শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

মাইগ্রেনের সমস্যা এখন খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এটি মূলত বংশগত একটি অসুখ। আজকাল মাইক্রেনের সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। মাথার একদিকে তীব্র যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, আলোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না, চোখে যন্ত্রণা— এরকম একাধিক উপসর্গ দেখা যায় মাইগ্রেনের রোগীদের। আজকাল আমরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন একটু বেশিই ব্যবহার করি। তাই সারাদিন কম্পিউটারে কাজ, মানসিক চাপ এবং খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম এ সবের জন্য মাইগ্রেনের সমস্যা ক্রমে খুবই বেড়েই চলেছে। কাজের চাপ একটু বাড়লেই মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়ে যায়। শুধু ওষুধ বা ব্যায়াম কোনওটিতেই মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। তবে কিছুটা উপশম করতে পারে একমাত্র সঠিক ডায়েট। তাই নিত্যদিন সঠিক ডায়েট চার্ট মেনে চললে যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাঁরা উপকার পাবেন।

সম্প্রতি মাইগ্রেন ও ডায়েটের নিয়ে প্রায় ১৮০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, লো ফ্যাট ডায়েট মেনে চললে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞ দলের এক গবেষক ব্রিনদের ভিজ বলেছেন, লো ফ্ল্যাট এবং লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ যেমন বাড়ায়, তেমনি ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও কমায়, যা মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে, ক্যাফেইন যা সাধারণত কফিতে পাওয়া যায় তা কম গ্রহণে মাইগ্রেনের অ্যাটাক কম হয়। তাছাড়াও রোজের ডায়েটে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের মাত্রা কমাতে হবে, যা সাধারণত বারবিকিউ সস, ক্যানড ফুড, প্যাকেজ ফুড, চাইনিজ ফুড ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। তবে আপনি চাইলে কিছু ঘরোয়া পন্থাও অবলম্বন করতে পারেন। এমন কিছু ডায়েট আছে, যা মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন—অত্যধিক মানসিক চাপ, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস না মানা, সময়মতো না খাওয়া, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি। এক্ষেত্রে রোজকার ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনলেই মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে।
 

মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে কী কী খাবেন

মাথাব্যথার সঠিক কারণ নিজেকেই খুঁজে বার করতে হবে। মাইগ্রেনের ব্যথা যে কোনও কারণেই হতে পারে। মাইগ্রেন মূলত স্নায়ুর সমস্যা। তাই শরীরের রোগ বাসা বাঁধতে দেওয়া উচিত নয়। অযথা পেনকিলার খাওয়াও ঠিক নয়।

আরও পড়ুন:

ডায়েট টিপস: সামনেই বিয়ে? হাতে আর সময় নেই? রইল হবু কনের এক মাসের ডায়েট চার্ট

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৯: দুঃসময়ের স্মৃতিগুলো ‘কার পাপে’? [১৫/০৮/১৯৫২]

Appropriate Prepositions কাকে বলে জানো কি?

হার্ট অ্যাটাক নীরবেও হতে পারে! কোন উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন? জেনে নিন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ

 

রকমারি মাছ

মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই এর অন্যতম উৎস। এই দুটি উপাদান মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
 

সবুজ শাক-সবজি

সবুজ শাক-সবজি ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে খুব কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে।
 

দুধ

ডাবল টোনড দুধ বা চর্বিমুক্ত দুধ মাইগ্রেনের জন্য উপকারী। দুধে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স আছে, যা কোষে শক্তি যোগায়, মস্তিষ্কের স্নায়ুকে উদ্দীপিত রাখে। সাধারণত যখন মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয় মস্তিষ্কের স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ভিটামিন-বি এই সময় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
 

ব্রকলি

ব্রকলি বা ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারও মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
 

কার্বোহাইড্রেট বা মিষ্টি

মাইগ্রেনের যন্ত্রণার পরে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে অনেকটা বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে মিষ্টি খেলে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমে যায়।

আরও পড়ুন:

জিলিপি খেতে ভালোবাসেন? তাহলে আর দেরি কেন? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন গরম গরম আনারসের জিলিপি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৮: মেয়ের জন্য হেমন্তবালা কবির পরা জোব্বা নিয়েছিলেন

গল্প: পরশ

অমরনাথের পথে, পর্ব-৩: চন্দনবাড়ি থেকে শুরু হল যাত্রা

 

আলু

আলু বেশি করে খান। আলু দেহে সেরিটিনিন নামে এক প্রকার রাসায়নিক উৎপন্ন করে, যা মাইগ্রেনের ব্যথা দ্রুত কমায়।
 

রেড ওয়াইন

রেড ওয়াইন ও বিয়ারে টাইরামিন রয়েছে, যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়।
 

কফি ও চা

কফি ও চা-তে ক্যাফিন থাকে, যা মাথা ব্যথা কমানোর জন্য উপকারী। মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমে কফি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
 

পর্যাপ্ত প্রোটিন

দুধ ডিম মাছ মাংস ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতি দিনের ডায়েটে রাখা উচিত।
 

ধূমপান ও মদ্যপান

মাইগ্রেনের ব্যথা এড়াতে ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে।
 

কী কী খাবেন না

দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্য, হোয়াইট ও মিল্ক চকলেট, চিজ ইত্যাদি দুগ্ধ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
মুরগির মাংসে নাইট্রেট কম থাকে, তাই মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় মুরগির মাংস না খাওয়াই ভালো।
পেঁয়াজ বা ডিমও খাওয়া চলবে না।
আজিনা মোটো বা মনোসডিয়াম গ্লুটামেট যুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলুন।

 

কিছু জরুরি কথা

আপেল, পেঁপে, কমলালেবু, মুসাম্বি, যেকোনও ধরনের লেবু, কলা, পেয়ারা ইত্যাদি ফল খাওয়া ভালো।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক-সবজি রাখতে হবে। টম্যাটো, ক্যাপসিকাম, ওয়েলপেপার ইত্যাদি হলুদ এবং লাল রঙের সবজিও মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী।
নির্দিষ্ট সময় অন্তর খেতে হবে। বেশিক্ষণ পেট ফাঁকা থাকলে গ্যাস হতে পারে, যা মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম প্রয়োজন।
মেডিটেশন ও যোগা করলে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।
 

মনে রাখা প্রয়োজন

মাইগ্রেনের ব্যথা হলে নিজের ইচ্ছামতো পেন কিলার খাওয়া উচিত নয়। ওষুধ যদি খেতেই হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। পাশাপাশি মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক ডায়েট চার্টের জন্যও ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার সমস্যা বুঝে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ডায়েট চার্ট বানিয়ে দেবেন, যা মেনে চললে ফল পাবেন হাতে নাতে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২


Skip to content