মিতা পিসির সঙ্গে।
প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই ১৯৮৫ সালে। দেখতে দেখতে ৩৭ বছর তো কেটে গেল পর্দার অভিনয় জগতে। অসংখ্য সিনেমা, সিরিয়াল, টেলিফিল্মে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছি। মন্দ ঘটনা দু-পাঁচটা ঘটে থাকলেও, আনন্দের ঘটনা-মজার ঘটনার সংখ্যাই কিন্তু বেশি। বিশেষ করে আউটডোরে গেলে তো কথাই নেই। হরেক রকম মজা হয়।
অভাগীর স্বর্গ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই গল্প নিয়ে বছর কুড়ি আগে আকাশ আট (তখন নাম ছিল চ্যানেলে এইট)-এর জন্য টেলিফিল্ম তৈরি করেছিলেন আমার বন্ধু পরিচালক রানা বন্দোপাধ্যায়। শ্যুটিং করতে আমরা মহেশতলা-বজবজ অঞ্চলে গঙ্গার পাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে চিতা সাজানো হয়েছিল। জমিদার গিন্নি মারা গিয়েছেন। তাকে দাহ করা হবে। আমি তার অন্যতম পুত্র, মুখাগ্নি করব। জন্মভূমির পিসি অর্থাৎ আমাদের সবার প্রিয় বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মিতা দেবী চরিত্রটি করেছিলেন। চিতা সাজিয়ে অনেক কষ্টে তাঁকে চিতায় শোয়ানো হল, বালিশ-তোষক ইত্যাদি দিয়ে। উনি চোখ বুজে আছেন। চোখের পাতার উপর তুলসী পাতা। শুরু হল শ্যুটিং। ক্যামেরা চলতে শুরু করতেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হল। ডিরেক্টর রানা ওঁকে পই পই করে বলে দিয়েছিল, বৃষ্টি হলেও আপনি কিন্তু নড়াচড়া করবেন না, আমরা এর মধ্যেই শট নেব।
অভাগীর স্বর্গ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই গল্প নিয়ে বছর কুড়ি আগে আকাশ আট (তখন নাম ছিল চ্যানেলে এইট)-এর জন্য টেলিফিল্ম তৈরি করেছিলেন আমার বন্ধু পরিচালক রানা বন্দোপাধ্যায়। শ্যুটিং করতে আমরা মহেশতলা-বজবজ অঞ্চলে গঙ্গার পাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে চিতা সাজানো হয়েছিল। জমিদার গিন্নি মারা গিয়েছেন। তাকে দাহ করা হবে। আমি তার অন্যতম পুত্র, মুখাগ্নি করব। জন্মভূমির পিসি অর্থাৎ আমাদের সবার প্রিয় বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মিতা দেবী চরিত্রটি করেছিলেন। চিতা সাজিয়ে অনেক কষ্টে তাঁকে চিতায় শোয়ানো হল, বালিশ-তোষক ইত্যাদি দিয়ে। উনি চোখ বুজে আছেন। চোখের পাতার উপর তুলসী পাতা। শুরু হল শ্যুটিং। ক্যামেরা চলতে শুরু করতেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হল। ডিরেক্টর রানা ওঁকে পই পই করে বলে দিয়েছিল, বৃষ্টি হলেও আপনি কিন্তু নড়াচড়া করবেন না, আমরা এর মধ্যেই শট নেব।
সাধক রামপ্রসাদ সিরিয়ালে আমার মৃত্যু দৃশ্য।
এদিকে, মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। নিরুপায় দেখে বড় প্লাস্টিকে ক্যামেরাকে ঢেকে দিয়ে সবাই যে যার মতো দৌড়ল মাথা বাঁচাতে। আমিও দৌড়লাম একটু দূরে পার্কিং করা আমার গাড়ির দিকে। হঠাৎ মনে হল মিতা পিসির কি হবে! ওনাকে তো কেউ চিতা থেকে নামায়নি! আমি আবার ব্যাক করে চিতার দিকে ছুটলাম, সঙ্গে আমার ড্রাইভার বিশ্বনাথ। অনেক কষ্টে আমি আর বিশ্বনাথ মিলে ধরাধরি করে ওঁকে চিতা থেকে নামিয়ে আমার গাড়িতে এনে পিছনের সিটে বসালাম। পুরোই ভিজে গিয়েছিলেন। বৃষ্টি কমতেই, পোশাক পাল্টে, গরম চা খেয়ে একটু সুস্থ হয়ে আবার চিতায় এসে উঠলেন। শুরু হল শ্যুটিং।
এমন ঘটনা আমার অভিনয় জীবনেও ঘটেছে। আমাকেও চিতায় উঠতে হয়েছিল। ব্যাপারটা খুলেই বলি। বছর কয়েক আগে রামপ্রসাদ সিরিয়ালে আমি রামপ্রসাদের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। মাস দেড়েক শ্যুটিং করার পরে হঠাৎ জানতে পারলাম আমার মৃত্যু সমাসন্ন। তার মানে আমার শ্যুটিংও শেষ। কী আর করা যাবে! এটাই তো কালের নিয়ম। আমিও মরবার জন্য প্রস্তুত হলাম। তবে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কল্যাণে এখন অনেক কিছুর মতো সিনেমা-সিরিয়ালে মৃত্যু, শ্মশান যাত্রা, দাহ– এই ব্যাপার-স্যাপারগুলো খুব সহজ। শ্যুটিং হচ্ছিল ভারত লক্ষ্মী স্টুডিওতে। ফ্লোরের মধ্যে একদিকে রামপ্রসাদের বাড়ির সেট, অন্যদিকে বিশাল ব্লু স্ক্রিন।
এমন ঘটনা আমার অভিনয় জীবনেও ঘটেছে। আমাকেও চিতায় উঠতে হয়েছিল। ব্যাপারটা খুলেই বলি। বছর কয়েক আগে রামপ্রসাদ সিরিয়ালে আমি রামপ্রসাদের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। মাস দেড়েক শ্যুটিং করার পরে হঠাৎ জানতে পারলাম আমার মৃত্যু সমাসন্ন। তার মানে আমার শ্যুটিংও শেষ। কী আর করা যাবে! এটাই তো কালের নিয়ম। আমিও মরবার জন্য প্রস্তুত হলাম। তবে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কল্যাণে এখন অনেক কিছুর মতো সিনেমা-সিরিয়ালে মৃত্যু, শ্মশান যাত্রা, দাহ– এই ব্যাপার-স্যাপারগুলো খুব সহজ। শ্যুটিং হচ্ছিল ভারত লক্ষ্মী স্টুডিওতে। ফ্লোরের মধ্যে একদিকে রামপ্রসাদের বাড়ির সেট, অন্যদিকে বিশাল ব্লু স্ক্রিন।
পরিচালকের নির্দেশে আমি বাঁশের মাচায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। যে সময়ের গল্প, তখন তো আর খাটিয়াতে কিংবা শববাহী গাড়িতে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার ছিল না। মাচার উপর তোষক বিছানো হলেও পিঠে-কোমরে বেশ লাগছিল। মাথার তলায় একটা বালিশ অবশ্য ছিল। বন্ধ চোখের পাতার উপরে তুলসী পাতা লাগিয়ে দেওয়া হল। রামপ্রসাদের বাবার ছিল দুই স্ত্রী, এছাড়া তিন পুত্র এবং বউমা, নাতি-নাতনি। পরিচালক অ্যাকশন বলতেই, সবাই আমাকে ঘিরে ধরে বসে আছারি-পিছারি কান্না শুরু করল। এটাই স্বাভাবিক। প্রিয়জনের মৃত্যু বলে কথা। আমার দুজন স্ত্রী এবং পুত্রদের ভূমিকায় যারা অভিনয় করছিলেন, সবকটাই একেকটি বিচ্ছু। এরা আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিল, ওই অবস্থায় আমায় বিরক্ত করে মারবে। হলও তাই।
আমার স্ত্রীরা একবার নিজেদের বুক চাপড়ায়, একবার আমার বুক চাপড়ায়। ছেলেরা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমার গায়ের উপর পড়ছে। হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার ধুতি ধরে টানছে। একজন দেখলাম বগলে কাতুকুতু দিচ্ছে। আর সহ্য করা সম্ভব হল না। আমি হাত-পা ছুঁড়ে চিৎকার করে মৃত্যুশয্যা থেকে জেগে উঠে বসলাম। পরিচালক এবং ইউনিটের আরও দুই-একজন দৌড়ে এলেন ‘কি হল কি হল’ বলে। সব শুনে ওদের একটু বকাছকা করে আবার শট নেওয়ার প্রস্তুতি হল। আমি বুঝলাম এ বারও ওরা একই কাজ করবে! জিজ্ঞেস করলাম, তোরা কি চাস? পালের গোদা রামপ্রসাদের ভূমিকাভিনেতা দেবাঞ্জন বলল, আজ আমাদের টিফিনে এই ক’জনকে ফিস ফ্রাই খাওয়াতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে, কিন্তু আমাকে দয়া করে আর জ্বালাস না, শটটা নিতে দে।
আমার স্ত্রীরা একবার নিজেদের বুক চাপড়ায়, একবার আমার বুক চাপড়ায়। ছেলেরা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমার গায়ের উপর পড়ছে। হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার ধুতি ধরে টানছে। একজন দেখলাম বগলে কাতুকুতু দিচ্ছে। আর সহ্য করা সম্ভব হল না। আমি হাত-পা ছুঁড়ে চিৎকার করে মৃত্যুশয্যা থেকে জেগে উঠে বসলাম। পরিচালক এবং ইউনিটের আরও দুই-একজন দৌড়ে এলেন ‘কি হল কি হল’ বলে। সব শুনে ওদের একটু বকাছকা করে আবার শট নেওয়ার প্রস্তুতি হল। আমি বুঝলাম এ বারও ওরা একই কাজ করবে! জিজ্ঞেস করলাম, তোরা কি চাস? পালের গোদা রামপ্রসাদের ভূমিকাভিনেতা দেবাঞ্জন বলল, আজ আমাদের টিফিনে এই ক’জনকে ফিস ফ্রাই খাওয়াতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে, কিন্তু আমাকে দয়া করে আর জ্বালাস না, শটটা নিতে দে।
বেনুদা ও রানাদা'র সঙ্গে 'নিশীথে' টেলিফিল্মের শ্যুটিংয়ে।
অবশেষে নির্বিঘ্নেই ক্লোজ, লং শট, মিড শট সব নেওয়া হল। পরের দৃশ্যে এবার ছেলেরা আমায় কাঁধে তুলে শ্মশানের দিকে যাত্রা শুরু করলো। এখানেও বদমাইশি! ইচ্ছে করেই ওরা একদিকে হেলিয়ে দিচ্ছিল, যাতে আমি ওই দিকে গড়িয়ে যাই। এই সিনের পর ক্রোমা শট অর্থাৎ ব্লু স্ক্রিনের সামনে শট নেওয়া হল। সবাই আমাকে কাঁধে করে নিয়ে এসে বেশ বড় একটা উঁচু বেঞ্চে শুইয়ে দিল। ওটাই হল চিতা। এবার বড় পুত্র রামপ্রসাদ মশাল নিয়ে আমাকে প্রদক্ষিণ করার পরে মুখাগ্নি করলো। যদিও মশালে আগুন ছিল না। পরে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কল্যাণে বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় দেখলাম, ঘন জঙ্গলের পথে আমাকে নিয়ে শবযাত্রীরা এগোচ্ছে। শ্মশানে আগে থেকে সাজিয়ে রাখা চিতাতে আমাকে শুইয়ে আগুন দেওয়া হল। দাউ দাউ করে আমি জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে গেলাম। আমার মৃত্যু দৃশ্যের ট্রায়াল রান এ ভাবেই সুসম্পন্ন হয়েছিল সাধক রামপ্রসাদ সিরিয়ালের দৌলতে।
আরেকটি সুপারহিট সিরিয়াল কুরুক্ষেত্রের কথা বলি। কয়েক মাস আগেও যেটি রিপিট হল আকাশ আট চ্যানেলে। যথারীতি এখানেও আমার ভূমিকা ছিল ডাক্তারের। একটি নার্সিংহোম চালাই আমি। গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে হাঁটু ভেঙে অপরাজিতা আঢ্য আমার আন্ডারে ভর্তি হয়েছেন। আমি তার হাঁটু অপারেশন করব। এই সিরিয়ালটির উপদেষ্টা ছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক দেবাংশু সেনগুপ্ত, যিনি এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। শ্যুটিংয়ের আগের দিন প্রোডাকশন থেকে আমাকে ফোন করে বলা হল, একটি অপারেশনের দৃশ্য আছে, কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে হবে। কি অপারেশন, আমি জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পেলাম না। আমি ইএনটি সার্জেন, যথারীতি ইএনটি ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে স্টুডিওতে গেলাম। গিয়ে শুনি হাঁটুর অপারেশন। আমার তো মাথায় হাত! নাক কান গলার যন্ত্রপাতি দিয়ে হাঁটুর অপারেশন!
আরেকটি সুপারহিট সিরিয়াল কুরুক্ষেত্রের কথা বলি। কয়েক মাস আগেও যেটি রিপিট হল আকাশ আট চ্যানেলে। যথারীতি এখানেও আমার ভূমিকা ছিল ডাক্তারের। একটি নার্সিংহোম চালাই আমি। গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে হাঁটু ভেঙে অপরাজিতা আঢ্য আমার আন্ডারে ভর্তি হয়েছেন। আমি তার হাঁটু অপারেশন করব। এই সিরিয়ালটির উপদেষ্টা ছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক দেবাংশু সেনগুপ্ত, যিনি এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। শ্যুটিংয়ের আগের দিন প্রোডাকশন থেকে আমাকে ফোন করে বলা হল, একটি অপারেশনের দৃশ্য আছে, কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে হবে। কি অপারেশন, আমি জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পেলাম না। আমি ইএনটি সার্জেন, যথারীতি ইএনটি ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে স্টুডিওতে গেলাম। গিয়ে শুনি হাঁটুর অপারেশন। আমার তো মাথায় হাত! নাক কান গলার যন্ত্রপাতি দিয়ে হাঁটুর অপারেশন!
আরও পড়ুন:
ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৩: বাইরের প্রকৃতিকে হাঁ করে গিলছে বন্ধু, শেষ এক ঘণ্টা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলিনি
পুজোর ছুটিতে সপরিবারে ঘুরতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন? রইল ডাক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৫: বসুন্ধরা এবং…
অবশ্য এমন অভিজ্ঞতা আমার আগেও হয়েছে প্রভাত রায়ের সিনেমা ‘বিরাট বাইশ’-এ। কোমরের এক্সরে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। এদিকে পেশেন্ট চোট পেয়েছে মাথায়। যাই হোক আগের প্রসঙ্গে ফিরি। দেবাংশুদা ফ্লোরে ঢুকতেই ওঁকে আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। উনি বললেন, আপনার সঙ্গে বড় সিজার এবং ফরসেপ আছে তো? আমি সম্মতি জানাতেই উনি বললেন, আপনার সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট ট্রে-তে সাজিয়ে ফেলুন। আমি চিট করে তুলবো, যাতে বোঝা না যায়। চিট করা কথাটির অর্থ হল ক্যামেরার কারসাজি। অপরাজিতা ওটি টেবিলে শুয়ে পড়ার পর সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল। শুধু একটি পায়ের হাঁটুর কিছু অংশ বার করে রাখা হল, ঝোলানো হল স্যালাইন, ব্লাড। ছোট্ট ছোট্ট শটে দেবাংশুদা অপারেশনের খুঁটিনাটি ক্যামেরাবন্দী করলেন। এই যেমন আমার মুখের ও ইন্সট্রুমেন্ট ধরা হাতের এবং রোগীর মাস্ক ঢাকা মুখের বিগ ক্লোজ আপ। সিস্টার আমার দিকে ইন্সট্রুমেন্টে এগিয়ে দিচ্ছেন, অজ্ঞান করার এয়ার ব্যাগের ফুলে ওঠা এবং চুপসে যাওয়া– ইত্যাদি নানা ধরনের শট। দেবাংশুদার মতো অত বড় মানের পরিচালক ছিলেন বলেই সিনটা সেদিন উতরে গিয়েছিল। এর সঙ্গে অসাধারণ এডিটিং এবং মিউজিক এফেক্টে অপারেশন থিয়েটারের বেশ একটা টেন্সড সিচুয়েশন ফুটিয়ে তোলা গিয়েছিল।
শিলিগুড়ির কাছে পাহাড়ি গ্রাম দুধিয়াতে।
একটা মজার অভিজ্ঞতার কথা এবার শোনাই। স্বপন ঘোষালের মেগা সিরিয়াল ‘নদী থেকে সাগর’-এর শ্যুটিং হচ্ছিল নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে। এখানে আমি একজন কমেডিয়ান পুলিশ অফিসারের রোল করেছিলাম। পেট রোগা এই অফিসার উত্তেজিত হলেই বড় বাথরুমে ছোটেন। যে ফুল প্যান্টটি আমাকে পড়ানো হয়েছিল সেটির কোমর ভীষণ টাইট। অনেক কষ্টে সেই প্যান্ট পরে থানায় আমার চেয়ারে বসে অ্যাক্টিং শুরু করলাম। কিন্তু বড় বাথরুম পেতে যেই আচমকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি, ফটাশ করে দু-দুটো প্যান্টের বোতাম ছিঁড়ে বেরিয়ে গেল। প্যান্ট নেমে গেল কোমর থেকে। ডাকা হল ড্রেসারকে। দেখে-শুনে তিনি জানিয়ে দিলেন, ৩৮ ইঞ্চি কোমরের ফুল প্যান্ট ওর স্টকে নেই। গোডাউন থেকে আনাতে হলে অনেক সময় লাগবে। কম বাজেটের মেগাতে এমনি নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে আধ-এক ঘণ্টা শ্যুটিং বন্ধ করে বসে থাকা সম্ভব নয়।
ডিরেক্টর স্বপন আমাকে বললেন, ‘অমিতাভদা, তুমি বসে বসেই অ্যাক্টিং কর, উঠে দাঁড়ানোর কোনও দরকার নেই। উত্তেজিত হলে মুখের এক্সপ্রেশনেই বুঝিয়ে দেবে।’ সেভাবেই করলাম। কোনওভাবে সিনটা উতরে গেল। বোতাম ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে যে বসে আছি, সেটা তখন আর আমার মাথায় নেই। পরিচালক ‘কাট’ বলার পর যেই না আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি, অমনি প্যান্টের উপরিভাগ সরসর করে কোমর বেয়ে নিচে নেমে গেল। উপস্থিত সবাই হ্যা-হ্যা করে হেসে উঠলো। আমার তো বেইজ্জতির এক শেষ!
ডিরেক্টর স্বপন আমাকে বললেন, ‘অমিতাভদা, তুমি বসে বসেই অ্যাক্টিং কর, উঠে দাঁড়ানোর কোনও দরকার নেই। উত্তেজিত হলে মুখের এক্সপ্রেশনেই বুঝিয়ে দেবে।’ সেভাবেই করলাম। কোনওভাবে সিনটা উতরে গেল। বোতাম ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে যে বসে আছি, সেটা তখন আর আমার মাথায় নেই। পরিচালক ‘কাট’ বলার পর যেই না আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি, অমনি প্যান্টের উপরিভাগ সরসর করে কোমর বেয়ে নিচে নেমে গেল। উপস্থিত সবাই হ্যা-হ্যা করে হেসে উঠলো। আমার তো বেইজ্জতির এক শেষ!
পরিচালক সব্যসাচী চক্রবর্তীর সঙ্গে আমি ও তনিমা।
সব্যসাচী চক্রবর্তী ওরফে আমাদের সবার প্রিয় বেণুদা। আমিও বেণুদা বলেই ডাকি, যদিও উনি আমার থেকে বয়সে ঠিক সাত দিনের ছোট। বেণুদার ফ্যান আট থেকে আশি সবাই। বিশেষ করে ফেলুদা রূপে। সৌমিত্র পরবর্তী যুগে উনি আমাদের কাছে সবথেকে গ্রহণযোগ্য ফেলুদা। বেনুদার অরণ্য প্রীতির কথা অনেকেই জানেন। খুব ভালো ওয়াইড লাইফ ফটোগ্রাফার আমাদের ফেলুদা। ওঁর তোলা ফটো নিয়ে অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শনীও হয়েছে। সেই বেণুদা একসময় ইটিভির হয়ে বেশ কয়েকটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করেছিলেন রহস্য গল্প সিরিজে। এখানে কাজ করতে গিয়েই ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ, তাও প্রায় ২০-২২ বছর আগে। আলাপ থেকে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব। আমার ‘রহস্য গল্প’ বইটির ভূমিকাও উনিই লিখেছিলেন। বই মেলাতেও একাধিক বার এসেছেন আমার বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি,পর্ব-১৩: কবির ঘড়ি
শিশুকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন? কী কী ওষুধ সঙ্গে রাখবেন? রইল পরামর্শ
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৬: রাম-পরশুরাম দ্বৈরথ অযোধ্যার পথে
একবার শ্যুটিংয়ের ফাঁকে আমার নিজের লেখা একটি গল্প আমি ওঁকে শুনিয়েছিলাম। শুনে বললেন, ‘গল্পটায় একটু রহস্য ঢুকিয়ে দিন, আর একটা সংক্ষিপ্তসার রেডি করে আমাকে দিন। আমি ইটিভিতে পাঠাচ্ছি মেইল করে’। আমি তাই করে দিলাম। সাত দিনের মধ্যে ওখান থেকে জানানো হল যে, আমার গল্পটি নির্বাচিত হয়েছে রহস্য গল্প সিরিজের জন্য। বেণুদা নিজেই চিত্রনাট্য করলেন। আমি ওঁর কাছে আবদার করলাম, একটি পাহাড়ি গাইডের চরিত্র রয়েছে, সেটাতে যদি আমাকে নেওয়া হয়। ফেলুদা রাজি হলেন। শ্যুটিং করতে আমরা সবাই মিলে গেলাম নর্থ বেঙ্গলে শিলিগুড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে দুধিয়া বলে একটি পাহাড়ি গ্রামে। সেখানে নদীর ধারে শ্যুটিং হল। তারপর শ্যুটিং হল টয়ট্রেনে, পাহাড়ি রাস্তায়, পাহাড়ি টিলায়। টয় ট্রেনে শুটিংয়ের কথা বলি। কোনও একটি স্টেশনে (নাম এখন আর মনে নেই) টয় ট্রেনটি থামবে, ট্রেন থেকে আমি এবং আরও দুজন নেমে প্লাটফর্ম ধরে এগিয়ে যাব। এমন একটি শট নেওয়ার জন্য বেণুদা ক্যামেরা সাজিয়ে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলেন স্টেশনের পাশে।
অবশেষে ট্রেন এলো, থামলো, আমরা তড়িঘড়ি করে ভিতরে ঢুকে গেলাম, একটু বাদে পরিচালক অ্যাকশন বলতেই ট্রেনের দরজা দিয়ে প্লাটফর্মে নেমে এগোতে লাগলাম। আমরা এগোতে এগোতে প্লাটফর্ম ছেড়ে পাহাড়ি রাস্তায় নেমে এসেছি। মিনিট তিনেক কেটে গিয়েছে। পরিচালকের কণ্ঠে ‘কাট’ শব্দটি আর শোনা যাচ্ছে না। আমরা তো ব্যাক টু ক্যামেরা হাঁটছি। অবশেষে থমকে দাঁড়ালাম, ভাবলাম এত বড় তো দৃশ্যটি নয়, লং শটে আর কত তুলবে! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, ততক্ষণে ক্যামেরা গুটিয়ে সবাই লোকেশন ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। আমরা ব্যাক করতেই ইউনিট জুড়ে হাসির রোল উঠলো। পরে জানলাম পুরো প্ল্যানটি ছিল স্বয়ং বেনুদার অর্থাৎ আমাদের সব্যসাচী চক্রবর্তীর। বেণুদা শুধু ভালো অভিনেতা নন, ভালো মানুষও। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই ওঁকে ভালোবাসেন। ভীষণ ফুর্তিবাজ, অ্যাডভেঞ্চারাস এবং পরোপকারী মানুষ।
শ্যুটিং মানেই মজার মজার অভিজ্ঞতা। একঘেয়েমি যে নেই, তা নয়। ভয়ংকর পরিশ্রমও আছে। তবু তার মধ্যে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, যেগুলো শ্যুটিংয়ের ক্লান্তি মুহূর্তের মধ্যে দূর করে দেয়।
অবশেষে ট্রেন এলো, থামলো, আমরা তড়িঘড়ি করে ভিতরে ঢুকে গেলাম, একটু বাদে পরিচালক অ্যাকশন বলতেই ট্রেনের দরজা দিয়ে প্লাটফর্মে নেমে এগোতে লাগলাম। আমরা এগোতে এগোতে প্লাটফর্ম ছেড়ে পাহাড়ি রাস্তায় নেমে এসেছি। মিনিট তিনেক কেটে গিয়েছে। পরিচালকের কণ্ঠে ‘কাট’ শব্দটি আর শোনা যাচ্ছে না। আমরা তো ব্যাক টু ক্যামেরা হাঁটছি। অবশেষে থমকে দাঁড়ালাম, ভাবলাম এত বড় তো দৃশ্যটি নয়, লং শটে আর কত তুলবে! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, ততক্ষণে ক্যামেরা গুটিয়ে সবাই লোকেশন ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। আমরা ব্যাক করতেই ইউনিট জুড়ে হাসির রোল উঠলো। পরে জানলাম পুরো প্ল্যানটি ছিল স্বয়ং বেনুদার অর্থাৎ আমাদের সব্যসাচী চক্রবর্তীর। বেণুদা শুধু ভালো অভিনেতা নন, ভালো মানুষও। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই ওঁকে ভালোবাসেন। ভীষণ ফুর্তিবাজ, অ্যাডভেঞ্চারাস এবং পরোপকারী মানুষ।
শ্যুটিং মানেই মজার মজার অভিজ্ঞতা। একঘেয়েমি যে নেই, তা নয়। ভয়ংকর পরিশ্রমও আছে। তবু তার মধ্যে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, যেগুলো শ্যুটিংয়ের ক্লান্তি মুহূর্তের মধ্যে দূর করে দেয়।