![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_6.jpg)
তুমি কি এখন, দেখিছ স্বপন, আমারে আমারে আমারে…। প্রায় ৭০ বছর আগের গান। আমার মায়ের গলায় প্রায় ৫০ বছর আগে এই গান যখন শুনেছিলাম, তখন আমি খুবই ছোট। তারপর শুনেছি, চিঠি লিখে যাই.. এমনি শারদ প্রাতে.. ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে.. আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়… এমন কালজয়ী হৃদয়ে ঝড় তোলা সব গান। হ্যাঁ, মায়ের গলাতেই। সংসারে কাজ করতে করতে মা খালি গলায় গুনগুন করে এসব গান গাইত। সুর ছিল মায়ের গলায়, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। আমার মায়ের বাবা, মানে আমার দাদু ছিলেন ক্লাসিকাল সিঙ্গার।
তবে এসব গান অরিজিনালি কার, তখন সেসব বোঝার বয়স হয়নি। পরে জেনেছি, এই মেলোডিয়াস গোল্ডেন ভয়েস দ্য গ্রেট জগন্ময় মিত্র-র, বম্বেতে যিনি সেই সময় জগমোহন নামে পরিচিত। সেই ছোট্টবেলায় আমার মধ্যে গানের প্রতি ভালোবাসার বোধটা প্রথম জাগিয়ে তুলেছিল আমার মা-ই। জগন্ময় ছাড়াও সুধীরলাল, ধনঞ্জয়, পান্নালাল, হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা, সতীনাথ, উৎপলা, শ্যামল, প্রতিমা, লতা, আশা–এই মহান শিল্পীদের গানের দু’ চার কলি মা-র গলায় ঘুরে ফিরে অনেকবারই শুনতাম। তবে আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় প্রথম থেকেই জায়গা করে নিয়েছিল দু’জন, জগন্ময় এবং হেমন্ত। এখনও, এই এতগুলো দশক পার হয়েও তাঁরা ঠিক সেই জায়গাতেই আছেন। এই দু-জন প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার একবার নয়, একাধিকবার, নিজেকে তাই সৌভাগ্যবান বলেই মনে করি।
তবে এসব গান অরিজিনালি কার, তখন সেসব বোঝার বয়স হয়নি। পরে জেনেছি, এই মেলোডিয়াস গোল্ডেন ভয়েস দ্য গ্রেট জগন্ময় মিত্র-র, বম্বেতে যিনি সেই সময় জগমোহন নামে পরিচিত। সেই ছোট্টবেলায় আমার মধ্যে গানের প্রতি ভালোবাসার বোধটা প্রথম জাগিয়ে তুলেছিল আমার মা-ই। জগন্ময় ছাড়াও সুধীরলাল, ধনঞ্জয়, পান্নালাল, হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা, সতীনাথ, উৎপলা, শ্যামল, প্রতিমা, লতা, আশা–এই মহান শিল্পীদের গানের দু’ চার কলি মা-র গলায় ঘুরে ফিরে অনেকবারই শুনতাম। তবে আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় প্রথম থেকেই জায়গা করে নিয়েছিল দু’জন, জগন্ময় এবং হেমন্ত। এখনও, এই এতগুলো দশক পার হয়েও তাঁরা ঠিক সেই জায়গাতেই আছেন। এই দু-জন প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার একবার নয়, একাধিকবার, নিজেকে তাই সৌভাগ্যবান বলেই মনে করি।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_2-1.jpg)
আমি প্রথম যে দৈনিক সংবাদপত্রে লেখার সুযোগ পাই তার নাম ছিল ‘সত্যযুগ’। সেখানে সংস্কৃতির পাতাটি দেখতেন ‘রা’-পত্রিকার সম্পাদক কবি ঋতীশ চক্রবর্তী। ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালেই তার সঙ্গে আমার পরিচয় সেই আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। ঋতীশদার সৌজন্যেই আমি কানন দেবীকে ইন্টারভিউ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আবার উনিই সুযোগ করে দিলেন জগন্ময় মিত্রকে ইন্টারভিউ করার। ওঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে পুজোর গান নিয়ে। ঋতীশ দার সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল জগন্ময় বাবুর। কলকাতায় এলেই ফোনে ডেকে নিতেন দাদাকে। উনি এসে উঠতেন বাগবাজারে গিরীশ ঘোষের বাড়ির কাছেই ওঁর এক আত্মীয়র বাড়িতে।
একদিন সকালে সেখানে গিয়েই হাজির হলাম। চার তলা বাড়ির দোতলায় ওঁর ফ্লাটে গিয়ে বেল বাজাতে নিজেই দরজা খুললেন। সৌম্য দর্শন, নাতি দীর্ঘ, স্বল্পকেশ, গৌরবর্ণ এই মানুষটিকে দেখে প্রথম দর্শনেই মনে হল, একজন সাধকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসেছি। সাধক তো বটেই, সংগীত সাধক, সংগীত দিয়েই যিনি ছুঁয়েছেন লক্ষ লক্ষ দর্শককে, প্রেম আর বিরহ রসে সিঞ্চিত করেছেন তাদের হৃদয়।
একদিন সকালে সেখানে গিয়েই হাজির হলাম। চার তলা বাড়ির দোতলায় ওঁর ফ্লাটে গিয়ে বেল বাজাতে নিজেই দরজা খুললেন। সৌম্য দর্শন, নাতি দীর্ঘ, স্বল্পকেশ, গৌরবর্ণ এই মানুষটিকে দেখে প্রথম দর্শনেই মনে হল, একজন সাধকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসেছি। সাধক তো বটেই, সংগীত সাধক, সংগীত দিয়েই যিনি ছুঁয়েছেন লক্ষ লক্ষ দর্শককে, প্রেম আর বিরহ রসে সিঞ্চিত করেছেন তাদের হৃদয়।
খুব আন্তরিকভাবেই আমাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। ঋতীশদা যে আগেই আমার সম্বন্ধে ওঁকে ভালোভাবে ব্রিফ করে দিয়েছন, সেটা ওঁর কথাতেই বুঝলাম। শুরু হল আলাপচারিতা। আমি এই ধরনের কাজ করতে গেলে সব সময়ই পেপার ওয়ার্কস করে যাই, এবারেও করে গিয়েছিলাম। এ জন্য প্রথমেই ওঁকে মোক্ষম প্রশ্ন করলাম, ‘আপনার বিরহের গান শুনে আমরা ভাবতাম আপনি যৌবনেই স্ত্রীকে হারিয়েছেন, আর তাই একজন বিরহী প্রেমিকের আর্তি আপনার সব গানেই। ‘হো হো করে হেসে উঠলেন, বললেন, ‘আরে আমি তো তখন বিয়েই করিনি, বিয়ে করলে তো বউ মারা যাবার প্রশ্ন। এগুলো সবই আমার যৌবনের গান। তখন গান লিখতেন কমল দাশগুপ্ত, মোহিনী চৌধুরী, প্রণব রায়-রা। এরা সবাই তো গীতিকবি ছিলেন, ফলে ভাষা এবং ভাবের ব্যঞ্জনায় গানগুলো একটা অন্য মাত্রা পেত। তাছাড়া তখন একটা গান তৈরি হতে পাঁচ দিন থেকে সাত দিন সময় লাগতো। গীতিকাররা বারবার গানের শব্দ-ছন্দ পরিবর্তন করতেন, সুরকারও পরপর ক’দিন ধরে গানটা তোলাতেন আমাদের। এখন তো সব রেডিমেডের যুগ, যন্ত্রই অনেক কাজ করে দেয়।’
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_3.jpg)
মুখোমুখি বসে আমার প্রিয় গায়কের কথা শুনছিলাম। উনি বসেছিলেন একটি ছোট্ট চৌকিতে, আমি উল্টোদিকে চেয়ারে। মায়ের গলায় প্রথম ওঁর গান শুনেছি, তাও ওঁকে জানালাম। উনি দুই হাত জোড় করে বললেন, তোমার মাকে আমার নমস্কার জানিও। প্রথমে কথা শুরু করেছিলেন আপনি দিয়েই, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ওঁর কাছে তুমি হয়ে গেলাম।
তখন তো আর গুগল ছিল না, ওঁর সংগীত জীবন সম্বন্ধে নানা তথ্য এখান-ওখান থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। উনি শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন এবং আমাকে একজন সঙ্গীত বোদ্ধা মানুষ হিসাবেই ধরে নিলেন। এ বার উঠল পুজোর গানের কথা, আমার যা লেখার বিষয়। খুব ধীরে লয়ে সুরেলা গলায় উনি ওঁর ছোটবেলার দেশের বাড়ির পুজো, পরবর্তীকালের কলকাতার পুজো, পুজোর তিন মাস আগে থেকে রেকর্ডিংয়ের প্রস্তুতি, পুজোর সময় নানা জায়গায় ফাংশানে গান গাওয়া–ইত্যাদি পুজো সম্পর্কিত নানা বিষয় স্মৃতি থেকে বলে যেতে লাগলেন। আর আমি ধাউস এক টেপরেকর্ডারে সেগুলো ফিতা বন্দী করতে লাগলাম।
তখন তো আর গুগল ছিল না, ওঁর সংগীত জীবন সম্বন্ধে নানা তথ্য এখান-ওখান থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। উনি শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন এবং আমাকে একজন সঙ্গীত বোদ্ধা মানুষ হিসাবেই ধরে নিলেন। এ বার উঠল পুজোর গানের কথা, আমার যা লেখার বিষয়। খুব ধীরে লয়ে সুরেলা গলায় উনি ওঁর ছোটবেলার দেশের বাড়ির পুজো, পরবর্তীকালের কলকাতার পুজো, পুজোর তিন মাস আগে থেকে রেকর্ডিংয়ের প্রস্তুতি, পুজোর সময় নানা জায়গায় ফাংশানে গান গাওয়া–ইত্যাদি পুজো সম্পর্কিত নানা বিষয় স্মৃতি থেকে বলে যেতে লাগলেন। আর আমি ধাউস এক টেপরেকর্ডারে সেগুলো ফিতা বন্দী করতে লাগলাম।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_Nazrul.jpg)
ডাক্তারের ডায়েরি, পর্ব-৩৯: স্বল্প সান্নিধ্য, অমলিন স্মৃতি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_Uttam-Kumar-7.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭: হারিয়ে যাওয়ার আগে এ এক বিফল মৃত—‘সঞ্জিবনী’ [০৮/০২/১৯৫২]
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/English-Tinglish-Preposition.jpg)
ইংলিশ টিংলিশ: Preposition-এর মূল নিয়মগুলো জানো কি?
সত্যযুগে এক পাতা জুড়ে সেই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আমি একটি কপি নিয়ে আবার ওঁর কলকাতার অস্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে দেখা করলাম। উনি বললেন, পড়ে শোনাও। শোনালাম। শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন। আমি ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে কর্মরত আছি শুনে উনি বললেন, ‘ক্যানসার রোগীদের জন্য আমি কিছু করতে চাই। যদি আমাকে কাজে লাগাতে পারো, তাহলে বোলো।’ সেদিন রাতেই ঋতীশদাকে জগন্ময় বাবুর এই অভিপ্রায়ের কথা বললাম। শুনে উনি বললেন, ‘আপনার তো একটা নাটকের দল আছে। সেখান থেকে ঠাকুরপুকুর ক্যানসারের সাহায্যার্থে যেমন গত বছর একটি প্রোগ্রাম করেছিলেন, তেমনি আরেকটি অর্গানাইজ করে ফেলুন। ‘শুনে বললাম, ভেবে দেখি। আসলে সেই প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতা আমার মোটেও সুখকর ছিল না, সেসব কথা আমি আগের লেখায় লিখেছিও। তাছাড়া আমার গ্রুপের প্রত্যেকেই অল্পবয়সী, আমিও সপ্তাহে ছ-দিন পড়ে থাকি এই হাসপাতালেই। ওদের দিয়েই এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করানো খুব মুশকিল। কমিউনিকেশন গ্যাপ বলে একটা ব্যাপার আছে। আমার মনোবাসনা শুনে মুশকিল আসানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন আবার আমার সেই স্যার, এই হাসপাতালের কর্ণধার ডাঃ সরোজ গুপ্ত।
স্যারের নির্দেশ মতো, ওঁর ঘর থেকেই পরের দিন টেলিফোন করলাম জগন্ময় বাবুকে। সেদিন ওঁকে পেলাম না। পরের দিন একই সময়ে আবার ফোন করতে উনি নিজেই ফোন ধরলেন। পরিচয় দিয়ে আমার মনোবাসনার কথা ওঁকে বললাম। উনি বললেন, ‘আমাকে কোনও টাকা দিতে হবে না। শুধু আমার তিনজন হ্যান্ডসকে ৫০০ করে টাকা দেবে। আর আমাদের প্লেনের যাতায়াত ভাড়া। হল ঠিক করে ডেট ফাইনালি বুক করার আগে আমাকে একবার জানাবে।’ ওঁর প্রাথমিক সম্মতি পাওয়ার পর আমি আরও ২-৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে কাজে নেমে পড়লাম। রবীন্দ্রসদন পেয়ে গেলাম। ওঁকে ফোন করে জানাতে বললেন, উনি ফ্রি আছেন ওই ডেটে। নিজের সঞ্চয় থেকে টাকা দিয়ে হল বুক করে ফেললাম।
স্যারের নির্দেশ মতো, ওঁর ঘর থেকেই পরের দিন টেলিফোন করলাম জগন্ময় বাবুকে। সেদিন ওঁকে পেলাম না। পরের দিন একই সময়ে আবার ফোন করতে উনি নিজেই ফোন ধরলেন। পরিচয় দিয়ে আমার মনোবাসনার কথা ওঁকে বললাম। উনি বললেন, ‘আমাকে কোনও টাকা দিতে হবে না। শুধু আমার তিনজন হ্যান্ডসকে ৫০০ করে টাকা দেবে। আর আমাদের প্লেনের যাতায়াত ভাড়া। হল ঠিক করে ডেট ফাইনালি বুক করার আগে আমাকে একবার জানাবে।’ ওঁর প্রাথমিক সম্মতি পাওয়ার পর আমি আরও ২-৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে কাজে নেমে পড়লাম। রবীন্দ্রসদন পেয়ে গেলাম। ওঁকে ফোন করে জানাতে বললেন, উনি ফ্রি আছেন ওই ডেটে। নিজের সঞ্চয় থেকে টাকা দিয়ে হল বুক করে ফেললাম।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_4.jpg)
আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ পরম শুভানুধ্যায়ী প্রখ্যাত আবৃত্তিকার নীলাদ্রিশেখর বসুর সঙ্গে আলোচনা করে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম। উনি পরামর্শ দিলেন স্যুভিনির করার। আর বললেন, শ্রুতি ও আবৃত্তি জুটি পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষ এবং জগন্নাথ-উর্মিমালার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যদি ওঁরা বিনা পারিশ্রমিকে অনুষ্ঠান করতে রাজি হন, তাহলে অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধ শ্রুতি নাটক দিয়ে সাজানো যাবে। নীলাদ্রি-দা নিজেও ওঁদের ফোন করে দিলেন। ঠাকুরপুকুর ক্যানসারের সাহায্যার্থে অনুষ্ঠানের কথা শুনে ওঁরা রাজি হলেন। তাছাড়া আমার সঙ্গে ওঁদের আগে থেকেই ব্যক্তিগত স্তরে পরিচয় ছিল। অনুষ্ঠানে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের আনবার চেষ্টা করলাম। প্রখ্যাত অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায় আসতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে অমল পালেকরের ছবিতে কাজ করতে মুম্বই গিয়ে আটকে পড়ায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারলেন না। তবে প্রধান অতিথি হিসেবে পেয়েছিলাম প্রখ্যাত অভিনেতা কমল মিত্রকে, যে গল্প আমি আগেও করেছি। সঞ্চালক হিসেবে পেয়েছিলাম অভিনেতা দিলীপ বসু এবং বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে। সদ্য সিনেমা জগতে আসা শতাব্দী রায় মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন শুধু তার একটিই সিনেমা রিলিজ করেছে। সিনেমাটির নাম ছিল আতঙ্ক, পরিচালক ছিলেন তপন সিংহ। নানা জনকে ধরে বিজ্ঞাপন জোগাড় করে একটা স্যুভিনিরও প্রকাশ করেছিলাম এই অনুষ্ঠানে। সামান্য কিছু টাকাও তুলে দিতে পেরেছিলাম ডাঃ সরোজ গুপ্তর হাতে।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_5.jpg)
তবে সব থেকে বড় সহযোগিতা পেয়েছিলাম প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী জগন্ময় মিত্র-র। সুদূর মুম্বই থেকে প্রোগ্রামের আগের এক মাসের মধ্যে অন্তত দশ বার ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি, পরামর্শ নিয়েছি। আমাদের আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনে বলেছিলেন, সেরকম হলে হ্যান্ডসদের টাকা উনিই দিয়ে দেবেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা দিতে হয়নি।
সেদিনটা আমার এখনও মনে আছে, আজীবন মনে থাকবেও। ১৯৮৬ সালের ২২ নভেম্বর। রবীন্দ্র সদনে সেদিন বিকেল থেকেই সাজো সাজো রব। আমার নাটকের গ্রুপের ছেলেমেয়েরা সবাই হাজির। একে একে আমন্ত্রিত শিল্পীরা আসছেন। সবাইকে আপ্যায়ন করে বসানো হচ্ছে, ফটোসেশন চলছে। সন্ধ্যা ছটায় অনুষ্ঠান শুরু। তার আগেই গ্রিনরুম হয়ে উঠল চাঁদের হাট। একেবারে বর বেশে হাজির জগন্ময় মিত্র। তাকে ঘিরে বাংলা সিনেমার কঠিন-কঠোর বাবা কমল মিত্র, অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, দিলীপ বসু, জগন্নাথ-উর্মিমালা, পার্থ-গৌরী, নীলাদ্রি শেখর-শুভ্রা, এবং অবশ্যই ডাঃ সরোজ গুপ্ত। প্রথমার্ধের অনুষ্ঠানে আমিও সদলবলে ‘ভূত ভবিষ্যৎ’ নামে একটি শ্রুতি নাটক পরিবেশন করেছিলাম। উদ্বোধন এবং শ্রুতি পর্ব শেষ হবার পর ১০ মিনিটের বিরতি ঘোষণা করা হল। মঞ্চাসীন হলেন সপারিষদ জগন্ময় মিত্র। পর্দা উঠতেই আমি সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম রবীন্দ্র সদনের একতলার সমস্ত আসন পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এমনকি দোতলাতেও কিছু লোক বসে পড়েছেন। আশ্চর্য হলাম, একটু আগেও তো এত লোক ছিল না, তাহলে কি শুধু এই সুরসাগরের গান শোনার জন্য এরা অপেক্ষা করছিলেন।
সেদিনটা আমার এখনও মনে আছে, আজীবন মনে থাকবেও। ১৯৮৬ সালের ২২ নভেম্বর। রবীন্দ্র সদনে সেদিন বিকেল থেকেই সাজো সাজো রব। আমার নাটকের গ্রুপের ছেলেমেয়েরা সবাই হাজির। একে একে আমন্ত্রিত শিল্পীরা আসছেন। সবাইকে আপ্যায়ন করে বসানো হচ্ছে, ফটোসেশন চলছে। সন্ধ্যা ছটায় অনুষ্ঠান শুরু। তার আগেই গ্রিনরুম হয়ে উঠল চাঁদের হাট। একেবারে বর বেশে হাজির জগন্ময় মিত্র। তাকে ঘিরে বাংলা সিনেমার কঠিন-কঠোর বাবা কমল মিত্র, অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, দিলীপ বসু, জগন্নাথ-উর্মিমালা, পার্থ-গৌরী, নীলাদ্রি শেখর-শুভ্রা, এবং অবশ্যই ডাঃ সরোজ গুপ্ত। প্রথমার্ধের অনুষ্ঠানে আমিও সদলবলে ‘ভূত ভবিষ্যৎ’ নামে একটি শ্রুতি নাটক পরিবেশন করেছিলাম। উদ্বোধন এবং শ্রুতি পর্ব শেষ হবার পর ১০ মিনিটের বিরতি ঘোষণা করা হল। মঞ্চাসীন হলেন সপারিষদ জগন্ময় মিত্র। পর্দা উঠতেই আমি সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম রবীন্দ্র সদনের একতলার সমস্ত আসন পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এমনকি দোতলাতেও কিছু লোক বসে পড়েছেন। আশ্চর্য হলাম, একটু আগেও তো এত লোক ছিল না, তাহলে কি শুধু এই সুরসাগরের গান শোনার জন্য এরা অপেক্ষা করছিলেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/Ruma-Devi-5.jpg)
রুমা দেবী—তিরিশ হাজার মহিলার ভাগ্য পরিবর্তনের কান্ডারি তিনি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/03/yoga-1-1.jpg)
যোগা-প্রাণায়াম: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান? তাহলে যোগাসন হতে পারে সেরা অস্ত্র
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_Thakurbari_4.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৭: রান্নাবান্নার ঠাকুরবাড়ি
সবাইকে প্রণাম জানিয়ে দুই-এক কথার পর প্রথম যে গানটি ধরেছিলেন তিনি, তার প্রথম দুটি লাইন ছিল, ‘স্বপ্ন সুরভি মাখা দুর্লভ রাত্রি, জোছনার চন্দনও আকাশে/তোমার বীণার সুরে, যত ব্যথা যায় দূরে, মায়ামৃগ ধরা দেয় আভাষে…’। এই দু’লাইন শেষ হতেই প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে হাততালির ঝড়। প্রথম গান শেষ হতেই একের পর এক অনুরোধ। চিঠি, বিজয়া, আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়, এমনও বরষা ছিল সেদিন, মেনেছি গো হার মেনেছি…। জগন্ময়বাবু বললেন, এক এক করে সব গাইবো। গেয়েও চললেন। সুরের মূর্ছনায় আর মাদকতায় প্রায় দেড় ঘণ্টা বশ হয়ে রইল রবীন্দ্র সদনের হাজার খানেক দর্শক। তারা অনেকেই ফিরে গিয়েছিলেন তাদের ছোটবেলায়-যৌবনে, কেউবা গুনগুন করে গাইছিলেনও, অনেকের চোখই ভরে উঠেছিল জলে।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর হাততালি যেন আর থামতেই চায় না। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছিল সেদিন, কারণ এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা তো আমিই। কলকাতায় জগন্ময়বাবুর সেটিই ছিল শেষ অনুষ্ঠান। কয়েক বছর পরে তিনি তো চলেই গেলেন আমাদের সবাইকে ছেড়ে। কাকতলীয় ভাবে সেই বছরটা ছিল ওঁর সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর। সেই উপলক্ষে তিনি নিজের হাতে একটি কবিতা লিখে আমাকে দিয়েছিলেন। আমি সেটি স্যুভিনিরে প্রকাশও করেছিলাম। মূল লেখাটি আজ আর আমার কাছে নেই। তখন তো আর ভাবিনি, এভাবে কোনওদিন ওঁকে নিয়ে স্মৃতি কথা লিখতে বসবো! স্যুভিনির থেকেই সেই লেখাটি এখানে প্রকাশ করলাম। এটাকে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোই বলতে পারেন। এমন একজন মানুষের স্নেহধন্য হয়েছিলাম আমি, ভাবতে আজও আমি কেমন নস্টালজিক হয়ে যাই। তাঁর সেই বিখ্যাত গানের লাইনটি নিজের মতো করেই বলতে ইচ্ছে করে, ‘আমি যে এখন শুধু দেখেছি স্বপন, তোমারে তোমারে তোমারে…’।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর হাততালি যেন আর থামতেই চায় না। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছিল সেদিন, কারণ এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা তো আমিই। কলকাতায় জগন্ময়বাবুর সেটিই ছিল শেষ অনুষ্ঠান। কয়েক বছর পরে তিনি তো চলেই গেলেন আমাদের সবাইকে ছেড়ে। কাকতলীয় ভাবে সেই বছরটা ছিল ওঁর সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর। সেই উপলক্ষে তিনি নিজের হাতে একটি কবিতা লিখে আমাকে দিয়েছিলেন। আমি সেটি স্যুভিনিরে প্রকাশও করেছিলাম। মূল লেখাটি আজ আর আমার কাছে নেই। তখন তো আর ভাবিনি, এভাবে কোনওদিন ওঁকে নিয়ে স্মৃতি কথা লিখতে বসবো! স্যুভিনির থেকেই সেই লেখাটি এখানে প্রকাশ করলাম। এটাকে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোই বলতে পারেন। এমন একজন মানুষের স্নেহধন্য হয়েছিলাম আমি, ভাবতে আজও আমি কেমন নস্টালজিক হয়ে যাই। তাঁর সেই বিখ্যাত গানের লাইনটি নিজের মতো করেই বলতে ইচ্ছে করে, ‘আমি যে এখন শুধু দেখেছি স্বপন, তোমারে তোমারে তোমারে…’।