মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

বছরের পর বছর ধরে আমরা একটা কথা শুনে আসছি, ‘দিনে একটি করে আপেল খেলে ডাক্তারের মুখ দেখতে হয় না’। কথাটার মধ্যে ভুল কিছু নেই। আজও গবেষকরা মনে করেন, প্রতিদিন একটা করে আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো।

রোজদিন সকালের প্রাতঃরাশের থালা জুড়ে একটি লাল টুকটুকে আপেল থাকে অনেকেরই। আপেলকে সবচেয়ে পুষ্টিকর ফলগুলির একটি মনে করা হয়। আপেল প্রায় ৮৬ শতাংশ জলে ভরা। এতে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় একাধিক খনিজ পদার্থ আছে। আপেল ভিটামিন এ, সি এবং কে সমৃদ্ধ। এতে ফ্যাট খুব কম মাত্রায় আছে।

আপেলের পুষ্টিগুণ অনেক। শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আপেলের ফাইবার অর্থাৎ এর খোসা ওজন কমানোর জন্য ভীষণভাবে কার্যকারী। আপেল আমাদের মুখের স্বাস্থ্য উন্নত করে। মুখের মধ্যে যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে আপেল তা সহজেই মেরে ফেলে। তাই প্রতিদিন আপেল খেলে শুধু মুখের নয়, দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
 

প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে কী কী পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে?

প্রায় ৮৫.৫৬ গ্রাম জল
৫২ কিলো ক্যালরি শক্তি
০.২৬ গ্রাম প্রোটিন
০.১৭ গ্রাম ফ্যাট
১৩.৮১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
২.৪ গ্রাম ফাইবার
এছাড়া আরও অনেক প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে।

 

আপেল খাওয়ার সঠিক সময়

‘‘দিনে একটি করে আপেল খেলে ডাক্তারের মুখ দেখতে হয় না’ এই খুবই প্রচলিত একটি কথা। তবে মনে রাখতে হবে যখন তখন খেলে এই ফলটা ততটা কাজ দেবে না। ফল খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। সেই সময়ে খেলে তবেই সেই তার উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাবে। তাই আপেল খাওয়ারও একটা নির্দিষ্ট সময় আছে।

পুষ্টিবিজ্ঞান অনুযায়ী, সকালবেলা আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। আপেলের খোসা বা আঁশ ফাইবার সমৃদ্ধ। অনেকেই হজম সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। তাই সকালে আপেল খেলে তা হজমে হওয়ার অনেক সময় পাবে। হজম প্রক্রিয়াও সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকবে।
আপেলে উপস্থিত পেকটিন ‘ল্যাকটিক অ্যাসিড’কে সুরক্ষিত রাখে। কোলোনের ব্যাকটেরিয়াকে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।, এছাড়া পেকটিন ‘টক্সিন’-এর পরিমাণ কমায়। সেই সঙ্গে ক্যানসার আক্রমণের জন্য অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হতে দেয় না।

আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-২: প্রসঙ্গ ছত্তিসগড়

বিচিত্রের বৈচিত্র্য: নাম রেখেছি বনলতা…/১

 

অসময়ে আপেল খেলে কি হতে পারে?

অসময়ে অর্থাৎ বিকালে আপেল খেলে তা হজমে সমস্যা দেখা যায়। রাতের দিকে আপেল খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। পেটে বিভিন্ন রকমের অস্বস্তি দেখা যায়। আপেলের জৈব অ্যাসিড পাকস্থলির অ্যাসিডকে সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৯: দেখতে দেখতে ‘সদানন্দের মেলা’

হেলদি ডায়েট: করলা স্বাদে তেতো হলেও পুষ্টিগুণ কিন্তু মিষ্টি! একঝলকে জেনে নিন রোজ কেন পাতে রাখবেন এই সব্জি

 

কেন খাবেন আপেল

আপেল ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। আপেলে থাকা ‘পলিফেনল’ স্থূলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত জল এবং ফাইবার অনেক সময় ধরে পেট ভরা রাখে। ফলে মুহূর্তে খিদে পায় না। তাই ওজন সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে আপেল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এতে উপস্থিত ‘কোয়েরসেটিন’ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে আপেল খেতে হবে খোসা সমেত।
হার্ট ভালো রাখতে আপেলের জুড়ি মেলা ভার। আপেলে হাইপোকোলেস্টেরলেমিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
আপেল স্নায়বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। প্রতিদিন খেলে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো বেশি কর্মক্ষমও হয়।
ক্যানসার দূরে রাখার এক অন্যতম চাবিকাঠি হল আপেল। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে আপেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২: ন্যাড়া মাথায় ভালো চুল গজায়?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৭: পুরীতে বাড়ি— রবীন্দ্রনাথের, গগনেন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের

গবেষণায় এও দেখা গেছে, আপেল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৮ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
আপেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ-ছোপ, ফাইনলাইন কমায়। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে আপেল বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আপেল দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করতে কার্যকর। দাঁতের হলদেটে আস্তরণ এবং ফাঁকে ফাঁকে যে খাদ্যকন্যা জমে যায় আপেল সেগুলো পরিষ্কার করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ‘প্রোবায়োটিক’ সাহায্য করে। আর পেকটিন হল প্রবায়োটিকেরই একটি উপাদান, যা আপেল থেকে পাওয়া যায়। তাই অন্ত্রের যাবতীয় সমস্যা যেমন— পেটে ব্যথা, পেট ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির সমাধানে আপেল ম্যাজিকের মতো সাহায্য করে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২
* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content