সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

হয়তো আপনি আর আপনার বন্ধু রোজই এক ধরনের খাবার খান, তাও আপনার বন্ধুর চেয়ে আপনি অনেক মোটা। আবার উল্টোটাও দেখা যায়, ১০ বছর আগের সঙ্গে এখনকার লাইফস্টাইল বা ফুড হ্যাবিটের সেরকম কোনও পরিবর্তন না হলেও এখন ওজন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ সবের কারণ হতে পারে মেটাবলিক রেট বা বিপাকক্রিয়ার হার কমে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেটাবলিক রেট কমতে থাকে, সেই সঙ্গে দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে শক্তি খরচের হার কমে গেলে এবং যথাযথ সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যের মাধ্যমে ক্যালোরি গ্রহণের হার কমাতে না পারলে ওজন বাড়বেই। অগত্যা দেহে বাড়তি ফ্যাটের বোঝা কমানোর উপায় কি?

উপায় আছে। আর যেটা ভালো ব্যাপার হল তা খাবারের মাধ্যমেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এমন কিছু প্রাকৃতিক খাবার আছে যেগুলি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পাশাপাশি জীবনযাত্রায়ও কিছু জরুরি পরিবর্তন আনতে হবে যাতে দেহের শক্তি খরচের হার বেড়ে গিয়ে সঞ্চিত ফ্যাটের ভাড়ারে টান পড়বে। ফলে বাড়তি ওজন বা মেদভার কমবেই। এখন দেখা যাক, কী সেই সব খাবার, যেগুলো নিয়মিত খেলে ওজন কমবে। সব খাবারই ক্যালোরি যোগ করলেও বিশেষ কিছু খাবার আছে যেগুলো হজম ও বিপাকের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে শক্তি খরচ হয়। অর্থাৎ ”থার্মোজেনেসিস’ বাড়িয়ে দেয়। যেমন দেখা গিয়েছে, প্রোটিন জাতীয় খাবারের হজমের জন্য ‘থার্মোজেনেসিস’ বা ‘স্পেসিফিক ডায়নামিক অ্যাকশন’ (এসডিএ)-এর দরুন শক্তি খরচের হার প্রায় ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে বিশুদ্ধ কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে এই শক্তি ক্ষয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৫.১০ শতাংশ এবং শূন্য থেকে তিন শতাংশ মাত্র।
 

যেসব খাবার দেহে শক্তি খরচের হার বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে

 

ডিম

উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ডিমের থার্মোজেনিক এফেক্ট যথেষ্ট বেশি হওয়ায় দেহের বিপাকীয় ক্রিয়ার হার বাড়ায়। বিশেষত যাঁরা নিয়মিত ওয়ার্ক আউট করেন তাঁরা কন্ট্রোলড ক্যালোরির ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করুন ডিমকে।
 

দই

ওজন বা বাড়তি ফ্যাট কমাতে চাইলে নিয়মিত লো ফ্যাট দইয়ের ঘোল, স্মুদি, রায়টা ইত্যাদি খেতে পারেন ক্যালশিয়াম ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ টকদই ডায়েটারদের ডায়েটে চাই-ই-চাই। এক্ষেত্রে গ্রিক ইয়োগার্ট বা প্রোবায়োটিক দই খেলে হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর হওয়ার বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।

 

প্রাণিজ প্রোটিন খাবার

মাছ, বিশেষত ওমেগা থ্রি জাতীয় এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ সামগ্রিক মাছ, চিকেন, টার্কি, স্কিমড মিল্ক, ছানা, লো ফ্যাট পনির ইত্যাদির থার্মোজেনিক এফেক্ট অন্যান্য কার্ব বা ফ্যাট জাতীয় খাবারের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় ‘বেসাল মেটাবলিক রেট’ অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে বাড়ে ক্যালোরি খরচের হার।
 

ডাল বিনস ও শুঁটি

মসুর ডাল, সবুজ মুগ, ছোলা, মটরশুঁটি, বিনস, রাজমা, অড়হর ইত্যাদি ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকায় প্রতিদিন মাত্রা মতো খাওয়া চোখের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। তবে বিশেষ বিশেষ শারীরিক সমস্যা থাকলে বা ডাল খাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: পিরিয়ডের সময় দুর্বলতা প্রতিরোধে অবশ্যই ডায়েটে রাখুন এই সব খাবার

ডিসেম্বরের শুরুতেও উধাও শীতের আমেজ! পারদ ঊর্ধ্বমুখীই, কবে থেকে জমিয়ে ঠান্ডা?

প্রস্তুতি শুরু হয়েছে নবান্নে, নতুন বছরের জানুয়ারিতেই মিলবে কিছুটা ডিএ?

 

রকমারি ফল

স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি অ্যানাবেরি, কালো আঙুর, কালোজাম ইত্যাদি হাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ফল রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, মাংসপেশিতে অক্সিজেনের যোগান বাড়ায়, ক্লান্তি দূর করে, দেহের বাড়তি ওজন কমায় এবং তারুণ্য বজায় রাখে।

কমলালেবু, পেয়ারা, আনারস, আমলকি, মুসম্বি পাতিলেবু ইত্যাদি ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধর্মী ফল দেহের হজম এবং বিপাক ঠিক রাখে, বাড়তি ওজন কমায়।

আপেল জাতীয় ফলের ক্যালোরি মাত্রা কম এবং যথেষ্ট পরিমাণে সলিউবল ফাইবার পেকটিন থাকায় নিয়মিত খেলে মেটাবলিক রেট বাড়ে। ফলে অ্যাবডমিনাল ফ্যাট কমে এবং হৃদরোগ বা কার্ডিয়াক ডিজিজ প্রতিরোধ করা যায়।

আরও পড়ুন:

বড় খুশির খবর, ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা নবান্নের, বড়দিনে টানা ৩ দিন ছুটি রাজ্য সরকারি কর্মীদের

কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-১: পোড়া গাছের ডাল থেকে নেমে এল সে! ভাটার মতো সবজে চোখ, ধোঁয়াটে শরীর…

খাই খাই: জিলিপি খেতে ভালোবাসেন? তাহলে আর দেরি কেন? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন গরম গরম আনারসের জিলিপি

 

মশলাপাতি

কাঁচা লঙ্কা, লাল লঙ্কা, আদা, রসুন, গোলমরিচ, দারচিনি, মেথি, মৌরি, জিরে, হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন ভারতীয় মশলাপাতি অত্যন্ত গুণকারী জৈব-যৌগ সমৃদ্ধ হওয়ায় বিশেষ মেডিসিনাল ভ্যালু আছে। এইসব মশলাপাতি ঠিকমতো খাওয়া হলে দেহ দূষণমুক্ত থাকে, হজম এবং বিপাক ঠিক থাকে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, সর্দি-কাশি, হাই কোলেস্টেরল লেভেল কমে। আবার দেহের বাড়তি মেদভারও কমে। এমনকি, শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, বাঙালির অতি প্রিয় সরষে বাটাও মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দিতে পারে!
 

চা ও কফি

গ্রিন টি-এর ক্যাটেচিন আর এপিক্যাটেচিন প্রায় ৪ থেকে ১০ শতাংশ বিএমআর বাড়িয়ে দিতে পারে। দিনে মাত্র ৩ থেকে ৪ কাপ চিনি ছাড়া গ্রিন টি পানে দিনে অতিরিক্ত ৭০ কিলো ক্যালরি বার্ন হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, কফির ‘ক্যাফেইন’ সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ১১ শতাংশ মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে হ্যাঁ, কোনওভাবেই দিনে ১ থেকে ২ কাপের বেশি কফি নয়। আর চলবে না চিনি দেওয়া চা-কফিও।

আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে: ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৭: রঙের খেলা আর উইসকনসিনের আঁকাবাঁকা ফাঁকা রাস্তা—জীবনীশক্তিকে আরও উসকে দেয়

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৩: খালেবিলে, ধানখেতে, পুকুরে, নদীতে ঘুরে বেড়ানো ‘ম্যাজিশিয়ান’ জেব্রা ফিশ ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে নতুন দিশা দেখাবে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪১: ঠাকুরবাড়িতে এসে সাহেব খেতেন ভাজা চিঁড়ের সঙ্গে কড়াইশুঁটি

 

বিশুদ্ধ পানীয় জল

দেহ কি দূষণমুক্ত, সুস্থ ও চনমনে রাখতে হলে দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার জল পান জরুরি। দেখা গিয়েছে, যাঁরা জল কম খান, তাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজম সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি ‘বেসাল মেটাবলিক রেট’ও কম। আবার অন্যদিকে জল পানের পরপরই বিএমআর প্রায় ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।

তাই না খেয়ে নয়, আজ থেকে খাবার খেয়েই ওজন কমান, সুস্থ থাকুন।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১


Skip to content