শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

সামনেই দুর্গাপুজো ও লক্ষ্মীপুজো গেল। এর পর আরও অনেক পুজো বা অনুষ্ঠান বাকি। সঙ্গে নিমন্ত্রণ বাড়ির ছড়াছড়ি। দুর্গাপুজো ও লক্ষ্মীপুজোতে নিশ্চয়ই বাইরের খাবারই বেশি খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মাসের বিশেষ কিছু দিনে অর্থাৎ ঋতুচক্রের সময় মহিলাদের মধ্যে পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা যায়। এই সময় খাওয়ার ইচ্ছা একদমই চলে যায়। মনে হয় পেটের মধ্যে হাওয়া-বাতাস জমে আছে। পেট ফুলে থাকে। পেটের ভিতরের টিস্যুগুলো ফুলে যায় কিংবা বড় হয়ে যায়। বেশি খাওয়া-দাওয়ার ফলে যেমন পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা যায় সেরকমই খাওয়া-দাওয়া কম করলে বা বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকলেও পেট ফাঁপা সমস্যা দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এটা ভীষণ অস্বস্তিকর আকার ধারণ করে, যা দৈনন্দিন জীবনেও প্রভাব ফেলে। তবে এতে হতাশা হওয়ার কিছু নেই। আমরা পেট ফুলে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ, উপসর্গ এবং ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।
 

পেট ফাঁপার সম্ভাব্য কারণগুলি কী কী?

পেট ভুলে যাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার আকার ধারণ করে। তাই এর কারণগুলো জেনে নেওয়া খুবই জরুরি। আসুন দেখে নিই পেট ফুলে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো কী কী।

বদহজম পেট ফুলে যাওয়ার অন্যতম কারণগুলি হল—
দীর্ঘক্ষণ খাবার না খাওয়া বা উপোস করা। এর ফলেও পেট ফুলে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে পেট ফোলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ল্যাক্টোজ ইন টলারেন্স বা দুধ জাতীয় খাদ্য গ্রহণে অ্যালার্জি থাকলে পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা যায়।
খাদ্য তালিকায় হঠাৎ পরিবর্তন বা উপযুক্ত পরিমাণে খাবার না গ্রহণ করলে পেট ফুলে যেতে পারে।
পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে যেসব খাবার যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, ব্রকলি ইত্যাদি জাতীয় খাবার খেলে পেট ফুলে যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রাইটিস ক্যানসার বা অন্ত্রে কোনও রকম সমস্যায় পেট ফোলার সমস্যা দেখা যায়।
মাল্টিভিটামিন বা আইরন ট্যাবলেট খেলে পেট ফাঁপাতে পারে।
অতিরিক্ত বাইরের খাবার বা ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড খেলেও এমন সমস্যা হয়।
কল্ডড্রিংক বা কার্বনেটেড পানীয় খেলেও এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
 

প্রাথমিক উপসর্গ

কখন বুঝবেন আপনার পেট ফাঁপা সমস্যা হতে পারে অর্থাৎ পেট ফাঁপার লক্ষণগুলি কী কী! যখন পেট ফাঁপা অনুভূত হয়, তখন শরীরে বিভিন্ন রকম অস্বস্তি দেখা যায়। আসুন দেখে নিই সেই লক্ষণগুলি কী কী?
পেট শক্ত লাগে বা ভরা অনুভব হয়।
অন্ত্রের ভিতরে অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়।
অনেক সময় পেটে ব্যথা হয়।
পেট ভারের সমস্যা থেকে জ্বর হতে পারে।
বারবার ঢেকুর ওঠে।
গা বমি বমি ভাব এবং বমি দেখা হতে পারে।
শারীরিক ক্লান্তির ফলে কাজ করতে অনিহা লাগে।

 

পেট ফাঁপা বা বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

পেট ফাঁপা বা বদহজমের সমস্যা হলে প্রথমেই ওষুধ না খেয়ে কিছু ঘরোয়া উপায়েও এর সমাধান করা যায়। সেরকম কয়েকটি ঘরোয়া উপায় হল—
 

পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করুন

পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করতে হবে। জল দ্রুত খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে। বিশেষত যাঁরা বদহজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ জলপান করতে হবে। তবে বিশেষ কোনও সমস্যা না হলে খাবারের মাঝে জল খাওয়া উচিত নয়।
 

শারীরিক কাজকর্ম বজায় রাখুন

পেটে অস্বস্তি হচ্ছে বলেই শুয়ে পড়বেন না। বরং হাঁটাহাঁটি বা শারীরিক কসরত করলে পেট ফোলা ভাব বা অস্বস্তি সহজেই কমবে। শুয়ে থাকলে এই অস্বস্তি আরও বাড়তে থাকবে।
 

তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়াতে হবে

নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। তৈলাক্ত বা ভাজাভুজি জাতীয় খাবার যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভালো। এই সব খাবার অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেলে গ্যাস হয় এবং পেট ফুলে যায়। কার্বোহাইড্রেট বেশি খাওয়া হলে হজমের সমস্যা দেখা যেতে পারে, যা থেকে পেটের গন্ডগোল, ফাঁপা এবং পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
 

শরীরে হালকা গরম তাপ দিন

পেটে অস্বস্তি ভাব হলে হালকা গরম জলে স্নান করতে পারেন। এতে শরীর অনেকটা ঝরঝরে ভাব আসবে। এছাড়াও হিটিং ব্যাগ নিয়ে পেটের তাপ প্রয়োগ করলে অনেকটা আরম বোধ হয়।
 

কাজে লাগান আদাকে

হজমের সমস্যায় দ্রুত সমাধানে আদা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। বদহজম দূর করতে বা পেট ফাঁপা সমস্যা কমাতে প্রতিদিন খাবার পর এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা অনেক অংশে কমে।
 

পেট ঠান্ডা রাখে শশা

শশা খেলে পেট ঠান্ডা হয়। এটা আমাদের বহুদিনের ধারণা শশায় উপস্থিত প্লাবনয়েড ও আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাস কমায়।
 

টক দই ভীষণ উপকারী

টক দইতে যে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে, তা আমাদের অন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এর ফলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত হয়। হজম শক্তিও বাড়ে। তাই পেট ফাঁপা বা বদহজমের সমস্যায় টক দইয়ের বিকল্প নেই।
 

বহু গুণে সমৃদ্ধ পেঁপ

পেঁপেয় থাকা পাপায়া এনজাইম হজম শক্তি বাড়ায়। তাই নিয়মিত পেঁপের খাওয়ার অভ্যাস গ্যাসের সমস্যা ও বদ হজমের সমস্যা অনেকখানি কমায়।
 

খালি পেটে কাঁচা হলুদ

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যদি কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হয়, তাহলে এক টুকরো হলুদ থেঁতো করে তার রস খেলে পেট ফাঁপার সমস্যা কমমে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট টিপস: গ্রিন-টি খেয়েই ওজন নিয়ন্ত্রণ? এতে কী ক্ষতি হতে পারে জেনে নিন

ছোটদের যত্নে: আপনার সন্তান কি প্রায়ই কাঁদে? শিশুর কান্না থামানোর সহজ উপায় বলে দিচ্ছেন ডাক্তারবাবু

উৎসব-মুখর মথুরা: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /১

 

দারচিনির‌ বিকল্প নেই

হজমের সমস্যায় দারচিনির‌ বিকল্প নেই। এক গ্লাস জলে হাফ চামচ দারচিনিগুঁড়ো বা একটা বড় দারচিনি ফুটিয়ে দু-তিনবার খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
 

জিরে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

জিরে গ্যাস কমাতে তাৎক্ষণিক কাজ করে। পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে পেটে ব্যথা দূর করে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও জিরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এক গ্লাস জলে এক চামচ জিরে মিশিয়ে সেই জল প্রতিদিন একবার খেলে পেটের যে কোনও সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
 

মৌরি ভেজানো জল

এক গ্লাস মৌরি ভেজানো জল বা হাফ চামচ মৌরি রোজ চিবিয়ে খেতে পারলে বদহজমের সমস্যা অনেকটা কমে।
 

নিয়ম করে আদা-চা

এক টুকরো আদা কুচিতে সামান্য লবণ মাখিয়ে সেই আঁদার রস বা আদা চা তৈরি করে খেলে পেট ফাঁপার সমস্যায় উপশম হয়।
 

তুলসী পাতা খিদে বাড়ায়

খিদে বাড়ানো, পেটে ব্যথা, অস্বস্তি ভাব, ফোলা ভাব ইত্যাদি কমাতে এক কথায় তুলসী পাতা অসাধারণ। সামগ্রিক ভাবে হজমশক্তিও বাড়ে। তুলসীপাতায় উপস্থিত বিশেষ প্রাকৃতিক উপাদান পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
 

ডাবের জলের ব্যবহার

ডাবের জল থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে ক্যালোরি ও চিনির পরিমাণ খুব কম থাকে, ফলে পেটের যে কোনও সমস্যায় ৪-৫ ঘণ্টা অন্তর এক গ্লাস করে ডাবের জল খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
 

কোষ্ঠকাঠিন্য-ডায়রিয়া ও কলা

কলায় থাকা পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন-বি বদহজমের সঙ্গে সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ায় নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।
 

গ্যাসের সমস্যায় কুমড়ো

কুমড়ো ফাইবার ও পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। এই পটাশিয়াম শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়াম বার করে দেয়। পটাশিয়াম পেটে গ্যাস তৈরি করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। তাই প্রতিদিনে খাদ্য তালিকা কুমড়ো রাখলে ভালো। সেক্ষেত্রে জলে কুমড়ো ভালো করে ফুটিয়ে সেই জল খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।

আরও পড়ুন:

নিয়ম মানুন, সুস্থ থাকুন—পুজোয় ভালো থাকার সহজ উপায় জানালেন ডাক্তারবাবু

সঠিক ত্বকের যত্নে যেমন রোদ এড়াতে হবে, তেমনি আবার রোদ লাগাতেও হবে

যোগা-প্রাণায়াম: বাহু ও পিঠে বেশ ফ্যাট জমছে? ছিপছিপে থাকতে নিয়মিত যোগাভ্যাস করুন

 

উষ্ণ লেবুর জল

এক গ্লাস গরম জলে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রয়োজনে এই জলে মধুও যোগ করা যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই জল গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।
 

আপেল সিডার ভিনিগার

আপেল সিডার ভিনিগার আমাদের হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন হালকা গরম জলে এক চামচ আপেল সিডার ভিনিগার খেলে হজম ক্ষমতা বাড়বে। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এতে সামান্য মধু দেওয়া যেতে পারে।
 

আন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর গ্রিন-টি

গ্রিন-টি আন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। গ্রিন-টি খেলে প্রসাবে পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পেটে অতিরিক্ত জল জমে থাকে না। অতিরিক্ত জল না থাকার জন্য পেট ফাঁপা লক্ষ্য করা যায় না। গ্রিন-টি হজমে সাহায্য করে, গ্যাস ও পেট ফোলা ভাব কমায়।
 

পেটের সমস্যায় কমলালেবু

কমলালেবু পেটের পিএইচ-এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ পেট ফাঁপা দূর হয়। কমলালেবু ফাইবারের খুব ভালো উৎস। প্রতিদিন খাবার আগে কমলালেবুর রস এক গ্লাস খেলে পেট ফুলে যাওয়া কমে যায়।

 

পেট ফোলা ভাব কমাবে আনারস

আনারসে থাকা ব্রোমেলাইন নামক উৎসেচক রয়েছে। এটি পেটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিনকে সহজেই ভেঙে হজমে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ পেটের ফোলা ভাব কমে যায়। তবে খালি পেটে কখনওই আনারসের রস খাওয়া উচিত নয়। আনারসের রস এক গ্লাস জলে মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা কমে।
 

নারকেল তেল

নারকেল তেলে কিছু প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান উপস্থিত থাকে, যা পেটের যেকোনও সমস্যা দূর করে খুব সহজে। এক চামচ নারকেল তেল প্রতিদিন রান্নায় বা স্যালাডে মিশিয়ে খেলে পেটের যে কোনও সমস্যা বিশেষত পেট ফোলা ও বদহজমের সমস্যা সহজেই দূর হয়।
 

অ্যালোভেরার রস

অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা রেচক কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের ফোলা ভাব কমায়। অ্যালোভেরা মূলত বদহজম ও প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধ কাপ অ্যালোভেরার রস দিনে এক বা দু’ বার খেলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।
 

ক্যাস্টর অয়েল

কোষ্ঠকাঠিন্য পেট ফোলার অন্যতম একটি কারণ। ক্যাস্টর অয়েল জোলাপের মতো কাজ করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। মলকে নরম করতে সাহায্য করে। এক কাপ ফলের রসে এক চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। অনেকে শুধু ক্যাস্টর অয়েলও খান। যখনই পেটের সমস্যা দেখা যাবে তখনই ক্যাস্টর অয়েল খেলে উপকার হাতে-নাতে পাওয়া যাবে।

উপরোক্ত আলোচনায় যে সমস্ত উপাদানগুলির কথা বলা হয়েছে, তা প্রাকৃতিকভাবে পেটে ফোলার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে এগুলির অতিরিক্ত ব্যবহার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি পেট ফোলা বা বদহজমের সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২


Skip to content