মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

প্রচণ্ড গরমে জেরবার বঙ্গবাসী। এই সময় শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর পানীয় খেতে হবে। পানীয়র মধ্যে একটা ভালো উদাহরণ হল আখের রস। আখের রসে থাকে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিঙ্ক, থিয়ামিন এবং রাইবোফ্লেবিন। যেগুলো এই প্যাচপ্যাচে গরমের সময়ে আমাদের জন্য খুবই দরকারি। এছাড়াও আখে আছে প্রচুর আন্টি-অক্সিডেন্ট, যা সহজেই দেহ থেকে টক্সিন বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আখ ভারতে কমবেশি সব জায়গাতেই উৎপাদন করা হয়।‌ তাই এটি সহজলভ্য। সেই সঙ্গে উপকারীও। আখের রস দেহের কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
 

কিডনি

আখের রস কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আখের রস মূত্রবর্ধক। এটি পান করলে কিডনিতে পাথরেরস সমস্যা দূর হয়। বিশেষ কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে নিয়মিত আখের রস খেলে মূত্রনালির সঙ্ক্রমণ এড়ানো যায়। এতে আছে প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন, যা অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। শরীরের প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে। তাই প্রতিদিন আখের রস পান করা যেতে পারে।
 

লিভার

আয়ুর্বেদ অনুসারে, আখের রস আপনার লিভারের জন্য খুবই উপকারী। যকৃতের রোগ যেমন— জন্ডিস নিরাময়ে সবচেয়ে ভালো উপাদান হচ্ছে আখের রস। পিত্তরস জমে গেলে লিভারের কার্যকারিতা কমে যায় বলে জন্ডিস হয়। আখের রস শরীর থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
 

পেট ভালো রাখতে

আখ খেলে পেট সংক্রান্ত সমস্ত রোগ নিরাময় হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণে ভরপুর হওয়ায় আখ খেলে তা সহজেই শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। ফলে বদহজমের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আখের রসে থাকা পটাশিয়াম এবং ফাইবার হজমশক্তিকে দ্রুত বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাকে সহজেই দূর করে এই আখের রস।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: টক দই স্বাস্থ্যকর, তবে খাওয়ার সময় এই সব নিয়ম না মানলেই বাড়বে বিপদ

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-২: আইজেনস্টাইন, যুদ্ধজাহাজ ও মন্তাজ

 

মজবুত দাঁত

আখের রসে প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে। তাই এটি পান করলে দাঁত মজবুত থাকে। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধও দূর হয়। বাড়ন্ত বাচ্ছারা যদি আখ চিবিয়ে রস পান করে তাহলে দাঁতের সমস্যা কম হয়।
 

ক্ষত সারাতে

অনেকেরই ধারণা, কাটে বা ছোড়ে গেলে সেই জায়গায় আখের রস দিলে নাকি দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, আখের রসে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পাশাপাশি রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান। এই উপাদান ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলিকে মেরামত করতে সাহায্য করে। তাই সহজেই ক্ষত সারিয়ে তোলা যায়।
 

শক্তিশালী হাড়

আখের রসে থাকা ক্যালশিয়াম হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই বিশেষ কোনও শারীরিক অসুস্থতা না থাকলে আখের রস খেলে ভালো।

আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩: গায়ে আমার পুলক লাগে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৫: গায়ের জামা হাওয়ায় উড়বে বলে দেহের সঙ্গে ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখতেন

 

ত্বকের সুরক্ষা

আখের রসে আলফা হাইড্রক্সিঅ্যাসিড (AHAs) উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের নানান সমস্যাকে দূর করে। যদি প্রতিদিন এক গ্লাস করে আখের রস পান করা যায়, তাহলে অনেক ধরনের ত্বকের সমস্যা এড়ানো যাবে। তাছাড়া বলিরেখা দূরীকরণ কিংবা খসখসে ত্বক নরম করতে অথবা মাথার খুশকি দূর করতে আখের রসের কোনও তুলনা হয় না।

পাশাপাশি, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে আখের রসে থাকা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। খাওয়ার সঙ্গে রস মুখে মাখলেও উপকার মিলবে। জেল্লাহীন ত্বককে চকচকে করে তুলতে আখের রস। আখের রসে প্রাকৃতিক ভাবে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডস (এএইচএএস) থাকে। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডস ত্বকের উপর ধুলো-ময়লা সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
 

ব্রণর সমস্যা দূর করে

আখের রসে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ। ত্বকের ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এই যৌগ। শুধু তাই নয়, এতে থাকা আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের হারও কমিয়ে দেয়। তাই তো ডাক্তারবাবুরা নিয়মিত বলেন আখের রস খেলে ব্রণর দাগ-ছোপও দূর করে।

আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৯: হ্যাচারিকে কাজে লাগিয়ে বছরভর মাছ চাষ করে আয় সুনিশ্চিত করা সম্ভব

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৪: মাথায় চোট মানেই কি ইন্টারনাল হেমারেজ?

 

স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসার

আখের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন প্রভৃতি রয়েছে। তাই স্তন ক্যানসার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে আখের রস কাজ করে। আখে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য দারুন করে।
 

তারুণ্য বজায় রাখে

এতে থাকা প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ত্বককে অকালে বুড়িয়ে যেতে দেয় না। আখের রসে থাকা ‘ফ্ল্যাভনয়েড’-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বককে ফ্রি র্যা ডিক্যালের হাত থেকেও সুরক্ষিত রাখে। ভিটামিন এ এবং সি এই রস ত্বকে বলিরেখা বা দাগ ছোপও পড়তে দেয় না।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content