মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

বর্তমানে বাতের সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষের সংখ্যাটা খুবই কম। বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে তো এই সমস্যা রয়েছেই। এখন আবার বয়স ৩০ পেরোলেই শুরু হয় বাতের ব্যথা। শুধু কি তাই? কমবয়সি তরুণীরাও বাতের ব্যথার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। এই বাতের ব্যথার কারণে উঠতে গেলে, বসতে গেলে বারবার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলেও বাতের ব্যথা থেকে রেহাই মেলে না। তাই এবার ওষুধ নয়, ঘরোয়া উপায়ে সারিয়ে তুলুন বাতের ব্যথা। খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন কিছু খাবার। আবার বাতের ব্যথা কমাতে কিছু সুস্বাস্থ্যকর খাবার সংযোজন করুন খাদ্যতালিকাতে ।
 

বাতের ব্যথা কেন হয়?

জিনগত সমস্যা, শৃঙ্খলহীন জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত ওজনই মূলত বাতের ব্যথার অন্যতম কারণ। ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে শরীরের উপরের অংশ ভারী হয়ে যায়, আর সেই ভার গিয়ে পড়ে শরীরের নীচের অংশে। ফলে দ্রুত হাঁটুর হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। অনেক সময় ছোট বয়স থেকে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস না থাকলেও অল্প বয়সেই বাতের ব্যথা দেখা দিতে পারে।
 

যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে?

বাতের ব্যথা কমাতে হলে ব্যালান্স ডায়েট করতে হবে। এই ডায়েটের তালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট সবই রাখতে হবে। এছাড়াও ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-সি এবং জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার যাতে পাতে থাকে সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

আপনি যদি বাতের ব্যথায় ভোগেন, তাহলে খাদ্যতালিকা থেকে অবশ্যই বাদ দিন ফাস্টফুড। এমন অনেক প্যাকেটজাতীয় ফুডই বাজারে বিক্রি হয় যাতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। শুধু তাই নয়, এইসব খাবারের থাকে ট্রান্সফ্যাটও, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ময়দাজাতীয় খাবার এড়াতে হবে। ওজন কম থাকলে আর্থরাইটিস হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ময়দার তৈরি খাবার না খেয়ে আটার তৈরি রুটি, পরোটা খান। এতে ওজনও ঠিক থাকবে। আর শরীর হালকা থাকায় বাতের ব্যথা থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারবেন ।

আর্থরাইটিসের রোগীদের শরীরে যদি ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে টমেটো, ডিমের কুসুম, অ্যালকোহল। তবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে এসব খাবার বাদ না দিলেও চলবে। তবে কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়, তাই এই সব খাবার গুলি খেলেও তা পরিমাণ বুঝে খেতে হবে।
আবার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে কারও কারও গাউট অথবা গেঁটেবাতের ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে পালং শাক, ডাল জাতীয় দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ, অ্যালকোহল, পাঁঠার মাংস ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।

চিনি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকা থেকে চিনিকে সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দিতে হবে। চিনি শরীরে ‘ইনফ্লেমটারি এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করে। ফলে বাতের ব্যথা বাড়ে।
 

খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন?

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবারের মধ্যে অ্যান্টি ইমফ্লামেটরি উপাদান থাকে, যা অস্টিওআর্থরাইটিসের অগ্রগতি রোধ করতে সাহায্য করে। সাধারণত সামুদ্রিক মাছের মধ্যেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তবে, ভারতে ম্যাকরল বা টুনা মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই পমফ্রেট, ইলিশ মাছ খাওয়া যেতে পারে। এই মাছগুলির মধ্যেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে। যাঁরা মাছ খান না, তাঁরা মাছের বদলে ফ্ল্যাক্স সিডস ওয়েল, আখরোট খেতে পারেন।

আখরোটের মধ্যে প্রয়োজনীয় জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তাই রোজ আখরোট খান।

যাঁরা দুধ খেতে পারেন না তাঁরা দুধের তৈরি ছানা বা দই খেতে পারেন। দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন-ডি, যা বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে গোরু বা মোষের দুধের পরিবর্তে লো ফ্যাট মিল্ক বা ডবল টোনড দুধ খাওয়াই শ্রেয়। ডবল টোনড দুধ না পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ‘সিঙ্গল টোনড’ দুধ খেতে হবে।

পালং শাকের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ‘অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট’ হিসাবেও কাজ করে। ব্রোকলি আর্থরাইটিসের জন্য খুবই ভালো। এর মধ্যে এক ধরনের যৌগ থাকে, যার নাম সালফোফেরন। এটি বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। এটি অ্যান্টি- অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা ‘অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এজেন্ট’ হিসাবেও কাজ করে।

বাতের ব্যথা কমাতে রসুন ও আদা খেতে পারেন।
আদা এবং রসুনের মধ্যেও ‘অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট’ রয়েছে। তাই তরকারিতে আদা ও রসুন দেওয়া যেতে পারে। জলের মধ্যে আদা ফুটিয়ে চায়ের মতো করেও খেতে পারেন ।

বাদামের মধ্যে জিঙ্ক, ভিটামিন-ই, ফাইবার থাকে, যার আলফা লাইপোইক অ্যাসিড রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটা সুস্থ হার্টের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকরী।
এছাড়া নিজেকে সবসময় হাইড্রেট রাখতে হবে।

আজকাল অনেকের শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি দেখা যায়। ভিটামিন-ডি এর অভাবে কিন্তু অস্টিওআর্থারাইটিসের সমস্যা বাড়তে পারে। সে জন্য খাদ্যতালিকায় ডিমের কুসুম, চিজ এবং ফরটিফায়েড সিরিয়াল জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে ভালো।

বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রচুর পরিমাণ জল খেতে। তবেই কমবে বাতের ব্যথা।

যোগাযোগ: ৯৪৩৩৯৯১৭১৫


Skip to content