বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

শিশুদের টিফিনে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার থাকা আবশ্যক। নিয়মিত ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড বা বাইরের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে একদমই ভালো নয়। এই ধরনের খাবার আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যে পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। শিশু স্কুলের টিফিন কেমন হবে তা জানার আগে আমাদের প্রথমে স্কুলের টিফিন ঠিক কী এবং তার গুরুত্ব কতটা তা জানা জানতে হবে।
 

স্কুলের টিফিন ঠিক কী?

স্কুলের টিফিন হল স্কুলে যাচ্ছে এরকম শিশুদের স্বাস্থ্যের মান উন্নতির জন্য এবং তাদের পুষ্টির চাহিদার কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত টিফিন বা খাবার প্রস্তুত করা। শিশুর সারাদিনে অনেকটা সময় স্কুলে কাটে। ফুলে তারা স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলো প্রভৃতি কাজ করে থাকে। তাই স্কুলে পঠন-পাঠনের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ বিরতিতে এই ধরনের পুষ্টিকর টিফিন বা খাবার পরিবেশন করা হয়।
 

টিফিন প্রস্তুতের সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

একজন শিশুর দৈনিক ক্যালরির বেশিরভাগ অংশ কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিন থেকে নেওয়া ভালো। বাকি অংশ ফ্যাট, ভিটামিন বা মিনারেল থেকে নিতে হবে।
 

মোট ক্যালরির শতাংশের হিসেব

শিশুর সারাদিনে যত ক্যালরি শক্তি প্রয়োজন, তার ৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ২০ শতাংশ প্রোটিন এবং ২০ শতাংশ ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করতে হবে।

 

শিশু মোট ক্যালরির কত শতাংশ স্কুল টিফিন থেকে পাবে

স্কুল টিফিন এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যাতে শিশুর সারাদিনের মোট ক্যালরের এক-তৃতীয়াংশ ওই টিফিনে থাকে।
 

কোন পুষ্টিকর উপাদানের কী কাজ

কার্বোহাইড্রেট শক্তি যোগাবে, প্রোটিন পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে, ফ্যাট শক্তি যোগাবে এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
 

টিফিন কেমন হবে

স্কুল টিফিন যথাযথ পুষ্টি সমৃদ্ধ হতে হবে।
 

খুদের জন্য সুন্দর টিফিন বক্স

স্কুলের টিফিন যেন বাচ্চার দেখে ও খেতে ভালো লাগে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সেই মতো টিফিন বক্সে খাওয়ার সাজিয়ে দিতে হবে। যাতে খাবার দেখে বাচ্চার খাওয়ার ইচ্ছে জাগে।
 

কম সময়ে পুষ্টি

টিফিন এমন ভাবে দিতে হবে যাতে কম সময়ের মধ্যে বেশি পুষ্টি গ্রহণ করা যায়।
 

পুষ্টি বৃদ্ধিতে স্কুল টিফিন

সুস্থ থাকা, সঠিক বিকাশ, বৃদ্ধি এবং বয়স অনুযায়ী যথাযথ ক্রিয়াকলাপ শিশুর করছে কিনা তার অনেকটাই নির্ভর করে রোজকার খাদ্যতালিকা থেকে তার কিছুটা অংশ স্কুল টিফিন থেকে পাচ্ছে কি না।
 

শিশুর বৃদ্ধি

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সঠিক হচ্ছে কিনা তা তার খাদ্য তালিকায় থেকেই বোঝা যাবে।

 

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে

শিশুর বেড়ে ওঠা এবং মস্তিষ্কের বিকাশের সঠিক বয়স দুই থেকে ছয় বছর। তাই টিফিনে বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হবে।
 

টিফিনের বৈচিত্র

স্কুল টিফিনে অবশ্যই বৈচিত্র থাকতে হবে। খাবার যেন একঘেয়েমি না হয়।
 

মেধার বিকাশে

পুষ্টিহীন শিশু যেহেতু শারীরিকভাবে দুর্বল হয়, তাই তাদের মেধারও পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না। এর জন্য ভবিষ্যতে তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
 

টিফিনে পানীয়জলের গুরুত্ব

স্কুল টিফিনে সলিড খাবারের পাশাপাশি যথাযথ পানীয়জল রাখতে হবে। টিফিনের সময় শিশুরা স্কুলে অনেক খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করে ফলে তারা ঘেমে যায়। শরীরে জলশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। এর জন্য জল এবং রসালো ফল তার টিফিনে রাখা উচিত।
 

ত্বক, হাড় ও দাঁতের গঠন

শিশুর টিফিন এমন হতে হবে যাতে তাদের বাড়ন্ত বয়সে ত্বক, হাড় ও দাঁতের গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহজে গড়ে ওঠে।
 

গুরুত্ব দিন পছন্দ ও অপছন্দ

শিশুর পছন্দ ও ও অপছন্দের গুরুত্ব দিয়ে তার খাবারের মেনু নির্বাচন করতে হবে।
 

টিফিনের পরিমাণ

টিফিন হবে অল্প পরিমাণে কিন্তু উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

আরও পড়ুন:

ডায়েট টিপসঃ মাইগ্রেনের মুক্তি সঠিক ডায়েটেই, রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন এই খাবারগুলি

যোগা-প্রাণায়াম: বাহু ও পিঠে বেশ ফ্যাট জমছে? ছিপছিপে থাকতে নিয়মিত যোগাভ্যাস করুন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১০: কান্না-হাসির দোল দোলানো ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ [২০/০২/১৯৫৩]

অচেনা টলিউড, পর্ব-৫: ধৈর্য, সততা আর নিষ্ঠা থাকলে মানুষ কী না করতে পারে

২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা সাত বছর পর জানবেন পরীক্ষার নম্বর, ২০১৭-র ফলও সোমবার

 

শুকনো খাবার

ঝোল জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। সেই জায়গায় শুকনো খাবার দিতে হবে।
 

ঘরের তাপমাত্রা

এমন টিফিন দিতে হবে যা ঠান্ডা হয়ে গেলেও শক্ত হয় না।
 

সতেজ

টিফিনের খাবার অবশ্যই সতেজ থাকতে ও নরম হবে।
 

ভাগ করে টিফিন খাওয়া

বাচ্চাদের টিফিন খাওয়ার উৎসাহ বাড়ানোর জন্য একটু বেশি টিফিন দিতে হবে, যাতে ও বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খেতে পারে। এতে তাদের ভাগ করে খাওয়ার অভ্যাসও তৈরি হবে।
 

একের বেশি টিফিন

যে সমস্ত বাচ্চাদের স্কুল অনেকক্ষণ থাকতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে দুটো ছোট ছোট টিফিন দিন।
 

ভালো তেলে রান্না

টিফিনে যদি কোনও রকম ভাজাপোড়া খাবার থাকে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তেলের গুনগত মান যেন ভালো হয়।
 

ঘরে তৈরি খাবার

ঘরের তৈরি টিফিন স্বাস্থ্যের জন্য সব সময় ভালো। তাই বাড়িতেই বিভিন্ন রকম টিফিন তৈরি করে বাচ্চাকে দেওয়াই ভালো।

আরও পড়ুন:

খাই খাইঃ প্রিয়জনকে মিষ্টিমুখ করাতে চান? বানিয়ে ফেলুন ছানার পায়েস

দশভুজা: দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন

গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!

বাইরে দূরে: উটাহ: প্রাচীন জলনগরীর রূপকথা

 

টিফিন নিয়ে বকাঝকা মানা

শিশু যদি টিফিন না খায় তবে বকাঝকা না করে টিফিন না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করুন। তার শরীরে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা করুন।
 

টিফিনে কী কী থাকতে পারে?

যে কোনও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারই খুদের টিফিনে থাকতে হবে।
বাচ্চার টিফিন এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যাতে তা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ ইত্যাদির সমাহার হয়। খাবারটি যেন যথেষ্ট পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
 

রকমারি খাবার

প্রতিদিনের টিফিন যেন একই ধরনের না হয়। টিফিনে বিশেষ বৈচিত্র আনা আবশ্যক, না হলে শিশুর খাবার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকে না।
 

দৈনিক কতটা পরিমাণ

একটা বাচ্চা সারাদিনে যা খায় তার একটি অংশ হবে টিফিন। পাশাপাশি শিশু যাতে যথেষ্ট পরিমাণে জলপান করে সেটিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
 

সঠিক টিফিন বক্স

স্কুলের টিফিন বক্স প্লাস্টিকের পরিবর্তে স্টিল বা সিলিকনের হওয়া বাঞ্ছনীয়। টিফিন বক্সের সঙ্গে অবশ্যই চামচ ও টিস্যু পেপার দিতে হবে। সম্ভব হলে হাত ধোয়ার উপকরণ দিতে হবে। শিশু যাতে খাবার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়। সেই বিষয়ে তাকে ছোট থেকেই অভ্যস্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২২: সত্যের শৃঙ্খলে বন্দি রাজা দশরথ

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪১: অবশেষে কালেয়দমন চিন্তায় অগস্ত্যমুনির শরণাপন্ন হলেন দেবতারা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪০: রবীন্দ্রনাথকে দারোয়ান ভেবে দৌড়ে পালিয়েছিল চোর

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩২: দেশে প্রথম গবেষণা সংস্থার কারিগরি সহায়তায় বেড়ে ওঠা সেরা প্রাপ্তি ‘জয়ন্তী রুই’ মাছ

 

বাড়িতে তৈরি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার

কেনা খাবার, দোকানের ফাস্টফুড-জাঙ্কফুড বা বারবার তেলে ভাজা বা পুরনো তেলে ভাজা এরকম খাবার শিশুকে না দেওয়াই ভালো। বাড়িতে তৈরি ভালো তেলে বানানো খাবারই শিশুকে দেওয়া উচিত।
 

টিফিনে কী কী থাকবে না

প্যাকেটবন্দি খাবার
ফাস্টফুড
জাঙ্কফুড
ভাজাভুজি
সংরক্ষক মেশানো খাবার
বাসি খাবার
ঝোল জাতীয় খাবার
ইনস্ট্যান্ট নুডুলস
চিপস প্রভৃতি
 

বাড়িতে তৈরি কিছু পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত টিফিন

শুকনো ফল যেমন কাজু, কিসমিস, খেজুর প্রভৃতি
মরসুমি ফল
ডিম
আলুর দিয়ে তৈরি খাবার
রকমারি সবজি দিয়ে বানানো খিচুড়ি
সবজি
সবজি-ডিম দিয়ে বানানো নুডুলস বা পাস্তা।
কাবাব
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
চিকেন রোল
এগ রোল
বাদাম দিয়ে মিল্কশেক
বিটের কাটলেট
ধোকলা
ইডলি
ব্রেড টোস্ট
ভেজরোল
পনিররোল
পনির টিক্কা
পনির কাবাব
সয়া কাবাব
সোয়া টিক্কা
ভেজ কাবাব
ভেজ বল
পনির চিজ বল
বিভিন্ন রকম দানাশস্য যেমন জোয়ার-বাজরা, রাগি, ছোলা, গম ইত্যাদি গুঁড়ো করে প্রস্তুত ছাতু।
সব রকমের ডাল যেমন মুগ, মসুর, মটর, সয়াবিন, ছোলা ইত্যাদি ভিজিয়ে অঙ্কুর বার করে নুন ও লেবু সহযোগে দেওয়া যেতে পারে।
চানা মাসালা
রাজমা কারি
আলু কাবলি
বিভিন্ন সবজি দিয়ে প্রস্তুত ডালিয়া
সবজি দিয়ে প্রস্তুত ওটস ইত্যাদি।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২


Skip to content