সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

গ্রীষ্মকালের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে অনেকেরই কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে এই খাদ্যাভ্যাসগুলো অদলবদল হয় শুধুমাত্র কিছু ভুল ধারণার জন্য। কিন্তু জানেন কি আপনার এই ভুল ধারণা কত ক্ষতি করতে পারে? না জেনে থাকলে এ বিষয়ে আজই সতর্ক হোন। জেনে নিন আপনাকে সুস্থ থাকতে হলে ঠিক কোন কোন ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে হবে।

গরমে বেশি পরিমাণ জল খেতে হবে
গরমে বেশি পরিমাণ জল খাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। এতে নাকি শরীর ভালো থাকে। কিন্তু এটি একেবারেই ঠিক কথা নয়। শুধুমাত্র গরম নয়, সব ঋতুতেই ৩-৪ লিটার জলপান করা দরকার। কারও ওজন ৬০ কেজি হলে তাঁকে ২ লিটার থেকে ৩ লিটার জলপান করতে হবে।

আম খেলে শরীর আরও গরম হয়
আরেকটি মিথ হল, গ্রীষ্মকালে আম খেলে শরীর আরও গরম হয়ে যায়। এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা। আমে প্রচুর পরিমাণ সুগার রয়েছে। তাই কারওর যদি সুগার থেকে থাকে, তাহলে তাঁকে আমের লোভ সংবরণ করতে হবে। আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার থাকায় এটি বেশি খেলে ডায়রিয়াও হতে পারে। অনেক সময় কাঁচা আম পাকাতে ক্যালশিয়াম কার্বাইডের মতো রাসায়নিকের ব্যবহারের জন্য আমের খোসা থেকে ত্বকে অ্যালার্জিও হতে পারে। ওজন চটজলদি বাড়িয়ে দেয় আম। কিন্তু কখনওই আম খেলে শরীর গরম হয় না।

গরমে বেশি মশলাদার খাবার খেতে নেই
মানুষের আরও একটি ভ্রান্ত ধারণা হল, গ্রীষ্মে বেশি মশলাদার খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এই সময় হালকা খাবার খেতে হবে। তবে এই ধারণা সর্বদা ঠিক নয়। এটা ঠিক যে, রান্না করার সময় পরিমাণ বুঝে মশলা দিতে হবে, যাতে সবজির পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গ্রীষ্মপ্রধান জায়গার খাদ্যাভ্যাসও এরকমই। এমনকী, দক্ষিণ ভারতে গ্রীষ্মকাল বলে কখনওই কম মশলা দিয়ে আলাদা রান্না হয় না। শুধু এটা খেয়াল রাখতে হবে, যে রান্নার সময় মশলার পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয়।

অল্প সেদ্ধ রান্নাই এইসময় বেশি উপকারী
অনেক বাবা-মা গরমে বাচ্চাকে কম মশলার অল্প সেদ্ধ রান্না করে দেন। তবুও বাচ্চার পেটের সমস্যা দেখা দেয় অনেক ক্ষেত্রেই। আসলে সবসময় অল্প সেদ্ধ রান্না উপকারী নয়। এটা সবাই জানেন। অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা, বেশি সেদ্ধ করলে এনজাইম, ভিটামিন, মিনারেলস নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তাঁরা এটা জানেন না যে, বেশি সেদ্ধযুক্ত রান্নায় ওয়াটার সলিবল ভিটামিন নষ্ট হয় ঠিকই, তবে এর ভিটামিন ও মিনারেল শরীরে ভালো শোষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টমেটোতে থাকা লাইকোপেন কাঁচার বদলে যদি রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে তা ভালো শোষিত হয়। তাই সবজি, মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি যতটা সেদ্ধ করা দরকার, ততটাই করা উচিত। গরম বলে কম সেদ্ধ করব, এমনটা যেন না হয়।

গরমে কাঁচালংকা কম খাওয়াই শ্রেয়
অনেকেই মনে করেন গরমে কাঁচালংকা যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু আপনি কি জানেন, যে কাঁচালংকা খেলে শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়ে। আর সেই কারণেই দেখবেন লংকা খেলে গরম অনুভূতির সঙ্গে ঘামও হয়। গরম ও ঘামে অস্বস্তি হলেই আমরা জলপান করে থাকি। তাই অন্য ঋতুর পাশাপাশি গরমেও প্রয়োজনমতো কাঁচালংকা খেলে কোনও ক্ষতি হয় না, বরং জলপান ঠিকমতো হয়। এতে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে।

গরমে হলুদ কম খাওয়াই ভালো
হলুদ নিয়েও অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, গরমে নাকি হলুদ কম খেতে হয়। কিন্তু এটা একেবারেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। আসলে হলুদ খাওয়ার কোনও ঋতু নেই। হলুদে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি এজিং উপাদান রয়েছে। তাই সব ঋতুতেই রান্নায় প্রয়োজনমতো হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কোনও ক্ষতি হয় না। অনেকক্ষেত্রে আবার কাঁচা হলুদ গোলমরিচের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া হয়। এরকমভাবে হলুদ খেলে তা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়।

যেসব ফলে জলের পরিমাণ বেশি সেই ফল খেতে হবে
গড়পড়তা মানুষের ধারণা, যেসব ফলে জলের ভাগ বেশি, সেইসব ফল গরমে খাওয়া উচিত। এটিও সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সব ফলেই কম বেশি জল রয়েছে। তাই যে ঋতুতে যে ফলই পাবেন, তাইই খাবেন। আরও একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে মানুষের মনে যে, ভরা পেটেই নাকি ফল খেতে হবে। কিন্তু এখনকার স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সমীক্ষা করে দেখেছে, যে কোনও ভারী খাবারের এক ঘণ্টা আগে বা পরের মধ্যবর্তী সময়ে ফল খেতে হবে। এতে কোনওরকম ক্ষতি হয় না।

গরমে ঠান্ডা পানীয় খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে
গরমে অনেকেই শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য ঢগঢগ করে ঠান্ডা পানীয় পান করে ফেলেন। অনেকেই মনে করে, গরমে ঠান্ডা পানীয় বা সোডা খেলে শরীর ঠান্ডা হয়। এই ধারণাও ভ্রান্ত। গরমে আরামদায়ক এই নরম পানীয় আপনার শরীরের কতটা ক্ষতি করতে পারে তার কোনও ধারণা আছে কি? তাহলে জেনে রাখুন, এই গরমে বেশি পরিমাণ ঠান্ডা পানীয় বা সোডা পান করলে আপনার বিপদ হতে পারে। তাই নিরাপদ থাকতে হলে, গরমে যে পরিমাণ ঠান্ডা পানীয় বা সোডা পান করছেন অল্প সময়ের মধ্যে তার দ্বিগুণ জলপান করুন। কারণ, ঠান্ডা পানীয় বা সোডা ডিহাইড্রেট করে। ঠান্ডা পানীয় বা সোডা পান করার ফলে মাথাব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার মতো রোগ দেখা দিতে পারে। এতে গরমে আরও শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে।

Skip to content