মাছ বলুন বা জলের পোকা—সারা পৃথিবীর মানুষজনই মজেছেন সুস্বাদু চিংড়ির আকর্ষণে। আর চিংড়ি কি একরকম? গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, লাল চিংড়ি, ঘুষো চিংড়ি, নদীর চিংড়ি, সমুদ্রের চিংড়ি ইত্যাদি প্রায় ৪৫০ রকমের চিংড়ির নানা প্রজাতির দেখা মেলে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। আবার বাঙালি রান্নার গুণে চিংড়ির মালাইকারি থেকে শুরু করে চিংড়ি ভাপা, ডাব চিংড়ি, চিংড়ির দম, চিংড়ির ভর্তা, ভুনা, পাতুরি, রসা ইত্যাদি অগণিত সাবেকি পদের পাশাপাশি চিংড়ির বিভিন্ন কন্টিনেন্টাল রেসিপিও রসনাকে রসন্থ করেছে। শাকটি হোক বা তরকারি, এক মুঠো চিংড়িতেই নিমেষে হয়ে ওঠে অতি সুস্বাদু।
যাইহোক, ব্যাপারটা হল চিংড়ি যে অতি সুস্বাদু এক ধরনের শেলফিশ, সে ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এই মাছের আদৌ কি কোনও উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ আছে?
চিংড়িমাছের পুষ্টিগুণ
● চিংড়ি মাছে অতি উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন ছাড়াও থাকে আয়োডিন, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন-বি সিক্স, বি১২ ইত্যাদি বিভিন্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
১০০ গ্রাম চিংড়িমাছে প্রায় ২৪ গ্রাম প্রোটিন, ৩৪৭ মিলিগ্রাম ওমেগা থ্রি জাতীয় এসেন্সিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, ১.৪ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন-বি১২, ১০ শতাংশ কপার, ৮ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম এবং ১৫ শতাংশ আয়রন আছে, যা দৈনন্দিন চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে। শরীরের বৃদ্ধি বিকাশ ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ চিংড়ির বিশেষ ভূমিকা আছে।
সমুদ্রের লাল চিংড়িতে থাকে অ্যাসথাজেনথিন নামের এক ধরনের তীব্র শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চোখ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ১০০ গ্রাম চিংড়ি মাছে মোটামুটি ৮৫ কিলোক্যালরি শক্তি থাকে, যা সাধারণ রুইমাছে তুলনায় কম এবং ফ্যাটের পরিমাণও বেশ কম।
চিংড়িমাছের গুণাগুণ
● চিংড়ি মাছের ক্যালশিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন-ডি হাড় শক্ত রাখে, হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
● রক্তাল্পতা কমাতে সাহায্য করে আয়রন সমৃদ্ধ এই মাছ।
● থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকর্ম ও মেটাবলিজিম ঠিক রাখে।
● ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ চিংড়ি মাছ বাড়ন্ত বাচ্চাদের বুদ্ধির বিকাশ ও মেধা বাড়াতে সাহায্য করে।
● এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও ক্যাটারাক্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে চিংড়ির আসথাজেনথিন।
● কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং টাইপ-টু ডায়াবিটিসেও মাপ মতো খেতে পারেন উপকারী চিংড়ি।
● প্রিম্যাচিওর এজিং প্রতিরোধেও চিংড়ি মাছ বেশ ভালো ফলদায়ক।
● এর সেলেনিয়াম এবং ওমেগা থ্রি জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চিংড়িমাছের বিপদ
● যাঁদের রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বেশি বা হাইপার লিপিডেমিয়া আছে তাঁরা তুলনামূলকভাবে বেশি কোলেস্টেরল যুক্ত এই মাছ খাবেন না। যদিও গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, চিংড়ি মাছ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল দুয়েরই মাত্রা বাড়াতে সক্ষম। তাই ভালো কোলেস্টেরলের গুণ, খারাপ কোলেস্টেরলের দোষকে কতখানি প্রশমিত করতে সক্ষম সে নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
● মোটামুটি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক খাদ্য মাধ্যমে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ নিরাপদ ধরা হয়। তবে যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সাবধানতার নেওয়া হয়। যেহেতু ১০০ গ্রাম চিংড়ি মাছ থেকেই প্রায় ১৮৫ থেকে ১৯০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল হুড়মুড়িয়ে দেহে ঢুকে পড়তে পারে, তাই এই সাবধানতা বা খেলেও রয়ে সয়ে খাবেন।
● যাঁদের শেলফিশে অ্যালার্জি আছে তারা মোটেই চিংড়ি মাছ খাবেন না। এর ফলে ত্বকের র্যা শ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়।
● উইলসন ডিজিজ বা কপার মেটাবলাইসিনের সমস্যা থাকলেও চলবে না চিংড়ি মাছ।
● চিংড়ি মাছের মাথা পিঠের দিকের কালো নালি এবং পায়ের নোংরা থেকে ব্যাকটেরিয়াল ফুড পয়েজেনিং হতে পারে। তাই খাবার আগে অবশ্যই খুব ভালোভাবে বেছে ধুয়ে নিতে হবে।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১
* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।