বাসুর সঙ্গেই আমার ভাব ছিল বেশি।
আজ থেকে প্রায় দশ মাস আগে যখন এই ধারাবাহিক লেখা শুরু করেছিলাম তখন থেকেই ভেবে রেখেছিলাম, আর যাই হোক ডাক্তারি কোনও বিষয় এই লেখাতে রাখবো না। গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ডাক্তারি বিষয়ক লেখা, বলা ভালো স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক লেখা লিখতে লিখতে একটা একঘেয়েমি আমাকে পেয়ে বসেছিল। তার থেকে একটু বেরিয়ে আসার জন্যই এই ধরনের লেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু গত এক মাসে অর্থাৎ এই পুজোর আনন্দের মধ্যে পরপর তিন তিনটি মৃত্যু আমাকে এমন বিচলিত করে তুলল যে, আবার একটু ডাক্তারি বিষয়ক লেখাতেই ফিরতে হল আমাকে।
আমাদের ছোটবেলাটা বড় সুন্দর ছিল। সহোদর ভাই-বোন ছাড়াও খেলার সঙ্গীর তালিকায় থাকতো মামাতো- পিসতুতো-মাসতুতো ভাই-বোনেরা। এবং পাড়া-প্রতিবেশী সমবয়সীরা। তখন প্রতিটি পাড়াতেই একাধিক খেলার মাঠ থাকত, গ্রাম মফসসলে তো থাকতো আরও বেশি সংখ্যায়। সেখানে স্কুল থেকে ফিরেই সবাই দে ছুট। গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি কিংবা বড়দিনের ছুটির সময় আমি যেতাম আমার পিসির বাড়ি। মূল আকর্ষণ ছিল আমার দুই সমবয়সী পিসতুতো ভাই। ঠিক সমবয়সী বলা যায় না। একজন দু’ বছরের বড়, আরেকজন তিন বছরের, কিন্তু সম্পর্কটা ছিল তুই-তোকারির। ওদের নাম ছিল বাসু এবং সমীর। বাসুর সঙ্গেই আমার ভাব ছিল বেশি। পিসির বাড়ি ছিল শ্যামনগর গুরদহ নতুন পল্লীতে। শ্যামনগর তখন পুরো গ্রাম। ওদের বাড়িতে ছিল টালি আর আসবেস্টসের ছাদ, কয়েক কাঠা জমি জুড়ে বিশাল বাগান, যার মধ্যে আম গাছের সংখ্যাই ছিল বেশি। এছাড়া পেয়ারা, জাম, কাঁঠাল, তেতুঁল এসব গাছও ছিল। এই বিশাল বাগানে আমি বাসু আর সমীরের সঙ্গে খেলে বেড়াতাম। ওদের প্রতিবেশী কয়েকজন সমবয়সীও জুটি যেত।
কালবৈশাখীর ঝড়ে প্রচুর আম খসে পড়তো গাছ থেকে। সেই আম কুড়ানো, পরবর্তীকালে সেই আমের নির্যাস রোদে শুকিয়ে, চিনি মিশিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করা ছিল এক মজার অভিজ্ঞতা। এছাড়া রাত জেগে গ্রামের কোথাও যাত্রাপালা শোনা, ফি বছর শীতকালে বেশ কয়েকদিন পৌষ মেলায় যাওয়া, নানা ধরনের খেলনা কেনা, নাগরদোলায় চড়া, জিলিপি-কচুরি খাওয়া… সোনায় মোড়া ছিল সেসব দিন, আমার শৈশব। বাসু আর সমীরও নানা ছুটিতে আমাদের বাড়ি আসত, তবে আমিই যেতাম বেশি, ঠাকুমা এবং বাবা-কাকার হাত ধরে। পিসির হাতে তৈরি নলেন গুড়ের পায়েস, পাটিসাপটা, দুধপুলি, চিতই পিঠা, নাড়ু, তক্তির আকর্ষণ তো ছিলই।
কালের নিয়ম মেনে শৈশব-কৈশোর এক সময় বিদায় নিল। এল যৌবন। শুরু হল জীবন যুদ্ধ। বাসু এবং সমীরের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নটা অনেকটাই পাল্টে গেল, কিন্তু ছিন্ন হল না। টান একটা রয়েই গেল, বিশেষ করে বাসুর সঙ্গে। আসলে সম্পর্ক ধরে রাখার দায়িত্বটা বাসু নিজেই ওর কাঁধে তুলে নিয়েছিল। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো ফোনে। কুশল বিনিময় হতো, দু-চারটে প্রয়োজনীয় কথাও হতো। মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই এসে হাজির হতো বেলঘরিয়ায় আমাদের বাড়িতে। প্রায় সময়ই আসতো অসময়ে। জিজ্ঞেস করলে বলতো, এখানে একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম তোদের সঙ্গে একটু দেখা করেই যাই। শুধু আমার সঙ্গে নয়, প্রায় প্রতিটি আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেই বাসু কারণে-অকারণে যোগাযোগ রাখত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবশ্য অকারণেই।
আমাদের ছোটবেলাটা বড় সুন্দর ছিল। সহোদর ভাই-বোন ছাড়াও খেলার সঙ্গীর তালিকায় থাকতো মামাতো- পিসতুতো-মাসতুতো ভাই-বোনেরা। এবং পাড়া-প্রতিবেশী সমবয়সীরা। তখন প্রতিটি পাড়াতেই একাধিক খেলার মাঠ থাকত, গ্রাম মফসসলে তো থাকতো আরও বেশি সংখ্যায়। সেখানে স্কুল থেকে ফিরেই সবাই দে ছুট। গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি কিংবা বড়দিনের ছুটির সময় আমি যেতাম আমার পিসির বাড়ি। মূল আকর্ষণ ছিল আমার দুই সমবয়সী পিসতুতো ভাই। ঠিক সমবয়সী বলা যায় না। একজন দু’ বছরের বড়, আরেকজন তিন বছরের, কিন্তু সম্পর্কটা ছিল তুই-তোকারির। ওদের নাম ছিল বাসু এবং সমীর। বাসুর সঙ্গেই আমার ভাব ছিল বেশি। পিসির বাড়ি ছিল শ্যামনগর গুরদহ নতুন পল্লীতে। শ্যামনগর তখন পুরো গ্রাম। ওদের বাড়িতে ছিল টালি আর আসবেস্টসের ছাদ, কয়েক কাঠা জমি জুড়ে বিশাল বাগান, যার মধ্যে আম গাছের সংখ্যাই ছিল বেশি। এছাড়া পেয়ারা, জাম, কাঁঠাল, তেতুঁল এসব গাছও ছিল। এই বিশাল বাগানে আমি বাসু আর সমীরের সঙ্গে খেলে বেড়াতাম। ওদের প্রতিবেশী কয়েকজন সমবয়সীও জুটি যেত।
কালবৈশাখীর ঝড়ে প্রচুর আম খসে পড়তো গাছ থেকে। সেই আম কুড়ানো, পরবর্তীকালে সেই আমের নির্যাস রোদে শুকিয়ে, চিনি মিশিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করা ছিল এক মজার অভিজ্ঞতা। এছাড়া রাত জেগে গ্রামের কোথাও যাত্রাপালা শোনা, ফি বছর শীতকালে বেশ কয়েকদিন পৌষ মেলায় যাওয়া, নানা ধরনের খেলনা কেনা, নাগরদোলায় চড়া, জিলিপি-কচুরি খাওয়া… সোনায় মোড়া ছিল সেসব দিন, আমার শৈশব। বাসু আর সমীরও নানা ছুটিতে আমাদের বাড়ি আসত, তবে আমিই যেতাম বেশি, ঠাকুমা এবং বাবা-কাকার হাত ধরে। পিসির হাতে তৈরি নলেন গুড়ের পায়েস, পাটিসাপটা, দুধপুলি, চিতই পিঠা, নাড়ু, তক্তির আকর্ষণ তো ছিলই।
কালের নিয়ম মেনে শৈশব-কৈশোর এক সময় বিদায় নিল। এল যৌবন। শুরু হল জীবন যুদ্ধ। বাসু এবং সমীরের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নটা অনেকটাই পাল্টে গেল, কিন্তু ছিন্ন হল না। টান একটা রয়েই গেল, বিশেষ করে বাসুর সঙ্গে। আসলে সম্পর্ক ধরে রাখার দায়িত্বটা বাসু নিজেই ওর কাঁধে তুলে নিয়েছিল। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো ফোনে। কুশল বিনিময় হতো, দু-চারটে প্রয়োজনীয় কথাও হতো। মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই এসে হাজির হতো বেলঘরিয়ায় আমাদের বাড়িতে। প্রায় সময়ই আসতো অসময়ে। জিজ্ঞেস করলে বলতো, এখানে একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম তোদের সঙ্গে একটু দেখা করেই যাই। শুধু আমার সঙ্গে নয়, প্রায় প্রতিটি আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেই বাসু কারণে-অকারণে যোগাযোগ রাখত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবশ্য অকারণেই।
বাসু স্থায়ী কিছু কাজ করত না। প্যাথলজির ব্যবসা থেকে শুরু করে কাঠের ব্যবসা… কিছুই বাদ দেয়নি। কোনওটাতেই সেই অর্থে সফল নয়। তবে বউদির একটি সরকারি স্থায়ী চাকরি ছিল নার্সিংয়ের, তাই সংসার যাত্রা নির্বাহে কোনও আর্থিক সংকট হয়নি। টুকটাক রাজনীতিও করতো বাসু। তবে এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত কোনও দলের হয়ে নয়, সর্বভারতীয় কোনও দল, এ রাজ্যে যার প্রায় অস্তিত্বই নেই, এমন দলে বাসু ছিল একনিষ্ঠ সৈনিক। এসব নিয়ে আমরা ওকে খুব ক্ষ্যাপাতাম। হাসিমুখে নির্বিকার থাকত ও। কিন্তু একবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরকে, ওর এয়ারপোর্টে রিসিভ করার ফটো পেপারের প্রথম পাতায় দেখে, আমরা চমকে উঠেছিলাম। আসলে চন্দ্রশেখর যে রাজনৈতিক দলে ছিলেন, তার একটি নামমাত্র সংগঠন এই রাজ্যে সেই সময় ছিল, যে সংগঠনের অন্যতম কর্তা ব্যক্তি ছিলেন আমার পিসতুতো ভাই বাসু।
অদ্ভুত এক বোহেমিয়ান চরিত্র। পরোপকারী, নিজের প্রতি উদাসীন, কোনওদিন খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর সময় ঠিক থাকতো না। সারাদিন ধরে কি যে এত রাজকার্য করত ও, তা কেউ জানে না। তবে একটা ব্যাপারে ও খুব সিরিয়াল ছিল। সেটা হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি ওর প্রশ্নহীন আনুগত্য। নেতাজিকে ভালোবাসি আমরা সবাই, শ্রদ্ধাও করি। কিন্তু ওর মতো নেতাজিকে নিয়ে পাগলামো করতে আমি কাউকে দেখিনি। নেতাজির জন্মদিন ও আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠা দিবস সাড়ম্বরে উদযাপন এবং নেতাজির নামাঙ্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে সামাজিক কাজকর্ম, ও সারা বছর ধরেই করে বেড়াত। তবে এত সবের মধ্যেও মেয়েকে ডেন্টাল ডাক্তারি পড়িয়ে পাস করার পর চেম্বার করে দিয়েছিল, ভালো ঘরে বিয়েও দিয়েছিল। কাজেই সংসারিক দায়-দায়িত্ব একেবারেই পালন করেননি ও, তা কখনই বলা যাবে না।
কোনও সময় বড় অসুখ হয়েছে ওর, এমনটাও শোনা যায়নি। তবে ব্লাড সুগার ছিল, এটা শুনেছিলাম। আমার এক ডাক্তার বন্ধু মেডিসিনের রজত গোস্বামীকে দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছিল। নিজের অসুখ নিয়ে ওকে কোনওদিন কোনও আলোচনা করতে শুনিনি, উদ্বিগ্ন হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। অসুখ ব্যাপারটাই ওর কাছে ছিল খুব ক্যাজুয়াল। লক্ষ্মী পুজোর দিন সন্ধেবেলা বাজার করতে গিয়ে হঠাৎ ওর বুকে ব্যথা শুরু হয়। এবং সেটা এতটাই বাড়াবাড়ি হয়ে যায় যে ওকে রাস্তার পাশে এক দোকানে বসে পড়তে হয়। বাড়ির লোকেরা খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর আলোচনা করে কল্যাণীর এক হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওখানকার ডাক্তারবাবুরা প্রাথমিক পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ করেন। সম্ভবত কোনও করোনারি অর্থাৎ হার্টের রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়াতে এমন বিপত্তি ঘটেছে। এবং অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। ঠিক দুদিন বাদে বউদি আমাকে ফোন করে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং এই হাসপাতালে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা উচিত কিনা এই ব্যাপারে পরামর্শ চান। আমার উত্তর ছিল, যদি অ্যাঞ্জিওগ্রামে ব্লক বার হয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে হবে, তা না হলে যে কোনও সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু ঘটবে। এবং এই ধরনের রোগীকে কল্যাণী থেকে কলকাতায় আনার কোনও দরকার নেই। ওই হাসপাতালে যখন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়, তখন ওখানেই করানো উচিত এবং দ্রুত করানো উচিত। এরপর দিন পাঁচেক ওদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। বাসুর ফোনে ফোন করে দেখতাম সুইচড অফ।
অদ্ভুত এক বোহেমিয়ান চরিত্র। পরোপকারী, নিজের প্রতি উদাসীন, কোনওদিন খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর সময় ঠিক থাকতো না। সারাদিন ধরে কি যে এত রাজকার্য করত ও, তা কেউ জানে না। তবে একটা ব্যাপারে ও খুব সিরিয়াল ছিল। সেটা হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি ওর প্রশ্নহীন আনুগত্য। নেতাজিকে ভালোবাসি আমরা সবাই, শ্রদ্ধাও করি। কিন্তু ওর মতো নেতাজিকে নিয়ে পাগলামো করতে আমি কাউকে দেখিনি। নেতাজির জন্মদিন ও আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠা দিবস সাড়ম্বরে উদযাপন এবং নেতাজির নামাঙ্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে সামাজিক কাজকর্ম, ও সারা বছর ধরেই করে বেড়াত। তবে এত সবের মধ্যেও মেয়েকে ডেন্টাল ডাক্তারি পড়িয়ে পাস করার পর চেম্বার করে দিয়েছিল, ভালো ঘরে বিয়েও দিয়েছিল। কাজেই সংসারিক দায়-দায়িত্ব একেবারেই পালন করেননি ও, তা কখনই বলা যাবে না।
কোনও সময় বড় অসুখ হয়েছে ওর, এমনটাও শোনা যায়নি। তবে ব্লাড সুগার ছিল, এটা শুনেছিলাম। আমার এক ডাক্তার বন্ধু মেডিসিনের রজত গোস্বামীকে দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছিল। নিজের অসুখ নিয়ে ওকে কোনওদিন কোনও আলোচনা করতে শুনিনি, উদ্বিগ্ন হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। অসুখ ব্যাপারটাই ওর কাছে ছিল খুব ক্যাজুয়াল। লক্ষ্মী পুজোর দিন সন্ধেবেলা বাজার করতে গিয়ে হঠাৎ ওর বুকে ব্যথা শুরু হয়। এবং সেটা এতটাই বাড়াবাড়ি হয়ে যায় যে ওকে রাস্তার পাশে এক দোকানে বসে পড়তে হয়। বাড়ির লোকেরা খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর আলোচনা করে কল্যাণীর এক হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওখানকার ডাক্তারবাবুরা প্রাথমিক পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ করেন। সম্ভবত কোনও করোনারি অর্থাৎ হার্টের রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়াতে এমন বিপত্তি ঘটেছে। এবং অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। ঠিক দুদিন বাদে বউদি আমাকে ফোন করে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং এই হাসপাতালে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা উচিত কিনা এই ব্যাপারে পরামর্শ চান। আমার উত্তর ছিল, যদি অ্যাঞ্জিওগ্রামে ব্লক বার হয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে হবে, তা না হলে যে কোনও সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু ঘটবে। এবং এই ধরনের রোগীকে কল্যাণী থেকে কলকাতায় আনার কোনও দরকার নেই। ওই হাসপাতালে যখন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়, তখন ওখানেই করানো উচিত এবং দ্রুত করানো উচিত। এরপর দিন পাঁচেক ওদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। বাসুর ফোনে ফোন করে দেখতাম সুইচড অফ।
আরও পড়ুন:
ডাক্তারের ডায়েরি, পর্ব-৪০: স্বপ্ন সুরভি মাখা দুর্লভ রাত্রি এবং জগন্ময় মিত্র
ডায়েট টিপস: সামনেই বিয়ে? হাতে আর সময় নেই? রইল হবু কনের এক মাসের ডায়েট চার্ট
ইংলিশ টিংলিশ: জানো কি ‘বাজি ফাটানো’ কিংবা ‘মোমবাতি জ্বালানো’র ইংরেজি কী?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৮: মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্বে ‘বসু পরিবার’ [১১/০৪/১৯৫২]
দেখতে দেখতে সাত দিন কেটে গেল। উদ্বিগ্ন হয়ে আমি এই রবিবারের আগের রবিবার বাসুর ফোনে আবার ফোন করলাম। এবং কি আশ্চর্য বাসু নিজেই ফোন ধরলো! আগের মতোই সুন্দর সতেজ গলা, হইহই করে বলতে শুরু করলো ওর সাত দিনের হাসপাতাল বাসের কাহিনী। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়েছে?’ বলল, ‘না হয়নি। অ্যাঞ্জিওগ্রামে একটা মেজর করোনারি আর্টারির প্রায় ১০০% ব্লক পাওয়া গিয়েছে, বোধহয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা যাবে না, বাইপাস করতে হবে।’ আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, ‘এই সিদ্ধান্তটা নিতে সাত দিন সময় লেগে গেল! তোর অ্যাঞ্জিওগ্রামের রিপোর্টটা আমাকে এক্ষুনি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠা।’ ও বলল, ‘ওখানে তো শুধু সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও শুক্রবার অ্যাঞ্জিওগ্রাম হয়, সেজন্যই দেরি হল। আমার গত শুক্রবার হয়েছে, রিপোর্ট আজকে রাতে আসবে, তারপর সিদ্ধান্ত হবে। তোকে রাতেই পাঠাবো।’ ওর কথাগুলোর মধ্যে কোনও উদ্বেগ ছিল না, যেন হার্টের অসুখ নয়, সামান্য জ্বর জারি হয়েছে, ভীষণ ক্যাজুয়ালি আমার সঙ্গে আড্ডা মারলো। অসুখ নিয়ে ওর এমন দার্শনিক নির্লিপ্ততা দেখে আমি সেদিন খুব উদ্বিগ্ন এবং একই সঙ্গে বিরক্ত হয়েছিলাম। শেষ কথা বললাম, ‘যা করার খুব তাড়াতাড়ি কর।’
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অনেকের মতো আমারও প্রথম কাজটি হল মোবাইল অন করা। সেদিনও অন করেছি সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। দুজনের পাঠানো দু-দুটি প্রভাতী মেসেজ, যার বিষয়বস্তু একই, আমাকে রীতিমতো চমকে দিল। বারে বারে পড়লাম। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বাসুর নম্বরে ফোন করলাম। ফোন ধরলো ওর মেয়ে। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে অস্ফূট স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘খবরটা কি সত্যি?’ মেয়ে বলল, ‘হ্যাঁ কাকু, বাবা কাল রাত আড়াইটা নাগাদ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। আমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অনেকের মতো আমারও প্রথম কাজটি হল মোবাইল অন করা। সেদিনও অন করেছি সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। দুজনের পাঠানো দু-দুটি প্রভাতী মেসেজ, যার বিষয়বস্তু একই, আমাকে রীতিমতো চমকে দিল। বারে বারে পড়লাম। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বাসুর নম্বরে ফোন করলাম। ফোন ধরলো ওর মেয়ে। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে অস্ফূট স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘খবরটা কি সত্যি?’ মেয়ে বলল, ‘হ্যাঁ কাকু, বাবা কাল রাত আড়াইটা নাগাদ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। আমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
সারাদিন স্বাভাবিক ছিল বাসু। খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়েও পড়েছিল। মাঝরাতে টয়লেটে যাবার জন্য উঠে বাথরুমে গিয়ে কমোডে বসার পরেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়। পাঁচ মিনিটেই সব শেষ। ডাক্তার ডাকারও সময় পাওয়া যায়নি। আমার ছোটবেলার খেলার সঙ্গীকে শেষ দেখা দেখতে ছুটে গিয়েছিলাম শ্যামনগরে। চোখ-মুখ একেবারে স্বাভাবিক, যেন চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে, হঠাৎ উঠে বসে বলবে, কিরে কখন এলি! শ্মশানেও গিয়েছিলাম। আগুন বিছানায় চিরকালের জন্য শুয়িয়ে দিয়ে এলাম ওকে। মনে মনে প্রার্থনা করলাম, হে চির প্রণম্য অগ্নি, তোমার দহন দানে আমার প্রিয় মানুষটিকে শুদ্ধ কর, চির শান্ত কর।
শোক ভীষণ ক্ষণস্থায়ী। সুনামির বেগে যেমন আসে, আবার চলেও যায় দ্রুত। কিন্তু ক্ষত রেখে যায় প্রিয়জনদের অন্তরের অন্তস্থলে। কেন এত কথা লিখলাম আমার এই বন্ধু কাম ভাইকে নিয়ে! একি শুধুই নিছক শোক তর্পণ বা স্মৃতিচারণ! কেন এ ভাবে মৃত্যু হল বাসুর! একটু পোস্টমর্টেম করে দেখা যাক। এখনও বহু শিক্ষিত মানুষের ধারণা, বুকে ব্যথা মানেই গ্যাসের ব্যথা। যে জন্য তাঁরা অ্যান্টাসিড খেয়ে সেটা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেন। অনেক সময় সাময়িক হয়তো ব্যথাটা একটু কমে, কিন্তু আবার ফিরে আসে।
শোক ভীষণ ক্ষণস্থায়ী। সুনামির বেগে যেমন আসে, আবার চলেও যায় দ্রুত। কিন্তু ক্ষত রেখে যায় প্রিয়জনদের অন্তরের অন্তস্থলে। কেন এত কথা লিখলাম আমার এই বন্ধু কাম ভাইকে নিয়ে! একি শুধুই নিছক শোক তর্পণ বা স্মৃতিচারণ! কেন এ ভাবে মৃত্যু হল বাসুর! একটু পোস্টমর্টেম করে দেখা যাক। এখনও বহু শিক্ষিত মানুষের ধারণা, বুকে ব্যথা মানেই গ্যাসের ব্যথা। যে জন্য তাঁরা অ্যান্টাসিড খেয়ে সেটা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেন। অনেক সময় সাময়িক হয়তো ব্যথাটা একটু কমে, কিন্তু আবার ফিরে আসে।
আরও পড়ুন:
গল্প: পরশ
রুমা দেবী—তিরিশ হাজার মহিলার ভাগ্য পরিবর্তনের কান্ডারি তিনি
ইলিশ ছাড়া ভাইফোঁটা ভাবা যায় নাকি, তৈরি করে ফেলুন লোভনীয় স্বাদের সরষে ইলিশের পদ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৮: মেয়ের জন্য হেমন্তবালা কবির পরা জোব্বা নিয়েছিলেন
একটা কথা পরিষ্কার মাথায় রাখুন, চাপ ধরা বুকে ব্যথা মানেই সেটা হার্টের ব্যথা, সঙ্গে অম্বল বা গ্যাসের ব্যথা থাকতে পারে, নাও পারে। এই ব্যথা হাতের দিকে কিংবা কাঁধের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সঙ্গে থাকতে পারে ঘাম, অস্থিরতা, হাত-পায়ে অবশ ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া। একদম দেরি নয়। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তই কিন্তু ভীষণ মূল্যবান। লোকাল ডাক্তারের খোঁজ না করে রোগীকে যেভাবে হোক দ্রুত কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যান, যেখানে হার্টের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত আছে। অনেকেই স্থানীয় ডাক্তারকে জোর করেন বাড়িতে আসার জন্য, কিংবা বাড়িতে ইসিজি করার ব্যবস্থা করেন। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। অক্সিজেনের অভাবে হার্টের কোষগুলোর দ্রুত মৃত্যু শুরু হয়। দেখা দেয় ইসকিমিয়া, তার থেকে ইনফার্কশন। অর্থাৎ হার্টের মাংসপেশির স্থায়ী ক্ষতি।
বাসুর স্ত্রী এবং মেয়ে দুজনেই মেডিকেল লাইনে থাকায় শুধু অ্যান্টাসিড খাইয়ে তারা সময় নষ্ট করেনি, দ্রুত ওকে নিয়ে গিয়েছিল কল্যাণী জওহর লাল নেহেরু হাসপাতালে। ডাক্তার দ্রুত রোগ ধরতেও পেরেছিলেন। কিন্তু দেরি হয়ে গেল অ্যাঞ্জিওগ্রাম করতে। ওখানে সপ্তাহে মাত্র দুদিন অ্যাঞ্জিওগ্রাম হয়, সোমবার এবং শুক্রবার। বাসুর শুক্রবার হয়েছিল অর্থাৎ ওর হার্টের রক্তনালীতে মারাত্মক অবরোধ থাকা সত্ত্বেও সেটা নির্ণয় করতে সময় চলে গেল দীর্ঘ পাঁচ দিন। এসব ক্ষেত্রে দু-চার ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে অবরোধের মাত্রা নির্ণয় করে স্টেন্ট বসানো হয়, যার নাম অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। ফলে অবরোধ খুলে যায়, আবার রক্ত চলাচল শুরু হয়, হার্টের মাংসপেশীও বিশুদ্ধ রক্ত পেয়ে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করে দেয়। রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। যে ক্ষেত্রে অবরোধের মাত্রা খুব বেশি হয়, সেখানে দ্রুত বাইপাস সার্জারির ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ বিকল্প পথে হার্টে রক্তের যোগান দেওয়া। দীর্ঘ সময় পাওয়া সত্ত্বেও বাসুর ক্ষেত্রে সবটাই ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছিল। আর তাই তার মাশুল ও দিল ওর জীবন দিয়েই।
আমি যদি জানতাম যে শুক্রবারের আগে ওখানে অ্যাঞ্জিওগ্রাম হওয়া সম্ভব নয়, তাহলে আমি অবশ্যই পরামর্শ দিতাম, দ্রুত কলকাতায় নিয়ে এসে সেই ব্যবস্থা করার। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ দিন আমার সঙ্গে কেউ কোন যোগাযোগ না করায় সেটা সম্ভব হয়নি। কার দোষে এমন হল সেটা বিচার করার সময় এটা নয়। বলার কথা একটাই, আমরা একটা জেতা গেম সম্পূর্ণ নিজেদের দোষে হেরে গেলাম। বাসুর মতো মানুষেরা সমাজ সংসারে আরও কিছু বেশিদিন থাকলে সেটা সবার উপকারেই লাগে। ভীষণ ক্যাজুয়াল এবং একগুঁয়ে থাকার ফলে এই মৃত্যুর জন্য ও নিজেও অনেকটা দায়ী। তবু বলি, এমন ক্ষেত্রে রোগীর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার কথাটারই গুরুত্ব বেশি করে দেওয়া উচিত।
একটা বয়সের পর সবারই একটু সংযত জীবন যাপন করা উচিত। অর্থাৎ একটু নিয়ম মেনে চলা, ঠিকমতো খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম, মাঝে মাঝে প্রেসার-ব্লাড সুগার চেক করিয়ে নেওয়া। গন্ডগোল পেলে নিয়মিত ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা। এবং অসুখের ব্যাপারে এর তার কথা না শুনে সঠিক ডাক্তারের কথা শুনে চলাই ভালো। আবার বলি, যে কারণেই বুকের ব্যথা হোক না কেন, নিছক গ্যাসের ব্যথা ভেবে দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আপনার প্রিয়জনকে কিন্তু মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরিয়ে আনতে পারে, যেটা আমরা বাসুর বেলায় পারিনি। এই আক্ষেপটা কিন্তু আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে বাকি জীবন।
বাসুর স্ত্রী এবং মেয়ে দুজনেই মেডিকেল লাইনে থাকায় শুধু অ্যান্টাসিড খাইয়ে তারা সময় নষ্ট করেনি, দ্রুত ওকে নিয়ে গিয়েছিল কল্যাণী জওহর লাল নেহেরু হাসপাতালে। ডাক্তার দ্রুত রোগ ধরতেও পেরেছিলেন। কিন্তু দেরি হয়ে গেল অ্যাঞ্জিওগ্রাম করতে। ওখানে সপ্তাহে মাত্র দুদিন অ্যাঞ্জিওগ্রাম হয়, সোমবার এবং শুক্রবার। বাসুর শুক্রবার হয়েছিল অর্থাৎ ওর হার্টের রক্তনালীতে মারাত্মক অবরোধ থাকা সত্ত্বেও সেটা নির্ণয় করতে সময় চলে গেল দীর্ঘ পাঁচ দিন। এসব ক্ষেত্রে দু-চার ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে অবরোধের মাত্রা নির্ণয় করে স্টেন্ট বসানো হয়, যার নাম অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। ফলে অবরোধ খুলে যায়, আবার রক্ত চলাচল শুরু হয়, হার্টের মাংসপেশীও বিশুদ্ধ রক্ত পেয়ে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করে দেয়। রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। যে ক্ষেত্রে অবরোধের মাত্রা খুব বেশি হয়, সেখানে দ্রুত বাইপাস সার্জারির ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ বিকল্প পথে হার্টে রক্তের যোগান দেওয়া। দীর্ঘ সময় পাওয়া সত্ত্বেও বাসুর ক্ষেত্রে সবটাই ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছিল। আর তাই তার মাশুল ও দিল ওর জীবন দিয়েই।
আমি যদি জানতাম যে শুক্রবারের আগে ওখানে অ্যাঞ্জিওগ্রাম হওয়া সম্ভব নয়, তাহলে আমি অবশ্যই পরামর্শ দিতাম, দ্রুত কলকাতায় নিয়ে এসে সেই ব্যবস্থা করার। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ দিন আমার সঙ্গে কেউ কোন যোগাযোগ না করায় সেটা সম্ভব হয়নি। কার দোষে এমন হল সেটা বিচার করার সময় এটা নয়। বলার কথা একটাই, আমরা একটা জেতা গেম সম্পূর্ণ নিজেদের দোষে হেরে গেলাম। বাসুর মতো মানুষেরা সমাজ সংসারে আরও কিছু বেশিদিন থাকলে সেটা সবার উপকারেই লাগে। ভীষণ ক্যাজুয়াল এবং একগুঁয়ে থাকার ফলে এই মৃত্যুর জন্য ও নিজেও অনেকটা দায়ী। তবু বলি, এমন ক্ষেত্রে রোগীর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার কথাটারই গুরুত্ব বেশি করে দেওয়া উচিত।
একটা বয়সের পর সবারই একটু সংযত জীবন যাপন করা উচিত। অর্থাৎ একটু নিয়ম মেনে চলা, ঠিকমতো খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম, মাঝে মাঝে প্রেসার-ব্লাড সুগার চেক করিয়ে নেওয়া। গন্ডগোল পেলে নিয়মিত ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা। এবং অসুখের ব্যাপারে এর তার কথা না শুনে সঠিক ডাক্তারের কথা শুনে চলাই ভালো। আবার বলি, যে কারণেই বুকের ব্যথা হোক না কেন, নিছক গ্যাসের ব্যথা ভেবে দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আপনার প্রিয়জনকে কিন্তু মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরিয়ে আনতে পারে, যেটা আমরা বাসুর বেলায় পারিনি। এই আক্ষেপটা কিন্তু আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে বাকি জীবন।