নন্দনে শঙ্খ ঘোষ উদ্বোধন করছেন দাদাকে নিয়ে চিত্র প্রদর্শনীর। দাদার পাশে দীপা বউদি।
২০১৬ সালের আগস্ট মাসের কোনও একদিন প্রচন্ড ভিড় সেদিন নন্দন চত্বর জুড়ে। দে’জ পাবলিশিং-এর পক্ষ থেকে আমি সপরিবারে আমন্ত্রিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে। সৌমিত্রদা ছাড়াও অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন সবার প্রিয় অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। এছাড়া কবি শঙ্খ ঘোষ, পবিত্র সরকার এবং শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে আরও উজ্জ্বল করেছিল।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে দাদাকে নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শঙ্খ ঘোষ নন্দন ২-এ। ভিড় ঠেলে কোনওমতে সেই ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষে সবাই এগলো নন্দন ১- এর দিকে। আমি মন দিয়ে প্রদর্শনী দেখতে শুরু করলাম। দেখলাম একটু দূরে সৌমিত্রদার স্ত্রী, আমাদের দীপা বৌদিও প্রদর্শনী দেখছেন আরেকজনের সঙ্গে। আমার স্ত্রী ধৃতিকণা গিয়ে বৌদির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল।বৌদি আগেই আমাদের চিনতেন। প্রদর্শনী দেখে বৌদিকে নিয়ে আমরা হলে গেলাম। গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। বসার কোনও সিট খালি নেই। অনেক কষ্টে দে’জের একজনকে ধরে বৌদিকে সামনের দিকে বসিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য আমরাও বসার জায়গা পেলাম। অনুষ্ঠান তখনও শুরু হয়নি। একদম সামনের সারিতে মাঝামাঝি জায়গায় পরপর বসে ছিলেন সৌমিত্রদা, নাসিরুদ্দিন ও অন্য ভিআইপিরা। আমি গিয়ে সৌমিত্রদার পদতলে হাঁটুমুড়ে বসে বললাম, দাদা মনে আছে আজ থেকে ২৬ বছর আগে এই দে’জ থেকে আপনার প্রথম বই ‘হায় চির জল’ প্রকাশিত হয়েছিল আমারই উদ্যোগে। ঘাড়টা একটু নেড়ে মৃদু হাসলেন দাদা। আমার কাঁধের উপর ডান হাতটা রেখে বললেন, এখনও স্মৃতিভ্রংশ হয়নি, সব মনে আছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে দাদাকে নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শঙ্খ ঘোষ নন্দন ২-এ। ভিড় ঠেলে কোনওমতে সেই ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষে সবাই এগলো নন্দন ১- এর দিকে। আমি মন দিয়ে প্রদর্শনী দেখতে শুরু করলাম। দেখলাম একটু দূরে সৌমিত্রদার স্ত্রী, আমাদের দীপা বৌদিও প্রদর্শনী দেখছেন আরেকজনের সঙ্গে। আমার স্ত্রী ধৃতিকণা গিয়ে বৌদির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল।বৌদি আগেই আমাদের চিনতেন। প্রদর্শনী দেখে বৌদিকে নিয়ে আমরা হলে গেলাম। গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। বসার কোনও সিট খালি নেই। অনেক কষ্টে দে’জের একজনকে ধরে বৌদিকে সামনের দিকে বসিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য আমরাও বসার জায়গা পেলাম। অনুষ্ঠান তখনও শুরু হয়নি। একদম সামনের সারিতে মাঝামাঝি জায়গায় পরপর বসে ছিলেন সৌমিত্রদা, নাসিরুদ্দিন ও অন্য ভিআইপিরা। আমি গিয়ে সৌমিত্রদার পদতলে হাঁটুমুড়ে বসে বললাম, দাদা মনে আছে আজ থেকে ২৬ বছর আগে এই দে’জ থেকে আপনার প্রথম বই ‘হায় চির জল’ প্রকাশিত হয়েছিল আমারই উদ্যোগে। ঘাড়টা একটু নেড়ে মৃদু হাসলেন দাদা। আমার কাঁধের উপর ডান হাতটা রেখে বললেন, এখনও স্মৃতিভ্রংশ হয়নি, সব মনে আছে।
নন্দনে পবিত্র সরকার, দাদা এবং নাসিরুদ্দিন শাহর সঙ্গে।
সেদিন অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের চমৎকার মূল্যায়ন করেছিলেন নাসিরুদ্দিন। পারস্পরিক আলাপচারিতায় উঠে এসেছিল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা মিশ্রিত আন্তরিক সম্পর্কের কথা। অনুষ্ঠান শেষে আমরা আমন্ত্রিত ছিলাম ক্যালকাটা ক্লাবের নৈশভোজে। সেখানেও মধ্যমণি ছিলেন এই দু’জন। আমরা মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জন আমন্ত্রিত ছিলাম সেখানে, কাজেই অন্তত ঘণ্টা দু’য়েক এই দু’ জনকে কাছ থেকে দেখার এবং তাঁদের সংস্পর্শে যাবার সুযোগ হয়েছিল প্রায় প্রত্যেকেরই। আমার স্ত্রী গিয়ে নাসিরুদ্দিনকে অনুরোধ করলেন একসঙ্গে ছবি তোলার জন্য। উনি তখন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সম্ভবত শমীকবাবু ওঁর ইন্টারভিউ করছিলেন। উনি বললেন একটু অপেক্ষা করতে। আমরা আমাদের মতো করে এর-তার সঙ্গে গল্প করছিলাম, টুকটাক খাওয়া-দাওয়াও চলছিল। হঠাৎ দেখি উনি আমাদের ডাকছেন। আমরা এগিয়ে যেতেই বললেন, নিন এবার ফটো তুলুন। হাসিমুখে আমাদের সঙ্গে গ্রুপ ফটো, সিঙ্গেল ফোটো… যেমন যেমন আমরা আবদার করলাম, সব মেটালেন। এই পার্টিতে কবি শ্রীজাত, অভিনেতা শুভাশিস, সংবাদ প্রতিদিনের সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু, রবীন্দ্রভারতীর সোসাইটির সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়-সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এবার তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মাতলেন নাসিরুদ্দিন। আমরাও গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। ওঁকে ঘিরে বেশ সুন্দর একটা বৃত্ত তৈরি হল। আলোচনা করলেন ভারতবর্ষের নাট্যশাস্ত্র নিয়ে, সেই শুরুর দিন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। কি অসাধারণ পাণ্ডিত্য এবং মেধা এই ভদ্রলোকের! স্বকর্ণে না শুনলে সেদিন সেটা বিশ্বাস করতাম না। তখনই রিলিজ করেছিল ‘ডার্টি পিকচার’ সিনেমাটি। ‘উলালা উলালা’ গানটির সঙ্গে লিপ মেলানো সেই নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে এই ভদ্রলোককে মেলাতে একটু মুশকিল হচ্ছিল! অভিনয় বিষয়ক নানা রকম প্রশ্ন করেছিলাম আমরা। হাসি মুখে প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই সুচিন্তিত উত্তর দিয়েছিলেন। এই দুই মহান শিল্পীর সান্নিধ্যে সেদিন সন্ধেটা বড় ভালো কেটেছিল। এই সুযোগে এইজন্য আরেকবার ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি দে’জ পাবলিশিংকে।
দূরদর্শনের জন্য 'চেনা মুখ অচেনা মানুষ'-এর শ্যুটিং।
সৌমিত্রদার দে’জ পাবলিশিং থেকে দ্বিতীয় যে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেটি ছিল ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’। দে’জের শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি সিরিজ আছে। সেখানে অনেক কবিরই কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার মাধ্যমে দে’জের অনুরোধ পৌঁছল সৌমিত্রদার কানে। উনি রাজি হলেন এবং যথারীতি কিছুদিন বাদে কবিতার একটি ফাইল দাদার থেকে আমি সংগ্রহ করে নিয়ে এলাম। সৌমিত্রদার ইচ্ছে ছিল, ওঁর বিশিষ্ট বন্ধু এবং আমাদের সবার প্রিয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যদি কবিতা বাছাইয়ের কাজটা করে দেন। সুধাংশু শেখর দে সুনীল বাবুর সঙ্গে কথা বলে ওঁকে রাজি করালেন। সুনীলদা তখন পুজোর লেখা নিয়ে ব্যস্ত। বললেন, যদি দে’জের কোনও কবি প্রাইমারি বাছাইটা করে দেন, তাহলে তার থেকে ফাইনাল সিলেকশন করতে ওঁর অনেক সুবিধা হবে। সুধাংশু দা আমাকেই দায়িত্ব দিলেন প্রাইমারি বাছাইয়ের জন্য। আমি তো কবিতার বিশেষ কিছু বুঝি না। তবু ফাইল নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। আমার অসহায় অবস্থা শুনে আমার স্ত্রী ধৃতিকণা এই কাজটি খুব আনন্দের সঙ্গে করলেন। অবশেষে সেই ফাইল নিয়ে আমি এবং দে’জ-এর পক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র শী, দু’জনে গিয়ে হাজির হলাম আনন্দবাজারের দেশ বিভাগের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। এরপর আমি পেশা ছাড়াও সিনেমা-সিরিয়ালের শ্যুটিং-এ বেশ কিছুদিন ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তার ফলে এই বইটির পরবর্তী তদারকির কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বই বেরোনোর পরে আমি যখন দাদাকে ফোন করি, তখন দাদা এই বই নিয়ে তার কিছু অসন্তোষের কথা আমাকে জানিয়েছিলেন। প্রচুর মুদ্রণ প্রমাদ আছে, তাকে ঠিকমতো প্রুফ দেখানো হয়নি… ইত্যাদি কিছু অভিযোগ করে ছিলেন। পরবর্তীকালে অবশ্য দে’জ-এর পক্ষ থেকে ওগুলো সংশোধন করে দেওয়া হয়।
নাসিরুদ্দিন শাহর সঙ্গে।
১৯৯০ সালের গোড়ার দিকের কথা। হঠাৎ দাদার সঙ্গে একটু অন্যরকম একটা কাজের প্রস্তাব পেলাম কলকাতা দূরদর্শন থেকে। তখন সেখানে ‘চেনা মুখ অচেনা মানুষ’ বলে একটি সিরিজ হতো। প্রযোজক ছিলেন পার্থ চক্রবর্তী। কোনও বিখ্যাত মানুষকে আমরা যে রূপে দেখতে অভ্যস্ত, তার বাইরে তার অন্যান্য কাজকর্ম দেখানোই ছিল এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য। আমরা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অভিনেতা হিসেবেই জানি। এছাড়াও উনি যে একজন কবি, ভালো গানও করেন, ছবি আঁকেন… একথা সেই সময় অনেকেই জানতেন না। সৌমিত্রদাকে আমি তো রাজি করিয়ে ফেললাম। এই প্রোগ্রামের জন্য তখন দূরদর্শনের বরাদ্দ ছিল সামান্য টাকা, তাও সেই চেক প্রোগ্রামের মাস খানেক বাদে শিল্পীর বাড়িতে ডাকযোগে পৌঁছত। তখন তো আর অনলাইনে পেমেন্টর সিস্টেম ছিল না। দাদাকে বিষয়গুলো বলতেই উনি বললেন টাকা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। এই প্রোগ্রামটা আমি তোমার জন্যই করছি। এই প্রোগ্রামে সাধারণত দু’জন থাকেন। দাদার সঙ্গে কাকে নেব! ছায়া দেবী, বাসবী নন্দী-সহ অনেকের সঙ্গেই কথা বললাম। আবার ভাবলাম, দাদার নিজেরও তো একটা পছন্দের ব্যাপার থাকতে পারে! এইসব ভেবে চিন্তে সৌমিত্রদাকে একদিন ফোন করলাম। উনি বললেন, আমি বেণুকে (সুপ্রিয়া দেবী) বলে দিচ্ছি। তুমি গিয়ে ওর সঙ্গে সারকারিনায় দেখা কর। তখন ওই হলে সুপ্রিয়া দেবী একটি নাটক করছিলেন। আমি একদিন গিয়ে সারকারিনার গ্রিনরুমে ওঁর সঙ্গে কথা বললাম। সব শোনার পর বললেন, কত টাকা পাওয়া যাবে? আমি বললাম, এটা তো সরকারি প্রোগ্রাম। ওরা তো কম টাকা দেন এবং সেই টাকাটা কিছুদিন বাদে পাওয়া যাবে। উনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আমি একটু পুলুর সঙ্গে কথা বলে নিই। আপনি আমাকে দু-এক দিন বাদে ফোন করুন। বুঝলাম, ব্যাপারটা ঘেঁটে যাচ্ছে। আবার সৌমিত্রদাকে ফোন করলাম। উনি বললেন, ঠিক আছে আমি সব বুঝিয়ে বলে দেব। তুমি শুটিংয়ের ডেট ঠিক কর।
আজ আশ্চর্য হয়ে ভাবি, দাদা পাশে না দাঁড়ালে আমি কি এই প্রোগ্রামটা আদৌ করতে পারতাম! সৌমিত্র-সুপ্রিয়ার মত দু’জন হেভিওয়েট আমার মত এক অখ্যাত মানুষের সঞ্চালনায় কলকাতা দুরদর্শনের প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছেন, ভাবা যায়! যেদিন শুটিং, সেদিন রিমাইন্ডার দেবার জন্য সকাল ন’টা নাগাদ দাদাকে একটা ফোন করলাম। ফোনে দাদা বললেন, তুমি জানো না, স্টার থিয়েটার, যেখানে আমি গতকালও ‘ঘটক বিদায়’ করে এসেছি, রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে! আমি তো মাথায় হাত দিয়ে বসলাম। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা তাহলে কি আজকে আপনি শ্যুটিং করবেন না! সৌমিত্রদা বললেন, যা মানসিক অবস্থা, করতে না পারলেই ভাল হতো, কিন্তু তুমি তো সব সাজিয়ে ফেলেছ, বেণুও আজকের দিনটা ফ্রি রেখেছে, বলেছি যখন করেই দেব। তুমি বারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে এসো।
আজ আশ্চর্য হয়ে ভাবি, দাদা পাশে না দাঁড়ালে আমি কি এই প্রোগ্রামটা আদৌ করতে পারতাম! সৌমিত্র-সুপ্রিয়ার মত দু’জন হেভিওয়েট আমার মত এক অখ্যাত মানুষের সঞ্চালনায় কলকাতা দুরদর্শনের প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছেন, ভাবা যায়! যেদিন শুটিং, সেদিন রিমাইন্ডার দেবার জন্য সকাল ন’টা নাগাদ দাদাকে একটা ফোন করলাম। ফোনে দাদা বললেন, তুমি জানো না, স্টার থিয়েটার, যেখানে আমি গতকালও ‘ঘটক বিদায়’ করে এসেছি, রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে! আমি তো মাথায় হাত দিয়ে বসলাম। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা তাহলে কি আজকে আপনি শ্যুটিং করবেন না! সৌমিত্রদা বললেন, যা মানসিক অবস্থা, করতে না পারলেই ভাল হতো, কিন্তু তুমি তো সব সাজিয়ে ফেলেছ, বেণুও আজকের দিনটা ফ্রি রেখেছে, বলেছি যখন করেই দেব। তুমি বারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে এসো।
গানের গলাও খারাপ ছিল না সৌমিত্রদার।
সৌমিত্রদা তখন দূরদর্শনের পিছনে গলফ গ্রিনে থাকেন। ওই পাড়াতেই একটি ফ্ল্যাটে শ্যুটিং-এর আয়োজন করা হয়েছিল। সৌমিত্রদার বাড়িতে গেলাম ওঁকে আনতে। আমার নিজের গাড়ি নিয়ে আমার এক বন্ধু মিন্টো পার্কে সুপ্রিয়াদির ফ্ল্যাটে গেলেন ওঁকে আনতে। আমি সেই মুহুর্তে গাড়িহীন। সৌমিত্রদা জিজ্ঞেস করলেন, গাড়ি আনোনি যাব কীভাবে? আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। উনি কি ভাবলেন, একটা সিগারেট ধরালেন, তারপর ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, চল, অনেকদিন তো পাড়ার মধ্যে হাঁটা হয়নি, হেঁটেই যাই। সৌমিত্রদাকে পাশে নিয়ে হাঁটছি। লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আমার তো তখন আনন্দে বুক ফুলে ৫২ ইঞ্চি! বেশ জমজমাট প্রোগ্রাম হয়েছিল সেদিন। সৌমিত্রদা কবিতা পাঠ করা ছাড়াও হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গেয়েছিলেন। সঙ্গে আমরাও গলা মিলিয়েছিলাম। গানটি ছিল, ‘ঘটক বিদায়’ নাটকের শেষ দৃশ্যের। প্রথম দু’টো লাইন আমার এখনও মনে আছে। ‘বেশ তাহলে বলি শুনুন পালার প্রতিপাদ্য/ সবার আগে মানুষ যে চায় পেট ভরানোর খাদ্য।’ বলাই বাহুল্য এই গানের রচয়িতা এবং সুরকার আর কেউ নন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। এই অনুষ্ঠানে সুপ্রিয়াদিও খুব ভালো পারফর্ম করেছিলেন। দু’কলি গানও শুনিয়েছিলেন।
সৌমিত্রদার সঙ্গে আমি একটা সিরিয়ালে দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। মণীশ ঘোষ পরিচালিত এই সিরিয়ালে আমরা দু’জনেই ছিলাম ডাক্তার। দাদা সিনিয়র,আমি জুনিয়ার। ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে শ্যুটিং হতো। তখন নানা বিষয়ে দাদার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। শ্যুটিং-এর অবসরে সব সময় দেখতাম ওনার হাতে কোনও না কোনও একটা বই থাকত। একদিন সুকুমার রায় ও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি বললাম দাদা এই সমগ্রগুলো কি আপনার সংগ্রহে আছে? দাদা বললেন যে, সুকুমার রায় আছে, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সমগ্র নেই। আমি বললাম এটা তো দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত বই, আমি আপনাকে এনে দিতে পারি, দাদা বললেন, তুমি নিয়ে এসো, আমি টাকা দিয়ে দেব। কয়েকদিন বাদে আমি বইটি নিয়ে দাদাকে দিলাম। দাদা টাকা দিতে গিয়ে দেখলেন, দু’টাকা কম পড়ছে অর্থাৎ খুচরো দু’ টাকা ওঁর কাছে নেই। আমি বললাম দাদা, থাক না, টাকাটা আপনাকে আর দিতে হবে না। দাদা বললেন, কেন! আমি মজা করে বললাম, তাহলে আমি সবাইকে আজীবন বলে বেড়াতে পারব যে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দু’ টাকা পাই।
এমন অনেক মজার মুহূর্ত, ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কেটেছে দাদার সঙ্গে আমার। সেসব গল্প পরের পর্বে করব।
সৌমিত্রদার সঙ্গে আমি একটা সিরিয়ালে দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। মণীশ ঘোষ পরিচালিত এই সিরিয়ালে আমরা দু’জনেই ছিলাম ডাক্তার। দাদা সিনিয়র,আমি জুনিয়ার। ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে শ্যুটিং হতো। তখন নানা বিষয়ে দাদার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। শ্যুটিং-এর অবসরে সব সময় দেখতাম ওনার হাতে কোনও না কোনও একটা বই থাকত। একদিন সুকুমার রায় ও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি বললাম দাদা এই সমগ্রগুলো কি আপনার সংগ্রহে আছে? দাদা বললেন যে, সুকুমার রায় আছে, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী সমগ্র নেই। আমি বললাম এটা তো দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত বই, আমি আপনাকে এনে দিতে পারি, দাদা বললেন, তুমি নিয়ে এসো, আমি টাকা দিয়ে দেব। কয়েকদিন বাদে আমি বইটি নিয়ে দাদাকে দিলাম। দাদা টাকা দিতে গিয়ে দেখলেন, দু’টাকা কম পড়ছে অর্থাৎ খুচরো দু’ টাকা ওঁর কাছে নেই। আমি বললাম দাদা, থাক না, টাকাটা আপনাকে আর দিতে হবে না। দাদা বললেন, কেন! আমি মজা করে বললাম, তাহলে আমি সবাইকে আজীবন বলে বেড়াতে পারব যে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দু’ টাকা পাই।
এমন অনেক মজার মুহূর্ত, ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কেটেছে দাদার সঙ্গে আমার। সেসব গল্প পরের পর্বে করব।