আমার বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইমেলায় (বাম দিক থেকে) পবিত্র সরকার, পার্থ ঘোষ এবং দুলেন্দ্র ভৌমিক।
দুলেন্দ্র ভৌমিক। নামটা কি কোনও পাঠকের একটু চেনা-চেনা লাগছে! না লাগলে, দোষ দেব না। মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যে অনেক বিখ্যাত মানুষই এভাবেই হারিয়ে যান, যদি তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা মিডিয়া কিংবা তাঁর পরিবারের লোকজন কিংবা তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা না করেন। দুলেন্দ্র ভৌমিকের বেলায় যেটা হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা গল্প-উপন্যাস পড়ি, বা এককালে পড়তাম, তাদের কাছে সাহিত্যিক দুলেন্দ্র ভৌমিক ওরফে দু ভৌ ওরফে দুলুদা ভীষণ প্রিয় একজন লেখক। ছোটদের জন্য কী সব অসাধারণ লেখা একসময় লিখেছেন আনন্দমেলার পুজো সংখ্যায়! লিখেছেন বড়দের জন্য বেশকিছু উপন্যাসও। তবে ছোটদের লেখক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা এক সময় ছিল ঈর্ষণীয়। চাকরি করতেন আনন্দবাজারে। দীর্ঘদিন সিনেমা পত্রিকা আনন্দলোক সম্পাদনা করেছেন যোগ্যতার সঙ্গেই।
আমি তখন আমার সাহিত্যগুরু সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পা রেখেছি আনন্দবাজারে। দেশ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আনন্দবাজারে শনিবারের পাতায় টুকটাক ফিচারধর্মী লেখা লিখছি। লেখা প্রকাশিত হচ্ছে প্রবাসী আনন্দবাজার এবং সানন্দাতেও। ১৯৮৭-৮৮-র কথা বলছি। এক শনিবার বিকেলে সঞ্জীবদার দেশ পত্রিকার দপ্তরে বসে আছি ওঁর যাত্রাসঙ্গী হব, এই আশায়। হঠাৎ দেখি ছোট্টখাট্ট চেহারার ধুতি-পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক সেখানে হাজির হলেন, সঞ্জীবদার সঙ্গে গল্পগুজব, হাসি-ঠাট্টা করলেন। আমি তো দেখেই চিনে ফেলেছি। ইনি আমার অন্যতম প্রিয় লেখক দুলেন্দ্র ভৌমিক। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন সঞ্জীবদাই। ‘এই যে আমার ডাক্তারবাবু। আপনার পাড়ার লোক। আমাদের হাউসে লিখছেন। ভালোই লেখেন, আপনিও লেখাতে পারেন৷’ পাড়ার লোক! তার মানে দুলেন্দ্রদা কি বেলঘরিয়ায় থাকেন! পরে জেনেছিলাম, দুলেন্দ্রদা বেলঘরিয়াতে নয়, খড়দহ রহড়া বাজারের সামনে থাকেন।
এইভাবেই মানুষটির সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই সময় দুলেন্দ্রদা জননী সিরিয়ালের দৌলতে ভীষণ পরিচিত একটি নাম। জননীর গল্প ওঁরই লেখা, চিত্রনাট্যও তখন লিখেছিলেন উনি। একদিন সাইকেল চালিয়ে বেলঘরিয়া থেকে আগরপাড়া-সোদপুর হয়ে হাজির হলাম ওঁর বাড়িতে। কিছুটা আসবেস্টস, কিছুটা ঢালাই ছাদ, এই নিয়ে ওঁর এক চিলতে বাড়ি। রাস্তার ঠিক পাশেই যে ঘর, সেটি ড্রয়িং রুম কাম বেড রুম। একটা ছোট্ট সোফায় কয়েকজনের সঙ্গে গাদাগাদি করে আমিও বসলাম। চার ফুট দূরে একটি চৌকিতে পাশ ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে তখনও সুখনিদ্রায় মগ্ন দুলেন্দ্রদা। মিনিট পনেরো কেটে যাবার পর বউদির ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে বোকা হাসি হেসে বললেন, একটু টয়লেট থেকে আসি। ফিরে এসে চা নিয়ে বসলেন। আমদেরও চা এল। শুরু হল বহু বিষয় নিয়ে বহুমুখী আড্ডা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ভুঁড়ি কাঁপিয়ে দুলুদার অট্টহাস্য আর লুঙ্গির ফাঁস মাঝে মাঝে শক্ত করে বাঁধার চেষ্টা। হ্যাঁ, সেদিন থেকেই দুলেন্দ্র ভৌমিক আমার কাছে দুলুদা হয়ে গেলেন।
প্রায় প্রতি রোববারই সকাল এগারোটা নাগাদ তখন দুলুদার বাড়িতে গিয়ে হাজির হচ্ছি। নানা বিষয়ে কথার ফাঁকে একদিন একান্তে পেয়ে দাদাকে বললাম, আমি আনন্দলোকে কিছু লিখতে পারি না? দুলুদা আমার কথা শুনে একটু যেন চমকে উঠে বললেন, সিনেমা পত্রিকায় তুই ডাক্তারি লেখা লিখবি! আমার চাকরিটা খেতে চাস নাকি! দুলুদাকে বললাম, সরাসরি ডাক্তারি বিষয় নয়। তবে সিনেমাতে ডাক্তারি ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে একটু অন্যরকম একটা লেখা হতে পারে। কী রকম, জানতে চাইলেন দুলুদা। আমি বললাম, এই যেমন ধরুন, সিনেমার মৃত্যু দৃশ্যগুলো বড় আজগুবি হয়। একজন গুলি খেয়ে হেঁচকি তুলছে, কিন্তু এক পাতা ডায়লগ বলে তারপর চোখ বুঝলেন। সিনেমায় একজন ডাক্তারের আচার-আচরণ, ডাক্তারি ব্যাপার-স্যাপার, সবটাই ভীষণ অবাস্তব এবং হাস্যকর লাগে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কিছু বড় পরিচালকের ছবিতে মৃত্যু দৃশ্য অসাধারণ এক ব্যঞ্জনা তৈরি করে। সিনেমার ডাক্তারকে রক্তমাংসে গড়া বাস্তবের ডাক্তার বলেই মনে হয়। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীতে দুর্গার মৃত্যু দৃশ্য কিংবা অপরাজিত ছবিতে হরিহরের মৃত্যু দৃশ্য, আবার মৃণাল সেনের খারিজ বা তপন সিংহের হাটে-বাজারে-সহ বহু ছবিতে মৃত্যু দৃশ্য নিষ্ঠুর বাস্তব এবং একই সঙ্গে প্রতীকী।
দুলুদা খুব মন দিয়ে আমার কথাগুলো শুনে বললেন, হোম ওয়ার্ক তো ভালোই করেছিস। তাহলে লেগে পড়। চেষ্টা কর সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ—এদের সঙ্গে কথা বলার। তাহলে লেখাটা জমে যাবে। ভালো লেখা হলে আমি পুজো সংখ্যায়ও লেখাটা দিতে পারি। শুনে তো আমি তখনই নেচে উঠি। আনন্দবাজার হাউসে কোনও পুজো সংখ্যায় আমার লেখা বেরোবে, এটা তো আমি ভাবতেই পারছি না!
আমি তখন আমার সাহিত্যগুরু সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে পা রেখেছি আনন্দবাজারে। দেশ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আনন্দবাজারে শনিবারের পাতায় টুকটাক ফিচারধর্মী লেখা লিখছি। লেখা প্রকাশিত হচ্ছে প্রবাসী আনন্দবাজার এবং সানন্দাতেও। ১৯৮৭-৮৮-র কথা বলছি। এক শনিবার বিকেলে সঞ্জীবদার দেশ পত্রিকার দপ্তরে বসে আছি ওঁর যাত্রাসঙ্গী হব, এই আশায়। হঠাৎ দেখি ছোট্টখাট্ট চেহারার ধুতি-পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক সেখানে হাজির হলেন, সঞ্জীবদার সঙ্গে গল্পগুজব, হাসি-ঠাট্টা করলেন। আমি তো দেখেই চিনে ফেলেছি। ইনি আমার অন্যতম প্রিয় লেখক দুলেন্দ্র ভৌমিক। আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন সঞ্জীবদাই। ‘এই যে আমার ডাক্তারবাবু। আপনার পাড়ার লোক। আমাদের হাউসে লিখছেন। ভালোই লেখেন, আপনিও লেখাতে পারেন৷’ পাড়ার লোক! তার মানে দুলেন্দ্রদা কি বেলঘরিয়ায় থাকেন! পরে জেনেছিলাম, দুলেন্দ্রদা বেলঘরিয়াতে নয়, খড়দহ রহড়া বাজারের সামনে থাকেন।
এইভাবেই মানুষটির সঙ্গে আমার পরিচয়। সেই সময় দুলেন্দ্রদা জননী সিরিয়ালের দৌলতে ভীষণ পরিচিত একটি নাম। জননীর গল্প ওঁরই লেখা, চিত্রনাট্যও তখন লিখেছিলেন উনি। একদিন সাইকেল চালিয়ে বেলঘরিয়া থেকে আগরপাড়া-সোদপুর হয়ে হাজির হলাম ওঁর বাড়িতে। কিছুটা আসবেস্টস, কিছুটা ঢালাই ছাদ, এই নিয়ে ওঁর এক চিলতে বাড়ি। রাস্তার ঠিক পাশেই যে ঘর, সেটি ড্রয়িং রুম কাম বেড রুম। একটা ছোট্ট সোফায় কয়েকজনের সঙ্গে গাদাগাদি করে আমিও বসলাম। চার ফুট দূরে একটি চৌকিতে পাশ ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে তখনও সুখনিদ্রায় মগ্ন দুলেন্দ্রদা। মিনিট পনেরো কেটে যাবার পর বউদির ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে বোকা হাসি হেসে বললেন, একটু টয়লেট থেকে আসি। ফিরে এসে চা নিয়ে বসলেন। আমদেরও চা এল। শুরু হল বহু বিষয় নিয়ে বহুমুখী আড্ডা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ভুঁড়ি কাঁপিয়ে দুলুদার অট্টহাস্য আর লুঙ্গির ফাঁস মাঝে মাঝে শক্ত করে বাঁধার চেষ্টা। হ্যাঁ, সেদিন থেকেই দুলেন্দ্র ভৌমিক আমার কাছে দুলুদা হয়ে গেলেন।
প্রায় প্রতি রোববারই সকাল এগারোটা নাগাদ তখন দুলুদার বাড়িতে গিয়ে হাজির হচ্ছি। নানা বিষয়ে কথার ফাঁকে একদিন একান্তে পেয়ে দাদাকে বললাম, আমি আনন্দলোকে কিছু লিখতে পারি না? দুলুদা আমার কথা শুনে একটু যেন চমকে উঠে বললেন, সিনেমা পত্রিকায় তুই ডাক্তারি লেখা লিখবি! আমার চাকরিটা খেতে চাস নাকি! দুলুদাকে বললাম, সরাসরি ডাক্তারি বিষয় নয়। তবে সিনেমাতে ডাক্তারি ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে একটু অন্যরকম একটা লেখা হতে পারে। কী রকম, জানতে চাইলেন দুলুদা। আমি বললাম, এই যেমন ধরুন, সিনেমার মৃত্যু দৃশ্যগুলো বড় আজগুবি হয়। একজন গুলি খেয়ে হেঁচকি তুলছে, কিন্তু এক পাতা ডায়লগ বলে তারপর চোখ বুঝলেন। সিনেমায় একজন ডাক্তারের আচার-আচরণ, ডাক্তারি ব্যাপার-স্যাপার, সবটাই ভীষণ অবাস্তব এবং হাস্যকর লাগে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কিছু বড় পরিচালকের ছবিতে মৃত্যু দৃশ্য অসাধারণ এক ব্যঞ্জনা তৈরি করে। সিনেমার ডাক্তারকে রক্তমাংসে গড়া বাস্তবের ডাক্তার বলেই মনে হয়। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীতে দুর্গার মৃত্যু দৃশ্য কিংবা অপরাজিত ছবিতে হরিহরের মৃত্যু দৃশ্য, আবার মৃণাল সেনের খারিজ বা তপন সিংহের হাটে-বাজারে-সহ বহু ছবিতে মৃত্যু দৃশ্য নিষ্ঠুর বাস্তব এবং একই সঙ্গে প্রতীকী।
দুলুদা খুব মন দিয়ে আমার কথাগুলো শুনে বললেন, হোম ওয়ার্ক তো ভালোই করেছিস। তাহলে লেগে পড়। চেষ্টা কর সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ—এদের সঙ্গে কথা বলার। তাহলে লেখাটা জমে যাবে। ভালো লেখা হলে আমি পুজো সংখ্যায়ও লেখাটা দিতে পারি। শুনে তো আমি তখনই নেচে উঠি। আনন্দবাজার হাউসে কোনও পুজো সংখ্যায় আমার লেখা বেরোবে, এটা তো আমি ভাবতেই পারছি না!
সত্যজিৎ রায়
বাড়ি ফিরে দু-একদিনের মধ্যেই লেখাটার ভূমিকা সাজিয়ে ফেললাম। যাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাই তাঁদের ফোন নম্বরগুলোও জোগাড় করে ফেললাম। তখন কলকাতা দূরদর্শনে প্রতি রবিবার সকাল এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত মহাভারত সিরিয়ালটি হত। রাস্তা শুনশান হয়ে যেত ওই সময়, যেন অঘোষিত কারফিউ। আমি তখন বাড়িতে চেম্বার করি। ওই সময়টায় একজন রোগীও আমার চেম্বারে উঁকিঝুঁকি মারতে আসতেন না। এমন এক মাহেন্দ্রক্ষণ দেখে একদিন সত্যজিৎ রায়কে ল্যান্ড লাইনে ফোন করে বসলাম। ফোন নম্বরটা ছিল একেবারেই প্রাইভেট। খুব ঘনিষ্ঠ লোক ছাড়া এই নম্বরটা উনি কাউকেই দিতেন না। ফোন বাজতে অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এল সেই মেঘ মন্দ্রিত কণ্ঠস্বর, ইংরেজিতে একেই বোধহয় বলে ব্যারিটোন ভয়েস! কে বলছেন? কণ্ঠস্বর শুনে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। তবু যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় নিজের পরিচয় দিলাম। উনি জানতে চাইলেন, এই ফোন নম্বরটা আপনি কোথায় পেলেন! আমি বললাম, আপনার ইউনিটের রঞ্জিত সেনগুপ্ত ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, আমি দেখাশোনা করতাম, সেখানে আপনার সঙ্গে আমার পরিচয়ও হয়েছিল, উনিই আমাকে এই নম্বরটা দিয়েছেন। শুনে সম্ভবত উনি আমাকে রিকগনাইজ করতে পারলেন। জানতে চাইলেন, কেন ফোন করেছি। আমি সংক্ষেপে বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম। উনি ধৈর্য ধরে শুনলেন, বললেন সাবজেক্ট তো ভালোই ভেবেছেন, কিন্তু আপনি কোন পত্রিকার জন্য লিখছেন? আমি গদগদ হয়ে আনন্দলোকের নাম বলতেই উনি বললেন, স্যরি, আমি এই পত্রিকার জন্য কোনও ইন্টারভিউ দেব না৷ ধন্যবাদ। আমি ছাড়ছি। বলেই সত্যজিৎবাবু ফোনটা নিজেই কেটে দিলেন। আমার বুকের ভিতর যে হাজার ওয়াটের বালবটা একটু আগেই জ্বলে উঠেছিল, সেটা দপ করে নিভে গেল। সত্যজিৎ রায়ের মতো মহান মানুষটির ইন্টারভিউ সেদিন যদি সত্যিই করতে পারতাম, তাহলে সেটা হত আমার কাছে জ্যাকপট জেতার শামিল।
আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম দুলুদাকে। সবিস্তারে সব বললাম। উনি বললেন, এমনটা যে হতে পারে আমার আশঙ্কা ছিল। আসলে গতবছর পুজো সংখ্যায় মৃণাল সেনের একটি দীর্ঘ ইন্টারভিউ আমাদের পত্রিকা থেকে করা হয়েছিল, যেখানে উনি সত্যজিৎবাবু সম্বন্ধে অনেক কথাই বলেছিলেন। তার মধ্যে একটি লাইন ছিল ‘মানিকদার সিনেমা আমাকে এখন আর অতটা ভাবায় না৷’ আমি এটাই লেখাটির শিরোনাম করেছিলাম এবং বিজ্ঞাপনে এই লাইনটা ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে সত্যজিৎবাবু ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলেন, এমন খবর পেয়ে ছিলাম। সেজন্যই উনি হয়তো আনন্দলোকের সঙ্গে এই মুহূর্তে আর সম্পর্ক রাখতে চান না। যাই হোক, মন খারাপ করিস না। তুই মৃণালদাকে একবার চেষ্টা করে দেখ।
কপাল ঠুকে মৃণাল সেনকেই ফোন করে বসলাম। এক চান্সে ফোনটা পেয়েও গেলাম। ওঁর খারিজ ছবিতে পালান বলে এক কিশোর চরিত্রের দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কার্বন-মনোক্সাইড পয়জনিং-এ। চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মতভাবেই দৃশ্যটি চিত্রায়ন হয়েছিল। এবং এই দৃশ্যটির উপদেষ্টা ছিলেন প্রখ্যাত ফরেনসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জে বি মুখার্জি। এই সমস্ত তথ্যগুলো আমার আগেই জানা ছিল। সেগুলোই বেশ গুছিয়ে মৃণালবাবুকে বললাম এবং এও বললাম আপনার যেসব সিনেমায় ডাক্তারি ব্যাপার বা মৃত্যু দৃশ্য এসেছে, সেসব নিয়েই আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই আমার একটি লেখার প্রয়োজনে। কারণ আমার মনে হয়েছে, এগুলো একই সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত এবং বাস্তবসম্মতও বটে। এগুলোর পিছনে আপনি খুব ভালোভাবে হোমওয়ার্ক করেছিলেন। আমার কথাগুলো মৃণালবাবুর খুব মনে ধরল। উনি বললেন, আপনি ডাক্তার বলেই খুব খুঁটিয়ে দৃশ্যগুলো খেয়াল করেছেন, বলুন কী জানতে চান। এভাবেই শুরু হল আমাদের আলাপচারিতা। তখন তো আর মোবাইল ফোন আসেনি, কাজেই রেকর্ড করার কোনও সুযোগ আমার ছিল না, আমি ফোনে কথা বলতে বলতেই কাগজে দ্রুত নোট নিতে লাগলাম। প্রায় ৫০ মিনিট কথা বলার পর ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ফোন ছেড়ে দিলাম। ছাড়বার আগে উনি আমাকে পরিষ্কার বলে দিলেন, লেখাটা রেডি হলে আমার বাড়িতে এসে আমাকে একবার দেখিয়ে নেবেন। আমি প্রয়োজনীয় কারেকশন করে দেব।
আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম দুলুদাকে। সবিস্তারে সব বললাম। উনি বললেন, এমনটা যে হতে পারে আমার আশঙ্কা ছিল। আসলে গতবছর পুজো সংখ্যায় মৃণাল সেনের একটি দীর্ঘ ইন্টারভিউ আমাদের পত্রিকা থেকে করা হয়েছিল, যেখানে উনি সত্যজিৎবাবু সম্বন্ধে অনেক কথাই বলেছিলেন। তার মধ্যে একটি লাইন ছিল ‘মানিকদার সিনেমা আমাকে এখন আর অতটা ভাবায় না৷’ আমি এটাই লেখাটির শিরোনাম করেছিলাম এবং বিজ্ঞাপনে এই লাইনটা ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে সত্যজিৎবাবু ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলেন, এমন খবর পেয়ে ছিলাম। সেজন্যই উনি হয়তো আনন্দলোকের সঙ্গে এই মুহূর্তে আর সম্পর্ক রাখতে চান না। যাই হোক, মন খারাপ করিস না। তুই মৃণালদাকে একবার চেষ্টা করে দেখ।
কপাল ঠুকে মৃণাল সেনকেই ফোন করে বসলাম। এক চান্সে ফোনটা পেয়েও গেলাম। ওঁর খারিজ ছবিতে পালান বলে এক কিশোর চরিত্রের দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কার্বন-মনোক্সাইড পয়জনিং-এ। চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মতভাবেই দৃশ্যটি চিত্রায়ন হয়েছিল। এবং এই দৃশ্যটির উপদেষ্টা ছিলেন প্রখ্যাত ফরেনসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জে বি মুখার্জি। এই সমস্ত তথ্যগুলো আমার আগেই জানা ছিল। সেগুলোই বেশ গুছিয়ে মৃণালবাবুকে বললাম এবং এও বললাম আপনার যেসব সিনেমায় ডাক্তারি ব্যাপার বা মৃত্যু দৃশ্য এসেছে, সেসব নিয়েই আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই আমার একটি লেখার প্রয়োজনে। কারণ আমার মনে হয়েছে, এগুলো একই সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত এবং বাস্তবসম্মতও বটে। এগুলোর পিছনে আপনি খুব ভালোভাবে হোমওয়ার্ক করেছিলেন। আমার কথাগুলো মৃণালবাবুর খুব মনে ধরল। উনি বললেন, আপনি ডাক্তার বলেই খুব খুঁটিয়ে দৃশ্যগুলো খেয়াল করেছেন, বলুন কী জানতে চান। এভাবেই শুরু হল আমাদের আলাপচারিতা। তখন তো আর মোবাইল ফোন আসেনি, কাজেই রেকর্ড করার কোনও সুযোগ আমার ছিল না, আমি ফোনে কথা বলতে বলতেই কাগজে দ্রুত নোট নিতে লাগলাম। প্রায় ৫০ মিনিট কথা বলার পর ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ফোন ছেড়ে দিলাম। ছাড়বার আগে উনি আমাকে পরিষ্কার বলে দিলেন, লেখাটা রেডি হলে আমার বাড়িতে এসে আমাকে একবার দেখিয়ে নেবেন। আমি প্রয়োজনীয় কারেকশন করে দেব।
মৃণাল সেন
দিন তিনেকের মধ্যেই লেখাটা রেডি করে ফেললাম। ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে একদিন সকালে ওঁর বাড়িতে গেলাম। খুব মন দিয়ে প্রতিটি লাইন ধরে ধরে পড়লেন এবং টুকটাক কারেকশন করতে লাগলেন। হঠাৎ একটি প্যারাগ্রাফ, যেখানে উনি ওঁর প্রবাসী ছেলের কথা সবিস্তারে বলেছিলেন, সেটা পড়ে ভুরু কুঁচকালেন। একটু বিরক্তির সঙ্গে বললেন, এমনভাবে আপনি এখানটায় লিখেছেন, মনে হচ্ছে ছেলের সঙ্গে আমার একেবারে লাঠালাঠির সম্পর্ক। জায়গাটা রি-রাইট করুন। এর মধ্যেই ওঁর স্ত্রী গীতা সেন ট্রে-তে করে দু কাপ চা নিয়ে ঢুকলেন। ভদ্রমহিলাকে সিনেমার পর্দায় বরাবরই আমার খুব ডিগনিফায়েড মনে হয়। বাস্তবে দেখলাম, উনি তাই-ই। আকালের সন্ধানে সিনেমায় ওঁর অবিস্মরণীয় অভিনয়ের কথা মনে পড়ল। মৃণালবাবু আমার সঙ্গে গীতা সেনের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি চা-কুকিজ খেতে খেতে ওই অংশটি রি- রাইট করলাম। উনি পড়ে খুশি হলেন। আরেকবার লেখাটিতে চোখ বুলিয়ে নীচে সই করে দিলেন। আমি অনুরোধ করলাম, আমার নামটা যদি একটু লিখে দেন। উনি সই-এর বাঁদিকে লিখলেন, ডাক্তার লেখক অমিতাভকে। মৃণালবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা আনন্দবাজার। দুলেন্দ্রদা-র সঙ্গে দেখা করে তার হাতে লেখাটি তুলে দিলাম। উনি পেয়ে খুব খুশি হলেন। বললেন, আমি এই লেখার ইন্ট্রোডাকশন আর মৃণালদার ইন্টারভিউটা কম্পোজে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি বললাম, দাদা জেরক্স করে এনে একটা কপি আমার কাছে রাখি। উনি আমার নাম লিখে সই করে দিয়েছেন তো, তাই বলছি। দুলুদা হেসে বললেন, কম্পোজের পর তোকে আমি অরিজিনাল কপিটাই দিয়ে দেব। বলাই বাহুল্য, সেই কপি আমি আর পাইনি। দুলুদা আমার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। তাঁর দৌলতেই আমি আনন্দলোক পুজো সংখ্যায় লেখার সুযোগ পেয়েছি, অন্য সংখ্যাগুলোতেও একাধিকবার লিখেছি। কিন্তু তবু আমার নাম লেখা মৃণাল সেনের সেই কপি না পাওয়ার দুঃখ আমার আজও যায়নি।
দুলুদা আমায় বললেন, শুধু মৃণাল সেনের ইন্টারভিউ দিয়ে তো হবে না। তুই আরও দু-একজনের সঙ্গে কথা বল। তরুণ মজুমদার কিংবা তপন সিংহ বা ওই লেভেলের কোনও পরিচালকের সঙ্গে। পুজো সংখ্যার লেখা। বুঝতেই পারছিস।
আমার মাথায় তখন লেখার ভূত চেপেছে। তরুণ মজুমদারের সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় হয়েছিল। আমি মাস ছয়েক আগেই ওঁকে নিয়ে একটি বড় লেখা করেছিলাম আনন্দলোকের জন্য। সেই গল্প আপনাদের পরে শোনাব। সেই তরুণবাবুকে রাতেই ফোন করলাম। উনি সব শুনলেন। শুনে বললেন, এই বিষয় নিয়ে বলতে তিনি আগ্রহী নন। কারণ সাবজেক্টটাই তাঁর কাছে মরবিড মনে হচ্ছে। দু-একবার অনুরোধ করেও যখন বুঝলাম কাজ হবে না, তখন তপন সিংহের কথা ভাবলাম। ওঁর এক অ্যাসিস্টেন্ট, নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, আমার পূর্ব পরিচিত ছিল। তাকেই ফোন করলাম। শুনে একটু ইতস্তত করে ও বলল, দিন চারেক বাদে আপনি একবার নিউ থিয়েটার্সে আসুন। আমি পরিচয় করিয়ে দেব। তবে উনি এই বিষয়ে বলবেন কি না, বা বলার জন্য সময় করতে পারবেন কি না, সেই গ্যারান্টি কিন্তু আমি দিতে পারছি না। আমি শুধু বললাম, তুমি পরিচয়টুকু করিয়ে দাও, বাকি যা করার আমিই করব।
দুলুদা আমায় বললেন, শুধু মৃণাল সেনের ইন্টারভিউ দিয়ে তো হবে না। তুই আরও দু-একজনের সঙ্গে কথা বল। তরুণ মজুমদার কিংবা তপন সিংহ বা ওই লেভেলের কোনও পরিচালকের সঙ্গে। পুজো সংখ্যার লেখা। বুঝতেই পারছিস।
আমার মাথায় তখন লেখার ভূত চেপেছে। তরুণ মজুমদারের সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় হয়েছিল। আমি মাস ছয়েক আগেই ওঁকে নিয়ে একটি বড় লেখা করেছিলাম আনন্দলোকের জন্য। সেই গল্প আপনাদের পরে শোনাব। সেই তরুণবাবুকে রাতেই ফোন করলাম। উনি সব শুনলেন। শুনে বললেন, এই বিষয় নিয়ে বলতে তিনি আগ্রহী নন। কারণ সাবজেক্টটাই তাঁর কাছে মরবিড মনে হচ্ছে। দু-একবার অনুরোধ করেও যখন বুঝলাম কাজ হবে না, তখন তপন সিংহের কথা ভাবলাম। ওঁর এক অ্যাসিস্টেন্ট, নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, আমার পূর্ব পরিচিত ছিল। তাকেই ফোন করলাম। শুনে একটু ইতস্তত করে ও বলল, দিন চারেক বাদে আপনি একবার নিউ থিয়েটার্সে আসুন। আমি পরিচয় করিয়ে দেব। তবে উনি এই বিষয়ে বলবেন কি না, বা বলার জন্য সময় করতে পারবেন কি না, সেই গ্যারান্টি কিন্তু আমি দিতে পারছি না। আমি শুধু বললাম, তুমি পরিচয়টুকু করিয়ে দাও, বাকি যা করার আমিই করব।
তপন সিংহ
পরিচয় হল, আমার অন্যতম প্রিয় পরিচালকের সঙ্গে। যার ঝিন্দের বন্দী, হাটে বাজারে, এক যে ছিল দেশ-সহ বহু সিনেমা দেখতে দেখতেই আমি বড় হয়েছি৷ উনি সেই সময় খুব ব্যস্ত ছিলেন ‘এক ডাক্তার কি মৌত’ ছবিটি নিয়ে। পরের দিনই ওঁকে মুম্বই যেতে হবে। আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম, আপনার ইন্টারভিউ না হলে আমার লেখাটি আনন্দলোক পূজা সংখ্যায় বার হবে না। জীবনে এই সুযোগ আমার আর দ্বিতীয় বার আসবে না। অতিশয় সজ্জন মৃদুভাষী মানুষটি আমার কথায় সাড়া দিয়ে বললেন, আপনি ঘণ্টাদুয়েক অপেক্ষা করতে পারবেন? আমি কাজ সেরে লাঞ্চ করার পর আপনাকে ডেকে নেব, কিন্তু দশ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারব না। আমি তো শুনেই আহ্লাদে আটখানা। একটা বেশ বড়সড় টেপ রেকর্ডার ঝোলায় ভরে নিয়ে গিয়েছিলাম। অপেক্ষা করতে থাকলাম। নজর রাখতে লাগলাম ওঁর অফিস ঘরের দিকে। বিরাট বিরাট দুটো জানালা দিয়ে অফিস ঘরের অনেকটাই বাইরে থেকে দেখা যায়। ঘণ্টা তিনেক পেরিয়ে যাবার পর, উঁকিঝুঁকি মারতেই ওঁর স্ত্রী প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং পরিচালিকা অরুন্ধতী দেবীর মুখোমুখি পড়ে গেলাম। ওঁকে সব কথা বললাম। উনি বললেন অসম্ভব, তপনবাবু আজ ভীষণ ব্যস্ত। ওদিকে তাকিয়ে দেখুন কত সাংবাদিক ওয়েট করছে। আমি হতাশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। একটু বাদে তপনবাবু বেরিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে সামনে একটি গাছের তলায় আগে থেকে পেতে রাখা চেয়ারে বসলেন, আমাকেও বসতে বললেন। আমি টেপ রেকর্ডার অন করলাম। শুরু করলাম হাটে বাজারে নিয়ে। ডাক্তারের ভূমিকায় অশোক কুমারের সেই অসাধারণ অভিনয় এবং ওই সিনেমায় দুটি মৃত্যু দৃশ্য নিয়ে ওঁকে উসকে দিলাম। তপনবাবু খুব মৃদু স্বরে কথা বলেন। এতটাই মৃদু স্বরে যে ওঁর মুখের সামনে আমি টেপরেকর্ডার হাতে করে ধরে রাখলাম। উনি ধীরে ধীরে কেটে কেটে সুন্দর করে ওঁর বিভিন্ন সিনেমার ডাক্তারবাবু এবং মৃত্যু দৃশ্য নিয়ে কথা বলে গেলেন। অমন বিখ্যাত একজন পরিচালক সেদিন আমার মাত্র এক হাত দূরে বসেছিলেন অন্তত আধ ঘণ্টা। তখন মোবাইলের যুগ ছিল না। আমি আমার ক্যামেরাটিও নিয়ে যায়নি। আর নিয়ে গেলেই বা কাকে দিয়ে ফোটো তোলাতাম! সঙ্গে তো কোনও সঙ্গী ছিল না। সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবার পর কোথায় যে কেটে পড়েছিল কে জানে!
সেবার আনন্দলোক পুজো সংখ্যায় অনেক ছবি-সহ বেশ জমিয়ে বেরিয়েছিল আমার লেখাটি। শিরোনাম ছিল, সিনেমার মৃত্যু দৃশ্য এবং মৃণাল সেন ও তপন সিংহ। দুলেন্দ্রদা, মৃণাল সেন, তপন সিংহ এবং সত্যজিৎ রায় সবাই এখন প্রয়াত। কিন্তু স্মৃতিগুলো তো থেকেই গেছে। বয়ে নিয়ে চলেছি আমি একা। দুলুদার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, এই মহান মানুষগুলোর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ আমাকে করে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া উনি আমার মুখে শোনা ডাক্তারি জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন দেশ পুজো সংখ্যায়, যেটি পরবর্তীকালে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বই হয়ে বেরিয়েছিল, নাম ছিল ‘ছিন্ন উত্তরীয়’। সেখানে আমার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল অজিতাভ ভট্টাচার্য, আমার স্ত্রীর নাম ধৃতিকণার পরিবর্তে বৃতিকণা, আমার বাসস্থান অরবিন্দ নগরের পরিবর্তে নন্দন নগর। এও তো আমার কাছে এক বিরাট সম্মান। তখন আমাকে কেই-বা চেনে কেই-বা জানে! যাঁরা এই লেখাটি পড়লেন তাঁদের কাছে একটি অনুরোধ রইল, সম্ভব হলে দুলেন্দ্র ভৌমিকের কিশোর উপন্যাস গৌর-নিতাই এবং ছিন্ন উত্তরীয় বই দুটি সংগ্রহ করে পড়বেন। বড় অকালে চলে গেছেন দুলেন্দ্রদা। এই লেখা তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ আমার হৃদয় তর্পণ।
ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সেবার আনন্দলোক পুজো সংখ্যায় অনেক ছবি-সহ বেশ জমিয়ে বেরিয়েছিল আমার লেখাটি। শিরোনাম ছিল, সিনেমার মৃত্যু দৃশ্য এবং মৃণাল সেন ও তপন সিংহ। দুলেন্দ্রদা, মৃণাল সেন, তপন সিংহ এবং সত্যজিৎ রায় সবাই এখন প্রয়াত। কিন্তু স্মৃতিগুলো তো থেকেই গেছে। বয়ে নিয়ে চলেছি আমি একা। দুলুদার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, এই মহান মানুষগুলোর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ আমাকে করে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া উনি আমার মুখে শোনা ডাক্তারি জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন দেশ পুজো সংখ্যায়, যেটি পরবর্তীকালে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বই হয়ে বেরিয়েছিল, নাম ছিল ‘ছিন্ন উত্তরীয়’। সেখানে আমার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল অজিতাভ ভট্টাচার্য, আমার স্ত্রীর নাম ধৃতিকণার পরিবর্তে বৃতিকণা, আমার বাসস্থান অরবিন্দ নগরের পরিবর্তে নন্দন নগর। এও তো আমার কাছে এক বিরাট সম্মান। তখন আমাকে কেই-বা চেনে কেই-বা জানে! যাঁরা এই লেখাটি পড়লেন তাঁদের কাছে একটি অনুরোধ রইল, সম্ভব হলে দুলেন্দ্র ভৌমিকের কিশোর উপন্যাস গৌর-নিতাই এবং ছিন্ন উত্তরীয় বই দুটি সংগ্রহ করে পড়বেন। বড় অকালে চলে গেছেন দুলেন্দ্রদা। এই লেখা তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ আমার হৃদয় তর্পণ।
ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে