শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

আপনি বাঙালি হন বা অবাঙালি, পনির খেতে নিশ্চয়ই ভালোবাসেন। সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেই পনির অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নিরামিষ প্রোটিন। ইদানিং স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে সাধারণ পনিরের বদলে সয়াপনির বা টোফু খাওয়ার ঝোঁক অনেক বেড়ে গিয়েছে। মাত্র বছর দশেক আগেই যাঁরা টোফুর নাম পর্যন্ত শোনেননি, এখন টপু তাঁদের প্রায় পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছে। লোকাল মুদিখানা, বিভিন্ন শপিং মল বা অনলাইনেও অনায়াসে টোফুর দেখা মেলে।
 

টপু আসলে কী?

সয়াবিনের ঘন দুধ বা দইকে চাপ প্রয়োগে প্রায় চিজ তৈরির পদ্ধতিতে বানানো হয় সাদা রঙের সয়াপনির। টোফুর শক্ত আকার বজায় রাখার জন্য কোয়াওলেন্ট হিসেবে
ব্যবহার করা হয় ‘নিগারি’, যা আসলে সমুদ্রের জল থেকে লবণ আহরণের পর ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ এক ধরনের অবশিষ্টাংশ।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৫: কানে তালায় কানের ড্রপ?

 

টোফুরপুষ্টিগুণ

টোফু বিভিন্ন এসেনশিয়াল অ্যামিনোঅ্যাসিড যুক্ত কম ক্যালরির উৎকৃষ্ট মানের উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খাবার। কোলেস্টেরল বিহীন গ্লুটেনমুক্ত এই নিরামিষ প্রোটিন বিভিন্ন অত্যাবশকীয় পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন বা হরমোনের সমগোত্রীয় আইসো-ফ্ল্যাভোনের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উপস্থিতির কারণে টোফু বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০০ গ্রাম টোফুতে প্রায় ১৪৪ কিলোক্যালরি শক্তি থাকে, ৯ গ্রামের মতো ফ্যাট, ১৭ গ্রাম প্রোটিন, ৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ২ গ্রাম ফাইবার থাকে। যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালশিয়াম, আইরন, কপার, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন-এ ইত্যাদি বিভিন্ন মিনারেল ও ভিটামিন থাকে।
১০০ গ্রাম টোফুতে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম আইসো-ফ্ল্যাভোন আছে। এই আইসো-ফ্ল্যাভোন আবার দু’ ধরনের—জেনিস্টিন এবং ডায়াজিন। যা টোফুকে বিশেষ স্বাস্থ্যকর ও রোগ প্রতিরোধী করে তুলেছে।

 

কতটা খাবেন?

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়া উৎপাদক দেশ হিসেবে আমেরিকা অগ্রগণ্য— যাদের বেশিরভাগটাই জিএমও অর্থাৎ অর্থাৎ জেনেটিকালি মডিফাইড। তবে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, মাত্রা মতো সোয়া প্রোডাক্ট বা তোফুতে ক্যানসারের কোনও ঝুঁকি নেই। যদিও এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ সপ্তাহে ২৫৫ গ্রাম থেকে ৪২৫ গ্রাম টোফু খেতে পারেন স্বচ্ছন্দে।
রোগ প্রতিরোধে টোপু বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে প্রোটিন, মিনারেলস, ফাইবার ও আইসোফ্ল্যাভোন সমৃদ্ধ টোফু।
ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানির সমস্যা থাকলেও নিয়মিত ডায়েটে মাত্রা মতো এই সোয়াপনির রাখুন।

আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২২: সুন্দরবনে গোয়াল পুজো আর ‘ধা রে মশা ধা’

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৯: ইষ্টদেবী জগদ্ধাত্রী

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন সমৃদ্ধ টোফু। অ্যানেমিয়ার রোগীরা সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ৫০ গ্রাম করে টোফু ডায়েটে রাখুন।
বাড়ন্ত বাচ্চা ও কিশোর-কিশোরীদের এই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হলে দেহের বৃদ্ধি, বিকাশ ও গঠন ঠিক থাকবে।
যাঁরা দেহের বাড়তি ফ্যাট কমিয়ে মাসল বাড়াতে চাইছেন, তাঁরা অবশ্যই ডায়েটে রাখুন টোফু।
রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল-এর মাত্রা কমে নিয়মিত টোফু খাবার ফলে।
হাড় ও দাঁত ভালো রাখে টোফু। দেখা গিয়েছে, দৈনিক ৮০ মিলিগ্রাম হিসেবে টোফু বা অন্যান্য ফার্মেন্টের সয়াবিন প্রোডাক্ট খাওয়ার ফলে অস্টিওপোরোসিস রোধ করা সাহায্য হয়।
স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও টোফুর অবদান অসামান্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেস্ট ক্যানসার, কলোরেক্টাল ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার, স্টমাক ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে টোপুর আইসোফ্ল্যাভোন অত্যন্ত উপকারী। দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিয়মিত মাত্রা মতো টোফু বা সয়া প্রোডাক্ট খান পোস্ট মেনোপজাল স্টেজে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩২ শতাংশ কমে যায়।
বিভিন্ন পোস্ট মেনোপজাল উপসর্গ যেমন হজমের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, ঘুম না হওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, ডিপ্রেশন ইত্যাদি একাধিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায় যদি নিয়মিত ডায়েটে কিছু পরিমাণ টোফু বা আইসোফ্ল্যাভোন সমৃদ্ধ খাবার রাখা যায়।
হৃদরোগ প্রতিরোধেও টোফু অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুন:

পরিযায়ী মন, পর্ব-১৪: কুর্গের সবুজ দুর্গ

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩৭: মনচলি ও মনচলি…কিশোর-আশার কণ্ঠ আর অমিতাভর নাচ, মনে আছে?

 

টোফু থেকে সমস্যা

যাঁদের সয়া প্প্রোডাক্টে অ্যালার্জি আছে, তাঁরা মোটেই টোফু খাবেন না। টোফু থেকে ত্বকে র্যা শ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, এন্টারোকোলাইসিস বা হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত খাওয়া হলে পেট ভার, পেটে গ্যাস, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়াও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে অতিমাত্রায় সয়া বা আইসোফ্ল্যাভোন নেওয়ার ফলে ফার্টিলিটি বা সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে হতে পারে।
টোফুতে ট্রিপসিন ইনবিটার ও ফাইটেটস-এর মতো কিছু অ্যান্টি নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকতে পারে, যা প্রোটিন ও ক্যালশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক-এর মতো এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্ট শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে প্রসেসিং-এর সময় সোকিং ও ফার্মেন্টিং এর ফলে এই অ্যান্টি নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর-এর সমস্যা অনেকটাই দূর করা যায়।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content