শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।

কেউ কেউ ওজন কমানোর জন্য সারাদিন প্রায় না খেয়ে থাকেন, তো কেউ আবার দিনে তিন-এ বিশ্বাসী। অর্থাৎ দিনে তিনটে মেইন মিলের বাইরে কিছু খান না। কিন্তু ওজন সেভাবে কমছে কি? না কমলেই ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছেন, কাজকর্মে সেভাবে মন লাগছে না, ক্লান্তি আর অবসাদ গ্রাস করছে।

শেষমেষ দুত্তরি বলে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে আবার ঝুঁকে পড়ছেন তথাকথিত ‘কমফোর্ট ফুড’ নামক ‘ফাস্ট ফুড’ এর উপর। বিশেষত কাজের শেষে দিনান্তে হাতের কাছে চপ, সিঙ্গারা চিপস, প্যাটিস, বার্গার, পেস্ট্রি, পিৎজা, রোল, চাউমিন যা পাওয়া যায় তাই খেয়ে ফেলছেন সন্তুষ্টি রক্ষায়।
অগত্যা ওজন না কমে বাড়তে থাকছে। না না, ভয় পাবেন না। জানেন কি, ওজন কমানোর সিক্রেট লুকিয়ে আছে হেলদি স্ন্যাকসে। অর্থাৎ দুটো প্রধান মূল মিলের মাঝখানে নির্দিষ্ট দু-তিন ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে আপনি যদি লোক্যালরির একটা হেলদি স্ন্যাকস নিতে পারেন, তাহলে আপনার খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমবে। পাশাপাশি সারাদিন কাজে উৎসাহ পাবেন, দেহ মন চাঙ্গা থাকবে, দূর হবে ক্লান্তি, অবসাদ। রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্ট্যাটাইটি ফিলিংয়েও সাহায্য করে হেলদি স্ন্যাকস। দেখা গিয়েছে যাঁরা নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পুষ্টিকর হেলদি স্ন্যাকস নেন, তাঁদের সারাদিনই খাই করা, টুকটাক মুখ চালানো বা একটা মিলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার প্রবণতা, যাঁরা নিয়মিত হেলদি স্ন্যাকস নেন না তাঁদের তুলনায় অনেক কম।
 

হেলদি স্ন্যাকস কী?

সাধারণত প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ লো টু মডারেট ক্যালরিযুক্ত স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু সহজে গ্রহণযোগ্য খাবারই হেলদি স্ন্যাকস। ব্যক্তি বিশেষের শারীরিক ও মানসিক চাহিদা এবং লাইফস্টাইলের উপর নির্ভর করে দিনে একটা থেকে দুটো হেলদি স্ন্যাকস নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রতিটি স্ন্যাকস আইটেম যেন ১০০ থেকে ২০০ ক্যালরি পর্যন্ত যোগান দিতে পারে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। তবে শিশু, বাড়ন্ত বাচ্চা, গর্ভবতী মা এবং শারীরিক পরিশ্রমী মানুষজনের ক্ষেত্রে এই হেলদি স্ন্যাকস থেকে ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালরি পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে। হেলদি স্ন্যাকসের প্রাথমিক শর্ত মেনে একদিকে যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর হতে হবে, অন্যদিকে তেমনই সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। এরকম কয়েকটা সুস্বাদু সহজপাচ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর হেলদি স্ন্যাকসের আইটেমের নমুনা দেওয়া হল।
 

তাজা মরসুমী ফল

আপেল, কলা, ন্যাশপাতি, পেয়ারা, তরমুজ, বেদানা, পাকা পেঁপে, শাঁকালু, কমলালেবু, মুসম্বি ইত্যাদি বিভিন্ন তাজা ফল ডায়েটারি ফাইবার ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর হওয়ায় দেহের দূষণের মাত্রা কমায়। রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। হজম ও বিপাক ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখে। বাড়তি খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল দেহের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে? কোন কোন খাবারে বশে থাকে এই সমস্যা? জেনে নিন কী খাবেন, কী নয়

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১: আর্ষ মহাকাব্যের স্রষ্টাদ্বয়ের কথা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৪: ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা

 

চিয়া সিড পুডিং

এক টেবিল চামচ চিয়া সিডের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ ফ্যাট ফ্রি টক দই, ১০০ গ্রাম বেরি অথবা বিভিন্ন তাজা ফল সামান্য মধু বা ম্যাপেল সিরাপ মিশিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিয়ে তারপর খান হেলথ স্ন্যাকস হিসাবে। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্ল্যাট অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি-এর উৎকৃষ্ট উৎস হতে পারে এই ধরনের স্ন্যাকস। যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরা অন্তত সপ্তাহে দু-তিন দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ ধরনের পুডিং খান।
 

ডাই রোস্টেড পপকর্ন

স্ন্যাকসের জন্য বাড়তি খাটতে ইচ্ছা করছে না? কুছ পরোয়া নেই, ঘরে রাখুন তেল ছাড়া শুকনো ভাজা পপকর্ন। মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম পপকর্ন একদিকে যেমন পেট ভরাবে অন্যদিকে তেমনিই মন ও ভালো রাখবে। সঙ্গে একটা শসা বা এক চা চামচ ছোলা ও বাদাম মিশিয়ে নিলেও খুব একটা ক্যালরি বাড়বে না, কিন্তু স্বাদ বাড়বে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১০: আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন, ইতিহাস এবং কিছু প্রশ্ন

স্বাদে-আহ্লাদে: ম্যাগি ভালোবাসেন? এই রেসিপি ট্রাই করে দেখেছেন?

এগারো রকমের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাঁর ঝুলিতে, একাত্তরেও তিনি গেয়ে চলেছেন জীবনের জয়গান

 

হাই বয়েল ডিম বা এক হোয়াইট ওমলেট

ডিমে অ্যালার্জি নেই তো? তাহলে স্ন্যাকস হিসেবে নিন নুন ও মরিচ-সহ ডিম সেদ্ধ। অথবা গাজর, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি কুচানোর সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে বানিয়ে নিন হেলদি টেস্টি এগ হোয়াইট ওমলেট।
 

সিসেম সিড স্যটেড ভেজিটেবিলস

বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, গ্রিনবিনস, গাজর, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি বিভিন্ন সিজিনাল সব্জিকে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল বা লো ফ্যাট মাখনে সাঁতলে নিয়ে সামান্য লেবুর রস, গোলমরিচ গুঁড়ো, হার্বস ও রোস্টের তিল বা সিসেম সিড ছড়িয়ে খান কাজের ফাঁকে। জাস্ট ফাটাফাটি।
 

মিক্সড ফ্রুট রায়তা

আপনি কি একটু মিষ্টি প্রেমী? চিন্তা কি, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ফলের সঙ্গে নন-ফ্যাট দই আর সামান্য মধু মিশিয়ে বানিয়ে নিন আপনার মন-পসন্দ স্ন্যাকস। এই ধরনের স্ন্যাকস একদিকে যেমন ভিটামিন এবং মিনারেলস যোগাবে, অন্যদিকে তেমনি পাওয়া যাবে ক্যালশিয়াম ও প্রোটিন।

আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৯: আগে তো প্রাণে বাঁচি, তার পরে না হয় বিমার নিয়ম কানুনের কথা ভাবা যাবে

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১০: পেটের গ্যাস সারা দেহেই ঘুরে বেড়ায়!

 

কর্ণ চ্যাট বা চানা চাট

সেদ্ধ ছোলা বা কর্ণের সঙ্গে স্যালাড, পেঁয়াজ, লেবুর রস, চাট মশলা মিশিয়ে নিলেই তৈরি দুর্দান্ত স্বাদের হেলদি স্ন্যাকস। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্যালাডের সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম কর্ণ বা ছোলাই স্ন্যাকস হিসেবে যথেষ্ট। স্যালাড পছন্দ না হলে শুকনো ছোলা, বাদাম ভাজা, চার থেকে পাঁচ চা চামচ খাওয়া যেতে পারে।
 

মিক্স নাটস অ্যান্ড সিডস

আমন্ড, ওয়ালনাট, পামকিন সিড, সানফ্লাওয়ার সিড, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চিনা বাদাম, অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং শুকনো ফলের মিশ্রণ শুধু যে স্বাদে অদ্বিতীয় তাই নয়, হাই কোয়ালিটি প্রোটিন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন ই, জেলেনিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় শরীর ও মন দুয়েরই দেখভাল করবে। তবে খেতে হবে কিন্তু মাত্রা মতো।

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content