শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

উৎসবের দিনগুলোতে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবার জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই ভরসা ফাস্ট ফুডে। বিশেষত, জেনারেশন-এক্স তো এখন ফাস্টফুডেই মজে আছে। সময় থাকুক বা না থাকুক মন খারাপ বা ভালো একা বা একসঙ্গে পকেটমানি কম বা বেশি—সব সময়ই হিট পিৎজা, বার্গার, হট ডগ, কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট, আইসক্রিম, চাউমিন, রোল, চিপস বা কোল্ড ড্রিঙ্কস যখন যা পছন্দ আর কি। সম্ভবত, ১৮৬০ সালে ব্রিটেনে প্রথম ফাস্টফুড হিসেবে ফিশ অ্যান্ড চিপ চালু হয়েছিল। ফাস্টফুড শব্দটা প্রথম ১৯৫১ সালে ইংরেজি মারিয়ম ওয়েবস্টার অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে স্বীকৃতি লাভ করে। মজার ব্যাপার, মিষ্টি কিন্তু ফাস্টফুডের তালিকাভুক্ত নয়।
 

ফাস্টফুড কী?

ফাস্টফুড বলতে সাধারণত রাস্তার ধারের ছোট ছোট ফুট কর্ণরাগুলোতে জটজলদি বানানো এবং পরিবেশিত অত্যন্ত মুখরোচক ও চিত্তাকর্ষক খাবার দাবারকেই বোঝায়। এক্ষেত্রে খাবারের পুষ্টিগুণ বা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ক্রেতা বা বিক্রেতা কারওই বিশেষ মাথাব্যথা থাকে না। তাই সমস্যার সূত্রপাত হয় এখান থেকেই। মাসে দু-একবার অল্পস্বল্প মাত্রায় একটু রয়েসয়ে খেলে তার স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর না হলেও তা অভ্যাসে পরিণত হলেই বিপদ।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: জ্বরজারিতে ভুগছেন? কী খাবেন, আর কী খাবেন না? রইল ভিডিয়ো

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪২: অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই গন্ডগোল?

 

ফাস্টফুডের সুবিধা

ফাস্টফুডের এত জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ, এর বিশেষ কিছু সুবিধা আছে। যেমন—
সময়ের সাশ্রয় ঘটে।
মুহূর্তে মন ভালো করে মুডের সুইচ অন করতে ফাস্টফুডের জুরি নেই।
যখন যা পছন্দ পকেটের ভার বুঝে অর্ডার দিলেই নিমেষে হুজুর হাজির।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চটজলদি উদরপূর্তি ঘটানো, বসে খাওয়া বা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে টিভি দেখতে দেখতে বা সবার সঙ্গে বসে আয়েস করে খাওয়ার অপশন সবসময়ই আছে।
গড়পরতা রেস্তরাঁর খাবারের তুলনায় ফাস্টফুডের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কমই বলা যায়।
খাবার আর পরিবেশনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান খুব একটা বেশি নয়।
সব থেকে বড় কথা ঘরে তৈরি করে খেতে গেলে যে সব হ্যাপার সামলাতে হয় যেমন বাজার, রান্না, কাটা, বাটা, ধোঁয়া, পরিষ্কার, থালা-বাসন মাজা ইত্যাদির কোনও বালাই নেই। হাতের নাগালে পাওয়া ফাস্টফুডের বেলায়।
আজকাল অবশ্য কিছু কিছু ফাস্ট ফুড সেন্টার স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতা সাধারণের কথা মাথায় রেখে ফাস্টফুডের কিছু হেলদি অপশন বানাচ্ছে।
অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করা এই ফাস্টফুড সেন্টার চালিয়ে অনেকেই যথেষ্ট আয় করছেন। বেকারদের কর্মসংস্থানের একটা নতুন পথ তো বটেই।

আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১০: রাজ ও স্প্যানিশ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২০: অক্টোবর মাসের ষোলো, কী হল! কী হল?

 

ফাস্টফুডের ক্ষতিকর দিক

প্রায় সব ধরনের ফাস্টফুডই খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হলেও, স্বাস্থ্যকর বলা যায় না এইসব খাবারে ক্যালরি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল, সিম্পল কার্বোহাইডেট যেমন: ময়দা, চিনি এবং সোডিয়াম জাতীয় লবণ অত্যন্ত বেশি থাকায় এসেনশিয়াল মাইক্রো এলিমেন্টস সমূহ কিছুই প্রায় অবশিষ্ট থাকে না। উপরন্তু ক্যালরি ও ফ্যাটের ভারে ভারাক্রান্ত হওয়ায় বাড়ে অসুখ-বিসুখের বোঝা। যেমন—
 

ওবেসিটি

অতিরিক্ত ফাস্টফুড হ্যাবিট-এর কারণে দেহে বাড়তি ওজনের বোঝা চাপে। বাড়ে বিশাল মেটাবলিক ইনডেক্স, যা ভবিষ্যতে বড় রকমের অসুখ-বিসুখের কারণ হতে পারে। ফাস্টফুডের অতিরিক্ত ক্যালরি সেচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম লবণ ওবেসিটির কারণ।
 

টাইপ-টু ডায়াবিটিস

অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে অল্পবয়সীদের মধ্যে জুভেনাইল ডায়াবিটিসের পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সপ্তাহে মাত্র দুই-তিন বার ফাস্টফুড খাওয়ার পরিণামেও ইনসুলিন রেসিস্টেন্টস বেড়ে গিয়ে টাইপ-টু ডায়াবেটিস-কে ডেকে আনতে পারে।
 

কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিস

উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্টোক ও হাইপার লিপিডেমিয়ার সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে ফাস্টফুড হ্যাবিটস থেকে।
 

ক্যানসার

অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাবার ফলে কিডনি, ইসোফেগাস, লিভার, কোলন ক্যান্সার-সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ফাস্ট ফুডে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি অত্যধিক ফুড অ্যাডিটিভ ও প্রিজারভেটিভ এক্ষেত্রে দায়ী।

আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৪: মধুপুর ধাম, বাণেশ্বর মন্দির ও ধলুয়াবাড়ি সিদ্ধ নাথ শিবমন্দির

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৬: শ্রীমায়ের সাধনা

 

অ্যাজমা

ফাস্টফুডে ব্যবহৃত মনোসডিয়াম গ্লুটামেড বা বিশেষ কিছু ফুড অ্যাডিটিভসের কারণে বাড়তে পারে অ্যালার্জিজনিত শ্বাসকষ্ট।
 

আর্থারাইটিস ও সন্ধি স্থলের প্রদাহ

ফাস্টফুডে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকার কারণে কমে যায় ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়ামের মতো এসেনশিয়াল মৌলসমূহ, যার ফলে হাড় ও দাঁতের বারোটা বাজে।
 

ডিপ্রেশন

মুড ভালো করতে যে ফাস্টফুড ভরসা, দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তাই আবার মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণ। হতে পারে ডিপ্রেশন ইনসোমিয়ার মতো সমস্যা।
 

পেটের গোলমাল

সর্বোপরি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না, সংরক্ষণ ও পরিবেশনের ফলে ফাস্টফুড থেকে টাইফয়েড, ডিসেন্ট্রি, বদহজম, জন্ডিস, অ্যাসিডিটি, বমি বা বমি বমি ভাব এবং ফুড পয়েজিং- এর মতো আশঙ্কা থেকেই যায়। পর্যাপ্ত জল, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত স্থানাভাব, বর্জ্য নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থার অপ্রচুলতা এবং নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী বা রান্না তেলের ব্যবহারের কারণে হেলথ রিস্ক আরও বেড়ে যায়।

তাই ফাস্টফুড অত্যন্ত পছন্দের হলেও মাসে দু-তিন দিনের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। আর অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেয়ে জীবনকে উপভোগ্য করে তুলুন। সুস্থ থাকুন।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content