বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও বয়সে বছরের যে কোনও সময়ই চুল পড়া, চুলপাকা, খুশকি, অতিরিক্ত তেলতেলে বা শুকনো নির্জীব চুলের সমস্যায় ভুগতে পারেন। তবে সাধারণত গরম আর বর্ষাকালেই অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়তে দেখা যায়। চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই বিভিন্ন রকম তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সিরাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার স্পা বা হেয়ার ট্রিটমেন্ট এমন কি হোমিওপ্যাথি, অ্যালপ্যাথিক বা আয়ুর্বেদিক ট্রিটমেন্টও করাচ্ছেন। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থায়ী সমাধান কিছু হয় না। অর্থাৎ বাইরে থেকে ঘষামাজা যাই করা হোক না কেন, চুলের সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য চাই উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার।
 

অতিরিক্ত চুল পড়ে যায় কেন?

সাধারণভাবে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মাথায় এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষের মতো চুল থাকে। এক একটা চুলের গড় আয়ু পাঁচ থেকে সাত বছর। এক্ষেত্রে দিনে গড়ে ৫০ থেকে ১০০টা চুল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সমস্যা বাড়ি তখনই, যখন এই চুল পড়ে যাওয়ার সংখ্যাটা নতুন চুল গজানোর তুলনায় অনেক বেশি হয়।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রথম থেকেই নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার উপর জোর দেওয়া উচিত। যে বিশেষ বিশেষ কারণে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়—
অপুষ্টি ও সুসাম্য খাদ্যের অভাব
মানসিক চাপ, অনিদ্রা ও দুশ্চিন্তা
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা।
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম।
জিনগত কারণ ও বংশগতি।
গর্ভাবস্থা ও মেনোপজ।
কেমোথেরাপির প্রভাব।
বয়স বৃদ্ধি জনিত কারণ।
অতিমাত্রায় ভিটামিন-এ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ।
পুরুষদের অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য ও মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়া।
মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার না করা।
অতিরিক্ত কেমিক্যাল হিট ও হেয়ার প্রোডাক্টসের ব্যবহার।
সর্বোপরি দেহের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: পেটের গণ্ডগোল থেকে মুক্তি দিতে পারে ‘লো ফডম্যাপ’ ডায়েট

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?

 

চুলের চুলচেরা বিশ্লেষণ

সাধারণত আমরা বাইরে থেকে চুলের যে অংশ দেখতে পাই তা চুলের মৃত অংশ। চুলের প্রতিটি স্ট্যান্ড তৈরি হয় তিনটি স্তর দিয়ে। সবচেয়ে বাইরের স্তর কিউটিকল। মাঝে স্তর কর্টেক্স। আর একেবারে ভেতরের স্তর মেডালা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মাঝে স্তর কর্টেক্স, যা চুলের শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা, ঘনত্ব, রং ইত্যাদি নির্ধারণ করে।

অন্যদিকে ত্বকের এপিডার্মিং স্তর থেকে তৈরি হেয়ার ফলিকলের একেবারে গভীরতর অংশে গ্রথিত হেয়ার বাল্বের বিভাজনে তৈরি নতুন নতুন জীবন্ত কোষ প্রোটিন ‘ক্যারোটিন’ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে ক্রমশ শক্ত ঘন সন্নিবিষ্ট, মজবুত এবং দৃঢ়চুলের মৃত অংশে পরিণত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সুন্দর স্বাস্থ্য ঝলমলে চুলের রূপে। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, জল, লিপিড, কপার, সিলিকন, জিঙ্ক, আয়রন ইত্যাদি বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদান দ্বারা তৈরি হয় চুল।

আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস

 

চুলের স্বাস্থ্যের জন্য চাই পুষ্টিকর খাবার

চুলের স্বাস্থ্যবজায় রাখার জন্য তেল জলের পাশাপাশি বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার আছে, যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেমন—
 

ডিম

ডিমের প্রোটিন ও বায়োটিন চুলের গোড়ায় পুষ্টির যোগান দেয় এবং কেরাটিন তৈরিতে সাহায্য করে চুলকে দৃঢ় ও মজবুত করে
 

আমন্ড ও আখরোট

ভিটামিন-ই, ওমেগা থ্রি জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ বাদাম চুলের স্বাভাবিক রং বজায় রাখে ও দৃঢ়তা প্রদান করে।
 

লেবু পেয়ারা আমলকি টমেটো

ভিটামিন-সি যুক্ত এই ধরনের ফল খাদ্যস্থ আয়রন শোষণে সাহায্য করে এবং মাথার তালুতে রক্ত ও অক্সিজেনের যোগান অক্ষুন্ন রাখে। ফলের চুল পড়া খুশকি অকালপক্কতা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা এড়ানো যায়।
 

গাজর

খুশকি ও শুষ্কতা দূর করে চুলের গোড়ায় সিরাম তৈরিতে সাহায্য করে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ গাজর।

আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৯: পঞ্চমের সুরে লতার গাওয়া ‘মেরে নয়না সাওন ভাদো’ গান শুনে শুনেই প্রস্তুতি শুরু করেন কিশোর

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৮: ‘সম্মতি’ আদায়ের চাবিকাঠি

 

রাঙালু

বিটা ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু নিয়মিত খাওয়া গেলে মাথার ত্বকের চুলকানি, খুশকি ও শুষ্কতা দূর হয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
 

পালং শাক

আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-এ যুক্ত পালং শাক চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত উপকারী।
 

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত সামুদ্রিক মাছ

সার্ডিন, টুনা, স্যামন ইত্যাদি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, জিঙ্ক, ফসফরাস, ভিটামিন-ডি ইত্যাদি থাকে, যা চুলকে দৃঢ় ও স্বাস্থ্য-ঝলমলে রাখতে সাহায্য করে।
 

কাঁকড়া চিংড়ি

এই জাতীয় সেলফিসে ওমেগা থ্রি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে, যা তেলোজেন এফলুডিয়াম জাতীয় টাক পড়া প্রতিরোধ করে।
 

চিকেন ও মাংসের মেটে

আয়রন, জিঙ্ক, প্রোটিন ও বি-ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ধরনের প্রাণিজ খাবার চুলের গোড়ার সংক্রমণ দূর করে অক্সিজেন ও পুষ্টি দ্রব্য সরবরাহ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
 

ডানা জাতীয় খাবার

তিল, কুমড়ো বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, শিম বীজ, চিয়া সিড ইত্যাদি দানা জাতীয় খাবার আয়রন, জিঙ্ক, প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি জাতীয় এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎকৃশ্য উৎকৃষ্ট উৎস হওয়ায় নিয়মিত ডায়েটে রাখা গেলে চুলের স্বাস্থ্যের জীবন পুনরুজ্জীবন ঘটে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content