সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

চায়ের মতো নরম গরম পানীয় সারা পৃথিবীতেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। শীতের ভোরে লেপের অলস মায়া কাটিয়ে চনমনে হয়ে উঠতে যেমন চা চাই, তেমনি বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে হাঁচি-কাশি এড়াতেও চাই ভরসা। বেশিরভাগ মানুষেরই যেমন সকাল বিকেল দু’ বেলা দু’ কাপ চা দরকার, তেমনি তা হোক সে পড়াশোনা, অফিসের কাজকর্ম, অতিথি আপ্যায়ন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা—সবেতেই চাই চা।
‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’ জাতীয় চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় গাছের সবুজ পাতা ও কুঁড়িকে শুকিয়ে ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয় আমাদের চেনা-পরিচিত চাপ। সাধারণত প্রস্তুত প্রণালীর উপর নির্ভর করে কালো চা, সবুজ চা, প্যারাগুয়ে চা, ওলোং চা ইত্যাদি বিভিন্ন গন্ধ ও বর্ণ বিশিষ্ট চা তৈরি হয়। তবে আজ আমাদের আলোচনার বিষয় সবুজ চা বা গ্রিন টি। এই গ্রিন টি কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন আছে। গ্রিন টি-তে প্রকৃতপক্ষে কি এমন উপাদান আছে, যা তাকে এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে তুলেছে?
 

চায়ের উপাদান

সাধারণত তরল এই পানীয়ে জলই প্রধান অংশ, প্রায় ৯৯.৬২ শতাংশ । ফ্যাট শূন্য, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। চায়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স শূন্য, থাকে না ট্রান্স ফ্যাটিঅ্যাসিড, কোলেস্টেরল বা ডাইটারি ফাইবারও।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: চিংড়ি শুধু স্বাদের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও খাওয়া যায়, কী উপকার হয়?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩১: শ্রীমার পঞ্চতপা ব্রতানুষ্ঠান

 

তাহলে চায়ের উপকারিতা কোথায়?

চায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে আছে—ক্যাটেচিন, এপিগ্যালোক্যাটেচিন (EGCG), এপিক্যাটেচিন, গ্যালেট ইত্যাদি অত্যন্ত শক্তিশালী আন্টিঅক্সিডেন্ট এবং থিওফ্ল্যাভিন, থিয়ারুবিজিন, এল (L)-থিয়েনিন জাতীয় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর সক্রিয় যৌগ উপাদান। আবার এইসব বিভিন্ন আন্টিঅক্সিডেন্টধর্মী ফাইটোকেমিক্যালস-এর পরিমাণ গ্রিন টি-তে অত্যন্ত বেশি হওয়ায় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বিশেষত গ্রিন টি তৈরির সময়ে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা ও কুঁড়িকে গ্যাঁজানো হয় না বা কেমিক্যাল অক্সিডেশন ঘটানো হয় না বলে এর বিভিন্ন পলিফেনলস এবং অন্যান্য উপকারী যৌগ সমূহ বেশ কিছুটা অবিকৃত অবস্থায় থাকে।

আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৩: সুন্দরবনের এক অনন্য প্রাণীসম্পদ গাড়োল

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী

 

গ্রিন টি-এর স্বাস্থ্যগুণ

গ্রিন টি-তে ক্যাটেচিন মেটাবলিজম বুস্টিং-এর সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন তাঁরা ব্যালেন্স ওয়েট রিডিউসিং ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করুন গ্রিন টি।
গ্রিন টি নিয়মিত খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে গ্রিন টি-এর পলিস্যাকারাইড এবং পলিফেনিক যৌগসমূহ। ডায়াবেটিক-রা দুধ, চিনি ছাড়া গ্রিন টি দিনে দু’ তিন বার পান করতেই পারেন।
ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চের কিছুক্ষণ পরে গ্রিন টি পান করলে হজম ও বিপাকে সাহায্য হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্টমাক, কোলন, ব্লাডার ও ইসোফেগাসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে গ্রিন টি দারুন সাহায্য করে।
গ্রিন টি-র ইজিসিজি (EGCG) এ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিশেষ অ্যামিনো অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষের উদ্দীপনা বাড়ায়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কম করে এবং বার্ধক্যে অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম রাখে।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয় রোধেও সাহায্য করে গ্রিন টি।
ডিপ্রেশন কমাতে গ্রিন টি অত্যন্ত উপকারী।

আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৭: পলায়নপর পঞ্চপাণ্ডব-ভীমসেনের গতিময়তায় কোন মহাভারতীয় দিগদর্শন?

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১০: লীলা মজুমদার— নতুন রূপকথার হলদে পাখি

 

সতর্কতা

তবে গ্রিন টি যে ক্যাফেইন মুক্ত এমন বলা যাবে না। এতে কফির চেয়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম হলেও নিতান্ত কম নয়, প্রায় ৪০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ ক্যাফেইন থাকে গ্রিন টি-তে। গ্রিন টি-এর হেলথ বেনিফিট পেতে হলে দিনে দু’ তিন কাপ দুধ চিনি ছাড়া গ্রিন টি পান করতে হবে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content