দিয়ে ফুল তৈরি করে বড়দের সাথে ঠাকুরের আসন সাজিয়েছি। আমাদের বাড়িতে এই দিনে জোড়া ইলিশ খাওয়ার নিয়ম আছে। আমি ইলিশ খেতে খুব ভালোবাসি, তাই আজ আমার খুব আনন্দ।
আজকের দিনে বিশেষ করে স্কুলের কথা খুব মনে পড়ছে। প্রতিবছর বন্ধুরা মিলে পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়ে একসঙ্গে ঠাকুরের কাছে অঞ্জলি দেওয়া, খিচুড়ি ভোগ খাওয়া, খেলা করা এগুলোর অভাব খুব বোধ করছি। এবারে যেহেতু স্কুলে যাওয়া হবে না, তাই আমরা পাঁচজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর আমাদের বাবা মায়েরা মিলে কিছুক্ষণ একসঙ্গে সময় কাটাবো বলে ঠিক করেছি। করোনা সংক্রান্ত সমস্ত বিধি-নিষেধ মেনে আমরা গল্প করব, খেলব, খাওয়া-দাওয়া করব। সবার সঙ্গে না হোক কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে এটুকুই বা কি কম?
এবারে মা স্বরস্বতীর পায়ের কাছে বই-খাতা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটাও একটু ছুঁইয়ে নেব কারণ, আমাদের সব ক্লাস তো এখন অনলাইনে। এমনকি পরীক্ষাও। আর মা সরস্বতীকে বলবো, যাতে পরের বছর আবার আমরা সমস্ত বন্ধুরা মিলে স্কুলে হই হই করে, আনন্দ করে দিনটা কাটাতে পারি।
রোহণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চম শ্রেণি, দিল্লি ওয়ার্ল্ড পাবলিক স্কুল, কল্যাণী

আদৃতা মুখোপাধ্যায়

আজ আমায় কেউ পড়ার কথা বলবে না

সরস্বতী পুজোয় আমার খুব আনন্দ। তোমাদের চুপি চুপি বলি আনন্দের কারণ কি? আজ আমায় কেউ পড়ার কথা বলবে না। শাড়ি, ব্লাউজ, হার, চুরি, কানের দুল মায়ের আলমারি থেকে সব ম্যাচ করে গুছিয়ে নিয়ে সেজেছি। বই-খাতা ঠাকুরের কাছে রেখে দিয়েছি। চারিদিকে হইচই, ব্যস্ততা। মা বলেছিলেন, আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। আমার তাতে কোন অসুবিধা নেই। সকাল সাতটার সময় পুরোহিত এসেছেন। পুজোর জোগাড় সব করে রেখেছি। আজ আমি একটা হলুদ রংয়ের ঢাকাই শাড়ি পরেছি। তার সঙ্গে সবুজ রংয়ের ফুলহাতা ব্লাউজ। ম্যাচিং করে পাটের তৈরি হাতের চুরি হার দুল। সত্যিই দারুণ আনন্দ হচ্ছে। পুজো উপলক্ষে এগুলো অনেক আগে থেকেই কিনে দিয়েছিলেন মা। যদি না দিতেন তাহলে যে কি হতো কে জানে! খুব সুন্দর করে সেজেছি লিপস্টিক নেলপালিশ মেহেন্দি কোন কিছুই বাদ রাখিনি। আসলে সাজতে আমি খুব ভালোবাসি। শাড়ি পড়ে ঠাকুরের কাছে বসে পুজো দেখেছি, অঞ্জলি দিয়েছি। পুজোর শেষে ফল প্রসাদ ও কুল খেয়েছি। মা আগে কুল খেতে দেয়নি। বলেছিলেন যে সরস্বতী পুজো না হলে কুল নাকি খাওয়া যায় না। এর সঙ্গে খেয়েছি নারকেল নাড়ু, কাজু, কিসমিস আমসত্ত্ব আরও কত কি? এরপর বাড়ির সকলকে প্রসাদ দিতে মাকে সাহায্য করেছি।

এরপর মামার বাড়ি যাবার পালা। সে আর এক আনন্দ। সেখানে খুব বড় করে পুজো হয়। মামুয়া খুব বড় ঠাকুর আনে। খিচুড়ি, বেগুনি, আলুর দম, বাঁধাকপি, চাটনি দুপুরে খাব। এগুলো আমার খুব প্রিয় ।দিদু দারুন করে রান্না করবে। আমার তো জিভে এখনই জল চলে আসছে। তারপর দুপুরে বোনের সঙ্গে গল্প আর খেলা। বিকেল হলে দাদুর সঙ্গে বোনকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ার ঠাকুর দেখতে যাবো। রাস্তায় একটু ফুচকা, আলু কাবলি, ঝাল মুড়ি কিছু একটা খাব। বিকেলে বাড়ির সকলের সঙ্গে বসে ঠাকুরের সন্ধ্যা আরতি দেখব। ইচ্ছে আছে আমি আর বোন মিলে দুটো-তিনটে গান করব ঠাকুরের সামনে বসে। এর জন্য আমরা কয়েকদিন ধরেই খুব প্রস্তুতি নিয়েছি। রাতে লুচি, পনির, ছোলার ডাল, পায়েস, মিষ্টি খাব উফফ! কি যে আনন্দ। এইরকম করে দিনটা কাটাবো বলে ঠিক করে রেখেছি। এর মধ্যে আরও আনন্দ হতো যদি বড় দাদা দিদিদের মতো স্কুলে যেতে পারতাম। স্কুলের সকল শিক্ষিকা ও বন্ধুদের দেখতে পেতাম। সকলে মিলে একসঙ্গে পুজো করতাম, সকলে ভাগ করে প্রসাদ খেতাম। কিন্তু গত দু’বছর ধরে আমরা আর স্কুলে যেতে পারছি না। তাই মনে খুব দুঃখ। ঠাকুরের কাছে প্রণাম করে বলবো ঠাকুর সবকিছু আগের মতো করে দাও। আগামী বছর আমরা সবাই মিলে যাতে স্কুলে গিয়ে মজা করতে পারি।
আদৃতা মুখোপাধ্যায়, শ্রেণি পঞ্চম, নারায়ণা স্কুল সোদপুর


Skip to content