টনিক সিনেমার গগনচুম্বী সাফল্যের পর পরানদাকে আমি বলেছিলাম, ‘তোমার জীবনে আর কি চাই! তুমি ‘সিনেমাওয়ালা’র মতো অন্য ঘরানার ছবি করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছ। আবার পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি ‘টনিক’ করে তো সাফল্যের আইফেল টাওয়ার ছুঁয়ে ফেললে। ‘প্রশ্ন শুনে পরানদা চোখ গোল গোল করে আমার দিকে একটুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর বললেন, ‘শিল্পীর খিদে কি কখনও মেটে রে! সে চায় আরও ভালো ভালো কাজ। খিদে মিটে গেলেই তো শিল্পী জীবন শেষ।’
মনে পড়ে গেল মহানায়কের কথা। মৃত্যুর বছর কয়েক আগে থেকেই ভালো কাজের জন্য তিনি রীতিমতো পাগলামি শুরু করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের এক সহকারীকে একান্তে বলেছিলেন, ‘দেখো না মানিকদার ছবিতে আমার যদি একটা ছোটখাটো রোল জোটে।’ তরুণ মজুমদারের ‘সিনেমা পাড়া দিয়ে’ বইটি থেকে উত্তম কুমার সম্বন্ধে একদম অজানা একটি তথ্য জানতে পারলাম। ১৯৮০ সাল তনুবাবু উৎপল দত্তর চূড়ান্ত মঞ্চ সফল নাটক ‘টিনের তলোয়ার’ নিয়ে সিনেমা বানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কথাটা উত্তম কুমারের কানেও পৌঁছেছে। তাঁর ভীষণ ইচ্ছে প্রধান চরিত্র বীরকৃষ্ণ দাঁ উনি করবেন। নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে এক সন্ধ্যাবেলা দু’জনে মুখোমুখি হলেন। উত্তম কুমার সরাসরি তনুবাবুর কাছে চরিত্রটি চেয়ে বসলেন। তনবাবু সম্মতি জানালেন। আনন্দে ডগমগ হয়ে উত্তম কুমার সেদিন তনুবাবুকে ঠিক কি বলেছিলেন, সেটি ‘সিনেমা পাড়া দিয়ে’ বইটি থেকে হুবহু এখানে তুলে ধরলাম। ‘একটা কথা শুনে রাখুন, আমি আমার অ্যাক্টিং স্টাইলটা চেঞ্জ করছি। অ্যান্ড বীরকৃষ্ণ দাঁ উইল বি দি ফার্স্ট স্টেপ। নায়ক-টায়ক অনেক হল জীবনে। এবার টোটালি অন্যরকম। ভিলেন, ভীতু, মেরুদণ্ডহীন, খেয়ালি— যতরকম উল্টোপাল্টা ক্যারেক্টার আছে—সব করব। বাইরে নয়, নিজের কাছে প্রুভ করব— আমি পারি। ইয়েস পারি আমি।’ এই কথাগুলো এখানে এই জন্যেই বললাম যে, এর থেকে বোঝা যায়, অত বড় একজন জনপ্রিয় শিল্পীরও কি ভয়ংকর খিদে ছিল ভালো চরিত্রের জন্য। দুর্ভাগ্য হল এটাই যে, উত্তমবাবু এই ছবিটি করে যেতে পারেননি। কথাবার্তা ফাইনাল হওয়ার কিছুদিনের বাদেই উনি চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন ২৪ জুলাই ১৯৮০তে।
মনে পড়ে গেল মহানায়কের কথা। মৃত্যুর বছর কয়েক আগে থেকেই ভালো কাজের জন্য তিনি রীতিমতো পাগলামি শুরু করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের এক সহকারীকে একান্তে বলেছিলেন, ‘দেখো না মানিকদার ছবিতে আমার যদি একটা ছোটখাটো রোল জোটে।’ তরুণ মজুমদারের ‘সিনেমা পাড়া দিয়ে’ বইটি থেকে উত্তম কুমার সম্বন্ধে একদম অজানা একটি তথ্য জানতে পারলাম। ১৯৮০ সাল তনুবাবু উৎপল দত্তর চূড়ান্ত মঞ্চ সফল নাটক ‘টিনের তলোয়ার’ নিয়ে সিনেমা বানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কথাটা উত্তম কুমারের কানেও পৌঁছেছে। তাঁর ভীষণ ইচ্ছে প্রধান চরিত্র বীরকৃষ্ণ দাঁ উনি করবেন। নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে এক সন্ধ্যাবেলা দু’জনে মুখোমুখি হলেন। উত্তম কুমার সরাসরি তনুবাবুর কাছে চরিত্রটি চেয়ে বসলেন। তনবাবু সম্মতি জানালেন। আনন্দে ডগমগ হয়ে উত্তম কুমার সেদিন তনুবাবুকে ঠিক কি বলেছিলেন, সেটি ‘সিনেমা পাড়া দিয়ে’ বইটি থেকে হুবহু এখানে তুলে ধরলাম। ‘একটা কথা শুনে রাখুন, আমি আমার অ্যাক্টিং স্টাইলটা চেঞ্জ করছি। অ্যান্ড বীরকৃষ্ণ দাঁ উইল বি দি ফার্স্ট স্টেপ। নায়ক-টায়ক অনেক হল জীবনে। এবার টোটালি অন্যরকম। ভিলেন, ভীতু, মেরুদণ্ডহীন, খেয়ালি— যতরকম উল্টোপাল্টা ক্যারেক্টার আছে—সব করব। বাইরে নয়, নিজের কাছে প্রুভ করব— আমি পারি। ইয়েস পারি আমি।’ এই কথাগুলো এখানে এই জন্যেই বললাম যে, এর থেকে বোঝা যায়, অত বড় একজন জনপ্রিয় শিল্পীরও কি ভয়ংকর খিদে ছিল ভালো চরিত্রের জন্য। দুর্ভাগ্য হল এটাই যে, উত্তমবাবু এই ছবিটি করে যেতে পারেননি। কথাবার্তা ফাইনাল হওয়ার কিছুদিনের বাদেই উনি চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন ২৪ জুলাই ১৯৮০তে।
পরানদারও একই অবস্থা। এই মধ্য আশিতে পৌঁছেও গত শনিবার পুরীতে গিয়েছেন সন্দীপ রায়ের ফেলুদা সিনেমার আউটডোর করতে। আসলে যে কোনও শিল্পীই চায় তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বাঁচতে। অনেক সিনেমা সিরিয়াল নাটকের কথা হল। এবার বলি পরানদার লেখালেখির বিষয় নিয়ে। অনেক পরিচালক যেমন নিজের দলের জন্য নাটক লেখেন (যে দলে আমিও পড়ি), তেমনি পরানদাও বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু নাটক লিখেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ মঞ্চায়নও হয়েছে। মোটেই গোছানো লোক নন, আমাদের এই রসিক দাদা। নাটকগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়েই ছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাট্য পত্রিকায় কিছু কিছু প্রকাশিতও হয়েছিল। আমি যে লেখালেখির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত আছি দাদা সেটা জানতেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত আমার একটি নাটকের বইয়ের ভূমিকাও দাদা লিখেছিলেন। একদিন বললাম, এই নাটকগুলো নিয়ে তো একটা সংকলন প্রকাশ করা যায়। পরানদা শুনে বললেন, ‘গেলে তো ভালোই। কিন্তু আমি তো কিছুই করতে পারবো না। আমি এই লাইনটার কিছুই জানি না।’ আমি বললাম, ‘তোমায় কিছু করতে হবে না। তুমি শুধু পান্ডুলিপিগুলোর ডিটিপি কম্পোজ করে আমার হাতে তুলে দাও। আমি ইতিমধ্যে দে’জের সঙ্গে কথা বলে রাখছি।’ দাদার সঙ্গে কথা হয়ে যাবার একটু পরেই আমি দে’জের কর্ণধার সুধাংশুদাকে ফোন করে পুরো ব্যাপারটা জানালাম। উনি তো এক কথায় রাজি। বললেন, ‘আমাদের সম্মতি জানিয়ে দিন। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করবেন আপনি। আর আমাকে একবার পরানদার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন।’
এটা বছর চারেক আগের ঘটনা। সেই বছর বইমেলাতে আমার একটি বই উদ্বোধনের জন্য পরানদাকে আমন্ত্রণ জানালাম আমি। সেখানেই সুধাংশুদার মুখোমুখি হলেন তিনি। সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়ে গেল। এরপর শুরু হল প্রস্তুতি। আমি দাদাকে একটা সাজেশন দিলাম, ‘প্রথমে বড় নাটকের কালেকশন বার না করে, তোমার তো কিছু ছোট মজার নাটক আমার পড়া আছে, সেগুলো দিয়ে একটা শ্রুতি নাটক সংকলন প্রকাশ করলে কেমন হয়! শ্রুতি নাটকের বাজার তো এখন বেশ স্টেডি।’
পরান দা বললেন, ‘এগুলো আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন! তুই শুধু অর্ডার কর, আমাকে কী করতে হবে। আমি যোগান দিচ্ছি।’ এই ভাবেই পরের বই মেলাতেই বার হয়ে গেল দাদার ‘সাতটি শ্রুতি নাটক’ বইটি। দে’জের আমন্ত্রণে বইমেলায় এসে সই করে দাদা বই বিক্রি করলেন। তবে বেশিক্ষণ স্টলের সামনে বসে থাকতে পারলেন না। ভক্তদের উৎপাতে দাদাকে এসকর্ট করে গিল্ডের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে এলাম। এরপরই পুরো পৃথিবীটাই ওলটপালট হয়ে গেল করোনার ভয়ংকর আক্রমণে। বন্ধ হয়ে গেল বইমেলাও। যে যার মতো বাড়িতে বসে অলস দিন কাটাচ্ছি। দাদাকে ফোনে বললাম, ‘এই ফাঁকে নাটক সংকলনের প্রস্তুতিটা সেরে ফেল। সব পান্ডুলিপিগুলোতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নাও। কীভাবে সাজাবে, তোমার কি ইচ্ছে, সব ঠিক করে ফেল।’
পরানদাও ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিলেন। তারপরও অবশ্য তাঁর পিছনে আমাকে পড়ে থাকতে হয়েছে, বারেবারে ফোনে তাগাদা দিতে হয়েছে, অবশেষে মাস দু’য়েক বাদে ড্রাইভারকে দিয়ে আমাকে পুরো পান্ডুলিপি পাঠালেন। আমি এক একটা করে নাটক পড়ছি আর রীতিমতো চমকে উঠছি। বিভিন্ন ধরনের নাটক। সংলাপে ভীষণ জোর, রয়েছে নাটকীয়তাও। তার থেকে বড় কথা, প্রতিটি নাটকে সমাজ সচেতনতা এবং সাধারণ মানুষদের প্রতি একটা মমত্ববোধের ছাপ স্পষ্ট। তখনই মনে হল, আরে, পরানদার উত্থান তো গণনাট্যর হাত ধরেই। জীবনটাই তো শুরু করেছিলেন মানুষের জন্য নাটক করার ব্রত নিয়ে। কাজেই তিনি সিরিয়াস নাটক লিখুন কিংবা হাস্যরসের নাটকই লিখুন, মানুষের কথা তো তাতে থাকবেই।
সম্পাদনার কাজ শেষ করে পান্ডুলিপি পাঠিয়ে দিলাম দে’জ-এর ঘরে। মাসখানেক বাদে প্রথম প্রুফ হাতে এল। সেটি কারেকশন করার পরে এল দ্বিতীয় প্রুফ। সেটিও দেখে দিলাম। এরপর সেটি গেল প্রফেশনাল প্রুফ রিডারের হাতে। এর মধ্যে আমার খুব প্রিয় শিল্পী রঞ্জন দত্তের সঙ্গে কথা বলে নাটকগুলোর সঙ্গে যেসব স্কেচ যাবে সেগুলো ফাইনাল করলাম। তারপর শুরু হল প্রচ্ছদের প্রস্তুতি। লেখক পরিচিতি, বইয়ের বিষয়বস্তু, এসবও নিজের হাতেই লিখলাম। সবটাই দাদাকে পড়ে শুনিয়ে, সংশোধন করে, তার মতানুসারে ফাইনাল করলাম। এ ভাবে ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলাম। অবশেষে গত বইমেলার অনেক আগেই প্রকাশিত হল দাদার ‘নাটক সমগ্র’। বলাই বাহুল্য, পরানদা খুব খুশি হয়েছিলেন বইটির কপি হাতে পেয়ে। এই বইয়ের এক অমূল্য ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার। আমাদের সবার প্রিয় তনুবাবু, পরানদার প্রিয় তনুদা। আর পরানদা এই বইয়ে লেখকের কলমে যা লিখেছিলেন, তার অনেকটাই ছিল পদ্য ঢঙে লেখা এবং আমাকে নিয়ে। এখানে তার কিছুটা অংশ তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।
‘কি জানি কেমন করে, ক্রমে ক্রমে বার্তা গেল রটি/হঠাৎ এক সন্ধ্যায় অমিতাভ ভটচাজ হাজির আমার বাড়ি বন্ধ রেখে ওটি/বললাম, কি ব্যাপার! নাক কান গলা, না বলে অবেলা! শোনা- বলা-গন্ধ, এ বেলা কি বন্ধ?/ডাক্তার বলে, রাখ কথার ভেলকি, এড়িয়ে যাওয়ার ছল কি, খবর আছে সব, ওটি হচ্ছে না/কেন? কারেন্ট দিচ্ছে না! (দুজনেরই হাসি।। অনেক কথার পর)
‘কি জানি কেমন করে, ক্রমে ক্রমে বার্তা গেল রটি/হঠাৎ এক সন্ধ্যায় অমিতাভ ভটচাজ হাজির আমার বাড়ি বন্ধ রেখে ওটি/বললাম, কি ব্যাপার! নাক কান গলা, না বলে অবেলা! শোনা- বলা-গন্ধ, এ বেলা কি বন্ধ?/ডাক্তার বলে, রাখ কথার ভেলকি, এড়িয়ে যাওয়ার ছল কি, খবর আছে সব, ওটি হচ্ছে না/কেন? কারেন্ট দিচ্ছে না! (দুজনেরই হাসি।। অনেক কথার পর)
দিন দশেক সময় নাও, খান দশেক এখন নাও, পরের কথা পরে/ওরে বাবা! খুঁজতে সময় যাবে, বাছতে যাবে সময়, এর মধ্যে পারবো কেমন করে, সাত দিনেতে পারব না রে বাপু-/বেশ দিন দশেকই নাও, এদিকে বড় তাগাদা দিচ্ছে দে’জ-এর অপু।’
‘আরও কিছু কথার পর অমিতাভ চলে গেল। আমি তো পড়লাম মহা ফাঁপরে। বুঝলাম, সত্যি কারের ভালোবাসা একটা তিরতিরে হালকা অনুভূতির জন্ম দেয়। সেটাই বোধহয় আশকারার আনন্দ। কিন্তু আমি যে গেঁতো মানুষ, হঠাৎ করে এত সব! নাহ, অমিতাভর তৎপরতায় আমি উল্লসিত হলাম বটে, তবে আমার আলসেমিতে কোনও নাড়া লাগেনি। শেষ পর্যন্ত সবটাই কিন্তু ডাক্তার নিজেই সামাল দিয়েছে। এ ব্যাপারে ও তো মাস্টার। ওর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
‘আরও কিছু কথার পর অমিতাভ চলে গেল। আমি তো পড়লাম মহা ফাঁপরে। বুঝলাম, সত্যি কারের ভালোবাসা একটা তিরতিরে হালকা অনুভূতির জন্ম দেয়। সেটাই বোধহয় আশকারার আনন্দ। কিন্তু আমি যে গেঁতো মানুষ, হঠাৎ করে এত সব! নাহ, অমিতাভর তৎপরতায় আমি উল্লসিত হলাম বটে, তবে আমার আলসেমিতে কোনও নাড়া লাগেনি। শেষ পর্যন্ত সবটাই কিন্তু ডাক্তার নিজেই সামাল দিয়েছে। এ ব্যাপারে ও তো মাস্টার। ওর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
আমার সম্বন্ধে পরানদার এই আনন্দময় মূল্যায়ন, আমাকে যথেষ্ট আনন্দিত করেছিল, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে আমি নিজেও নাটকের লোক বলে, কাজটা ভালোবেসেই করেছিলাম। করোনার জন্য এক বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর (২০২২) বইমেলার আসর বসেছিল সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। পরানদাকে একদিন নিয়ে গিয়েছিলাম। দে’জ পাবলিশিং-এর স্টলের সামনে টেবিল চেয়ার পেতে পরানদাকে বসানো হল, সামনে ওঁর লেখা বইয়ের স্তূপ। কিন্তু কয়েকটা বইয়ে সই দিতে না দিতেই দাদা তার ভক্তবৃন্দ পরিবেষ্টিত হয়ে মবড হয়ে গেলেন। সবাই দাদার সঙ্গে সেলফি তুলতে চায়। কিন্তু দাদা তো এ ব্যাপারে সেলফিস! গুতোগুতি শুরু হতেই দে’জের কর্মীরা দাদাকে নিয়ে সোজা গিল্ডের অফিসে। সেখানে ঢুকে সোফায় বসে দাদা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কফি এল সবার জন্যই। পরানদার জন্য অবশ্য চিনি ছাড়া। নানা বিষয়ে কথা হতে লাগলো আমাদের। কবি শ্রীজাত, লেখক প্রচেত গুপ্ত, বইমেলা কমিটির দুই কর্ণধার সুধাংশু শেখর দে এবং ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকের সঙ্গেই ইনস্টলমেন্টে আড্ডা দিয়ে চললেন পরানদা।
হঠাৎ এক সুবেশা সুন্দরী তরুণী পরানদা পরানদা করে দাদার এক্কেবারে পাশে গিয়ে বসলেন, সঙ্গী পুরুষ বন্ধুটি (স্বামীও হতে পারে) ওদের দু’জনের এবং আমাদেরও নানা কায়দায় মোবাইলে ছবি তুলে যেতে লাগলেন। ভদ্রমহিলা দাদার সঙ্গে বেশ গল্প জুড়ে দিলেন। দাদা হা-হু করে চালিয়ে যেতে লাগলেন। মিনিট ১৫ পরে ভদ্রমহিলা সবান্ধব বিদায় নিলে পরানদা আমাকে বললেন, ‘উনি কি তোর বিশেষ পরিচিত?’ আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘আমার পরিচিত হতে যাবে কেন! উনি তো তোমার পরিচিত। যেভাবে প্রায় কোলে বসে ছবি তোলার পোজ দিলেন!’ পরানদা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ‘তোর পরিচিত নয়! আমিও তো ওকে চিনি না। আমি তো তোর পরিচিত ভেবেই এত আবদার মেটালাম।’ নিজের বোকামিতে শেষ পর্যন্ত পরানদা নিজেই হো হো করে হেসে উঠলেন।
হঠাৎ এক সুবেশা সুন্দরী তরুণী পরানদা পরানদা করে দাদার এক্কেবারে পাশে গিয়ে বসলেন, সঙ্গী পুরুষ বন্ধুটি (স্বামীও হতে পারে) ওদের দু’জনের এবং আমাদেরও নানা কায়দায় মোবাইলে ছবি তুলে যেতে লাগলেন। ভদ্রমহিলা দাদার সঙ্গে বেশ গল্প জুড়ে দিলেন। দাদা হা-হু করে চালিয়ে যেতে লাগলেন। মিনিট ১৫ পরে ভদ্রমহিলা সবান্ধব বিদায় নিলে পরানদা আমাকে বললেন, ‘উনি কি তোর বিশেষ পরিচিত?’ আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘আমার পরিচিত হতে যাবে কেন! উনি তো তোমার পরিচিত। যেভাবে প্রায় কোলে বসে ছবি তোলার পোজ দিলেন!’ পরানদা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ‘তোর পরিচিত নয়! আমিও তো ওকে চিনি না। আমি তো তোর পরিচিত ভেবেই এত আবদার মেটালাম।’ নিজের বোকামিতে শেষ পর্যন্ত পরানদা নিজেই হো হো করে হেসে উঠলেন।
দাদাকে নিয়ে আমার কথা আর শেষ হওয়ার নয়। কারণ আমাদের সম্পর্কটা পারিবারিক এবং অবশ্যই আত্মিক। দিন দশেক আগে আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে পরানদা সপরিবারে এসেছিলেন। দীর্ঘ সময় ছিলেন এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব এবং ফটো সেশন করেছেন হাসিমুখেই। পরের দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ দাদা নিজেই ফোন করলেন আমাকে। তখন মেয়ে বিদায়ের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের সবার মনই ভারাক্রান্ত। দাদা আমাকে বললেন, ‘অন্যের সামনে কক্ষনও নিজের দুঃখটা প্রকাশ করবি না। আনন্দটা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। দুঃখটা রাখতে হয় নিজের অন্তরে। আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে, হবেই। এটাই শাশ্বত। বিয়ের পর মেয়ে মা বাবার ঘর ছেড়ে পরের ঘরে যাবে। এটাই তো চিরকালীন নিয়ম। মন খারাপ করিস না। সব ভালোভাবে মিটে গিয়েছে, এটাই তো আনন্দের। শরীরের দিকে নজর দিস। আর আমার প্রিন্সেসকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে দিস।’ বলাই বাহুল্য এই প্রিন্সেসটি আমার একমাত্র মেয়ে অর্কমিতা, দাদা ওকে চিরকাল ওই নামেই ডেকে এসেছেন। সেদিন আমি যেন চির রসিক পরানদার মধ্যে, অন্য একজন মানুষকে খুঁজে পেয়েছিলাম, যার স্নেহ, ভালোবাসা আর আশীর্বাদের হাত সব সময় আমায় জড়িয়ে আছে। ভালো থেকো দাদা, আর এভাবেই আমার সঙ্গে থেকো।