সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


রোগের যম আমলকি। ছবি: সংগৃহীত।

সারা বছর ভোর শুকনো আমলকি পাওয়া গেলেও টক-মিষ্টি কষা স্বাদের শীতকালীন এই ছোট্ট সাইট্রাস ফ্রুটের গুণমানই আলাদা। শুনলে অবাক হয়ে যাবেন যে, একটা ছোট্ট আমলকিতে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ প্রায় দুটো কমলালেবুর সঙ্গে তুলনীয় এবং আমলকিতে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ আপেলের চেয়ে প্রায় ১২০ কুড়ি গুণ বেশি। ভিটামিন-সি যুক্ত এই সাইট্রাস ফলের জাদুকরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে।
 

১০০ গ্রাম কাঁচা আমলকির পুষ্টিগুণ

শক্তি মাত্রা ৫৮ কিলোক্যালরি। কার্বোহাইড্রেট ১৩.৭ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ৩.৪ গ্রাম, সোডিয়াম পাঁচ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২২৫ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন-সি প্রায় ৬০০ মিলিগ্রাম রয়েছে। এছাড়াও গ্যালিক অ্যাসিড, ইলাজিক অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন ইত্যাদি বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যালসের উপস্থিতি আমলকিকে সর্বরোগহর করেছে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: গ্রিন টি খেলেও কোনও সুফল মিলছে না? ভুল সময়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন না তো?

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৭: সুন্দরবনের নদীবাঁধের ভবিতব্য

 

কোন কোন রোগের দাওয়াই আমলকি

সর্দি-কাশি ও ভাইরাল ইনফেকশনের আশঙ্কা কমাতে এই অ্যান্টিসস্পাসমেটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এফেক্ট থাকায় আমলকি অত্যন্ত উপকারী।

হাই ব্লাড প্রেশার, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন-সি এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ছোট্ট ফল আমলকি অত্যন্ত উপকারী।

ডায়াবিটিস থাকলে যে ক’দিন তাজা আমলকি পাওয়া যায়, নিয়মিত খান। অসময়ে অবশ্য শুকনো আমলকি খেলেও চলবে। আমলকির ভিটামিন-সি ও ক্রোমিয়াম ইনসুলিন সেনসিভিটি বাড়ায় ও রক্ত শর করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ক্যানসার বিশেষত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট ও রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টের ম্যালিগন্যান্সি প্রতিরোধে সাহায্য করে আমলকি।

বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস ও বিভিন্ন পেটের গোলমালের সমস্যা দূর করতে আমলকির জুড়ি নেই।

কনজাংটিভাইটিস, ক্যাটারাক্ট ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের সমস্যা প্রতিরোধ করতেও আমলকি অত্যন্ত উপকারী।

স্কার্ভি বা দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া, নড়বড়ে দাঁত, ত্বকের দাগ, ছোপ দূর করতে হলে যে কদিন তাজা আমলকি পাওয়া যায় তা খেতে হবে। অন্যথায় শুকনো আমলকিও চলবে।

ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা, বিশেষত ব্রণ, র‍্যাশ, পিগমেন্টেশন, চোখের নিচে কালি, শুকনো ত্বক, চুল পড়ে যাওয়া, চুলের অকালপক্কতা, একজিমা থেকে সোরিয়াসিস বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধেই আমলকি অত্যন্ত উপকারী।

রিউমেটিজম ও অস্টিওপোরেসিসের ক্ষেত্রে খাদ্যস্থ ক্যালশিয়ামকে কাজে লাগিয়ে হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে ছোট্ট এই সাইট্রাস ফল।

অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তহীনতার সমস্যা থাকলে নিয়মিত আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

আমলকি মুখে রুচি ফেরায়, খিদে বাড়ায়।

অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ফল অত্যন্ত উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমলকির বিস্ময়কর ভূমিকার কথা প্রায় সবারই জানা।

আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১২: সুখলতা রাও— ছোটদের পরী

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫১: কচ, দেবযানী ও মহান শুক্রাচার্য— প্রেম, প্রতিহিংসা, উদারতায় অনন্য তিন দৃষ্টান্ত?

 

কীভাবে খাবেন আমলকি?

সাধারণত তাজা আমলকি যেমন চিবিয়ে খেতে পারেন, তেমনি রস করে অল্প জল মিশিয়েও খেতে পারেন। অনেকেই আমলকি ভাতে সঙ্গে সেদ্ধ করে খান। তবে সেক্ষেত্রে আমলকির পুষ্টিগুণ যে অনেকটাই কমে যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুকনো আমলকি বা আমলকি চূর্ণ খেতে হলেও তা কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রেখেই খাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৪: মা সারদার সন্তানসম শিষ্যের দেহরক্ষা

 

প্রতিদিন কতটা আমলকি খাওয়া উপকারী

আমলকি অত্যন্ত উপকারী ফল হলেও ‘সর্বত্র অত্যন্ত গর্হিতম’। মেপে খেলেই উপকার। তাজা আমলকির ক্ষেত্রে দিনে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম অর্থাৎ একটা মাঝারি সাইজের আমলকির অর্ধেকটাই যথেষ্ট। অন্যদিকে শুকনো আমলকি যাঁরা প্রতিদিন খান, তাঁরা একের চার চা চামচ মাত্রায় খেতে পারেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content