শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

আপনি কি প্রায়ই অম্বল, গ্যাস, বদহজম, পেট ব্যথা, পেট ভার, ছোঁয়া ঢাকুর — এইসব সমস্যায় ভুগছেন? কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনও ডায়েরিয়া কি আপনার নিত্যসঙ্গী? ডাক্তারবাবু নির্দেশ মেনে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এন্ডোস্কোপি বা ব্লাড টেস্টের মতো নানান রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও বিশেষ কিছু ধরা পড়েনি। অগত্যা ‘লো ফুটম্যাপ ডায়েট’-এর শরণাপন্ন হয়েছেন? কি এই ‘লো ফুডম্যাপ ডায়েট? ‘ফুড ম্যাপ’ কথার অর্থ হল fermentable oligosaccharides, disaccharides, monosaccharides and polyols. সাধারণত এগুলো বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইডের গ্রুপ, যা স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাবার দাবার, যেমন: ফল, সব্জি, দানাশস্য, বাদাম, দুধ, চিনি ইত্যাদিতে উপস্থিত থাকে। যাঁদের হজম সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা আছে অথবা কার্বোহাইড্রেট পাচনের সাহায্যকারী এনজাইম দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না তাঁরা এই ধরনের ‘হাই ফুডম্যাপ’ যুক্ত খাবার অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেয়ে ফেললে পাকস্থলী ও অন্ত্রে পৌঁছে ফার্মেন্টেড হয়ে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্যাস উৎপন্ন করে। যার পরিমাণে বাড়ে অস্বস্তি, গ্যাস, বদ হজম, পেট ভার বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা। বহুগুণ বেড়ে যায়।
 

কার্বোহাইড্রেটের নানা রূপ

 

অলিগোস্যাকারাইডস

সাধারণত পেঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ন্যাশপাতি, তরমুজ, ব্লুবেরি, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটরশুঁটি, আটা, সুজি, ডালিয়া, বেসন, ছাতু ইত্যাদি প্লান্ট ফাইবার যুক্ত খাদ্য এই অলিগোস্যাকারাইডস জাতীয় কার্বোহাইড্রেট খাবারের অন্তর্গত। কার্বোহাইড্রেট পাচনের সাহায্যকারী এনজাইমের অভাব থাকলে এই ধরনের খাবার সহজে হজম হতে চায় না।
 

ডাইস্যাকারাইডস

দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার যেমন চিজ, পনির, চিনি এমনকি কৃত্রিম চিনিতেও ডাইস্যাকারাইড গ্রুপের বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইড্রেটস থাকে, যা সহজে হজম হওয়ায় ফার্মেন্টেড হয়ে গিয়ে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে তাঁদের মোটেই ডেয়ারি মিল্ক চলবে না।
 

মোনোস্যাকারাইডস

সাধারণত ফ্রুকটোজ বা ফলজাত সুগার এই মোনোস্যাকারাইডস গ্রুপের অন্তর্গত। যেমন খেজুর, কিসমিস, আখরোট, ক্র্যানবেরি, পেয়ারা, পেঁপে, আম, আনারস, মধু, কর্ণসিরাপ ইত্যাদি। তবে মজার বিষয় আইবিএস-এর রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফলের ফ্রুকটোজ বিভিন্নভাবে ক্রিয়া করে। যেমন একই উপসর্গ যুক্ত দুজন ব্যক্তির মধ্যে কারও পেয়ারা বা আনারস হয়তো সহজে হজম হচ্ছে, কারও আবার সমস্যা বাড়ছে।
 

পলিঅলস

পলিঅলস বলতে সাধারণত সুগার, অ্যালকোহলকে বোঝায়। অ্যাভোকাডো, চেরি, পিচ, অ্যাপ্রিকট, প্লাম ইত্যাদি বিভিন্ন ফল ছাড়াও আর্টিফিশিয়াল সুইটনার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই সুগার অ্যালকোহল, যা মোটেই সহজে হজম হয় না।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: সুপার ফুড ড্রাগন ফল খেতে ভালোবাসেন? জানেন এর উপকারিতা?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৫: অম্বুবাচী থেকে স্ত্রীর রজস্বলার লড়াই—সবই উৎপাদন কেন্দ্রিক!

 

এক নজরে: কী কী খাবেন

নদী বা পুকুরের তাজা নরম মাছ, চিকেন স্টু, ডিম সেদ্ধ, ডিমের ওয়াটার পোচ, সয়াবিন দুধের পনির।
মাত্রা মতো পাকা কলা, শসা, পাকা পেঁপে, আনারস, মাত্রা মতো আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, মিষ্টি কমলালেবু, মুসম্বি, আনার, শাঁকালু।
আমন্ড মিল্ক, সোয়া মিল্ক, ওটস মিল্ক, রাইস মিল্ক।
ভাত ও চালের প্রোডাক্ট যেমন মুড়ি, খই, চিঁড়ে কিনোয়া, ওটস।
আলু, বেগুন, শসা, গাজর, টমেটো, শিম, বিনস, কুমড়ো, ওল, কচু, বিট, রাঙালু, রেড বেল পেপার, লাউ, পটল।
অল্প সল্প আমন্ড, মুগ ডাল, তিল বীজ ইত্যাদি চলতে পারে।
ডাল রান্নার আগে তিন ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে প্রেশার কুক করতে হবে।
সব্জি খুব ভালোভাবে ধুয়ে সেদ্ধ করে পিউরি বানিয়ে খেলে সমস্যা কম হবে।

আরও পড়ুন:

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: ধর্মবৃক্ষ বা বোধিবৃক্ষ অশ্বত্থ

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৬: ‘ও হানসিনি, মেরি হানসিনি কাঁহা উড় চলি’—কিশোর-পঞ্চম ম্যাজিক চলছেই

 

এক নজরে: কী কী খাবেন না

রেডমিট, প্রসেসড মিট, অতিরিক্ত তেল মশলা-সহ রান্না, মাছ ও মাংস, প্রসেসড মাছ, বিশেষ কিছু সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি।
আম, আপেল, তরমুজ, আটা, লিচু, বেল, খেজুর, কিসমিস, বেরি, অ্যাভোকাডো, অ্যাপ্রিকট।
ডেয়ারি মিল্ক, চিজ, চকলেট, ফার্মেন্টেড মিল প্রডাক্ট।
গম, সুজি, বেসন, ছাতু, ছোলা, মসুর, মটর ডাল, সবুজ মটর।
বিভিন্ন ধরনের কপি, করলা, লঙ্কা, বিভিন্ন ফল ও সব্জির বীজ ও খোসা।
চলবে না শাক ও পাতা জাতীয় খাদ্য।
কাঁচা স্যালাড অর্থাৎ পেঁয়াজ, টমেটো, শসা, লেটুস, গাজর ইত্যাদি-সহ প্রচলিত যে স্যালাড তা বর্জন করতে হবে। তবে স্টিমড স্যালাড চলতে পারে।
প্রসেসড ফুড ও ড্রিংকসে অনেক সুগার থাকে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।

আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২: রথ দেখো কলা বেচো

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৪: ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা

 

চিকিৎসা পদ্ধতি

লো ফুটম্যাপ ডায়েটের মাধ্যমে চিকিৎসায় ৩ পর্যায় অবলম্বন করা হয়। প্রথম ১৫ দিন এলিমিনেশন ডায়েট, পরবর্তী ১৫ দিন থেকে ২৮ দিন রিইন্ট্রোডাকশন এবং তৎপরবর্তী সময় মেইনটেনেন্স। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে ডায়েটিশিয়নের পরামর্শ মেনে চলুন।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content